Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বসেরা দশটি ব্যয়বহুল চিত্র

একটি ভালো চিত্রকর্ম মানুষের মনে এনে দেয় অন্যরকম এক সুখ। ছবির দৃশ্যটি চোখে ধরা দেয়ার সাথে সাথে আমাদের ব্যস্ত করে ফেলে তার দুনিয়ায় ভ্রমণ করানোর জন্য। মাথা থেকে যেন নামতেই চায় না সেই গভীর দৃশ্যের মাতাল করা সৌন্দর্য। আমাদের বিখ্যাত সব চিত্রকরেরা আমাদের জন্য তাদের শিল্পকর্ম রেখে গেছেন। সেই সকল ছবি, বিভিন্ন দেশের শিল্পীপ্রেমীরা নিলামে কিনে নিজেরা ব্যক্তিগত সংরক্ষণ করেছেন অথবা বিক্রি করে দিয়েছেন বড় বড় অকশোনারিতে। এবার তাহলে দেখে নেওয়া যাক শিল্পর সামান্য ব্যাখ্যার সাথে ছবির দামটি। 

‘নাফেয়া ফা ইপোইপো’ (হোয়েন উইল ইউ ম্যারি)

পল গঁগ্যা নামেই পরিচিত উনিশ শতকের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ইউজিন হেনরি পল গঁগ্যা। ফরাসি এই শিল্পী জীবদ্দশায় অতটা পরিচিতি লাভ করেননি, যতটা মৃত্যুর পর পেয়েছেন। তার অংকিত ‘Nafea Faa Ipoipo’ বা হোয়েন উইল ইউ ম্যারি তৈলচিত্রটি বিশ্বের সবচাইতে দামী ছবি!

১৮৯১ সালে প্রথমবারের মতো তিনি ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার সবচেয়ে বড় দ্বীপ তাহিতি ভ্রমণে যান। সেখানে গিয়ে ছবি আঁকায় এক্সপেরিমেন্ট করেন তাহিতির প্রকৃতি, স্থানীয় নারী, তাদের জীবনযাপন, তাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক ইত্যাদি নিয়ে। তারই মধ্য থেকে বের হয়ে আসে ‘হোয়েন উইল ইউ ম্যারি?’।

গঁগ্যার ছবিতে রঙের ব্যবহার ছিল ভিন্নতর। তিনি যে সমস্ত রঙ একই ছবিতে ব্যবহার করতেন, তা সচরাচর দেখা যেত না অন্য আঁকিয়েদের চিত্রে। তাই এই ছবিতে লক্ষ্য করা যায় তাহিতি দ্বীপের হলুদ-সবুজের সাথে নীলের মিশেল। দুই নারী তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বসে আছেন। সামনের নারী প্রতিমূর্তির কানে গোঁজা ফুলটির অর্থ অনেকে বলে থাকেন যে, মেয়েরা যখন বিয়ের জন্য স্বামী খোঁজে, তারই চিহ্নস্বরূপ এই গোঁজা ফুলটি। তাই হয়তো ছবিটির নাম ‘হোয়েন উইল ইউ ম্যারি?’

ছবিটি ২০১৫ সালে কাতারের রাজপরিবার ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় বলে জানা যায়। 

Image Source: workandmoney.com 

লে জুয়র দ্য কার্ত 

পোস্ট ইম্প্রেশনিজম ধারার ফরাসি চিত্রশিল্পী পল সেজান, যাকে বিংশ শতাব্দীর আধুনিক শিল্পকলার পথপ্রদর্শক বলা হয় এবং যাকে পাবলো পিকাসো বলতেন, ‘দ্য ফাদার অফ অল অফ আস’। অনুকরণে অবিশ্বাসী এই চিত্রশিল্পীর ছবির বৈশিষ্ট্যই ছিলো স্থায়ী গড়ন নির্মাণের। অসংখ্য চিত্রাংকনের মধ্যে বিখ্যাত চিত্রটি হলো Les Joueurs de Cartes  অর্থাৎ দ্য কার্ড প্লেয়ার্স।

১৮৯০-৯৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে একই নামে পাঁচটি তৈলচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক চিত্র অংকন করেছিলেন তিনি। পাঁচটি ছবির কোনোটায় পাঁচজন বা দুজন, একেক ব্যাকগ্রাউন্ডে, ভিন্ন মুখভঙ্গিতে কিংবা রঙের তফাতে অংকিত ছিল ছবিগুলো। এই ছবিতে দেখা যায় দুজন তাস খেলোয়ার গম্ভীর মুখে ডুবে আছে খেলায়। মুখভঙ্গিতেই ফুটে উঠেছে খেলায় তীব্র মনোযোগ এবং গুরুত্ব। এই ছবিতে সেজান মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তার বাগানের মালি আর এক কৃষককে।

২০১১ সালে কাতারের রাজপরিবার এই ছবিটি ২৫০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।

Image Source: wikimedia commons

ওম্যান অফ আলজিয়ার্স

১৯৫৪-৫৫ এর শীতকালগুলো পাবলো পিকাসোর কেটেছে ছবি এঁকে এঁকে। ফরাসি চিত্রশিল্পী ইউজিন ডেলাক্রইক্সের দ্য ওম্যান অফ আলজিয়ার্স ইন দেয়ার অ্যাপার্টমেন্ট চিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পাবলো পিকাসো ১৫টি ধারাবাহিক চিত্র অংকন করেন, যার নাম দেন ওম্যান অফ আলজিয়ার্স। এখানে চোখা আকৃতিতে কয়েকটি নারীদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। লাল ও নীল রঙের মিশেলে ছবিটি এখনকার সময়ে সমান ব্যবহৃত।

গোটা সিরিজটাই কিনে নিয়েছিলেন ভিক্টর ও স্যালি গোমেজ, ১৭৯.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে।

 Image Source: theartwolf.com

ল্যা রিভ

ল্যা রিভ, যার অর্থ ‘দ্য ড্রিম’ বা স্বপ্ন। ছবিতে আমরা দেখতে পাই এক অনিন্দ্য সুন্দরী নারী মূর্তি, যে গলায় মুক্তার মালা পরে একটি টকটকে লাল কেদারায় বসে স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। লাল রঙের ব্যবহার আর নারীর মুখভঙ্গি ছবিটিকে আর দশটি ছবির চেয়ে আলাদা করে তোলে।

বিশ শতকের চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর ছিল একজন উপস্ত্রী, নাম ম্যারি থেরেস ওয়ালটার। সেই উপস্ত্রীর পোর্ট্রেটই এঁকেছিলেন পিকাসো এক মধ্যদুপুরে, এক বেলাতেই শেষ করেছিলেন বলে জানা যায়। দিনটি ছিলো ১৯৩২ সালের ২৪ জানুয়ারি। 

পিকাসোর চিত্রশৈলী যাদের মুগ্ধ করে, তারা এই চিত্রকর্মটিকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না। ২২ বছর বয়সী এই তরুণীর কামুক দৃশ্যটি তৈলচিত্রকে আকর্ষণীয় করে তোলে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর তাই, সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ২০১৩ সালে ছবিটি ১৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে কিনে নেন স্টিভেন এ কোহেন।

Image Source: wikimedia commons

থ্রি স্টাডিস অফ লুসিয়ান ফ্রয়েড

বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ-আইরিশ শিল্পী ফ্র্যান্সিস ব্যাকন এবং লুসিয়ান ফ্রয়েড দুজনই চিত্রশিল্পী ছিলেন। তারা বন্ধু হলেও শিল্পের দিক দিয়ে প্রতিযোগী ছিলেন দুজন দুজনের। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। দুজনেই বহুবার তুলির আঁচড়ে একে অপরকে এঁকেছেন। এরপর ১৯৬৯ সালে ব্যাকন ফ্রয়েডের পোর্ট্রেট আঁকেন। একটি নয়, তিনটি ছবি আঁকেন ব্যাকন তার নিজস্ব চিত্রশৈলীতে। তিনটি ছবিই বিমূর্ত, বিকৃত এবং ভিন্ন মাত্রার। তিনটি ছবিই একই আকারের, তবে আলাদা ফ্রেমিং করা। গাঢ় কমলা রঙে বাঁশের পটভূমিতে ছবিটি সমসাময়িক চিত্রকর্মের মধ্যে অন্যতম।

নিলামে ওঠা সবচেয়ে দামি চিত্রকর্মের একটি এই ‘থ্রি স্টাডিস অফ লুসিয়ান ফ্রয়েড’। ২০১৩ সালে ১৪২.৪ মিলিয়ন ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়। প্রকৃত ক্রেতা কে ছিল, তা জানা যায়নি। কারণ তার তরফ থেকে উইলিয়াম অ্যাকুয়াভেলা ছবিটি কেনেন বলে জানা যায়। 

Image Source: workandmoney.com 

নাম্বার ৫

অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এক্সপ্রেশনিজমের জন্য বিখ্যাত মার্কিন চিত্রকর জ্যাকসন পোলক। যারা সমসাময়িক ছবি আঁকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য আদর্শ তিনি। গুণধর এই শিল্পী একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

সমসাময়িক চিত্রপ্রেমীদের জন্য জ্যাকসন পোলকের ‘নাম্বার ৫’ ছবিটি সবচেয়ে প্রিয় ছবির তালিকায় আছে। এই ছবিতে তিনি ব্যবহার করেছিলেন ফাইবার বোর্ড ও সিনথেটিক রেজিন পেইন্টস। ছাই রঙ, সাদা, খয়েরি এবং হলুদ রঙে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলো ছবিটি। অনেকেই একে ‘একগুচ্ছ পাখির বাসা’ বলে আখ্যা দিতেন।

২০০৬ সালের ২রা নভেম্বর ছবিটি বিক্রি করা হয় ডেভিড মার্টিনেজের কাছে, ১৪০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত, দীর্ঘ পাঁচ বছরে তার ছবির মূল্যকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি কোনো চিত্রকর্ম।

Image Source: telegraph.com

ওম্যান ৩

উইলিয়াম দে কুনিং একজন ডাচ চিত্রকর। তার আকার বৈশিষ্ট্যও ছিল অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এক্সপ্রেশনিজম। তিনি ১৯৫১-৫৩ সালের মধ্যে ওম্যান সিরিজে ৬টি নারী চিত্র আঁকেন। এর মধ্যে ওম্যান ৩ নজরে আসে সবার। এই ছবিটিকে বিশ্বের পঞ্চাশটি বিখ্যাত ছবির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়।

তৈলচিত্রটিতে একটি নারীদেহ দেখা যায় কালো রঙে আঁকা। আঁকা বলতে শুধু অবয়ব ছোঁয়া হয়েছে নারী শরীরের। কোনো ডিটেইলিং নেই ছবিতে। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো, কমলা তৈলরঙের ব্যবহারে অঙ্কিত চিত্রটিকে কেউ কেউ ‘ব্ল্যাক গডেস’ বলে ব্যাখ্যা করে থাকেন। দীর্ঘদিন ছবিটি তেহরান মিউজিয়াম অফ কন্টেম্পোরারি আর্টের সংগ্রহে ছিল। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের পর ছবিটি সরকার কর্তৃক সরিয়ে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়।

২০০৬ সালে চিত্রটি ১৩৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হয় স্টিভেন এ কোহেনের কাছে। চিত্রটি তখন পর্যন্ত ৪র্থ দামি ছবি ছিল।

Image Source: workandmoney.com 

অ্যাডেলে ব্লচ বাউয়ার

অ্যাডেলে ব্লচ বাউয়ার চিত্রটিকে ‘ওম্যান ইন গোল্ড’ বা ‘লেডি ইন গোল্ড’ও বলা হয়ে থাকে। গুস্তাভ ক্লিমট অ্যাডেলে ব্লচ বাউয়ারের পোর্ট্রেটটি ১৯০৩-০৭ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বছর ধরে এঁকেছিলেন ছবিটি। বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে কসমেটিক ম্যাগনেটের সাহায্যে তেল, সিলভার এবং স্বর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে ছবিটি করা হয়েছিলো। এতে দেখা যায় সোনালি পটভূমিতে একটি সোনালি ত্রিভুজাকৃতির পোশাক পরে আছেন অ্যাডেলে ব্লচ বাউয়ার। গলায় থাকা বিশেষ চোকারটিতে আছে পুঙ্খানুপুঙ্খ কাজ, যেখানে শোভা পাচ্ছে সোনার গয়নাগুলোর প্রতিচ্ছবি।  

এই চিত্রকর্মটি ১৯৪১ সালে নাৎসি বাহিনী চুরি করে নিয়ে যায়। অতঃপর ৮ বছর চেষ্টার পর  অ্যাডেলের বংশধরেরা ছবিটি উদ্ধার করেন। ছবিটি ২০০৬ সালে ১৩৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে রোনাল্ড লডারের কাছে বিক্রি করা হয়।    

Image Source: theartwolf.com

দ্য স্ক্রিম  

নরওয়েজিয়ান শিল্পী এডওয়ার্ড মাঞ্চ চিত্রকর্মটি সম্পূর্ণ করেন ১৮৯৩ এর দিকে। এতে দেখা যায়, কমলা আকাশ, নীল পানি এবং একটি ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে কেউ তারস্বরে চিৎকার করছে। এই শিল্পকর্মের ব্যাখ্যা মাঞ্চ নিজেই দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্যমতে,

“এক সন্ধ্যায় আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম। একপাশে শহর, অন্যদিকে নীচে সমুদ্রের খাঁড়ি। আমার ভীষণ ক্লান্ত এবং অসুস্থ বোধ হলো। আমি থামলাম এবং সমুদ্রের খাঁড়ির দিকে দাঁড়িয়ে দেখলাম— দূর আকাশে সূর্য ডুবেছিলো, রক্তিম লাল আভায় মেঘ ছেয়ে আছে আকাশ। আমার মনে হলো এক আর্তনাদ আমার পাশ দিয়ে বয়ে গেলো প্রকৃতিতে। আমি সেই চিৎকার অনুভব করলাম। আমি সেই ছবি আঁকলাম। রক্তিম লাল রঙের আকাশ দিলাম। এটাই দ্য স্ক্রিম, চিৎকার।”

এই চিত্রটি জগদ্বিখ্যাত। উনিশ শতকের সেই ছবিকে একবিংশ শতাব্দীর মানুষও আগ্রহভরে স্মরণ করে।
২০১২ সালে ছবিটি বিক্রি হয় ১১৯.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এই ছবির খরিদ্দার কে ছিলেন তা জানা যায়নি।  

Image Source: workandmoney.com

দ্য ফ্ল্যাগ

২৪ বছর বয়সী জ্যাসপাস জনস ‘দ্য ফ্ল্যাগ’ তৈলচিত্রটি আঁকেন। ১৯৫৩-৫৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আঁকা তৈলচিত্রটির জন্য এখনও মানুষ তাকে মনে রেখেছে।

জ্যাসপার জন একজন আমেরিকান শিল্পী, যিনি অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এক্সপ্রেশনিজম, নব্য-ডাডা এবং পপুলার আর্ট ধারায় ছবি আঁকতেন। এই ছবিটিও সেই ধারার অন্তর্ভুক্ত। আমেরিকান ফ্ল্যাগের স্বপ্ন নিয়েই আঁকা ‘দ্য ফ্ল্যাগ’। প্লাইউডের ওপর তৈল এবং কোলাজ করে আঁকা হয়েছিল আমেরিকান পতাকাটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পতাকা নিয়ে তিনি প্রায় ৪০টি ছবি এঁকেছেন।

ছবিটি স্টিভেন কোহেন ২০১০ সালে ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেন।

Image Source: moma.org

This article is written in bangla language. It is about the top 10 most expensive paintings of the world. 
Featured image: youtube.com

References are mentioned and hyperlinked below.

1. Paul Gauguin's When Will You Marry? becomes most expensive artwork ever - The Guardian

2. Qatar Purchases Cézanne’s The Card Players for More Than $250 Million, Highest Price Ever for a Work of Art - Vanity Fair

3. A detailed and and frequently updated list of the most expensive paintings ever - The art wolf

 

4. Top 10 Most Expensive Paintings in the World - Money Connexion

Related Articles