Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জেসিকা কক্স, যিনি দু’পা দিয়ে চালান যুদ্ধ বিমান

বাবা-মা সবসময় সন্তানের মঙ্গল চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তারাও মানুষ; কখনও ভুল হয়ে যায় তাদেরও। তবে জেসিকা কক্সের বাবা এমন ভুল করেননি। মেয়ে প্লেনে উঠতে ভয় পায় জেনেও বাবা যুদ্ধ পাইলট ও ‘রাইট ফ্লাইট’ নামের একটি টুসন-বেসড অলাভজনক সংগঠনের মালিক, স্টোড্ডার্ডকে বলেন, “আমার মেয়ে প্লেন চালাতে খুবই আগ্রহী।”

মেয়ে বাবার কথায় দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেননি, চ্যালেঞ্জটা বেশ সিরিয়াসভাবেই নিয়েছেন। অতঃপর, বিশ্বের প্রথম পাইলট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন, যার হাত নেই। বলছি আমেরিকার জেসিকা কক্সের কথা।

ট্যাপ ডান্সের পোশাকে ছোট্ট জেসিকা; Image Source: star2.com

জেসিকা কক্স ১৯৮৩ সালে আমেরিকার অ্যারিজোনা রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারে নতুন সদস্যের আগমন হলে সাধারণত খুশির ধুম পড়ে যায়, কিন্তু জেসিকার জন্মের সময় এমন হয়নি। সবাইকে হতাশ করে জন্ম নেন জেসিকা। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান তার মা, যখন দেখেন মেয়ে জন্মিয়েছে দুটো হাত ছাড়া। কারণ তার মাতৃত্বকালীন কোনো জটিলতা ছিল না, তাই এখনও এটা আশ্চর্যজনক যে, গর্ভে থাকাকালীন জেসিকার হাত দুটো কেন তৈরি হয়নি। ডাক্তাররা এটাকে বিরল জন্মগত ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে জেসিকা কক্স মেজো। হাত নেই বলে তাকে কখনও আলাদা করে দেখা হয়নি। হাত না থাকলেও জেসিকাকে তার দুই ভাইবোনদের মতো অর্থাৎ স্বাভাবিক মানুষের মতো করে বড় করেন তার বাবা-মা। স্বাভাবিক জীবন দেওয়ার জন্য তারা মেয়েকে কৃত্রিম হাতও লাগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু জেসিকার সেটা খুবই অপছন্দ ছিল। সবসময় তার ইচ্ছা হতো কৃত্রিম হাতগুলো পুড়িয়ে ফেলতে, তবুও কষ্ট করে সেগুলো পরে ছিলেন ১১ বছর। জেসিকার বয়স যখন ১৪, তখন তিনি হাত দুটো খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন, এরপর আর কখনও পরেননি।

জেসিকার জন্য কখনও বিশেষ স্কুলের কথা ভাবেননি তার বাবা-মা। সকলের সাথে তিনি যেতেন স্বাভাবিক বাচ্চাদের স্কুলে। লেখাপড়ার পাশাপাশি জেসিকা ট্যাপ ডান্স ও গার্লস স্কাউটের সাঁতার শিখতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বাচ্ছন্দ্যে নাচ প্রদর্শন করতেন এবং খেলাধুলাতেও অংশ নিতেন। তবুও আজন্ম ত্রুটিটা নিয়ে তার ভীষণ ক্ষোভ তৈরি হতো, যখন সমবয়সীরা তার সাথে স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করত না। ‘হাতকাটা’ শব্দটা অবিচ্ছেদ্যভাবে জুড়ে দিতে তার নামের সাথে। এছাড়াও হাত নেই বলে তাকে সবার করুণা দৃষ্টিও পেতে হয়েছে। স্কুলে দোলনায় দোল খেতে খেতে যখন অন্য বাচ্চাদের মাংকি বারে ঝুলতে দেখতেন, তখন তার প্রচণ্ড উড়তে ইচ্ছা হতো। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ওড়ার। ভাবতেন, “আমি একদিন সুপার উইম্যান হবো। হাত ছাড়াই উড়ে যাব আকাশে!” বাবার ইচ্ছা ও তার প্রচেষ্টায় শেষমেশ তিনি এই স্বপ্ন পূরণ করে দেখিয়েছেন।

মার্শাল আর্ট ক্লাসে জেসিকা; Image Source: koreatimes.co.kr/provied by Jessica

হাত না থাকার কারণে ছোটবেলায় জেসিকা মানসিকভাবে আহত হলেও তার ব্যক্তিত্ব সবসময়ই মারকুটে। প্রচণ্ড রাগ জেসিকার। হাত নেই বলে সহপাঠীরা যখন তাকে রাগাতো, তখন তিনি পা ছুঁড়তেন, চিৎকার করতেন। জেসিকার রাগের মাঝেও বাবা যেন দেখতে পান মেয়ের প্রতিভা। ভাইবোনদের সাথে তাকে ভর্তি করলেন আমেরিকার একটি মার্শাল আর্ট স্কুলে। সেখানে বেশ পারদর্শিতা দেখান জেসিকা কক্স এবং আমেরিকার তায়কোয়ান্দো অ্যাসোসিয়েশন থেকে ব্ল্যাক বেল্ট পেয়ে গিনিস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডে নাম লেখান। কারণ তিনিই প্রথম হাতহীন ব্যক্তি, যিনি তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন। জেসিকা একজন প্রত্যয়িত স্কুবা ড্রাইভারও। এছাড়াও তার পিয়ানো বাদক ও কার চালক হিসেবে খ্যাতি আছে। যদিও তাঁর লাইসেন্সটা ছিল অনিয়ন্ত্রিত চালকের, তবে এখন তিনি লাইসেন্স প্রাপ্ত চালক।

গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডে তার নাম আসলে তিনি একজন আন্তর্জাতিক মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবেও পরিচিত লাভ করেন এবং বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য যেতে থাকলেন। যখন সকলকে অনুপ্রেরণা দিতে ব্যস্ত ছিলেন জেসিকা, তখন জীবনে আসেন একজন ভালোবাসার মানুষ, প্যাট্রিক ছেইম্বালেন। ২০১২ সালে প্যাট্রিককে বিয়ে করেন তিনি। বিয়েতে তার তিনজন বিশেষ অতিথি ছিলেন যাদের হাত নেই। জেসিকা সেই বিশেষ অতিথিদের ব্যাপারে বলেন,

হাত না থাকলে জীবন অর্থহীন হয়ে যাবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। হাত না থাকলেও মানুষ মনের মানুষ খুঁজে পায়, ভালোবাসা পায়। হাতহারাদেরও স্বাভাবিক জীবনযাপন করার পূর্ণ অধিকার আছে। এটা দেখানোর জন্যই আমি ওদের তিনজনকে দাওয়াত করেছি।”

বিয়ের দিন জেসিকা ও প্যাট্রিক; Image Source: star2.com

২০১৫ সালে আমেরিকার রোটারি ক্লাবের একটি আলোচনা সভায় জেসিকার সাক্ষাৎ হয় রবিন স্টোড্ডার্ডের সাথে। তিনি জেসিকাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি প্লেন চালাতে চাও? পাশে থাকা জেসিকার বাবা হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়ে বসেন। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা জেসিকার পাইলট হওয়ার যাত্রা শুরু এখান থেকেই। তিন বছরের মধ্যে, ৩৫ বছর বয়সে তিনি হয়ে উঠেন একজন পরিপূর্ণ যুদ্ধ বিমানচালক। এবং হাতহীন প্রথম পাইলট হিসেবে আবার গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডে নাম লেখান। জেসিকার ‘পাইলট জেসিকা কক্স’ হতে এত দীর্ঘ সময় লেগেছিল, কারণ তিনি এমন কোনো প্রশিক্ষক পাননি, যিনি তাকে প্রচণ্ড শ্রম ও ধৈর্য নিয়ে প্লেন চালানো শেখাবেন। কিন্তু নিজের শ্রম ও ধৈর্যের বলে তিনি শেষ করতে পেরেছেন এই বন্ধুর সফর।

জেসিকা দুই পা দিয়ে কিভাবে বিমান চালান, চাইলে দেখে নিতে পারেন তাকে নিয়ে বানানো এই তথ্যচিত্রে।

বাম পা দিয়ে জেসিকা থ্রোটল সামলান আর ডান পা দিয়ে ইওক। এভাবে দিব্যি এরকুপ মাটিতে নামিয়ে নেন হাতবিহীন এই পাইলট।
পা দিয়ে প্লেন চালাতে সমস্যা হয় কিনা, এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে জেসিকা বলেন,

“সমস্যা হবে কেন! অন্য পাইলটরা হাত দিয়ে যে কাজগুলো করে, আমি দুই পা দিয়ে সেগুলো করি।”

তিনি আরও বলেন,

“আমি ছোটবেলায় প্লেনে উঠতে ভীষণ ভয় পেতাম। প্লেনে উঠলেই প্রার্থনা করতাম, যেন কেউ আমাকে এখান থেকে নামিয়ে দেয়। তবে একটা ডুয়েল ফ্লাইট আমার জীবনটা বদলে দিয়েছে। আমার পাশে বসা পাইলট হঠাৎ প্লেনের কন্ট্রোল ছেড়ে দিয়ে আমাকে বললেন, কন্ট্রোল করতে। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম, তবে ভয়ের চেয়ে বেশি আনন্দ লাগছিল।”

জেসিকা Disarm Your Limits বইয়ে তার জীবনী লেখেন। তাকে নিয়ে বেশ কিছু তথ্যচিত্র বানানো হয়েছে, যেগুলো ২০১৫ সালে রোমের ভ্যাটিকান সিটিতে অনুষ্ঠিত মিরাবাইল ডিকটো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাথোলিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা ডকুমেন্টরি হিসেবে ও হলিউড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’১৫ তে সোশ্যাল ইম্প্যাক্ট ফিল্ম হিসেবে পুরস্কার পায়। এছাড়াও জেসিকা কক্সের তথ্যচিত্রের ঝুলিতে রয়েছে আরও অনেক পুরষ্কার।

গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডের ব্যাচ নিয়ে জেসিকা কক্স; Image Source: duwun

জেসিকাকে নিয়ে বানানো তথ্যচিত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন,

“এটি খুবই একটা ভালো মাধ্যম মানুষের কাছে আমার গল্প পৌঁছে দেওয়ার। লোকে যখন আমাকে নিয়ে বানানো তথ্যচিত্রগুলো দেখে এবং প্রশংসা করে, তখন আমার বেশ ভালো লাগে। তারা যদি এগুলো থেকে একটুও আশাবাদী হয়ে ওঠে, তাহলে আমার আরও ভালো লাগবে।”

জেসিকা বর্তমানে শারীরিক অক্ষমতার শিকার হওয়া শিশুদের জীবনযাপন যেন স্বাভাবিক মানুষদের মতো হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন,

“আমি যখন যা চেয়েছি, তা-ই করার সুযোগ পেয়েছি। দুটো হাত না থাকা আমার জীবনযাত্রায় কোন আসেনি। আমি চাই, আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যেন এই সুযোগটা পায়।”

Jessica cox who has rare birth disabilty and born without arms. The armless lady has become first armless pilot and places her name in the Genis Book of World Record.

Featured Image © aviationcv

Related Articles