এই তো, মাত্র কয়েক বছর আগের কথা। হাতে যোগ্য একজন অভিনেতা থাকার পরেও প্রযোজকরা সিনেমাটির নির্মাণ নিয়ে ছিলেন সন্দিহান। উপায় না দেখে পরিচালক টিম মিলার ব্লার স্টুডিওর সহায়তায় রায়ান রেনল্ডসের ভয়েস মিলিয়ে একটি সিজিআই অ্যানিমেটেড ফুটেজ তৈরি করে দেখালেন ফক্স স্টুডিওর হর্তাকর্তাদের। তা-ও তাদের সংশয় আর কাটে না। শেষমেশ ২০১৪ জুলাই মাসে অনলাইনে রিলিজ হয় সেই অ্যাকশন সিকুয়েন্সের লিকড ফুটেজ। ঝড় উঠলো ভক্ত আর দর্শকদের মাঝে, আর সেই ঝড়ের তোপেই ফক্সের প্রোডাকশন কোম্পানি ঘোষণা দিলো, ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে সবার কাঙ্ক্ষিত এই সিনেমাটি।
বলা হচ্ছিলো ডেডপুলের কথা। যে সিনেমাটির নির্মাণ নিয়েই ছিলো সংশয়, সেই সিনেমাই মুক্তির পর বক্স অফিস কাঁপিয়ে ৭৮ কোটি ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার আয়ের পাশাপাশি জয় করে নেয় ভক্ত ও সমালোচকদের মন। তারপর আর বলার বাকি থাকে না যে, সিনেমাটির সিকুয়েলও নিশ্চিত ঝড় তুলবে।
কিছুদিন আগেই বক্স অফিস কাঁপিয়েছে মারভেল সিনেমাটিক ওয়ার্ল্ডের অ্যাভেঞ্জারস: ইনফিনিটি ওয়ার ও ব্ল্যাক প্যান্থার। এবার তার সাথে যুক্ত হলো মারভেল কমিকের উপর নির্মিত অপর এক চলচ্চিত্র ডেডপুল ২। মুক্তির প্রথম তিন দিনে নিজ দেশ অর্থাৎ উত্তর আমেরিকায় এই সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র ডেডপুলের মতো আয় করতে সক্ষম না হলেও এক্সমেন ফ্র্যাঞ্চাইজির এই সর্বশেষ চলচ্চিত্রটির শুরু বেশ ভালোভাবেই হয়েছে। মুক্তির প্রথম তিন দিনেই এর বিশ্বব্যাপী আয় ৩০ কোটি মার্কিন ডলারেরও কিছু বেশি।
উত্তর আমেরিকার প্রায় ৪,৩৪৯টি স্থানে প্রদর্শিত এই চলচ্চিত্রটি প্রথম তিন দিনে প্রায় ১২ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার আয় করেছে, প্রথম চলচ্চিত্র ডেডপুলের জন্য যা ছিল প্রায় ১৩ কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার। তারপরেও এটি এই চলচ্চিত্রের জন্য হতাশ হওয়ার মতো কিছু নয়, কেননা বেশ কিছু রেকর্ড নিজের ঝুলিতে ভরেছে প্রধান চরিত্রে থাকা রায়ান রেনল্ডসের এই চলচ্চিত্রটি। চলুন দেখে নেওয়া যাক প্রথম সপ্তাহ শেষে এর অর্জিত রেকর্ডগুলো।
ফক্স প্রযোজিত চলচ্চিত্রের রেকর্ড
টুয়েনটিথ সেঞ্চুরি ফক্স প্রযোজিত চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এটিই আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তির প্রথমে সবচেয়ে বেশি আয়কৃত চলচ্চিত্র। যদিও এক্ষেত্রে নিজ দেশের রেকর্ডটি এই সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র ডেডপুলের দখলেই রয়ে গেছে। তবে ডেডপুল ও ডেডপুল ২ চলচ্চিত্রদ্বয় মুক্তির শুরুতেই দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ফক্সের সবচেয়ে বেশি আয় করা চলচ্চিত্র।
আর-রেটেড চলচ্চিত্র হিসেবে রেকর্ড
আর-রেটেড অর্থাৎ রেস্ট্রিক্টেড বা ১৭ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় এরকম চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তির প্রথম দিনেই বক্স অফিসে ৫ কোটি ৩৩ লক্ষ মার্কিন ডলার আয় করেছে। তাই মুক্তির প্রথমেই এটি আয়ের দিক থেকে আর-রেটেড চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে রেকর্ড
মুক্তির প্রথম সপ্তাহ শেষে এটি আন্তর্জাতিক বাজারে ১৭ কোটি ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার আয় করে প্রথম চলচ্চিত্র ডেডপুলকে পেছনে ফেলেছে। ডেডপুলের আয়ের ৫৩.৬ শতাংশ বৈদেশিক আয় ছিল, যেখানে ডেডপুল ২ এর আয়ের ৫৮.৫ শতাংশ বৈদেশিক আয়।
মারভেলের চলচ্চিত্র হিসেবে রেকর্ড
মারভেলের চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তির শুরুতেই এটি তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইনফিনিটি ওয়ার ও ব্ল্যাক প্যান্থার। এছাড়াও এ পর্যন্ত ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে মুক্তির শুরুতেই আয়ের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এটি।
প্রায় একমাস পরে মুক্তি পেলেও ইনফিনিটি ওয়ারের সাথে এর প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে। তবে ইনফিনিটি ওয়ারের আয়ের উপর ডেডপুল ২ কিছুটা হলেও ভাগ বসিয়েছে, যা ৫৪ শতাংশ কমে গিয়েছে।
ডেডপুল ২ এর মুক্তি ইনফিনিটি ওয়ারের একক রাজত্বে ছেদ এনেছে। টানা তিন সপ্তাহ বক্স অফিসের শীর্ষে থাকার পরে ইনফিনিটি ওয়ার এখন দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে। যদিও চতুর্থ সপ্তাহেও প্রায় ৪,০০২টি পর্দা থেকে এর আয় প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ মার্কিন ডলার। নিজ দেশে চলচ্চিত্রটির আয় এ পর্যন্ত ৫৯ কোটি ৫৪ লক্ষ মার্কিন ডলার।
তবে সে অর্থে ব্ল্যাক প্যান্থারের তেমন কোনো প্রতিযোগী ছিল না। যদিও মনে করা হচ্ছে, দেশের মাঝেডেডপুল ২ প্রায় ৬৭ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার আয়ের পথে রয়েছে, তবুও ব্ল্যাক প্যান্থারকে অতিক্রম করার সম্ভাবনা কম। ব্ল্যাক প্যান্থারের আয় বর্তমানে ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের কিছু কম। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী ইনফিনিটি ওয়ারের আয় ১০০ কোটি ৮১ লক্ষ এবং ব্ল্যাক প্যান্থারের আয় ১০০ কোটি ৩৪ লক্ষ মার্কিন ডলার।
ফক্সের প্রেসিডেন্ট ক্রিস অ্যারনসনের মতে, ডেডপুল ২ এর এরকম শক্তিশালী সূচনা অভিনেতা রায়ান রেনল্ডসের জন্য সাক্ষ্যস্বরূপ। তিনি বলেন, “আমি শুধু তার চরিত্রটিই নয়, বরং এটি প্রচারের ক্ষেত্রেও বেশি কিছু বলতে অক্ষম। এরকম সূচনার জন্য আমি বেশ খুশি।“
ফক্সের পক্ষ থেকে দেখানো হয়, প্রাথমিকভাবে চলচ্চিত্রটি দেখতে যারা ভিড় জমিয়েছেন তাদের প্রায় ৬১% পুরুষ। এই পার্থক্য নির্দেশ করে চলচ্চিত্রটি কিছুটা হলেও নারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিফল হয়েছে। কেননা কমিক বইয়ের কাহিনী থেকে বানানো চলচ্চিত্রগুলোর প্রায় ৫০% দর্শক হয় নারী। তবে এমনও হতে পারে যে, ডেডপুলের সম্ভাব্য কিছু দর্শক কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র বুক ক্লাব টেনে নিয়েছে। কেননা এতে চারটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চারজন নারী।
তা সত্ত্বেও ডেডপুল ২ এ পর্যন্ত ফ্যান ও সমালোচকদের কাছে ভালোই সমাদৃত। রোটেন টম্যাটোজে এখনও ৮৬% সার্টিফাইড ফ্রেশ। সিনেমাটি এর মধ্যেই দেশের অভ্যন্তরে সেরা পাঁচটি চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
সামনের শুক্রবার স্টার ওয়ারস সিরিজের সোলো:অ্যা স্টার ওয়ারস স্টোরি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় সপ্তাহে ডেডপুল ২-কে সোলোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তির শুরুতেই সোলো অন্তত ১ কোটি মার্কিন ডলার আয় করবে। তবে মারভেলের পরপর এই তিন চলচ্চিত্রের কারণে যদি সোলোর আয়ে কিছুটা ভাটা পড়ে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
Featured Image © Marvel Entertainment