বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের আতঙ্কে তটস্থ। আর আতঙ্কিত হবেই বা না কেন? বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা তো ইতোমধ্যে এগারো লাখ অতিক্রম করেছে। প্রতিনিয়তই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত রোগী আর মৃতের সংখ্যা। বিশ্ব এখন তাই শঙ্কিত কীভাবে দমন করা যাবে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসকে।
যদিও এখন অবধি করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে সামাজিক আর নৈতিক কিছু কার্যকলাপ আর শিষ্টাচার মেনে চললে আপনি করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে, এমনকি নিজের সমাজকেও রক্ষা করতে পারবেন।
পুরো বিশ্বই এখন লকডাউন অবস্থায় আছে। আইফেল টাওয়ারের সামনে নেই কোনো পর্যটক; ভেনিসে নৌকায় চড়ে ভাসছে না কোনো নবদম্পতি; লন্ডন টাওয়ার ব্রীজ খাঁ খাঁ করছে জনশূন্যতায়; নিউ ইয়র্কের মতো ব্যস্ত শহর যেন থমকে গেছে অদৃশ্য কোনো এক আতঙ্কে। বন্ধ সকল কল-কারখানা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি সকল কার্যক্রম। বিশ্বব্যাপী মানুষ কীভাবে এই লকডাউন অবস্থায় আছে তা নিয়েই প্রতিনিয়ত ছবি তুলে যাচ্ছে ফটো-সাংবাদিকরা। আর সেগুলোতে সয়লাব হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আজকের আয়োজনে থাকছে বিখ্যাত পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এমন কয়েকটি ছবি, যেগুলোতে ফুটে উঠেছে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি।
উহান, চীন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উহানের একটি কাঁচাবাজারের সামনে এমনই বেড়া দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও নিত্যদিনের বাজার-সদাই কেনাকাটা হচ্ছে।
বেইজিং, চীন। উহানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি ট্রেনের একজন কর্মচারী ফেসমাস্ক পরেও উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মূল উৎস এই উহান লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল; তবে আটকা পড়া লোকেদের প্রবেশের জন্য আংশিকভাবে খুলে দেয়া হয় দুই মাস পরেই।
জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা। হিলব্রোর এলাকায় লকডাউন চলাকালীন পুলিশি অভিযানের দৃশ্য নিজেদের বারান্দা থেকে দেখছেন ভবনের বাসিন্দারা।
জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা। ভাইরাসের বিস্তার রোধে কারফিউ জারি করা হয় পুরো শহর জুড়ে। তবে এই কারফিউ অমান্য করেই অনেক নাগরিকের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। ছবির ছেলেটিকে পুলিশ আটকে রেখেছে কারফিউ ভঙ্গ করার অপরাধে।
ঢাকা, বাংলাদেশ। ৯ বছর বয়সী সামিন শাহরার লকডাউনের জন্য নিজের বাসার ছাদে একাই বল নিয়ে খেলছে।
জেরম্যাট, সুইজারল্যান্ড। ছবিতে ম্যাটারহর্ন পর্বতের আলোকিত একটি দৃশ্য দেখা যাচ্ছে; যেটি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন মূলত সুইস আলোকশিল্পী গেরি হফস্টেটার। বিশ্বব্যাপী মহামারীতে ভুক্তভোগী মানুষজনদেরকে আশা, ভরসা এবং আস্থা দিচ্ছে এবং পরবর্তীতেও দেবে এই আলো- এমনটাই ভাষ্য শিল্পীর।
আহমেদাবাদ, ভারত। দেশব্যাপী টানা ২১ দিনের লকডাউন চলাকালে অভিবাসী শ্রমিকরা একটি ট্রাকে গাদাগাদি করে নিজেদের গন্তব্যে ফিরছেন।
মুম্বাই, ভারত। মেডিক্যালের কর্মী এবং সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানাতে আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে থালাবাসনে বাড়ি দিয়ে শব্দ তৈরি করে এবং হাততালি ও শিস বাজিয়ে অভিনন্দন জানায় তাদের।
লিসবন, পর্তুগাল। লিসবনের সান্তা মারিয়া হাসপাতালের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগীদের করা অস্থায়ী তাঁবুর সামনে ফেস মাস্ক এবং অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিহিত দুজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দেখা যাচ্ছে।
রোম, বার্গ্যামো এবং ব্রেসিয়া, ইতালি। বিরতি ও শিফট শেষে ডাক্তার ও নার্সদের ছবি তোলা হয়। অ্যাসোসিয়েট প্রেসের ফটোগ্রাফার রোম, বার্গ্যামো এবং ব্রেসিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ারে কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের ছবি তোলেন তাদের সুরক্ষা কার্যক্রমের স্মৃতিকে ফ্রেমে বন্দি করার লক্ষ্যে।
রোম, ইতালি। লকডাউনের কারণে আটকা পড়া বাসিন্দাদের মনোরঞ্জনের জন্য একটি ভবনের গায়ে প্রজেক্টরের মাধ্যমে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হচ্ছে।
সান ফিওয়োরানো, ইতালি। স্কুলশিক্ষক মারজিয়ো তোনিওলোর দুই বছর বয়সী মেয়ে বিয়াঙ্কা রেড জোনে অবস্থিত এক বাসায় লকডাউন অবস্থায় তার পায়ের নখে নেলপলিশ লাগিয়ে দিচ্ছে। তার স্ত্রী বিয়াঙ্কার মা, চিয়ারা জুদ্দাস, উদাস মনে বারান্দায় বসে আছেন।
লন্ডন, যুক্তরাজ্য। পাবলিক পার্ক বন্ধ হবার হয়ে যাবার দরুণ ব্রিক্সটন স্ট্রিট জিমের সদস্যরা সবাই এক সাথে রাস্কিন পার্কের উষ্ণ বসন্তের রোদে অনুশীলন কার্যক্রম চালিয়ে যান।
আসুনসিওন, প্যারাগুয়ে। লকডাউনের চতুর্থ সপ্তাহে মারকাদো ডি অ্যাবেস্তোতে উচ্ছিষ্ট অংশ থেকে ১১ বছর বয়সী ফ্যাবিয়েন রামিরেজ তার পরিবারের সাথে ভালো ফলমূল বা খাবার যোগাড়ের চেষ্টা করছে।
গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড। ইস্টারওয়েস্ট অঞ্চলে লকডাউন চলাকালে জেমস আর ফ্রান্সেস ঘরের গুমোটবাধা পরিবেশ থেকে খানিক মুক্তির জন্য নিজেদের বারান্দায় বসে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করছে।
লন্ডন, যুক্তরাজ্য। লকডাউন চলাকালে এক শনিবার সন্ধ্যায় নির্জন পিক্যাডিলি সার্কাস স্কয়ার।
সান্তান্দার, স্পেন। জরুরি লকডাউন চলাকালে নিজেদের ঘর থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ ঘাটে ভেড়ানোর দৃশ্য দেখছে দুই শিশু।
মার্শেই, ফ্রান্স। হোয়াইট হাউজ এস্টেটের এক বাসিন্দা কাঁথা দিয়ে তৈরি করা দড়ি ব্যবহার করে প্রতিবেশীর দেয়া খাবার সংগ্রহ করছে লকডাউন চলাকালে।
বার্সেলোনা, স্পেন। বাদালোনার ট্রায়াস আই পুজল হাসপাতালের জানালা দিয়ে লকডাউনকৃত শহরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
প্যারিস, ফ্রান্স। জরুরি লকডাউন চলাকালে সেইন নদীর তীরবর্তী অঞ্চল সেইন্ট-লুইসের রাস্তায় একজন নারীর একাকী পদচারণা।
মুলহাউস, ফ্রান্স। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ট্রেনে করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল হাসপাতালের বিছানা খালি করার জন্য, আর সেজন্যই মুলহাউস রেলস্টেশনকে জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছে একদল সুরক্ষাকর্মী।
সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া। পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে এক কপোত-কপোতী সিনেমা দেখছে নিজেদের মোবাইলে।
বার্সেলোনা, স্পেন। জনমানবশূন্য রাস্তা থাকা সত্ত্বেও কুকুরগুলো নিয়ম মেনেই রাস্তা পার হচ্ছে।
গাজা, ফিলিস্তিন। খান ইউনুসে মোহাম্মদ আবু দাগা এবং ইস্রার মূল বিবাহের অনুষ্ঠানের আগে স্টুডিও ফটোশুটের সময়ে তোলা।
গাজা, ফিলিস্তিন। গাজার আবাসিক এলাকায় বাচ্চাদের বাড়িতে রেখেই আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে এমনকি ক্লাউন/ভাঁড়কেও ফেসমাস্ক পরতে হয়েছে করোনায় আক্রান্তের ভয়ে।
ডাকার, সেনেগাল। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের একজন করোনার প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে একটি স্কুল জীবাণুমুক্তকরণের কাজ করছে।
ডাকার, সেনেগাল। মেদিনা পাড়ার জনপ্রিয় অঞ্চলটিকে জীবাণুমুক্ত করার অনুমতি পাওয়ার পর বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়। সেই ধ্বংসাবশেষ চত্বরেই উৎসুক জনতা এসে জড়ো হয়েছে।
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড। স্যান্ডিমাউন্ট স্ট্র্যান্ডের কাছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার এক দৃশ্য।
নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্টেটেন আইল্যান্ড ফেরিঘাটে বসে এক যাত্রী সূর্যাস্ত উপভোগ করছে একা।
স্টুটগার্ট, জার্মানি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমান উড্ডয়নের তালিকা এটি, যেখানে শূন্যই কেবল গর্ব নিয়ে দম্ভ প্রকাশ করছে।
বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনা। স্বেচ্ছাশ্রম দেয়ার জন্য কাছের একটি স্যুপশপে যাবার পূর্বে জোয়ানা ম্যাসিয়েল ঘরে তৈরি একটা ফেসমাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন।
জেরুজালেম, ইসরায়েল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ফ্রান্সের ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধ র্যাবাই মাসুদ হামুর কফিনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে কাদিশা ইহুদি দাফন সংগঠনের লোকজন।
প্যারিস, ফ্রান্স। একজন চিকিৎসক গ্যারে ডি’ অস্ট্রেলরিজ রেলস্টেশনে চিকিৎসার সুবিধা সম্বলিত উচ্চগতির একটি ট্রেনে থাকা এক রোগীকে পর্যবেক্ষণ করছেন জানালার কাচ ভেদ করে। লোকগুলোকে অতিসত্ত্বর প্যারিস থেকে বিট্রানিতে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
ল্যান্ডডনো, ওয়েলস। একটি পাহাড়ি ছাগল ট্রিনিটি স্কয়ারে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের নিমিত্তে লাগানো গাছের ঝাড় থেকে ক্ষুধা নিবারণ করছে।
সেইন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া। সেইন্ট পিটার্সবার্গের এই স্কুলটি করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ ঘোষিত হবার ফলে বরফের পুরু আস্তরণ জমতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।
নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একজন স্বাস্থ্যকর্মী ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কের একটি বেঞ্চে চিন্তিত অবস্থায় বসে আছেন।
বার্সেলোনা, স্পেন। ডস ডি মায়ো হাসপাতালের সন্নিকটে থাকা বাসিন্দারা প্রতিদিন করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বিধায় তারাও করতালি দিয়ে তাদের সম্মান প্রদর্শন করছে।
সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া। টেবিল এ র্যাকুন ক্যাফেতে একজন কর্মী একটি র্যাকুনকে খাবার দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু লকডাউন করা হয়েছিল এবং সকল ধরনের ব্যবসাতেই ধস নেমেছে। তবে এই ক্যাফেগুলো খোলা রাখা হয়েছিল যাতে করে এই প্রাণীগুলোর দেখাশোনার লোক থাকে।
রোমফোর্ড, ইংল্যান্ড। ডাগনম পার্কের লালচে হরিণগুলো ঘাস খাওয়ার জন্য একটি আবাসিক এলাকায় চলে আসে। এই হরিণগুলোকে প্রায় সময়ই পার্কের আশেপাশের রাস্তায় দেখা যায়। কিন্তু লকডাউনের কারণে নীরব রাস্তা পেয়ে হরিণগুলো নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো হেঁটে বেড়াচ্ছে।
বার্সেলোনা, স্পেন। ট্রায়াস আই পুজল হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মী ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের একজন কোভিড-১৯ রোগীর জন্য সিরিঞ্জে করে ওষুধ প্রস্তুত করছেন।
This article is in Bengali Language. This is a photo feature about the world wide cornona effect.
Necessary references have been hyperlinked inside the article.
Feature Image: Stéphane de Sakutin/AFP via Getty Images