পুরাতন স্থাপনা কিংবা স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। এসব স্থাপনা থেকে আমরা জানতে পারি নিজেদের সময়ের চেয়ে বহু পূর্বের কোনো সময়ের মানুষের জীবনাচরণ সম্বন্ধে। মাত্র ৪/৫০০ বছরের পুরাতন স্থাপনাই আমাদের মনে তুমুল আগ্রহ জন্মায়। তাহলে একবার ভাবুন তো, ৪/৫ হাজার বছরের পুরাতন স্থাপনাগুলো কতটা আকর্ষণীয় হতে পারে? তার উপর যদি সেই প্রাগৈতিহাসিক স্থাপনাগুলো অক্ষত হয়, তাহলে তো কথাই নেই! হ্যাঁ, আমাদের আজকের আলোচনা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ধর্মীয় স্থাপনাগুলো নিয়ে। তবে, এ তালিকায় কেবল সেসব প্রাচীন স্থাপনাই স্থান পেয়েছে, যেগুলো কালের মহাস্রোতের আঁচ নিজেদের গায়ে খুব বেশি লাগতে দেয়নি, যেগুলো এখনো একপ্রকার অক্ষতই রয়ে গেছে।
১. বার্নানেজ, ফ্রান্স
পৃথিবীর প্রাচীনতম সমাধিসৌধটির নাম হলো ‘কেয়ার্ন অব বার্নানেজ’। সুপ্রাচীন এই সমাধিটি খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৫০ অব্দে নির্মিত হয়েছিল। ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এই সমাধিটি ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন মেগালিথিক স্থাপনাও বটে। ৭২ মিটার লম্বা আর ৮ মিটার উঁচু এই স্থাপনাটি এখনো বেশ ভালোভাবেই অক্ষত রয়েছে। পুরো স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছে অসংখ্য বিচ্ছিন্ন পাথরের সমন্বয়ে। এতে আনুমানিক ১৪ হাজার টন পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এটি কোনো একক সমাধি নয়। এতে রয়েছে ১১টি পৃথক সমাধিকক্ষ, যেগুলোর প্রতিটিই চলাচলের পথ দ্বারা বিভক্ত। পাথুরে চিত্রকর্মের এক বিস্ময়কর সম্ভার এই বার্নানেজ। প্রতিটি গমনপথ আর সমাধিকক্ষের দেয়ালে অঙ্কিত রয়েছে রহস্যময় সব চিহ্ন, তীর, কুঠার, হরিণ, সাপ, বন্য প্রাণী আর গাছ-গাছালির ছবি। তাছাড়া, সমাধিকক্ষগুলোর ভেতরে নানারকম ধাতুর তৈরী পাত্র, কুঠার আর তীরের মতো প্রত্নসামগ্রীও পাওয়া গিয়েছে। ১৯৫০ সালে এই প্রাচীন স্থাপনার প্রথম সমাধিকক্ষটি আবিষ্কৃত হয়। এরপর স্থানীয় জনগণ ও সরকারি উদ্যোগে স্থাপনাটির সম্পূর্ণ খোঁড়াখুঁড়ি সম্পন্ন হয় এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
২. টিউমুলাস অব বুগন, ফ্রান্স
১৮৪০ সালে ফ্রান্সের ‘লা মুথ সান্তে হে’র নিকটে আবিষ্কৃত হয় আরেক প্রাগৈতিহাসিক সমাধি, যার নাম ‘টিউমুলাস অব বুগন’। খুব সম্ভবত ৪৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল এ সমাধিটি যেটি একসময় ‘নেক্রোপলিস অব বুগন’ নামেও পরিচিত ছিল। নব্য প্রস্তরযুগীয় এ স্থাপনা যখন প্রথম আবিষ্কৃত হয়, তখন এর ভেতর থেকে দু' শতাধিক মানুষের কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়। স্থাপনাটির খননকাজের সময় দেখা যায়, সমাধির প্রবেশ পথে একটি বড় পাথর বাধা হয়ে আছে। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ মনে করেন, সমাধিটি নির্মাণের কিছুকালের মাঝেই এই পাথরের কারণে এটি পরিত্যক্ত হয়েছিল, নয়তো আরো অধিক সংখ্যক কঙ্কাল পাওয়া যেতো। কঙ্কালগুলো তিন স্তরে খনন করে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, মৃতদেহগুলোকে তিনটি ভিন্ন স্তরে কবর দেয়া হতো, এবং প্রতিটি মৃতদেহের কবর একটি ভারি পাথুরে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেয়া হতো। প্রতিটি কবর থেকেই খাবারের পাত্র, ছুরি, বর্শা, চাঁছনি ইত্যাদি প্রত্নসামগ্রী পাওয়া গেছে। পুরো স্থাপনাটিকে মূলত পাঁচটি শৈলস্তূপ বলা চলে। প্রথম স্তুপটির নিচের কবরগুলোতে অনেক প্রত্নসামগ্রী পাওয়া গেলেও পরের চারটি তেমন প্রত্নসামগ্রী মেলেনি।
৩. টিউমুলাস সেইন্ট মাইকেল, ফ্রান্স
পৃথিবীর প্রাচীনতম সমাধির তালিকায় তৃতীয় স্থানটিও একটি ফরাসি সমাধি দখল করেছে। ‘টিউমুলাস অব সেইন্ট মাইকেল’ নামে পরিচিত এই মেগালিথিক সমাধিটি খুব সম্ভবত ৪৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছে। ফ্রান্সের ব্রিটানিতে অবস্থিত এই সমাধিটি পুরো ইউরোপের বৃহত্তম পাথরের সমাধি। ১০ মিটার উঁচু আর ১২০ মিটার প্রশস্ত এই অতিকায় সমাধিটি আবিষ্কৃত হয় ১৮৬২ সালে। সে বছরই এর খনন কাজ শুরু হয়। এই সমাধির প্রধান কক্ষটি এর প্রবেশপথেই অবস্থিত, যা কিনা সবার প্রথম আবিষ্কৃত হয়। এই কক্ষে খননকারীরা অমূল্য সব মণিমুক্তা আর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ব্যবহারের দ্রব্যসামগ্রী খুঁজে পান। উল্লেখ্য, এসব মণিমুক্তা মৃত ব্যক্তির কবরে দিয়ে দেয়া হতো। তাই একটি সমাধি আশেপাশেই আছে উপলব্ধি করে খননকারীরা আরো বড় পরিসরে খনন কাজ চালিয়ে পুরো সমাধিটি আবিষ্কার করেন। সমাধির ভেতরে শতাধিক সমাধি কক্ষ রয়েছে, যেসব কক্ষের প্রতিটিতে আবার একাধিক কবর রয়েছে। অধিকাংশতেই পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে।
৪. ডলমেন ডি মেঙ্গা, স্পেন
পৃথিবীর প্রাচীনতম সমাধির তালিকা এ পর্যায়ে ফ্রান্স থেকে বেরিয়ে স্পেনে থিতু হয়েছে। স্পেনের মালাগায় অবস্থিত ‘ডলমেন ডি মেঙ্গা’ সমাধিটির নির্মাণকাল আনুমানিক ৩৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই সমাধিটি ৩২ টি বিশাল মেগালিথে তৈরী, যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মেগালিথটির ওজন ২০০ টনের অধিক। ১৯ শতকে যখন প্রাথমিকভাবে সমাধিটির কেন্দ্রীয় কক্ষটি আবিষ্কৃত হয়, তখন এটিকে সমাধি নয় বরং অন্য কোনো স্থাপনা ভাবা হচ্ছিল। কেননা, কক্ষটিতে একটি সুগভীর কুয়া পাওয়া গেছে। অবশ্য মৃতের আত্মার জন্য খাবার রেখে যাওয়ায় বিশ্বাসী মানুষেরা হয়তোবা আত্মার পানির প্রয়োজনের কথা ভেবেই এ কাজ করেছিল। পরবর্তীতে যখন পুরো সমাধির খননকাজ সম্পন্ন হয়, তখন এখান থেকে শতাধিক মনুষ্য কঙ্কাল পাওয়া যায়, যা নিশ্চিত করে এটি একটি সমাধিই ছিল। ২৭.৫ মিটার দীর্ঘ আর ৭ মিটার প্রশস্ত এই সমাধিটি নির্মাণের পর এর উপরিতলে মাটি দিয়ে উঁচু করে ছোটখাটো একটি পাহাড় সদৃশ গঠন তৈরি করা হয়। সমাধিটি এখনো যথেষ্ট মজবুত রয়েছে এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
৫. ওয়েস্ট কেনেট লং ব্যারো, ইংল্যান্ড
পৃথিবীর ৫ম প্রাচীনতম সমাধিটির নির্মাণকাজ আনুমানিক ৩৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল। ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারে অবস্থিত এ সমাধিটি ইংল্যান্ডের আরেক বিখ্যাত প্রত্নস্থাপনা স্টোনহেঞ্জের চেয়েও ৪০০ বছর পুরনো। এর খনন কাজ ১৯ শতকের মধ্যভাগে শুরু হয়। প্রাথমিক খননে প্রাচীন এ স্থাপনাটির বেশ ক্ষতি হয়ে যায়, বেশকিছু সমাধি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তথাপি, ৪৬টি সমাধি এবং একধিক সমাধিকক্ষ অক্ষতভাবে খনন করে উন্মুক্ত করতে সক্ষম হন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। পরে স্থাপনাটির সামগ্রিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে আর খনন করা হয়নি। এই ৪৬টি সমাধিতে শিশু থেকে বৃদ্ধবয়সী ৪৬ জন মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। এ মানুষগুলোর প্রথম মৃত্যুর ৩০ বছরের মধ্যেই বাকি সবাই মারা গিয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র ৩০ বছরের নমুনা এখানে। অথচ এ সমাধিটি ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১ হাজার বছর যাবত। তাহলে এত সব কঙ্কাল গেল কই? প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, সমাধিটি পরিত্যক্ত করার পূর্বে কঙ্কালগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। খুঁজে পাওয়া ৪৬টি কঙ্কালের দেহের অনেক অঙ্গই পাওয়া যায়নি। এতে করে প্রত্নতাত্ত্বিকগণের ধারণাই বরং শক্ত হয়। অবশিষ্ট কঙ্কালগুলো অন্যত্র সরানোর সময় হয়তো এ কঙ্কালগুলোর কিছু অংশও চলে গিয়েছিল।
৬. লিস্তোঘিল, আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডের স্লিগোতে দেখা মেলে ৩৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু প্রাচীন সমাধিস্তম্ভের। কিন্তু একটি বাদে সেগুলোর প্রতিটিই কালে কালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। একেবারে মাঝের সমাধিটি ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও আজ অবধি একটি পূর্ণাঙ্গ স্থাপনা হিসেবেই টিকে আছে। তাই এ তালিকার ৬ষ্ঠ স্থানে জায়গা করে নিতে পেরেছে লিস্তোঘিল। ৫২ মিটার উঁচু এ সমাধিটিতে আছে অসংখ্য ডলমেন নামক একপ্রকার চ্যাপ্টা পাথর। এর ভেতরে যে সমাধি কক্ষগুলো রয়েছে, তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সমাধিটি প্রাথমিক খননের সময় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ১৮৮০ সালের দিকে এ স্থান থেকে নির্মাণকাজের জন্য পাথর উত্তোলন শুরু হয়। সে উত্তোলনের সময়ে কেন্দ্রীয় সমাধিটি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। খননের এক পর্যায়ে মানুষের কঙ্কাল পাবার পর বোঝা যায় যে এটি একটি প্রাচীন সমাধি। বর্তমানে সরকারিভাবে সমাধিটি সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং সংস্কারকাজ চলছে।
৭. স্টোনি লিটেলটন লং ব্যারো, ইংল্যান্ড
স্টোনি লিটেলটন লং ব্যারো সমাধিটি ইংল্যান্ডের সমারসেটের ওয়েলো গ্রামের নিকটে অবস্থিত। এর নির্মাণকাল আনুমানিক ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, লিস্তোঘিলের চেয়ে মাত্র ৫০ বছর পর। ৩০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৫ মিটার প্রশস্ত এই সমাধিতে রয়েছে ৩ জোড়া পার্শ্ব কক্ষ এবং শেষ মাথায় একটি একক কক্ষ। প্রতিটি কক্ষেই একাধিক সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে কঙ্কালও। এর প্রবেশদ্বারটি পাহাড়ের গায়ে এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যেন মনে হয় এটি পাহাড়ের কেন্দ্রে প্রবেশের পথ। ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ একে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।
৮. লা হুগু বিয়ে, ফ্রান্স
ফ্রান্সের জার্সিতে অবস্থিত ৩৫০০ খ্রিস্টাপূর্বাব্দের সমাধি লা হুগু বিয়ে পৃথিবীর প্রাচীনতম সমাধির তালিকায় অষ্টম স্থানে আছে। প্রাথমিকভাবে এর নির্মাণকাজের কিছু অংশ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছিল, যা প্রায় শত বছর পর পূর্ণতা পায়। এ কারণে একে স্টোনি লিটেলটনের পরে অবস্থান দেয়া হয়। নব্যপ্রস্তর যুগের এ স্থাপনাটির নামের অর্থ পুরোপুরি জানা যায়নি। হুগু শব্দটির অর্থ শৈলস্তুপ, কিন্তু 'বিয়ে' শব্দটির উৎপত্তি বা অর্থ কোনোটিই নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। যা-ই হোক, এ তালিকার সবচেয়ে অক্ষত এবং মজবুত প্রাচীন সমাধিটি হলো লা হুগু, যেটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরকম কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯২৫ সালে যদিও এর ভেতরের দিকের সর্বশেষ সমাধিকক্ষটিও খনন করে উন্মুক্ত করা হয়েছে, এর একটা বড় অংশ চিরকালই উন্মুক্ত ছিল। প্রাথমিকভাবে দীর্ঘদিন এটি উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। পরিত্যক্ত করবার পূর্বে এটিকে একটি সমাধিস্থল করা হয়। পরবর্তীতে আনুমানিক ৫ম কিংবা ৬ষ্ঠ শতক থেকে হুগুকে আবারো ধর্মীয় উপাসনালয় (চার্চ) হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। তবে এর সবচেয়ে নাটকীয় ব্যবহার হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। সমাধির উপরে প্রায় ২০ মিটার উচ্চে অবস্থিত কক্ষটিকে নজরদারি এবং ভেতরের সমাধিকক্ষগুলোকে গোপন বাংকার হিসেবে ব্যবহার করে মিত্রবাহিনী!
৯. মিডহাও চেম্বার কেয়ার্ন, স্কটল্যান্ড
স্কটল্যান্ডের ওর্কনিতে অবস্থিত ‘মিডহাও চেম্বার কেয়ার্ন’ পৃথিবীর বৃহত্তম নব্যপ্রস্তরযুগীয় সমাধিক্ষেত্র। আনুমানিক ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত এ সমাধির এরূপ নামকরণ হয়েছে এর গঠনের জন্য। মূলত এটি একটি ৫০০ দীর্ঘ এবং স্থানে স্থানে শতাধিক মিটার প্রস্থের বিশাল সমাধি কমপ্লেক্স। এতে রয়েছে তিনটি ‘ব্রক’। ব্রক হলো একধরনের স্থাপনা, যার দেয়ালগুলো ফাঁপা, অর্থাৎ দেয়ালের ভেতর দিয়ে চলাচল সম্ভব। নর্স শব্দ ‘হাও’ অর্থ ব্রক। এই তিনটি ব্রকের মাঝে মূল সমাধিটি অবস্থিত বলে এর নাম হয়েছে মিডহাও। মিডহাওয়ে মোট ১২টি সমাধিকক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষেই আছে একাধিক সমাধি। একটি ২৩ মিটার দৈর্ঘ্যের করিডরের দু'পাশে ৬টি করে কক্ষ সমানুপাতিকভাবে বিভক্ত। নির্মাণের পর অন্তত ৫০০ বছর এটি ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে, প্রাচীন মানুষের ব্যবহার শেষে সমাধিটি যেন ধ্বসে না যায়, কিংবা সমাধির কঙ্কালগুলো যেন কেউ চুরি করতে না পারে, তাই একে পাথর, কয়লা আর মাটি দিয়ে ভরাট করে দিয়ে যায়। তার ছাদটিও ভেঙে দেয় কোনো অজানা কারণে। বর্তমানে স্থাপনাটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত আছে এবং সরকারি অর্থায়নে এর ছাদ নির্মাণ করে দিয়েছে স্কটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ।
১০. গাভ্রিনিস, ফ্রান্স
ফ্রান্সের ব্রিট্টানিতে গাভ্রিনিস নামক ছোট্ট একটি দ্বীপ রয়েছে। এই দ্বীপেই অবস্থান পৃথিবীতে অদ্যবধি আবিষ্কৃত সর্বপ্রাচীন সমাধিগুলোর তালিকার দশম সদস্য। গাভ্রিনিস দুটি ব্রেটন শব্দ ‘গেভর’ অর্থ ছাগল আর ‘ইনিস’ অর্থ দ্বীপ থেকে। অর্থাৎ, নামের পুরো অর্থ দাঁড়ায় ছাগলের দ্বীপ। দ্বীপের নামেই সমাধির নামকরণ করা হয়েছিল গাভ্রিনিস। তবে সমাধির নির্মাণকালে এর নাম কী ছিল কিংবা দ্বীপের নাম কী ছিল, তা জানা যায় না। গাভ্রিনিস নামকরণের ঘটনা তো মাত্র ১ হাজার বছর পূর্বের। যা হোক, এ তালিকার সবচেয়ে শিল্পসমৃদ্ধ সমাধি বলা যেতে পারে এটিকে। ৩৫০০-৩৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝে নির্মিত এই স্থাপনাটির মাঝারি আকৃতির মেগালিথগুলোতে খোদাই করা আছে অসংখ্য চিত্রকর্ম। এগুলোতে প্রাচীনকালের মানুষের অজানা কোনো ভাষা, তাদের সংস্কৃতি, সমাজ, গৃহপালিত পশু, দেব-দেবী, শিকার, পবিত্র ও রহস্যময় সব চিহ্ন ইত্যাদির চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৮৩৫ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হলেও এর যথাযথ খনন কাজ শেষ হয় ১৯৮০’র দশকে। বর্তমানে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। এখানকার অনেক খোদাই করা পাথুরে চিত্রকর্ম বর্তমানে বুগন জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে, যে জাদুঘরটি আবার আরেক প্রাচীন সমাধি টিউমুলাস অব বুগনের নিমিত্তে তৈরী।
Language: Bangla
Topic: Oldest tombs in the world
Reference: Hyperlinked inside the article
Featured Image: All-free-download.com