এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলি। এ খবর অবশ্য বেশ পুরনো। প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়ার সাথে শান্তিচুক্তি করার জন্যই তিনি এই পুরস্কার লাভ করেছেন। তবে এই শান্তিচুক্তি করার পেছনে বড় অবদান ছিল ইরিত্রিয়ার রাষ্ট্রপতি ইসাইয়াস আফওয়ার্কির। কিন্তু অবাক করা হলেও সত্য যে, তাকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি। এককভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন আবি আহমেদ আলি। কিন্তু ইসাইয়াস কেন নোবেল থেকে বঞ্চিত হলেন?
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইজ-অ্যান্ডারসেন অবশ্য বলেছিলেন,
একপক্ষের দ্বারা কখনোই শান্তির বার্তা জাগ্রত হয় না। ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার সকল জনগণের মধ্যে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে এই শান্তিচুক্তি।
এর আগে বেশ কয়েকবার শত্রুভাবাপন্ন দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি করে বেশ কয়েকজন নেতা শান্তিতে নোবেল জিতেছেন। এর বড় উদাহরণ ১৯৯৪ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইসরাঈল ও ফিলিস্তিনের তিন নেতা। সে বছর ইসরাঈলের শিমন পেরেজ ও আইজ্যাক রবিনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাতকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
কিন্তু ২০১৯ সালের শান্তিতে শুধুমাত্র আবি আহমেদ আলি নোবেল পাওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। তবে ইরিত্রিয়ার রাষ্ট্রপতি ইসাইয়াস আফওয়ার্কির নোবেল না পাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে তিনি সামরিক একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। ইরিত্রিয়াকে কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ার সাথে তুলনা করা হয়। সেই সাথে ইসাইয়াসের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
গত বছর ইরিত্রিয়ার রাজধানীতে দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি হলেও এর বড় অংশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এর বাইরে এই চুক্তি ইরিত্রিয়ানদের জন্য বেশি কিছু বয়ে আনেনি। মূলত তারা এই চুক্তি থেকে খুব একটা লাভবান হতে পারেননি। এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক লায়েটিটিয়া বাদের বলেন,
আমি মনে করি এই চুক্তি নিয়ে ইরিত্রিয়ায় অনেক আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই ইরিত্রিয়ার জনগণ বুঝতে পারেন কার্যত পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
লন্ডনে বসবাসরত ভানিসা সেহায়ে নামে এক ইরিত্রিয়ান আন্দোলনকারী হতাশা প্রকাশ করে বলেন,
আমি বলতে চাই এই চুক্তি ইরিত্রিয়ার মানুষের মধ্যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেনি। কারণ চুক্তির এক বছরের বেশি সময় পার হলেও তারা সেই আগের অবস্থাতেই রয়েছেন।
চুক্তির পটভূমি
ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংঘাত বেশ পুরনো। ১৯৫১ সালে ইরিত্রিয়া থেকে ইউরোপীয় উপনিবেশিকরা চলে যাওয়ার পর তার দখল নেয় ইথিওপিয়া। ইরিত্রিয়ার অবস্থান ছিল ইথিওপিয়ার উপকূলের দিকে। যার ফলে মূল ভূখণ্ডের ইথিওপিয়ার কাছে ইরিত্রিয়ার গুরুত্ব ছিল অনেক।
কিন্তু ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতাকামীরা ইথিওপিয়ার এই দখলদারিত্ব মেনে নেয়নি। যার ফলে ১৯৬১ সাল থেকে ইথিওপিয়ার সেনাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইরিত্রিয়ার মুক্তি সেনারা। অবশেষে তিন দশক যুদ্ধ চলার পর ১৯৯১ সালে ইথিওপিয়ার কমিউনিস্ট নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে হটিয়ে ইরিত্রিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। এর দুই বছর পর তারা নির্বাচন আয়োজন করে নিজস্ব সরকার গঠন করে।
ইরিত্রিয়া স্বাধীন হলেও দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধ তখনো চলমান। সীমান্তবর্তী বাদমি শহরে প্রথমে ছোট ছোট সংঘাত হলেও ১৯৯৮ সালে আবারো দুই দেশের মধ্যে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে আনুমানিক প্রায় এক লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বাদমি শহর এবং এর আশেপাশের বিতর্কিত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইথিওপিয়ার সেনারা।
২০০০ সালে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে শান্তিচুক্তির এক অংশ হিসেবে দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা হয়। উপনিবেশিক সময়ের দলিল পত্র যাচাই-বাছাই করে বাদমি ও এর আশেপাশের এলাকাকে ইরিত্রিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু ইথিওপিয়া তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে দুই দেশের মধ্যে স্থবিরতা থেকে যায়।
তখন ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে 'না যুদ্ধ, না শান্তি', এমন পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে তখন কোনো কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও পরিবহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বিরাজের পাশাপাশি একে অপরের বিদ্রোহী গ্রুপকে সহায়তার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল।
২০১৮ সালে ইথিওপিয়ার রাজনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আবি আহমেদ আলি। তিনি একসময় ইথিওপিয়ার গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। আবি নিজেও বাদমি থেকে ইরিত্রিয়ানদের বের করে দেওয়ার অভিযানে নিযুক্ত ছিলেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই আবি আহমেদ আলি প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সাথে সংঘাতের ইতি টানার জন্য পদক্ষেপ নেন। ২০১৮ সালের জুনের ৫ তারিখে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী পূর্বের শান্তিচুক্তি মেনে নিয়ে নিজেদের দখলে থাকা বাদমি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এর এক সপ্তাহ পরে ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন। উভয় দেশ শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সচেষ্ট বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এর ঠিক একমাস পর জুলাই মাসের ৮ তারিখে এক ঐতিহাসিক সফরে ইরিত্রিয়া যান আবি আহমেদ আলি। রাজধানী আসমারার বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান ইসাইয়াস আফওয়ার্কি। বিমানবন্দরে দুই নেতা পুনরায় দূতাবাস, সরাসরি যোগাযোগ এবং যানবাহন চালু করার ঘোষণা দেন। ইরিত্রিয়ায় বসে সেদিন আবি বলেন,
ট্যাঙ্ক বা মিসাইলের মতো আধুনিক অস্ত্রের চেয়ে ভালোবাসা অধিক শক্তিশালী। ভালোবাসা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়। আজ আমরা আসমারাতে অসাধারণ এক চুক্তি করতে পেরেছি।
এরপর সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের জেদ্দায় আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি সম্পন্ন করে 'হর্ন অব আফ্রিকা'র এই দুই দেশ। চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ না করা হয়নি। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপস্থিতিতে ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া তাদের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করে।
চুক্তিটি কেন পুরোপুরি ফলপ্রসু হয়নি
ঐতিহাসিক চুক্তিটি দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও সমালোচকদের মন জয় করতে ব্যর্থ হন ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার নেতারা। বিশেষ করে আবি আহমেদ আলির নোবেল জয়ের পর সমালোচনা আরো বেড়ে গেছে। কেননা এই চুক্তি ইরিত্রিয়ান ও ইথিওপিয়ানদের মধ্যে বড় কোনো পরিবর্তন বয়ে আনেনি। অথচ ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তির জন্য নোবেল পেয়ে গেছেন।
২০১৮ সালে চুক্তির পর ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার নাগরিকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু ইরিত্রিয়া কয়েক মাসের মধ্যে আবার সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। মূলত ক্ষমতা হারানোর ভয় থেকে ইসাইয়াস এই সিদ্ধান্ত নেন। ইথিওপিয়ার রাজনীতির বড়সড় পরিবর্তনে তিনি হতচকিত হয়ে পড়েন। সীমান্ত খুলে দেওয়ার কারণে ইরিত্রিয়াতেও এমন পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন ইসাইয়াস।
ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন ইসাইয়াস। ১৯৯৩ সালে দেশের প্রথম নির্বাচন থেকে তিনি ক্ষমতায়। বিরোধীদের তিনি কঠোরভাবে দমন করেছেন। বিরোধীদের রাজনীতি করার মতো কোনো পরিস্থিতি তিনি রাখেননি।
২০১৫ সালে ইসাইয়াসের শাসনামল নিয়ে কয়েক বছরের দীর্ঘ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে জাতিসংঘ। রিপোর্টে তার ব্যাপক ও গণহারে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, গুম এবং জোর করে শ্রমসাধ্য কাজ করানোর মতো মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ উঠে আসে।
ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার শান্তিচুক্তি মোটের উপর ফলপ্রুস না হলেও ফায়দা লুটেছেন ইসাইয়াস। এই চুক্তির ফলে তিনি আবি আহমেদ আলিকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ ইরিত্রিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ৷ কিন্তু এর ফলও পায়নি সেখানকার সাধারণ মানুষ। কারণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে ইসাইয়াস এবং তার সহায়তাকারী সেনাবাহিনী।
ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার মধ্যে শান্তি চুক্তির দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন এবং চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটির পাশাপাশি উপ-কমিটি গঠন। কিন্তু এই দুটি বিষয়ে উভয়ের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল একটি দিক ছিল। চুক্তির পর শোনা গিয়েছিল দেশ দুটি যৌথভাবে পটাশ উত্তোলন করবে। কিন্তু পরবর্তীতে সে বিষয়ে আর শোনা যায়নি। কমিটি গঠনের বিষয়টিও ঠিক তেমন। সীমান্ত নিয়ে যে সমস্যা সেটারও এখন পর্যন্ত শতভাগ সমাধান সম্ভব হয়নি। আপাতদৃষ্টিতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ দুটি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল তা সফল হয়নি।
একটি চুক্তিও ফলপ্রসু না হওয়ার পরও শুধু আবি আহমেদকে কেন নোবেল দেওয়া হলো তাহলে? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ভ্যানগার্ড আফ্রিকার পরিচালক জেফ্রি স্মিথ। তিনি বলেন,
প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ও তার নতুন সরকারের দেশ গঠনের কাজকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যকার শান্তিচুক্তির ব্যর্থতার জন্য মূলত উভয়ই দায়ী। তবে ইসাইয়াস সরকারের দায় এখানে বেশি। মূলত তার সরকার এখনো চুক্তি বাস্তবায়ন করতে শতভাগ ইচ্ছুক নয়। যদিও এই চুক্তি থেকে ইথিওপিয়ার চেয়ে ইরিত্রিয়ার লাভের পাল্লাই ভারী। আবি আহমেদ আলি তার দেশের সৈন্য বিতর্কিত এলাকা থেকে প্রত্যাহার করলেও সেখানকার মানুষদের উপর নির্যাতন বন্ধ হয়নি। পূর্বে যে নির্যাতন চালিয়েছে ইথিওপিয়া, বর্তমানে ঠিক সেই কাজ করছে ইরিত্রিয়ার সেনারা। তবে শুধুমাত্র বাদমিতে নয়। বরং পুরো দেশ জুড়ে।
ইসাইয়াস কেন প্রত্যাখ্যাত
১৯৪৬ সালে আসমারায় জন্মগ্রহণ করেন ইসাইয়াস আফওয়ার্কি। ইরিত্রিয়া তখন ব্রিটিশদের অধীনে। এরপর ১৯৬২ সালে ইরিত্রিয়ার দখল নেয় ইথিওপিয়া। ১৯৬৫ সালে তিনি আদ্দিস আবাবায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু এক বছর পরই পড়াশোনা ছেড়ে ইরিত্রিয়ান লিবারেশন ফ্রন্ট (ইএলএফ) এ যোগ দেন। ইএলএফ তখন স্বাধীনতার জন্য ইথিওপিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত।
ইসাইয়াস ছিলেন ইএলএফ-এর প্রথম সারির যোদ্ধাদের একজন। ১৯৬৭ সালে আরো বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধার সাথে তারা চীনে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। কিন্তু ফেরার পথে তারা বিভক্ত হয়ে পড়েন। তখন ইরিত্রিয়ান পিপলস'স লিবারেশন ফ্রন্ট নামে নতুন একটি বাহিনী গড়ে তোলেন।
স্বাধীনতার দুই বছর ৯৯ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইসাইয়াস। কিন্তু এরপর ইরিত্রিয়ায় নতুন কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন পশ্চিমা নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তাকে 'আফ্রিকার নবজাগরণের নেতা' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
নেতা হিসেবে ইসাইয়াস একইসাথে ক্যারিশম্যাটিক এবং নিষ্ঠুর। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি যে পরিমাণ নির্যাতন করে যাচ্ছেন এতে করে তাকে নিয়ে ইরিত্রিয়ায় বিরুপ ধারণা প্রচলিত। কিন্তু তার সাথে যারা মেশার সুযোগ পেয়েছেন তাদের কাছে তিনি একজন মজার মানুষ। মূলত তিনি একদিকে একজন অনুপ্রেরণীয় নেতা হিসেবে ক্রমাগত অভিনয় করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সকল স্বৈরাচারই দক্ষ অভিনেতা। যারা মানুষকে অভিনয় দিয়ে বোকা বানান।
বিপরীত দিকে ইসাইয়াস একজন নির্মম নিপীড়ক। তার হাত থেকে রেহাই পাননি স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শুরু করে সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণ। এসব কারণে তাকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে তুলনা করা হয়। ইরিত্রিয়াকে বলা হয় 'আফ্রিকার উত্তর কোরিয়া'।
মূলত আবি আহমেদ আলি এবং ইসাইয়াস আফওয়ার্কির মধ্যে মূল পার্থক্য ব্যক্তিত্বে। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী যেখানে স্বৈরতন্ত্রকে বিদায় করে দিয়ে দেশকে পুনর্গঠিত করছেন, ইসাইয়াস সেখানে নিজের স্বৈরাচারী শাসনকে দীর্ঘ করছেন।
ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে যে শান্তিচুক্তি হয়েছে সেখানে আবি এবং ইসাইয়াস দুজনই ভূমিকা রেখেছেন। ইরিত্রিয়ার রাষ্ট্রপতি এই চুক্তি করেছেন নিজ স্বার্থে। অন্যদিকে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তি করেছেন নিরীহ মানুষদের নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। এই চুক্তির জন্য তার দেশকে বড় ছাড় দিতে হয়েছে, যা বিশ্বের অনেক নেতাই দেবেন না। ফলে আবি আহমেদকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া পুরোপুরি যৌক্তিক।
ইসাইয়াস শান্তি চুক্তি করতে অবদান রেখেছেন সত্য, কিন্তু যে চুক্তি থেকে তিনি ও তার দেশ লাভের বড় হিস্যা পেয়েছেন। একইসাথে তিনি দেশের মানুষের উপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। ফলে একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শুধুমাত্র একটি শান্তি চুক্তির জন্য নোবেল পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন না। যদি তিনি সত্যিকার অর্থে শান্তিকামী হতেন তাহলে আবি আহমেদ আলির নামের পাশে তার নামও থাকতো।
প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘বিশ্ব’ বিভাগে এখন থেকে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/
This article is about in Bangla language. It is about 'Why Eritrea didn't win a Nobel for its peace accord when Ethiopia.'
Necessary sources are hyperlinked inside the article.
Featured Image Source: Feisal Omar/Reuters