Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের সবচেয়ে অল্পবয়সী রাজনৈতিক বন্দী: গেনডুন চোকি নিমা

তিব্বতের বেশ জনপ্রিয় এক শিশু, যাকে কিনা জাতির আলোকবর্তিকা মনে করা হচ্ছে, হঠাৎ একদিন হারিয়ে গেলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারা যায়, অন্য দেশের সরকার গোপন অপারেশন চালিয়ে তাকে অপহরণ করেছে। এর পর তার দেখা পাওয়া তো দূরের কথা; কোনো খোঁজই মেলেনি। এমনকি সে বেঁচে আছে কিনা, সেটাও জানা যায়নি।
এভাবে ছেলেটার অপেক্ষায় বছরের পর বছর কেটে গেলো! আর অপেক্ষা করে থাকা যাচ্ছে না। তাকে খুব দরকার এখন, জাতিকে উদ্ধার করতে হবে। জাতির আলো প্রয়োজন। তাই তিব্বত সরকার আর বসে না থেকে গেনডুন চোকি নিমা নামের ৩০ বছরের এক তিব্বতি যুবকের চীনের কাছ থেকে উদ্ধার করার জন্য বেশ তৎপরতা চালাচ্ছে। কী এমন ঘটেছে তার জীবনে? চলুন, জানা যাক।

পাঞ্চেন লামার ছবি নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের প্রার্থনা
পাঞ্চেন লামার ছবি নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের প্রার্থনা; Image source: rfa.org

গেনডুন চোকি নিমা

গেনডুন চোকি নিমাকে বলা হয় ১৯৮৯ সালে আকস্মিকভাবে মারা যাওয়া তিব্বতের এক পাঞ্চেন লামার দ্বিতীয় জন্ম। ঘটনাটি বিস্তারিত জানার আগে জানতে হবে, পাঞ্চেন লামা কে, কেন পাঞ্চেন লামা তিব্বতিদের জন্য এত জরুরি।

পাঞ্চেন লামা

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যাকে বুদ্ধের অবতার হিসেবে ধরা হয়, তাকে বলা হয় দালাই লামা। এবং দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যাকে গৌতম বুদ্ধের সীমাহীন আলোকবর্তিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাকে পাঞ্চেন লামা বলে।

দালাই লামা ও পাঞ্চেন লামা এক অপরের পরিপূরক। কখনও কখনও এরা একে অপরকে খুঁজে বের করতেও সাহায্য করে।

ছোট্ট পাঞ্চেন লামার সাথে যা ঘটেছিল

১৯৯৫ সাল, গেনডুন চোকি নিমার বয়স যখন মাত্র ৬ বছর, তখন তাকে আটক করে চীন সরকার। এরপর অনায়াসে ২৪ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো কিন্তু আজ অব্দি কেউ তাকে দেখেনি। এত বছরে একবারও জনসম্মুখে আনা হয়নি পাঞ্চেন লামা তথা গেনডুন চোকি নিমাকে!

অবাক লাগছে না এটা ভেবে, একটি বৌদ্ধধর্ম প্রধান দেশ (বর্তমানে চীন ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, তবে যে গুটিকয়েক চীনা ধর্মে বিশ্বাসী, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করে) আরেকটি দেশের একই ধর্মগুরুকে রাজনৈতিক কারণে আটকে রেখেছে? পাঞ্চেন লামার অপরাধটা কী ছিল, যা তাকে এমন করুণ একটি জীবন দান করলো? নাকি তার কোনো অপরাধই ছিল না, শুধুমাত্র নোংরা রাজনীতির জালে আটকা পড়ে এমন নিয়তি হয়েছে তার?

ফরেনসিক শিল্পী টিম উইডেনের বয়স-অগ্রগতি ভিত্তিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা পাঞ্চেন লামার ছবি; Image source: savetibet.org

পাঞ্চেন লামাকে আটক করার কারণ

আমরা অনেকেই জানি, বৌদ্ধরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী না। বৌদ্ধ ধর্ম মতবাদ অনুযায়ী, “আমাদের দেহে কোনো স্বতন্ত্র ও অপরিবর্তনীয় সত্ত্বা নেই। ফলে ‘আমিত্ব’-এর ধারণা এই ধর্মানুযায়ী নিছকই আমাদের মোহের কারণ যা আমাদেরকে দুঃখের দিকে ঠেলে দেয়।’” গৌতম বুদ্ধ মানব দেহকে ৫টি স্কন্ধে ভাগ করেছেন। সেগুলো হল- রূপ (form), বেদনা (feeling), সংজ্ঞা (perception), সংস্কার (volitional action) ও চেতনা (consciousness)। এই পঞ্চ স্কন্ধের প্রতিটিই পরিবর্তনশীল। তাই আমরা কখনও নিজেদেরকে আলাদা করে দেখতে পারি না। ‘আমিত্ব’ দাবি করতে পারি না।

তবে বৌদ্ধ ধর্মের এই ‘অনাত্মা’ তত্ত্ব নিয়ে অনেকের মতবিরোধ রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্লেষণ করে অনেকে আবার বেশ কঠোর যুক্তিও দেখিয়েছেন এই তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করার জন্য।

যেমন, দেবদহ সুত্তে গৌতম বুদ্ধ ও নিগ্রন্থদের সাথে এক আলাপে বুদ্ধ বলেন, “মানুষের জীবনের সুখ অথবা দুঃখ তার অতীতের কৃতকর্মের ফলাফল।” বুদ্ধের এই কথাকে কেন্দ্র করে অনেকে বলেন, যদি পুনর্জন্ম না থাকে, তাহলে অতীতের দুঃখ বা সুখের প্রভাব থাকতো না জীবনে।

যা-ই হোক, তিব্বতের বৌদ্ধরা এই কঠোর যুক্তি প্রদর্শনকারীদের দলে, অর্থাৎ তারা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী।

১৯৫৯ সালে তিব্বত থেকে ভারত আশ্রয় নিয়ে সেখানে প্রবাসী তিব্বত সরকার গঠনকারী পাঞ্চেন লামা রহস্যজনকভাবে মারা যাওয়ায় অনেকে ধারণা করে, চীনা সরকার বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করেছে।

তার মৃত্যুর ৬ বছর পর, ১৯৯৫ সালে ১৪ই মে তিব্বতের দালাই লামা জানান, “তিনি পাঞ্চেন লামার দেহধারী এক বালককে খুঁজে পেয়েছেন। যার নাম গেনডুন চোকি নিমা।” অর্থাৎ দালাই লামার মতে, গেনডুন চোকি নিমা হিসেবে পাঞ্চেন লামার পুনর্জন্ম হয়েছে।

দালাই লামা গেনডুন চোকি নিমার ব্যাপারে ঘোষণা করার ঠিক তিনদিনের মাথায় নকচু শহরের চিকিৎসক ও সেবিকা দম্পতির সন্তান, গেনডুন চোকি নিমা ও তার পরিবারকে চীন সরকার অপহরণ করে। এরপর আর গেনডুনের দেখা পাওয়া যায়নি। তবে চীন বিশ্বকে আশ্বাস দিয়েছে, সে এখনও বেঁচে আছে।

পাঞ্চেন লামাকে মুক্তির আন্দোলন; Image source: sftindia.org

২০১৫ সালে চীনের একটি পত্রিকায়Tibet Autonomous Region’s United Front Work Department-এর এক সদস্য নরবু দাঞ্জহাব বলেন, “যে ছেলেটিকে পাঞ্চেন লামার পুনর্জন্ম বলা হয়েছে, সে বেশ ভালো আছে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে, শিক্ষাদীক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠছে। ছেলেটি চায় না, কেউ তাকে বিরক্ত করুক।” তিনি তিব্বতের সেই দালাই লামাকে (গেনডুন চোকি নিমাকে পাঞ্চেন লামার পুনর্জন্ম বলে ঘোষণাকারী) ভর্ৎসনা করে বলেন,

“তিনি ধর্ম ও ইতিহাসকে অবমাননা করেছেন। কোনো অনুমোদন ছাড়া ছেলেটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা অবৈধ ও অকার্যকর। সেই দালাই লামা যা বলেছেন, বলুক। পুনর্জন্ম বিষয়ে চীন সরকার যা ঘোষণা করবেন সেটাই সঠিক বলে বিবেচনা হবে।”

চীন সরকার কিছু নাস্তিক ও নরবু দাঞ্জহাবের সাথে জোরাল যুক্তিতর্কের মাধ্যমে প্রমাণ করেন, গেনডুন চোকি নিমা দালাই লামার পুনর্জন্ম নয় এবং এমন অপপ্রচারকারী দালাই লামাকে ভর্ৎসনা করে।

বিবিসি নিউজের মাধ্যমে জানতে পারা যায়,

“দালাই লামা গেনডুনকে খুঁজে পাওয়ার পর একটা ছবি তুলেছিলেন। ৪ বছর আগে সেই ছবির ব্যবহার করে ফরেনসিক শিল্পী টিম উইডেনের বয়স-অগ্রগতি ভিত্তিক প্রযুক্তির সাহায্যে গেনডুন চোকি নিমার বর্তমান চেহারার একটা ছবি তৈরি করা হয়েছে। তিব্বত সরকার এমনটা করে, যাতে করে চীন বিশ্ববাসীর চাপে এসে গেনডুন চোকি নিমাকে প্রকাশ করে।”

তিব্বতের দালাই লামার মতে, আসল পাঞ্চেন লামাকে বন্দী করে চীন তাদের পছন্দসই, নকল পাঞ্চেন লামাকে তিব্বতের সেই আসনে বসিয়েছেন। এবং বর্তমান দালাই লামা মারা যাওয়ার পর পরবর্তী দালাই লামা কে হবে তা-ও চীন নির্ধারণ করতে যাচ্ছে, যা অন্যায়। কারণ এতে তিব্বতিদের মত নেয়। তিনি এখনও পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাননি যে, তিনি গত হওয়ার পর নতুন দালাই লামার সন্ধান কোথায় পাওয়া যাবে। তবে তিনি আশা করছেন, মারা যাওয়ার আগে তিনি সেই ইঙ্গিত পাবেন। তিনি আরও বলেন,

“চীনের উচিত জোর করে কাউকে দালাই লামার আসলে না বসিয়ে মাও জেদং, দেং জিয়াওপিং-এর অবতারদের খুঁজে বের করা। এছাড়া এখন রাজনীতি থেকে দালাই লামা পদকে আলাদা করায় এই পদের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। তাই তিব্বতিদের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেওয়া হোক, তাদের দালাই লামার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা।”

গেনডুন চোকি নিমা ফিরে এসে পাঞ্চেন লামার পদাভিষিক্ত হবে, নাকি চীনা সরকারের ছায়াতলেই থেকে যাবে, সে পরিণতি সময়ই বলে দেবে।

Gendun Choekyi Nyima now is a man of 30 who was abducted at the age of 6 by China Govt.

All necessary references have been hyperlinked inside the article.

Featured Image: visiontimes.com

Related Articles