Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যুক্তরাজ্যে গিয়ে যে কাজগুলো করলে আপনাকে লজ্জায় পড়তে হবে

বিশ্বব্যাপী ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দসই গন্তব্যের তালিকায় উপরের দিকেই থাকে যুক্তরাজ্যের নাম। প্রতিবছর অন্তত ৩০ মিলিয়ন পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে যুক্তরাজ্য, যা একে পরিণত করেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ রাষ্ট্রগুলোর একটিতে।

কিন্তু যুক্তরাজ্য ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য সবসময় কেবল আনন্দময়ই হয় না, কখনো কখনো রীতিমতো বিভীষিকাময়ও হয়ে উঠতে পারে। আর এর প্রধান কারণ ব্রিটিশদের নাক উঁচু স্বভাব, যেটির ব্যাপারে নিশ্চয়ই অবগত আছেন সবাই। জাতিগতভাবেই ব্রিটিশরা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের চেয়ে নিজেদেরকে শ্রেয়তর ভাবতে পছন্দ করে। আর তাই তাদের দেশে বেড়াতে গিয়ে যখন কোনো বিদেশী পর্যটক সেখানকার সংস্কৃতি ও প্রথাবিরুদ্ধ কোনো কাজ করে বসে, সেটিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না তারা। তখন ভদ্রতা বজায় রেখেই তারা যেসব প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা বড় ধরনের লজ্জার কারণ হয়ে উঠতে পারে অনেক স্পর্শকাতর পর্যটকের জন্য।

চলুন, জেনে নেয়া যাক সেসব ভুলের ব্যাপারে, যেগুলো একজন বিদেশী পর্যটকের যুক্তরাজ্য ভ্রমণকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করে দিতে পারে।

যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড আলাদা; Image Source: Pinterest

আয়ারল্যান্ডকে যুক্তরাজ্যের অংশ ভাবা

অধিকাংশ পর্যটকই এই ভুলটি করে থাকে। আয়ারল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যে দুটি আলাদা দেশ, এবং কেবল নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডই যুক্তরাজ্যের অংশ- এই বিষয়টি বুঝে উঠতে পারে না অনেকেই। আর তখন তাদেরকে প্রচন্ড বিভ্রান্তির শিকার হতে হয়।

একটা সময় ছিল যখন আইরিশ ও ব্রিটিশরা একে অন্যকে দেখতে পারত না। এখন আর তেমন অবস্থা নেই বটে, তবু কোনো ব্রিটিশই চায় না আইরিশদেরকে নিজেদের অংশ বলে মনে করতে। তাই বাইরের দেশের কেউ গিয়ে যদি ভুলবশত আইরিশদেরকে ব্রিটিশদের সাথে গুলিয়ে ফেলে, তাতে ব্রিটিশদের চটে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

যুক্তরাজ্যে ফুটবলকে সকার বলা যাবে না; Image Source: American Football International

ফুটবলকে সকার বলা

আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী প্রধানত দুই ধরনের ইংরেজির প্রচলন সবচেয়ে বেশি। একটি হলো ব্রিটিশ ইংরেজি, অপরটি আমেরিকান ইংরেজি। এবং এমন অনেক শব্দই আছে, যেগুলোর অর্থ ব্রিটিশ ও আমেরিকান ইংরেজিতে সম্পূর্ণ আলাদা।

কেউ যদি যুক্তরাজ্যের কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে চিপসের অর্ডার দেয়, বিনিময়ে তার সামনে যে খাবারটি হাজির করা হবে, সেটিকে আমেরিকাসহ বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলের মানুষ চেনে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হিসেবে। সত্যিকারের চিপস খেতে চাইলে, সেটিকে ডাকতে হবে ক্রিস্প নামে। আবার বিস্কুট বলতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা বুঝে থাকে ফ্লাফি প্যাস্ট্রিকে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে গিয়ে যদি তারা বিস্কুট চায়, বিনিময়ে পাবে কুকি।

এরকম অনেক শব্দের অর্থগত ভিন্নতার কারণেই আমেরিকান ইংরেজি জানা মানুষদেরকে বিপাকে পড়তে হয় যুক্তরাজ্যে গিয়ে। তবে সেগুলোকে স্থানীয়রা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলেও, একটি শব্দের ব্যাপারে তারা কোনো অজুহাতই শুনবে না। সেই শব্দটি হলো সকার। ফুটবলকে যদি ভুল করেও কেউ সকার নামে ডেকে ফেলে, তার আর রক্ষে নেই!

যুক্তরাজ্য ও গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যকার পার্থক্য; Image Credit: Henry Williams

যুক্তরাজ্য ও গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যকার পার্থক্য না জানা

অনেকেই যুক্তরাজ্য ও গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে পার্থক্য কী, সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নয়। তারা ভাবে, যুক্তরাজ্য ও গ্রেট ব্রিটেন নামের মাধ্যমে হয়তো একই জায়গাকে নির্দেশ করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে তা একেবারেই ভুল ধারণা।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যুক্তরাজ্য হলো এমন একটি দ্বীপরাষ্ট্র, যার অন্তর্ভুক্ত মোট চারটি দেশ: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। অন্যদিকে গ্রেট ব্রিটেন মানে হলো সেই দ্বীপটি, যেখানে রয়েছে তিনটি দেশ: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস।

সুতরাং, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড গ্রেট ব্রিটেনের অংশ নয়। আর ইউকে’র পূর্ণ নাম হলো: দ্য ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড।

লিচেস্টার নয়, উচ্চারণ হবে লেস্টার; Image Source: Getty Images

জায়গার নাম ভুল উচ্চারণ করা

যুক্তরাজ্যে এমন বেশ কিছু জায়গার নাম আছে, যেগুলোর বানান ও উচ্চারণ একদমই আলাদা। যেমন ইংরেজিতে Leicester দেখে অনেকেই সেটিকে লিচেস্টার উচ্চারণ করতে পারে। কিন্তু আসলে সেটির উচ্চারণ হবে লেস্টার। একইভাবে Norwich উচ্চারণ নরউইচ নয়, বরং নরিজ; আবার Berkshire উচ্চারণ বার্কশায়ার নয়, বরং বার্কশিয়ার।

এখন ভেবে দেখুন, আপনার জন্মভূমি কিংবা যে শহরে আপনি বাস করছেন, সেটিকে যদি কেউ ভুলভাবে উচ্চারণ করে, তাহলে কি আপনার ভালো লাগবে? নিশ্চয়ই না। একই কথা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরের অধিবাসীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বানান ও উচ্চারণের ভিন্নতার কারণে বিষয়টি অনেক বিদেশী পর্যটকের কাছেই অদ্ভুত ঠেকতে পারে, কিন্তু যে শহরে আপনি বেড়াতে যাচ্ছেন, একটু কষ্ট করে সেটির প্রকৃত উচ্চারণ জেনে নিলেই ভালো হয়।

পরিমাপের একক হতে পারে বিভ্রান্তির কারণ; Image Source: YouTube

কোনো কিছুর পরিমাপ আমেরিকান এককে ব্যক্ত করা

পুরো বিশ্বব্যাপী পরিমাপের একক হিসেবে মেট্রিক সিস্টেম গৃহীত হলেও, আমেরিকা মাত্র তিনটি দেশের মধ্যে একটি (অন্য দুটি হলো লাইবেরিয়া ও মায়ানমার), যারা এখনো এ সিস্টেম গ্রহণ করেনি। আর হলিউড চলচ্চিত্র দেখার সুবাদে, পৃথিবীর অন্যান্য অনেক অঞ্চলের মানুষও তাদের মতো করে পাউন্ড কিংবা অন্যান্য আমেরিকান পরিমাপের একক ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই কাজটি যদি কেউ যুক্তরাজ্যে গিয়েও করে, সেটিকে মোটেই ভালো চোখে দেখা হবে না।

এছাড়াও যুক্তরাজ্যে গ্যালন, পিন্ট প্রভৃতি একক ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেগুলোর পরিমাণ আমেরিকান এককের পরিমাণের থেকে ভিন্ন। তাই কেউ যদি যুক্তরাজ্যে গিয়েও আমেরিকান এককের কথা মাথায় রেখে এগুলো ব্যবহার করে, তাহলে পস্তাতে হবে।

যুক্তরাজ্যে তাপমাত্রার কথা বলার ক্ষেত্রেও ফারেনহাইটকে অবশ্যই সেলসিয়াসে রূপান্তর করে নিতে হবে, নতুবা স্থানীয়দের কিছুই না বোঝার সম্ভাবনা রয়েছে।

তারিখ লেখায়ও ভুল হতে পারে; Image Credit: Tama Leaver

ভুলভাবে তারিখ লেখা

আমেরিকাসহ বিশ্বের অল্প কিছু দেশে তারিখ লেখার ক্ষেত্রে, আগে মাসের নাম এবং পরে দিনের সংখ্যা লেখা হয়ে থাকে। যেমন: এপ্রিল ২০। কিন্তু বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও, আগে দিনের সংখ্যা এবং পরে মাসের নাম লেখা হয়। যেমন: ২০ এপ্রিল। তাই যুক্তরাজ্যে গিয়ে অবশ্যই এভাবে তারিখ লিখতে হবে।

এছাড়া ভুল ফরম্যাটে তারিখ লিখলেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। যেমন: ১/১১ দ্বারা ১ নভেম্বরও বোঝানো হতে পারে, আবার ১১ জানুয়ারিও বোঝানো হতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করছে আপনি কোথায় আছেন তার উপর। আমেরিকান ফরম্যাট বলে আগে মাস ও পরে তারিখ লিখতে। কিন্তু যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে আগে দিন ও পরে মাস লেখা হয়।

সুতরাং, যুক্তরাজ্যে গিয়ে ২০ এপ্রিল, ২০১৯ বোঝাতে অবশ্যই ২০/০৪/২০১৯ লিখতে হবে।

যুক্তরাজ্যে বারটেন্ডারকে টিপস দেয়ার চল নেই; Image Source: Getty Images

বারটেন্ডার বা ওয়েটারকে টিপস দেয়া

টিপস দেয়ার সংস্কৃতিটি একেক দেশে একেক রকম। এই বিষয়টি না জেনেই যদি কেউ যুক্তরাজ্যে গিয়ে বারটেন্ডার বা ওয়েটারকে টিপস দিতে যায়, তাহলে বিব্রতকর পরিস্থিতির অবতারণা ঘটতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাবগুলোতে প্রতি গ্লাস ড্রিংকের জন্যই বারটেন্ডারকে টিপস দেয়ার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ পাবগুলোতে কেউ বারটেন্ডারকে টিপস দেয় না। তাই আপনি যদি কোনো বারটেন্ডারকে টিপস দিতে যান, তার আত্মসম্মানে আঘাত লাগাই স্বাভাবিক।

ব্রিটিশ রেস্টুরেন্টগুলোতে ওয়েটারকে টিপস দেয়া হয় ঠিকই, তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অত বেশি নয়। মোট বিলের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ টিপস দেয়া যেতে পারে।

কুশল বিনিময় করতে গিয়েও পড়তে পারেন বিপাকে; Image Source: YouTube

কুশল বিনিময়ে ‘হাউ আর ইউ?’ জিজ্ঞেস করা

রাস্তাঘাটে দেখা হলে ব্রিটিশরা যেভাবে মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করে, তার সাথে অন্যান্য অনেক দেশের সংস্কৃতিরই মিল না থাকার সম্ভাবনা বেশি। যেমন, দেখা হলেই ব্রিটিশরা জিজ্ঞেস করে থাকে, “আর ইউ অল রাইট?” এটি অনেকটা অন্যান্য দেশের মানুষের “হাউ আর ইউ?” প্রশ্নের সমতুল্য। ব্রিটিশরা যখন এমন প্রশ্ন করে, তারা ধরেই নেয় আপনি ভালো আছেন। অর্থাৎ তারা আপনার প্রতি আলাদা কোনো ‘কনসার্ন’ থেকে প্রশ্নটি করছে না। তাই জবাবে আপনার “ফাইন, থ্যাংকস” বলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। 

আবার কোনো ব্রিটিশকে “হাউ আর ইউ?” জিজ্ঞেস করাটাও হতে পারে বড় ধরনের বোকামি। আপনি হয়তো নিতান্তই ভদ্রতার খাতিরে তাকে প্রশ্নটি করেছেন, কিন্তু তখন দেখা যাবে সে সবিস্তারে তার জীবনকাহিনী আপনাকে খুলে বলতে আরম্ভ করেছে। 

অপরিচিত কারো চোখের দিকে তাকানো যাবে না; Image Source: Getty Images

যাতায়াতের সময় কারো চোখের দিকে তাকানো

যাত্রাপথে অনেক অপরিচিত ব্যক্তির সাথেই আমাদের চোখাচোখি হয়। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা চোখ সরিয়ে নিই, এবং বিষয়টি ভুলেও যাই। কিন্তু যুক্তরাজ্যে এই কাজটি করা হবে চূড়ান্ত মাত্রার অভদ্রতা। অপরিচিত ব্যক্তির সাথে চোখাচোখি এখানে নিষিদ্ধ একটি কাজ। তাই ট্রেনে বা বাসে করে কোথাও যাওয়ার সময়, আশেপাশে কারো চোখের দিকে তাকানো যাবে না। হয় জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে হবে, মাথা নিচু করে রাখতে হবে, কিংবা দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে হাতের মোবাইল, ট্যাব কিংবা কিন্ডলের পর্দায়।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/ 

This article is in Bengali language. It is about the most embarrassing things foreign visitors might do in the UK. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Warner Bros.

Related Articles