Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্রিটেনের রানী: শুধুই ঐতিহ্যের ধারক নাকি প্রকৃত ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব?

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবখানেই তিনি একজন বহুল আলোচিত এবং উদযাপিত ব্যক্তিত্ব। ২০২০ সালের এপ্রিলের ২১ তারিখে একে একে ৯৪ বছর পূর্ণ করলেন তিনি। বয়সটা নব্বইয়ের ঘরে রইলেও তার হাসি, মেজাজ, কথাবার্তা, চলাফেরায় এক চিরতরুণীর আবহ খুঁজে পাওয়া যায়। বয়স হয়েছে, তবে বার্ধ্যক্য তাকে সে অর্থে ছুঁতে পারেনি। 

শাসনতন্ত্রে ক্ষমতা ও পদমর্যাদা দু’টি পৃথক বিষয়। অর্থাৎ, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদার চূড়ান্তে অবস্থান করলেও ক্ষমতার দিক থেকে একজন ব্যক্তি নিতান্তই নগণ্য বলে পরিগণিত হতে পারেন। ঐতিহ্য, বংশমর্যাদা, সংস্কৃতি, রাজতন্ত্রের আভিজাত্য ইত্যাদি সকল মাপকাঠিতেই ব্রিটেনের রানীর অবস্থান যে একেবারে শীর্ষে, তা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। তবে ক্ষমতার বিচারে তিনি সত্যিই কতটা সুদৃঢ় অবস্থানে আসীন? বিশ্বের মহা পরাক্রমশালী ব্যক্তিবর্গের সাথে কি তিনি একই কাতারে বিরাজ করেন? 

৯৪ বছরেও সদা হাস্যোজ্জ্বল রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ; Image Source: royal.uk

তার আগে চলুন কিছু চটজলদি তথ্য জেনে নেওয়া যাক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্পর্কে:

  • ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে দীর্ঘতম সময় ধরে সিংহাসন অলংকৃত করে রাখার রেকর্ডটি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের।
  • সাধারণ মানুষ ব্রিটেনের রানীকে জনসমক্ষে ‘ইওর ম্যাজেস্টি’ ব্যতীত অন্য কিছু বলে সম্বোধন করার কথা চিন্তাও করতে পারে না। তবে তার দু’টি ডাকনাম আছে; যার মাঝে একটি (লিলিবেট) ব্যবহার করতেন তার পরিবারের সদস্যরা, আর অন্যটি (ক্যাবেজ) তার স্বামী ডিউক অভ এডিনবার্গের ভালোবেসে দেওয়া নাম।
  • ব্রিটেনের রানী হিসেবে তিনিই সর্বপ্রথম বিয়ের হীরকজয়ন্তী পালনের সৌভাগ্য অর্জন করেন।
  • পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ব্রোচ (একধরনের অলংকার) তার মালিকানাধীন, যাতে ব্যবহৃত হীরার উৎসস্থল দক্ষিণ আফ্রিকা।
  • ভ্রমণের জন্য তিনি ব্যবহার করে থাকেন বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোলস রয়েসের বিশেষায়িত দু’টি ফ্যানটম গাড়ি। 

বর্ণাঢ্য, বিলাসবহুল, আভিজাত্যের চাদরে মোড়া ব্রিটেনের রানীর জীবন। নিজ সাম্রাজ্য অথবা বিশ্ব রাজনীতির ময়দান- কতটা ক্ষমতা ন্যস্ত হার রয়েল হাইনেসের হাতে, সে বিষয়ে এবার তবে কথাবার্তা চলুক।

প্রধানমন্ত্রী ও রানীর পারস্পরিক অবস্থান

ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা নিয়ে সবচেয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, যখন এই বিষয়টি সামনে আসে যে, একই দেশে রানী ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই বর্তমান। তাহলে এই দুই ব্যক্তিত্বের অবস্থানটা কীরকম? বিষয়টি আলোচনা করার জন্য ব্রেক্সিটের ইস্যুতে ফিরে যেতে হবে।

২০১৩ সালের ৮ মে তারিখে সংসদীয় অধিবেশন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে রাজপুত্র ফিলিপ ও রানী; Image Source: history.howstuffworks.com

নো ডিল ব্রেক্সিটের পর একটি প্রশ্ন উঠে আসে, রানী কি সত্যিই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার বৈধ এখতিয়ার রাখেন? এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সরকার ও সংবিধান বিষয়ের অধ্যাপক রবার্ট হ্যাজেলের বক্তব্য ছিল, অনাস্থা প্রস্তাবে (ভোট অভ নো কনফিডেন্স) বরিস জনসন হেরে যাওয়ার পরেও যদি তিনি পদত্যাগ করতে সম্মত না হন, তাহলে রানী অবশ্যই তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে এ কাজটি কেবল তখনই তার করা উচিত হবে, যদি হাউস অভ কমন্সের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত থাকে যে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হতে যাচ্ছেন।

ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্ট ২০১১ অনুযায়ী অনাস্থা প্রস্তাবের পর ১৪ দিনব্যাপী একটি সময় ঘোষণা করা হবে। এ সময়ের মাঝে বিকল্প কোনো সরকার খুঁজে বের করতে হবে, যার দায়িত্ব হবে কমন্সের আস্থা পুনর্বহাল করা। সংসদ ভেঙে যাওয়ার ২৫ দিন পর পুনরায় একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ দিনের অন্তর্বর্তীকালে সংসদ একজন সুনির্দিষ্ট প্রার্থীর বিষয়ে সবদিক থেকে ঐকমত্যে আসার প্রচেষ্টা চালাবে। সংসদের সর্বসম্মতিক্রমে যদি একজন প্রার্থী মনোনীত হন, তবে সেই নামটি রানীর কাছে প্রস্তাব করা হবে। এ বিষয়ে হ্যাজেল আরও বলেন, ১৪ দিনের পর সংসদের সর্বসম্মতিক্রমে যদি কারও নাম রানীর কাছে পেশ করা যায়, কেবল তখনই রানী তার ক্ষমতার প্রয়োগ করার অধিকার রাখেন। যোগ্য একজন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করার পরও যদি বরিস জনসন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন, তবে সেক্ষেত্রে রানী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সবরকম অধিকার রাখেন এবং যোগ্য ব্যক্তিকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে স্থলাভিষিক্ত করবেন।

অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর সাপেক্ষে ব্রিটেনের রানী একচ্ছত্র কোনো ক্ষমতায় বিরাজ করেন না, বরং বিশেষ কোনো পরিস্থিতি রানীকে বিশেষ ক্ষমতা এনে দেয়। আরেকটি বিষয় হলো- প্রধানমন্ত্রীর উপর রানী কর্তৃত্ব ফলাতে পারবেন কি না, তার চেয়েও অধিক তাৎপর্য রাখে, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন, তার নিশ্চয়তার বিষয়টি। তাই বিষয়টি এক অর্থে পুরোপুরি তর্কাতীত নয়।

সংসদের স্থায়িত্ব

রানীর সংরক্ষিত বেশ কিছু ক্ষমতার মাঝে একটি হলো, তিনি সংসদীয় অধিবেশন চালু ও বন্ধ করার অধিকার রাখেন। প্রতি মে মাসে তিনি সংসদ চালুর মাধ্যমে একটি নতুন সংসদীয় বছরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

বাকিংহাম প্যালসে বরিস জনসনকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন রানী; Image Source: theguardian.com

এ উপলক্ষে তিনি নিজে একটি শোভাযাত্রার সূচনা করেন। শোভাযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হয় প্যালেস অভ ওয়েস্টমিন্সটারের রয়্যাল গ্যালারিতে, যেখানে তিনি ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউন পরিধান করে থাকেন। যেকোনো সময় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা এবং হাউজ অভ কমন্সের যেকোনো সদস্যকে বরখাস্ত করতে পারেন।

আইনের বৈধকরণ

যদিও সংসদ ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তবে যেকোনো প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হওয়ার পূর্বে তাতে রানীর স্বাক্ষর আবশ্যিক। সংসদ কর্তৃক কোনো আইনই রাণীর সম্মতি ব্যতীত কার্যকর হবে না। সংসদ কর্তৃক গৃহীত যেকোনো বিলে রানীর সম্মতিকে অভিহিত করা হয়ে থাকে রয়্যাল অ্যাসেন্ট হিসেবে। কোনো আইনই যেন রাজকীয় ছোঁয়া ছাড়া পূর্ণতা পায় না। সাধারণত কোনো আইনে রাজপরিবারের বিরোধিতা দৃষ্টিগোচর হয় না। এটি একেবারেই একটি দুর্লভ ঘটনা। সর্বশেষ ১৭০৮ সালে রানী অ্যানি স্কটিশ মিলিশিয়াকে পুনর্বহাল করার বিলে সাইন করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন।

সামরিক বাহিনীর প্রধান

ব্রিটেনের সমস্ত সশস্ত্র বাহিনী কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মূলত ব্রিটেনের সমস্ত সামরিক বাহিনী রানীর কাছে সম্পূর্ণভাবে দায়বদ্ধ। আনুষ্ঠানিক দায়িত্বপ্রাপ্তির আগে সামরিক বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে বাধ্যতামূলকভাবে রানীর উদ্দেশে শপথবাক্য পাঠ করতে হয়।

স্বামী-স্ত্রী একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছেন মুগ্ধ দৃষ্টিতে; Image Source: rd.com

সামরিক বাহিনীকে আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি তার নিজের প্রতিনিধি ঠিক করার ক্ষমতাও তার হাতে ন্যস্ত। তিনি চাইলে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দ্বিতীয় কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে তার প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করতে পারেন। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী কিংবা সেক্রেটারি অভ স্টেট ফর ডিফেন্স এই প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বটি গ্রহণ করে থাকেন।

রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ পদাধিকার বলে ব্রিটেনের যেকোনো দৃষ্টান্তমূলক নাগরিককে রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদান করতে পারেন। স্বেচ্ছাসেবীমূলক পদক্ষেপ, বিজ্ঞান, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সহ আরও নানা ক্যাটাগরিতে তিনি তার ব্যক্তিগত প্রজ্ঞা ও বিবেচনায় যোগ্য নাগরিকদের বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত করতে পারেন, যেগুলোর মাঝে আমাদের কাছে সম্ভবত ‘নাইট’ এবং ‘ডেইম’ উপাধিদ্বয় সর্বাধিক পরিচিত। 

This article is in Bangla. This is about the actual power of Queen Elizabeth II.

All the necessary references are hyperlinked within the article.

Featured Image: history.howstuffworks.com

Related Articles