- ১২ বছরে পদার্পণ করলো ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অফ রুয়েট (পিএসআর)।
- ২০০৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছবির গল্প শোনাতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংগঠনটি।
- অপ্রতুল অর্থনৈতিক সমর্থন সত্ত্বেও পিএসআর নিয়মিত আয়োজন করে থাকে নানা কর্মশালা এবং স্থিরচিত্র প্রদর্শনী।
- এই মুহূর্তে সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটি খুবই প্রচলিত হলেও এক যুগ আগে ঠিক এমন চিত্র ছিলো না। সে সময়ে না ছিলো ডিএসএলআরের বাহুল্য, না ছিলো যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা। আর সে সময়ে ঢাকার বাইরে এমন ব্যয়বহুল একটি গ্রুপ একদম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালানোটা ছিলো দারুণ কষ্টসাধ্য, এক পা বাড়িয়ে অসম্ভবও বলে দেওয়া চলে। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নাতুর চার তরুণ ইসতিয়াক উদ্দিন চৌধুরী, বেলাল রহমান, মারুফ আহমেদ এবং সঞ্জয় চক্রবর্তী। তাদেরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শুরু হয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অফ রুয়েট (পিএসআর)।
আনুমানিক চতু্র্দশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী সময়কালে ইউরোপের শিল্প-সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব জাগরণ ঘটে, যা ইতিহাসে রেনেসাঁ নামে পরিচিত। রাজশাহীর মতো পশ্চাৎপদ এক জায়গাতে শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির জোরে একদল স্বপ্নচারী তরুণ রুয়েট ক্যাম্পাসে যখন প্রথমবারের মতো স্থিরচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করে ২০০৬ সালে, সেটাও রুয়েটের জন্য রেনেসাঁ থেকে বিন্দুমাত্র কম প্রভাবশালী ছিলো না। প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে কিছুটা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও তা আটকে রাখতে পারেনি সংগঠনটিকে, ২০০৬ সালের পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই তারা আয়োজন করেছে নানা কর্মশালা এবং স্থিরচিত্র প্রদর্শনী।
পুরাতন-বর্তমান সদস্যদের অদম্য ইচ্ছাশক্তিই ক্লাবটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ডিজিটাল ক্যামেরার সহজলভ্যতা এবং শিক্ষার্থীদের গগনচুম্বী আগ্রহ ক্লাবের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করে তুলেছে। এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অফ রুয়েটের প্রেসিডেন্ট মেহেদী হাসান মিতুল বলেন, “ক্লাবের উন্নতি সাধন এবং মেম্বারদের ফটোগ্রাফি বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দিতে ক্লাবের কমিটি মেম্বাররা সবসময়ই সাহায্য করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ফটোগ্রাফিক ক্লাবগুলার মধ্যে পিএসআরকে আমরা একটা সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছি। ক্লাবের বর্তমান কমিটি মেম্বাররা এখন ফটোগ্রাফারদের আরো উন্নতি সাধনের জন্য নিয়মিত কর্মশালা, সেমিনার, অান্তঃবিশ্ববিদ্যালয় চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের কর্মপরিধি আরো বিস্তৃতি পাবে।”
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলার পথে এই সংগঠন থেকে বেরিয়ে এসেছে বেশ কয়েকজন সম্ভাবনাময় ফটোগ্রাফার, যাদের অনেকেই এই মুহূর্তে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বনামধন্য এবং প্রতিষ্ঠিত। এ সংগঠন থেকেই বেরিয়ে আসা স্বনামধন্য ফটোগ্রাফারদের মধ্যে জিএম মেহেদী, রিফাত ইকবাল, দীপু দত্ত, পুলক কুমার বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
২০১৮ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অফ রুয়েট এক যুগে পদার্পণ করেছে, আর এ উপলক্ষ তারা উদযাপন করেছে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশেই। সম্প্রতি তারা পুরাতন ও বর্তমান সদস্যদের ধারণকৃত স্থিরচিত্র দিয়ে রুয়েট ক্যাম্পাসে একটি ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলো, যা রুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় গত ২১-২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ভবিষ্যতে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা এবং সমর্থন পেলে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এই সংগঠনের সাফল্যগাঁথা, এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ সংগঠনের সদস্যরা।
Featured Image Credit : PSR