Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কে পাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ২০২০?

আজ ৯ অক্টোবর, শুক্রবার নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। পাঁচ সদস্যের নোবেল কমিটি নির্ধারণ করবে এই সম্মানজনক পুরস্কার কে পাবেন। পদার্থ, রসায়ন,  চিকিৎসা, অর্থনীতি, সাহিত্য ইত্যাদি সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়। শুধু শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় নরওয়ের অসলো থেকে। এ বছর কে বা কারা পাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার? এই লেখার উদ্দেশ্য শান্তি পুরস্কার কে পাবে সেই বিষয়ে অনুমান করা। প্রশ্নের উত্তর সরাসরি বললে, উত্তর হলো- কেউ জানে না শান্তি পুরস্কার কে বা কারা পাবে।! আমরা যা করতে পারি, সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা, কয়েকজন ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম অনুমান করা। যারা এ বছর এই বিশেষ পুরস্কারটি পেতে পারে।

Image cource: Science

মনোনয়নের তালিকা

নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার প্রথম শর্ত কারো দ্বারা মনোনীত হওয়া। পৃথিবীর নির্বাচিত ৩,০০০ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এই মনোনয়নকারীরা যাদের মনোনীত করে, তাদেরকে নোবেল কমিটি পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করবে। 

মনোনয়ন নিয়ে প্রতিবারই আলোচনা হয়। এবারও হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনদের মতো রাষ্ট্রনায়কদের মনোনয়ন এ বছর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন, ট্রাম্প পুরস্কারটি জিতেও যেতে পারেন। কারণ ইসরায়েল আর আরব আমিরাতের মধ্যে শান্তি আনার দুতিয়ালি করেছেন তিনি। 

নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য এ বছর রেকর্ড পরিমাণ মনোনয়ন পাওয়া গেছে। ১৯০১ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর পুরস্কারটি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বযুদ্ধ আর কয়েক বছর বাদে প্রতিবছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে কেউ না কেউ। এ বছর মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ৩১৮টি। ইতিহাসে এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছিল- ৩৭৬টি। এবারে মনোনয়ন পেয়েছেন ২১১ জন ব্যক্তি ও ১০৭টি সংগঠন। 

এতজন মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে আগাম অনুমান করার জন্য আমরা কেউ সংক্ষিপ্ত তালিকা আশা করতে পারি না। নোবেল কমিটি তাদের মুখে তালা মেরে রাখে অন্তত ৫০ বছর। কে মনোনয়ন দিয়েছিল, কাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, কে কে পেতে পারত- এসব কেউ জানতে পারে না। অনুমানের চেষ্টা করাও খুব কঠিন। প্রতিবছরই অনুমান করে সংক্ষিপ্ত তালিকা বানিয়েছে বিভিন্ন পত্রিকা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অধিকাংশ সময় দেখা গেছে, এসব তালিকার বাইরে থেকে কেউ পেয়ে গেছে নোবেল শান্তি পুরস্কার।

যাদের পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা আছে

এখন বৈশ্বিক মহামারীতে ভ্যাকসিন আবিস্কার খুব আলোচনায় আছে। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আগে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পেলেও সেটা অক্টোবর শেষ হওয়ার আগে হবে না। কিন্তু আগামী বছর যদি কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারে, নিশ্চিত থাকা যায় যে তারা কোনো এক ক্ষেত্রে নোবেল পাবে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসা, রসায়ন, এমনকি শান্তিতেও নোবেল পেতে পারে তারা। এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে টিকা আবিষ্কারের জন্য।

গ্রেটা থুনবার্গ; Image source: NBC News

অপরদিকে এবারে আলোচনায় আছেন কয়েকজন রাষ্ট্রনায়ক। আছেন ১৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থী, পরিবেশবাদী ব্যক্তিত্ব গ্রেটা থুনবার্গ, গত বছরও সম্ভাবনার তালিকায় যে উপরের দিকে ছিল। তালিকায় আছেন বৈশ্বিক মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা অ্যার্ডার্ন। নিজ দেশ নিউজিল্যান্ডে কোভিড মহামারি মোকাবেলায় বেশ সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। তথ্য ফাঁসকারী এডওয়ার্ড স্নোডেন এবারের তালিকায় আছেন।

তালিকায় সবার উপরে আছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা সংগঠন ওয়ার্ড হেলথ অর্গানাইজেশন। পৃথিবীবাসীকে মহামারীর শুরু থেকে সংগঠনটি স্বাস্থ্য বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে আসছে। বিল গেটস, মুন জায়ে ইন, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ তালিকায় আছেন। এর মধ্যে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিচার চলছে। রায় হলে যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত কারাগারে যাবজ্জীবন সাজা খাটতে হতে পারে তাকে।  

নোবেল শান্তি পুরস্কারের তালিকা অনেক লম্বা। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি-আমেরিকান অধ্যাপক ড. রুহুল আবিদ ও তার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (এইচএইএফএ) শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। ড. রুহুল ও তার প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস। তালিকায় আরও আছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, এবং নারী ব্যক্তিত্ব মিশেল ওবামাও।

ড. রুহুল আবিদ; Image source: LifeTv24

মানবিকতার পুনরুদ্ধারে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার পদ্ধতিগত বৈষম্য দূর করতে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। মানুষকে সচেতন করেছে। এই আন্দোলন পেতে পারে পুরস্কার। এরা সকলে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী। নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২০ এদের যে কারো ঘরে যেতে পারে।

ইতিহাস কী বলে?

২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। শান্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় তার প্রচেষ্টা ও প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ এড়াতে তার পদক্ষেপের জন্য এ পুরস্কার পান তিনি। কিন্তু বিভিন্ন সম্ভাবনার তালিকায় দেখা যায়, গ্রেটা থুনবার্গ আবি আহমেদের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন।এর আগের বছর শান্তি পুরস্কার পান দুজন- ইরাকের কুর্দি মানবাধিকারকর্মী নাদিয়া মুরাদ ও কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়েজি। যুদ্ধকালে ও সশস্ত্র সংগ্রামের সময় যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে অবদান রাখায় নাদিয়া মুরাদ ও ডেনিস মুকওয়েজিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

আবি আহমেদ; Image source: Associated Press

২০১৮ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে যেসব বাজির তালিকা ছিল, সেখানে  প্রথম দশজনের মধ্যে তাদের নাম ছিল না। তালিকার বাইরে থেকে পুরস্কার পাওয়া তাই খুব সাধারণ ব্যাপার। 

সবার উপরে ডব্লিউএইচও  

এই বছরের শুরু থেকেই বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর কবলে পড়ে। লকডাউনে মানুষ ঘরবন্দী হয়। আলোচনায় আসে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্বের মতো ব্যাপারগুলো। এসব ব্যাপারে সঠিক দিক-নির্দেশনা জারি করে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন। মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি কমানো, মাস্ক ব্যবহারে নির্দেশনা বিষয়ে সংগঠনটি নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও বিভিন্ন দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে, মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তবু তাদের প্রচেষ্টা সর্বাধিক ছিল। তাই বাজির তালিকাগুলো, অনুমান করা ওয়েবসাইটগুলোতে দেখা যায়, এখন নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনার তালিকায় সবার উপরে আছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা।

Image courtesy: The Financial Express

ট্রাম্প বা গ্রেটা থুনবার্গ কি নোবেল পুরস্কার পাবেন? 

ট্রাম্প নোবেল পেতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে শান্তি আনার প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্টের অতি-ডানপন্থী প্রোগ্রেস পার্টির সদস্য ক্রিশ্চিয়ান টাইব্রিং-জিজেডে। জিজেডে জানিয়েছেন, এই প্রচেষ্টা  মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার দরজা খুলে দেবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প; Image source: The Atlantic

গত মার্চ মাসে বাজির তালিকায় সবার উপরে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ। মার্চ মাসে সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল জলবায়ু পরিবর্তন। মার্চ মাসের পর পৃথিবী বদলে গিয়েছে। মানুষের কাছে এই মুহুর্তে জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে বড় বিষয় না। যদিও এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো মনোনীত হলেন গ্রেটা। তিনি টাইম পত্রিকার ২০১৯ সালের পার্সন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। এখন বৈশ্বিক মহামারী, সিস্টেমিক রেসিজম, রাজনৈতিক বিভেদ বড় আকারে দেখা দিয়েছে পৃথিবীজুড়ে। ফলে সম্ভাবনার তালিকায় পিছিয়ে পড়েছেন গ্রেটা।

সংগঠনের পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা

নোবেল শান্তি পুরস্কার থেকে কোনো প্যাটার্ন বের করা কঠিন। কয়েক বছর পর পর কোনো সংগঠন পুরস্কার পায়। ব্যক্তির থেকে সংগঠনের প্রভাব বিশ্বজুড়ে যে বছর বেশি থাকে, সংগঠনের শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেড়ে যায়। ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুরস্কার পায় রেডক্রস। ২০০১ সালে নাইন ইলেভেনের ঘটনার পর পুরস্কার পায় জাতিসংঘ। সর্বশেষ ২০১৭ সালে কোনো সংগঠন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায়। সেই বছর শান্তিতে নোবেল পায় ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপন- আইসিএএন। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিক নিয়ে জনমত গড়ে তোলা ও চুক্তির মাধ্যমে এর ব্যবহার বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাদেরকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। এ বছর এমন কোনো ঘটনা ঘটবে কি না জানা যাবে আজ।

This Bengali article discusses the possible winner of this year's Nobel Peace Prize Winner. References have been hyperlinked inside.

Related Articles