Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রাশিয়া কেন সিরিয়ায় ককেশীয় মুসলিম সৈন্য মোতায়েন করছে: ঐতিহ্য, কারণ ও ফলাফল

স্নায়ুযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন তৃতীয় বিশ্বের, বিশেষত বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার, রাষ্ট্রগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। মস্কো প্রথমে গামাল আব্দেল নাসেরের নেতৃত্বাধীন মিসর এবং পরে বা’আস দলের নেতৃত্বাধীন সিরিয়া ও সমাজতান্ত্রিক দক্ষিণ ইয়েমেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু অন্য দেশগুলোতে তাদের প্রচেষ্টা বিশেষ সাফল্য পায়নি। এমনকি ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর মিসরও সোভিয়েত বলয়ের বাইরে চলে যায়।

সোভিয়েতরা দক্ষিণ গোলার্ধের রাষ্ট্রগুলো এবং তাদের উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামের প্রতি সত্যিই সহানুভূতিশীল কি না এ ব্যাপারে বিশেষত চীনা নেতৃবৃন্দের মনে গভীর সংশয় ছিল (যেমন: ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে মস্কো ইরিত্রীয় স্বাধীনতাকামীদের সমর্থন না করে দখলদার ইথিওপিয়াকে সমর্থন করে)। চীনাদের সোভিয়েতবিরোধী প্রচারণার একটি যুক্তি ছিল যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেই একটি প্রাক্তন উপনিবেশবাদী এবং শ্বেতাঙ্গপ্রধান ইউরোপীয় রাষ্ট্র, কাজেই সোভিয়েতরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর সমস্যা বুঝতে অক্ষম।

সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী নিকিতা ক্রুশ্চেভের সঙ্গে মিসরীয় রাষ্ট্রপতি গামাল আব্দেল নাসের; Source: Getty Images

স্বাভাবিকভাবে মস্কো উন্নয়নশীল বিশ্বে নিজেদের প্রাচ্যীয় ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। বস্তুত সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশাল ভূখণ্ডের প্রায় ৭৫ শতাংশই ছিল এশিয়ায় অবস্থিত, সেই হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভিন্ন বৈদেশিক কর্মসূচিতে দেশটির এশীয়/প্রাচ্যীয় নাগরিকদের ব্যবহার করত। উন্নয়নশীল বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সোভিয়েতরা যেসব সংহতি সমিতি (Solidarity committee) এবং বন্ধু-সভা (Friendship society) গড়ে তুলেছিল, সেগুলোতে কাজ করত মূলত আর্মেনীয় ও আজারবাইজানিরা। মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে ক্রেমলিন সোভিয়েত, উজবেক ও তাজিক কূটনীতিকদের নিয়োগ করত; যেমন: ১৯৬৮-৭৭ সাল পর্যন্ত সিরিয়ায় সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ছিলেন নূরিদ্দিন মুখিদ্দিনভ, একজন জাতিগত উজবেক। আফগান যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েও আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সোভিয়েত সৈন্যই ছিল তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন ও অন্যান্য মধ্য এশীয় জাতিভুক্ত।

আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত সোভিয়েত সেনাবাহিনীর ১৭৭ তম বিশেষ ব্যাটালিয়নের (‘মুসলিম ব্যাটালিয়ন’) কমান্ডার, ‘কারা মেজর’ বা ‘কালো মেজর’ নামে খ্যাত, মেজর বোরিস কেরিমবায়েভ ছিলেন একজন জাতিগত কাজাখ; Source: Radio Free Europe/Radio Liberty

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য মস্কোর পরিকল্পনাগুলো পরিত্যক্ত হয়। ১৯৯০-এর দশকে রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার অস্তিত্ব থাকবে কি না সেটা নিয়েই সংশয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া বিশ্বমঞ্চে পুনরায় আবির্ভূত হওয়ায় ক্রেমলিন আবার রাশিয়ার ‘প্রাচ্যীয়’ পরিচিতির ওপর জোর দিচ্ছে। এরই প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে সিরিয়ায়।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মস্কো বিপুল পরিমাণ প্রাচ্যীয় ভূখণ্ড ও জনবল হারিয়েছে। দক্ষিণ ককেশাস ও মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলো, যেগুলোকে একসময় মক্কা থেকে মস্কোর দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখতে সোভিয়েত রাষ্ট্রযন্ত্র বাধ্য করেছিল, তারা এখন মস্কোর নাগপাশ থেকে বেরিয়ে বেইজিং, আঙ্কারা বা ওয়াশিংটনের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু রুশ ফেডারেশনের অধীনে এখনও ৮টি মুসলিম-অধ্যুষিত বা মুসলিমদের জন্য সৃষ্ট প্রজাতন্ত্র রয়েছে। এগুলো হলো মধ্য রাশিয়ায় অবস্থিত তাতারস্তান ও বাশকোর্তোস্তান এবং উত্তর ককেশাসে অবস্থিত চেচনিয়া, ইঙ্গুশেতিয়া, দাগেস্তান, কাবার্দিনো-বালকারিয়া, কারাচাই-চের্কেশিয়া ও আদিগেয়া।

মানচিত্রে রাশিয়ার মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহ (সবুজ রং দ্বারা চিহ্নিত); Source: Wikimedia Commons

২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। রুশ বিমানবাহিনী, স্পেৎসনাজ কমান্ডো আর ওয়াগনার গ্রুপ (Wagner Group) মার্সেনারিদের সক্রিয় সহায়তায় সিরীয় সরকারি বাহিনী সিরিয়ার অধিকাংশ ভূখণ্ড দায়েশ, হায়াত তাহরির আল-শাম এবং অন্যান্য মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোর কাছ থেকে পুনর্দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরীয় সরকারের জন্য একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষত, সিরিয়ার বৃহত্তম শহর এবং যুদ্ধপূর্ব বাণিজ্যিক রাজধানী আলেপ্পোতে (যেটি সিরীয় সরকারি বাহিনী ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পুনর্দখল করে) নিরাপত্তার অভাব মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

মস্কো এমতাবস্থায় দামাস্কাসের সহায়তায় এগিয়ে আসে। আলেপ্পোসহ অন্যান্য পুনর্দখলকৃত অঞ্চলগুলোর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রুশরা সামরিক পুলিশ (Military police) মোতায়েন করে। এই সামরিক পুলিশদের অধিকাংশই এসেছে রুশ ফেডারেশনের ‘প্রাচ্যীয়’ মুসলিম-অধ্যুষিত প্রজাতন্ত্র চেচনিয়া ও ইঙ্গুশেতিয়া থেকে। যেমন: ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ১ ব্যাটালিয়ন চেচেন সৈন্য আলেপ্পোতে মোতায়েন ছিল। চেচেন সৈন্যরা আলেপ্পোসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, রুশ সামরিক বহরের নিরাপত্তা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরীয়দের ত্রাণ সরবরাহসহ বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় অবস্থিত রুশ সামরিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ১ ব্যাটালিয়ন ইঙ্গুশ সৈন্য মোতায়েন করা হয়। সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের শান্তি রক্ষায় এবং সেখানে মিলিট্যান্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও ইঙ্গুশ সৈন্যরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। বর্তমানে ইদলিব প্রদেশের যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে তুর্কি সৈন্যদের সঙ্গে যেসব রুশ সামরিক পুলিশ যৌথ টহল দিচ্ছে, তাদেরও একাংশ জাতিগত চেচেন বা ইঙ্গুশ।

সিরিয়ায় মোতায়েনকৃত চেচেন সামরিক পুলিশ; Source: Caucasian Knot

প্রশ্ন উঠতেই পারে, মস্কো কেন সিরিয়ায় ‘প্রাচ্যীয়’ মুসলিম সৈন্যদের মোতায়েন করছে? এর কারণ বহুবিধ।

প্রথমত, এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ‘প্রাচ্যীয়’ ভাবমূর্তি দৃঢ় হবে।

দ্বিতীয়ত, চেচেন ও ইঙ্গুশদের অধিকাংশই সুন্নি মুসলিম, আর যেহেতু সিরিয়ার অধিকাংশ মানুষই সুন্নি মুসলিম, তাই রুশ বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন জাতিগত রুশ সৈন্যের চেয়ে একজন জাতিগত চেচেন বা ইঙ্গুশ সৈন্য সিরীয় জনসাধারণের সঙ্গে তুলনামূলক সহজভাবে একাত্ম হতে পারবে।

তৃতীয়ত, সিরীয় যুদ্ধ রুশ জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। রুশ সরকারি প্রচারমাধ্যম শুরু থেকেই সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানকে ‘মানবিক’ ও ‘সন্ত্রাসবিরোধী‘ অভিযান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে রুশ জনগণ যতটা আগ্রহী, সিরীয় যুদ্ধ নিয়ে ততটা নয়। আর যদি সিরিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাতিগত রুশ সৈন্য নিহত হয়, তাহলে রুশ জনগণের এই অনাগ্রহ দ্রুত যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। এজন্য রাশিয়ার প্রান্তিক প্রজাতন্ত্রগুলো থেকে সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানো ক্রেমলিনের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। রুশ জনসাধারণ এমনিতেই এই প্রান্তিক ‘প্রাচ্যীয়’ প্রজাতন্ত্রগুলোকে বিরাট সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বোঝা হিসেবে দেখে (রুশ জনসাধারণের একটা অংশ চেচেন যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ এবং সংগঠিত অপরাধ চক্রের সঙ্গে চেচেনসহ ককেশীয়দের একাংশের জড়িত থাকার কারণে এবং ককেশীয় প্রজাতন্ত্রগুলোকে প্রতি বছর রুশ কেন্দ্রীয় সরকার যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে সেজন্য নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে), তাই সিরিয়ায় একজন জাতিগত রুশ সৈন্য নিহত হলে মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গের জনমতে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, একজন জাতিগত চেচেন বা ইঙ্গুশ সৈন্য নিহত হলে সেরকম প্রতিক্রিয়া হবে না।

অন্যদিকে, সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর জন্য এই প্রজাতন্ত্রগুলোর নিজস্ব কারণ রয়েছে। চেচনিয়া ও ইঙ্গুশেতিয়ার প্রচুর অভিজ্ঞ সৈন্য রয়েছে, যারা সিরীয় যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উপযুক্ত (চেচনিয়ার নিজস্ব ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ সৈন্য রয়েছে, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ন্যাশনাল গার্ডের অংশ, কিন্তু চেচেন রাষ্ট্রপ্রধান রমজান কাদিরভের প্রতি তাদের ব্যক্তিগত আনুগত্যের কারণে তাদেরকে ‘কাদিরোভৎসি’ বলা হয়)। চেচেন ও ইঙ্গুশ নেতৃবৃন্দ এদেরকে নিজ নিজ প্রজাতন্ত্রের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করতে আগ্রহী।

প্রথমত, প্রজাতন্ত্র দুটি রুশ ফেডারেশনের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর অন্তর্গত। এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য তাদের রুশ কেন্দ্রীয় সরকারের বিপুল আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন (রুশ কেন্দ্রীয় সরকার চেচনিয়ার বাজেটের ৮০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে থাকে)।

দ্বিতীয়ত, এই প্রজাতন্ত্রগুলো থেকে কয়েক হাজার নাগরিক দায়েশ বা অন্যান্য মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোতে যোগদানের জন্য সিরিয়ায় গিয়েছে। চেচেন সরকার এসব পরিবারের অন্য সদস্যদের সিরিয়ায় পাঠাচ্ছে সিরীয় সরকারের পক্ষে যুদ্ধ করতে। একজন চেচেন কমান্ডারের মতে, সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার কারণে চেচেনরা রুশদের মধ্যে যে সম্মান হারিয়েছে, সেটি পুনরুদ্ধারের জন্য এটি প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, ২০১৫ সালে মস্কোয় রুশ বিরোধীদলীয় নেতা বোরিস নেমৎসভের খুনের সঙ্গে চেচেন রাষ্ট্রপ্রধান কাদিরভের জড়িত থাকার অভিযোগ থাকায় মস্কোর নিরাপত্তা প্রধানরা মস্কোর প্রতি কাদিরভের আনুগত্যকে সন্দেহের চোখে দেখছিলেন। এজন্য সিরিয়ায় নিজস্ব সৈন্য প্রেরণ করে মস্কোর কাছে নিজের আনুগত্য ও প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করা কাদিরভের জন্য দরকার হয়ে উঠেছিল। একইভাবে, সেসময় ইঙ্গুশেতিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ইউনুস-বেক ইয়েভকুরভের অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা হুমকির মুখে পড়েছিল এবং পার্শ্ববর্তী চেচনিয়ার সঙ্গেও তার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। তার জন্যও ক্রেমলিনের নেক নজরে থাকা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এসব কারণে চেচেন ও ইঙ্গুশ সরকার সিরিয়ায় সৈন্য পাঠাচ্ছে।

রাশিয়ার ‘প্রাচ্যীয়’ ভাবমূর্তি নতুন করে প্রতিষ্ঠার জন্য মস্কো যে কেবল চেচেন আর ইঙ্গুশদের ব্যবহার করছে এমনটা নয়। আফগানিস্তানে রুশ রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতিনিধি জামির কাবুলভ একজন জাতিগত উজবেক। সিরিয়ায় রুশ দূতাবাসের সিনিয়র কাউন্সেলর এলদার কুরবানভ একজন জাতিগত তাতার। মিসরের আলেক্সান্দ্রিয়ায় রাশিয়ার কনসাল জেনারেল রাশিদ সাদিকভ একজন জাতিগত বাশকির। অর্থাৎ, রাশিয়া তৃতীয় বিশ্বে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য প্রাচ্যীয় মুসলিমদের ব্যবহারের সোভিয়েত ঐতিহ্য আবার অনুসরণ করতে শুরু করেছে।

আফগানিস্তানে রুশ রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত জামির কাবুলভ একজন জাতিগত উজবেক; Source: AP News

বস্তুত, রুশ ফেডারেশনের জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য সৃষ্ট প্রজাতন্ত্রগুলো, বিশেষত ‘প্রাচ্যীয়’ তাতারস্তান, চেচনিয়া ও ইঙ্গুশেতিয়া, এখন নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে, যেটা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্রগুলোর পক্ষে সরাসরি করার সুযোগ ছিল না। যতক্ষণ গ্রোজনি, মাগাস, কাজান কিংবা ভ্লাদিকাভকাজের পররাষ্ট্রনীতি মস্কোর পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, ততক্ষণ এতে উভয়পক্ষের লাভ। রুশ কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ‘প্রাচ্যীয়’ পরিচিতি ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যসহ তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, অন্যদিকে এই প্রজাতন্ত্রগুলোও এর মাধ্যমে মস্কোর আর্থিক সহায়তা পাবে এবং রুশ জনসাধারণের মধ্যে এদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

সোভিয়েত শাসনামল থেকে মস্কো বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যসহ তৃতীয় বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের জন্য তাদের ‘প্রাচ্যীয়’, বিশেষত মুসলিম জনগোষ্ঠিকে ব্যবহার করে আসছে। মস্কোর এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত কতটুকু সাফল্যমণ্ডিত হবে, সেটাই প্রশ্ন।

Related Articles