Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানসিক সমস্যা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন যারা

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকান্ড ও কথাবার্তা দেখে তাকে আপনার ‘পাগল’ কিংবা ‘বদ্ধ উন্মাদ’ মনে হয়? চিন্তার কিছু নেই। এ তালিকায় আপনি ছাড়াও আছে আরো অসংখ্য ব্যক্তি। ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, নিরপেক্ষ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাধারণ মানুষ, এমনকি নামকরা মনোবিদদের মধ্যে অনেকেও মনে করে, মানসিক সমস্যায় ভুগছেন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হলো, তার মধ্যে নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার রয়েছে। অনেকে আবার তাকে সাইকোপ্যাথ হিসেবেও চিহ্নিত করে থাকে।

ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রকাশনা জগতে একটি সাব জনরারও জন্ম হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে দ্য ডেঞ্জারাস কেস অব ডোনাল্ড ট্রাম্প: টুয়েন্টি সেভেন সাইকিয়াট্রিস্টস অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ এক্সপার্টস অ্যাসেস এ প্রেসিডেন্ট, রকেট ম্যান: নিউক্লিয়ার ম্যাডনেস অ্যান্ড দ্য মাইন্ড অব ডোনাল্ড ট্রাম্প, এ ক্লিয়ার অ্যান্ড প্রেজেন্ট ডেঞ্জার: নার্সিসিজম ইন দ্য এরা অব ডোনাল্ড ট্রাম্প, টোয়ালাইট অব অ্যামেরিকান স্যানিটি: এ সাইকিয়াট্রিস্ট অ্যানালাইজেস দ্য এজ অব ট্রাম্প প্রভৃতি বই। অবশ্য ট্রাম্পের এসবে কিছুই যায় আসে না। তিনি নিজে বরাবরই নিজেকে দাবি করে এসেছেন একজন “খুবই সুস্থিত প্রতিভা’ হিসেবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প; Image Source: Psychology Today

তবে জেনে হয়তো অবাক হবেন, ট্রাম্পই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের একমাত্র প্রেসিডেন্ট নন যার মানসিক স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০০৬ সালের এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯ শতাংশ প্রেসিডেন্টই জীবনের কোনো একপর্যায়ে মনের অসুখে ভুগেছেন। আর ২৭ শতাংশ এ সমস্যায় ভুগেছেন ক্ষমতায় থাকাকালীনই।

নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষক দলটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রতি চারজন প্রেসিডেন্টের মধ্যে একজনের মধ্যেই ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার ডায়াগনস্টিক ক্রাইটেরিয়া পাওয়া যেত। এছাড়া কয়েকজন প্রেসিডেন্টের মধ্যে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি বা সামাজিক উদ্বিগ্নতাও দেখা যেত।

গবেষণাটির নেতৃত্ব প্রদানকারী প্রফেসর জোনাথন ডেভিডসন বলেন, “অনেকের মধ্যেই এই সমস্যাগুলো সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কিন্তু এরকম চাপের একটি কাজ তাদের সেই সুপ্ত সমস্যাগুলোকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খুবই কঠিন একটি কাজ, এবং কোনো মানুষের ভিতরই অসীম ক্ষমতা নেই যে সে দিনের পর দিন এর চাপ সহ্য করে যেতে পারবে।”

চলুন পাঠক, জেনে নিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সেসব বিখ্যাত প্রেসিডেন্টের কথা, যারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কিংবা জীবনের কোনো একটি পর্যায়ে মানসিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন।

আব্রাহাম লিংকন; Image Source: The Weekly Standard

আব্রাহাম লিংকন

ইতিহাসবিদরা ধারণা করে থাকেন, আব্রাহাম লিংকন তার গোটা প্রেসিডেন্সির মেয়াদই অতিবাহিত করেছিলেন বিষণ্নতায় ভুগে। যখন তার বয়স কম ছিল, তিনি প্রায়ই আত্মহত্যার কথা বলতেন, যা একটি মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারের লক্ষণ। এমনকি তিনি নাকি এক বা একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। যারা লিংকনকে কাছ থেকে জানত ও চিনত, তারা একে তার “হতাশা” হিসেবে অভিহিত করত, কেননা তার মধ্যে প্রায় সবসময়ই নিরাশা ও দুঃখবোধ ঘোরাফেরা করত।

রোনাল্ড রিগ্যান

২০০৪ সালের জুন মাসে অ্যালঝেইমার রোগ সম্পর্কিত জটিলতায় মৃত্যু হয় রোনাল্ড রিগ্যানের। ডিমেনশিয়াকে (স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া) সাধারণত কোনো মানসিক অসুখ নয়, বরং ব্রেইন ডিজঅর্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু রিগ্যানের মধ্যে যদি এই ডিজঅর্ডারের চিহ্ন প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায়ও পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে তার মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করেছে, ফলে নিজের কাজটি যথাযথভাবে করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন তার সমালোচকরাও অনেকেই এমনটি ধারণা করত, এবং তাকে দেশ শাসনের অযোগ্য বলে দাবি করত।

জন এফ কেনেডি

প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই কেনেডি বেশ কিছু শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন, যা তিনি মানুষের কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অনেকেই মনে করেন এসব শারীরিক জটিলতা ঢাকতে তিনি অনেক কড়া ডোজের ওষুধ সেবন করতেন, যা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার কর্মদক্ষতায় প্রভাব ফেলত।

বিল ক্লিনটন; Image Source: Getty Images

বিল ক্লিনটন

আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের একজন, বিল ক্লিনটন, উচ্চমাত্রার নার্সিসিজমে আক্রান্ত ছিলেন। নার্সিসিজম কখনো কখনো ভালোও হতে পারে। যেমনটা সাইকোলজি টুডে বলছে, নার্সিসিজম একজন নেতাকে আত্মবিশ্বাসী ও মানসিকভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তোলে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ক্লিনটনের মধ্যকার নার্সিসিজম স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যে কারণে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই তিনি বিভিন্ন অনৈতিক আচরণ ও অভিব্যক্তির মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

থিওডর রুজভেন্ট

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রুজভেল্ট জীবনভর এমন একধরনের বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভুগে এসেছেন, যার ফলে প্রায়শই তার মধ্যে পারস্পরিক সাংঘর্ষিক ম্যানিয়া (বাতিকগ্রস্ততা) ও বিষণ্ণতার এপিসোড দেখা যেত। যারা তাকে চিনত তারা প্রায়ই বলত যে, তিনি নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, হঠাৎ হঠাৎ উন্মত্ত ও ক্ষীপ্ত হয়ে যান। এর ফলে অনেক সময়ই তিনি বিভিন্ন বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতেন। মৃত্যু অবধি তার মধ্যে এসব সমস্যা বাসা বেঁধে ছিল।

রিচার্ড নিক্সন

একজন প্রেসিডেন্ট যদি অ্যালকোহল কিংবা অন্যান্য মাদকের প্রতি নেশাদ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন, এর চেয়ে বাজে ব্যাপার আর কিছুই হতে পারে না। আর রিচার্ড নিক্সন এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ক্ষমতায় থাকাকালীনও অ্যালকোহল ও নেশাদ্রব্য দুয়ের প্রতিই অতিমাত্রায় আসক্ত ছিলেন। এর ফলে প্রায়ই তিনি লাগামছাড়া আচরণ শুরু করতেন, নিজের কাছের সম্পর্কগুলোকে টিকিয়ে রাখতে পারতেন না, এবং প্রায়ই সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একদম নিঃসঙ্গ ও একা হয়ে যেতেন।

উইলিয়াম হাওয়ার্ড ট্যাফট; Image Source: History

উইলিয়াম হাওয়ার্ড ট্যাফট

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে “ভারি” প্রেসিডেন্ট ট্যাফট। ক্ষমতায় থাকাকালীন তার ওজন ছিল ৩০০ পাউন্ড। তার বডি ম্যাস ইনডেক্স ছিল ৪৬ এর আশেপাশে, আজকের দিনে হলে যেটিকে অসুস্থ রকমের স্থূলতা হিসেবে গণ্য করা হতো। এই স্থূলতার ফলে তার শরীরে অন্যান্য বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যেত। যেমন- তার স্লিপ ডিজঅর্ডার বা ঘুমের সমস্যা ছিল। ফলে অফিসিয়াল মিটিংয়ের সময়ও তাকে ঘন ঘন হাই তুলতে বা ঝিমাতে দেখা যেত।

উড্রো উইলসন

১৯১৯ সালে উইলসনের স্ট্রোক হয়, যার ফলে তিনি তার মেয়াদ শেষ করার অযোগ্য হতে পড়েন। শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছিল তাকে এ ব্যাপারে নীরব রাখার। কিন্তু এর আগেও, তিনি বিষণ্ণতা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন।

ওয়ারেন হারডিং

ঠিক কী কারণে হারডিংয়ের স্বাস্থ্যহানি ঘটেছিল এবং মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিলেন, তা আজও এক অমীমাংসিত রহস্য। তবে অনেক বিশেষজ্ঞেরই বিশ্বাস, দীর্ঘকাল মানসিক রোগের সাথে লড়াই করে করে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন তিনি, যা তার মধ্যে প্রাণনাশক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছিল।

ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্স; Image Source: Universal Images Group

ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্স

নিউ ইংল্যান্ড হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির মতে, ক্ষমতা গ্রহণের সময় পিয়ার্স পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের সাথে লড়াই করছিলেন। তার শেষ পুত্রও যখন রেল দুর্ঘটনায় মারা যায়, তারপর থেকে পিয়ার্স মানসিকভাবে প্রচন্ড রকম ভেঙে পড়েছিলেন, এবং ইতিহাসবিদদের ধারণা, তিনি প্রিয়জন হারানোর এই ব্যথা কখনোই পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে করণীয় কাজগুলোও তিনি ঠিকঠাক করতে পারতেন না।

ক্যালভিন কুলিজ

পিয়ার্সের মতো, কুলিজকেও সন্তান হারানোর বেদনা সহ্য করতে হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই অপ্রত্যাশিতভাবে তার পুত্রের মৃত্যু ঘটে। এরপর থেকে কুলিজের মধ্যে ইনসমনিয়া, সংশয়, খিটখিটে মেজাজ প্রভৃতি দেখা দিতে শুরু করে, যেগুলো সবই শোক ও বিষাদের চিহ্ন।

লিন্ডন বি. জনসন

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অনেকগুলো অর্জনের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন জনসন। কিন্তু তার মধ্যে খুব বাজে ধরনের মুড সুইংয়ের প্রবণতা ছিল, যা তিনি গোপন করতেও পারতেন না। তার মধ্যে প্যারানয়েড আচরণ দেখা যেত, তিনি প্রকাশ্যে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতেন, এবং সমালোচনার জবাব ঠিকভাবে দিতেন না।

মার্টিন ভ্যান বুরেন; Image Source: Famous People

মার্টিন ভ্যান বুরেন

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের একজন মার্টিন ভ্যান বুরেনের মধ্যে সাইকোপ্যাথিক প্রবণতা ছিল। ফরচুনে প্রকাশিত এক আর্টিকেল অনুযায়ী, সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সাইকোপ্যাথিক প্রবণতা সবচেয়ে কম দেখা যায়। এছাড়া অনেক মনোবিজ্ঞানী এমনটাও মনে করেন যে, সাইকোপ্যাথদের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন পদে আসীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যে কারণে অনেক সিইও কিংবা কমান্ডার ইন চিফরাই সাইকোপ্যাথ হয়ে থাকে।

অ্যান্ড্রু জ্যাকসন

জ্যাকসনের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তো ছিলই, পাশাপাশি ইমোশনাল ট্রমাও তার প্রেসিডেন্সির মেয়াদকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। প্রেসিডেন্ট হওয়ার কিছুদিন আগে তার স্ত্রী হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। সেই শোক ভোলার আগেই প্রেসিডেন্সির গুরুদায়িত্ব চেপে বসে তার কাঁধে। রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ও তার খুবই কম ছিল, যাদের সঙ্গ তার দুঃখ ভোলাতে পারত।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about the US presidents who suffered from mental illness. Necessary references have been hyperlinked inside. 

Featured Image © Getty Images

Related Articles