.jpg?w=1200)
বিশ্বজুড়ে কতকিছুরই ‘সেরা দশ’ তালিকা করা হয়। কিন্তু ফাস্ট ফুডের ক্ষেত্রে তেমন তালিকা চোখে পড়ে না। বর্তমান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যেখানে ফাস্ট ফুড ভালোবাসে, সেখানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফাস্ট ফুডগুলোর কোনো তালিকা না থাকাটা একটু অস্বাভাবিকই বটে। এই অস্বাভাবিকতা দূর করতে জনপ্রিয় মার্কিন ফাস্ট ফুড বিষয়ক মিডিয়া পোর্টাল ‘ইট দিস, নট দ্যাট’ তৈরি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি ফাস্ট ফুড আইটেমের তালিকা। এই তালিকা করতে ফোর্বস এবং কিউএসআরের বিশ্বের সেরা ৫০টি ফাস্ট ফুড ব্র্যান্ডের তালিকার সহায়তা নেওয়া হয়েছে। সেরা ফাস্ট ফুড কোম্পানিগুলোতে যে খাবারটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সেই তথ্য নিয়েই তৈরি করা হয়েছে তালিকাটি। উল্লেখ্য, খাবার বিক্রয়ের নির্ভুল ও সুনির্দিষ্ট তথ্য কোনো ফাস্ট ফুড কোম্পানিই প্রদান করতে পারেন না। তারা কেবল একটি ধারণা দিতে পারে মাত্র।
১. ম্যাকডোনাল্ডের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
বিশ্বজুড়ে ৩৭,০০০ রেস্টুরেন্ট নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিস্তৃত ফাস্ট ফুড চেইন হচ্ছে ম্যাকডোনাল্ডস। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্তৃত রেস্টুরেন্টের কোনো ফাস্ট ফুড আইটেমই হবে পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড। ম্যাকডোনাল্ডের বিশাল বড় তালিকার সবার উপরে যে নামটি রয়েছে, সেটি হচ্ছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা আলু ভাজা!

বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ম্যাকডোনাল্ডের কোনো রেস্টুরেন্টে সবচেয়ে বেশি যে খাবারটির অর্ডার হয় সেটি হচ্ছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। সোডিয়ামে ভরপুর মচমচে এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই যেকোনো ফাস্ট ফুডপ্রেমীর পছন্দ তালিকার প্রথম দিকে থাকে। বিশ্বজুড়ে ম্যাকডোনাল্ডের রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রতিদিন কেবল ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের অর্ডার হয় ৯ মিলিয়নের বেশি! ম্যাকডোনাল্ডের সফলতার পেছনের আসল নায়ক আসলে এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
২. ম্যাকডোনাল্ডের বিগ ম্যাক বার্গার
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই সবার উপরে চলে গেছে আসলে বিশেষ কারণে। সাধারণ মানুষ রেস্টুরেন্টে নিজের পছন্দের খাবারের সাথে একটি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই অর্ডার করতে পছন্দ করে। তাই এর চাহিদা অনেক বেশি। তবে ম্যাকডোনাল্ডের আসল জনপ্রিয়তা মূলত প্রকাশ প্রায় তাদের বিগ ম্যাক বার্গারে। ষাটের দশকে প্রথম আমেরিকার বাজারে বিগ ম্যাক নামক এই লোভনীয় বার্গারের প্রচলন হয়।

তারপর থেকে এর জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। প্রাথমিক সময়ে যেখানে এর মূল্য ছিল মাত্র ৪৫ সেন্ট, সেখানে এর বর্তমান মূল্য ৪ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় ৩২০ টাকা। সুস্বাদু এই বার্গার বিশ্বে প্রতিবছর কত পরিমাণ বিক্রয় হচ্ছে তার সঠিক তথ্য ম্যাকডোনাল্ডও দিতে পারেনি। তবে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই বছরে ৫৫০ মিলিয়নের অধিক বিগ ম্যাক বার্গার বিক্রয় হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়!
৩. কেএফসি’র অরিজিনাল রেসিপি চিকেন
ফাস্ট ফুডের জগতে ম্যাকডোনাল্ডসের পর নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত নামটি হলো কেএফসি বা কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন। বিশ্বের ১২৫টি দেশে ২০ হাজারের বেশি কেএফসির অনুমোদিত আউটলেট রয়েছে। আর এই বিস্তৃত ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টের খাবারের মেন্যুতে সবার উপরে যে নামটি রয়েছে তা হচ্ছে অরিজিনাল রেসিপি চিকেন। ১১ রকমের মসলার মিশ্রণে তৈরি করা এই চিকেন ফ্রাইয়ের মন ভোলানো স্বাদ ছোট বড় সবাইকে আকৃষ্ট করে। ম্যাকডোনাল্ডসের ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো কেএফসির রেসিপি চিকেনও কেএফসির আউটলেটগুলোতে একটি সার্বজনীন অর্ডার।

১৯৪০ সালে কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল হারলান প্রথম ১১ রকমের মসলার মিশ্রণে অরিজিনাল রেসিপি চিকেন নামে এই চিকেন ফ্রাই বিক্রয় শুরু করেন। তারপর থেকে এই ভাজা মুরগির স্বাদ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে যেতে লাগলো অবিকৃতভাবে। ২০০৬ সালে বিশ্বজুড়ে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি চিকেন ফ্রাই বিক্রি করার মাইলফলক ছাড়িয়ে যায় কেএফসি!
৪. ম্যাকডোনাল্ডসের হ্যাপি মিল
আবারো ম্যাকডোনাল্ডস। ১৯৭০ এর দশকে ম্যাকডোনাল্ডস বাজারে এনেছিল ম্যাকমাফিন যা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের মতো ফাস্টফুডের জগতে ম্যাকডোনাল্ডসও একটি সাফল্যের সন্তুষ্টিতে গা ভাসিয়ে বসে থাকেনি। সেসময় শিশুখাদ্যের বাজারে কোনো নতুন চমক ছিল না। ম্যাকডোনাল্ডস তাই এই প্রতিযোগীতাহীন বাজারটাই নিজেদের করে নিল। ‘হ্যাপি মিল’ নামে শিশুদের জন্য ম্যাকডোনাল্ডস বাজারে আনলো সুদৃশ্য প্যাকেটজাত খাবার যার মধ্যে একটি বার্গার, কিছু ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং একটি খেলনা থাকে।

বিস্ময়কর রকমের সাফল্য পেয়ে এই হ্যাপি মিলের সাথে ধীরে ধীরে অনেক কিছুই যোগ করেছে ম্যাকডোনাল্ডস। বর্তমানে একটি হ্যাপি মিলের প্যাকেটে একটি হ্যামবার্গার, একটি চিজবার্গার, একটি গ্রিলড চিকেন, একটি ক্রিসপি চিকেন, চারটি ম্যাকনাগেট এবং তিনটি ফিশফিঙ্গার থাকে। শুরুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত ৩.৬ বিলিয়ন তথা ৩৬০ কোটির অধিক হ্যাপি মিল বিক্রি করেছে ম্যাকডোনাল্ডস!
৫. ইতালিয়ান বিএমটি
সেরা ফাস্ট ফুড ব্র্যান্ডের তালিকা করলে সাবওয়ের নাম ছাড়া তা অসম্পূর্ণ। তেমনি সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারের তালিকা করলেও সাবওয়ের স্যান্ডউইচ থাকবেই। তবে সমস্যাটা হচ্ছে এই স্যান্ডউইচের বিস্ময়কর বৈচিত্র্য রয়েছে। সাবওয়েই একমাত্র ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট যারা তাদের অনুমোদিত আউটলেটগুলোতে একই আইটেম বিক্রি করতে বাধ্য করে না।

বিশ্বজুড়ে সাবওয়ের ৪১ হাজার আউটলেটে আনুমানিক ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন নমুনার স্যান্ডুইচ পাওয়া যায়! তবে একটি সাধারণ জরিপের ফলাফল বলে, সাবওয়ের স্যান্ডুইচের মধ্যে ইতালিয়ান বিএমটি বা ‘বিগ মিটি টেস্টি’ই সবচেয়ে জনপ্রিয়। সালামি নামক একধরনের ইতালিয়ান খাবার, পেপারনি আর পশুর উরুর মাংসের সমন্বয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু বিএমটি স্যান্ডুইচ।
৬. পিৎজা হাটের পেপারনি পিৎজা

১৯৫৮ সালে চালু হবার পর থেকে পিৎজার জগতে পিৎজা হাটকে টেক্কা দেয়ার মতো আর কোনো ফাস্ট ফুড ব্র্যান্ডের জন্ম হয়নি। বিশ্বজুড়ে ১৭ হাজার রেস্টুরেন্ট রয়েছে এই নামকরা কোম্পানির। প্রতিদিনই নিত্যনতুন রেসিপির পিৎজা নিয়ে হাজির হলেও বিশ্বজুড়ে পিৎজা হাটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পিৎজার নাম হচ্ছে পেপারনি পিৎজা। তবে এক্ষেত্রে আরেক ফাস্ট ফুড জায়ান্ট ডমিনোসও খুব একটা পিছিয়ে নেই।
৭. ওয়েন্ডি’স ফ্রস্টি

সুস্বাদু বার্গারের জন্য আরেকটি নামকরা ব্র্যান্ডের নাম ওয়েন্ডি। তবে বার্গারের চেয়েও তারা বর্তমানে যে খাবারের আইটেমটি বেশি বিক্রি করছে তা হচ্ছে একটি চকলেট ডেজার্ট যার নাম ওয়েন্ডি’স ফ্রস্টি। বিশ্বের ৩০টি দেশে কয়েক হাজার আউটলেট আছে ওয়েন্ডির। সেসব আউটলেটের প্রতিটিরই প্রধান ৫টি আইটেমের একটি হচ্ছে ওয়েন্ডি’স ফ্রস্টি। প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন তথা ৩০ কোটি ওয়েন্ডি’স ফ্রস্টি বিক্রয় করছে ওয়েন্ডি কোম্পানি।
৮. ক্রাঞ্চি ট্যাকো
ট্যাকো বেল নিঃসন্দেহে বিশ্বের সেরা ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টগুলোর একটি। প্রতি বছর বিশ্বে নিজেদের ৭ হাজার রেস্টুরেন্টে প্রায় ২০০ কোটি মানুষকে তারা খাবার পরিবেশন করছে।

আর ট্যাকো বেলের ধারণা, ঠিক সমপরিমাণ ক্রাঞ্চি ট্যাকোও তারা বিক্রয় করে বছরে! গরুর মাংস, কয়েক রকমের সবজি, মসলা আর ক্রিমের তৈরি মচমচে ট্যাকো এতটাই জনপ্রিয় যে, ট্যাকো বেল কোম্পানির অর্ধেক মুনাফা আসে এই একটি খাবার বিক্রি করেই।
৯. হুপার
বার্গারের জগতে ম্যাকডোনাল্ডের ধারে কাছে যদি কোনো কোম্পানি থেকে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে বার্গার কিং। বিশ্বের ৭০টি দেশে নিজেদের ১৫ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছে মার্কিং ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট বার্গার কিং। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেম হুপার জায়গা করে নিয়েছে এই তালিকার নবম স্থানে।

এক পাউন্ডের চার ভাগের একভাগ পরিমাণ গরুর মাংস, টমেটো, কাঁচা পেয়াজ, টমেটো কেচাপ, মেয়োনেজ আর কয়েক পদের মিষ্টি ক্রিমের সমন্বয়ে তৈরি এক একটি হুপার দেখতে যেমন মুখরোচক, খেতেও তেমন মজা। প্রতি বছর প্রায় শত মিলিয়ন হুপার বিক্রয় করে থাকে বার্গার কিং।
১০. চিক-ফিল-এ’র চিকেন স্যান্ডুইচ
হাডবিহীন মাংস দিয়ে স্যান্ডুইচ তৈরির প্রচলন করেছিলেন বিখ্যাত রাঁধুনি ট্রুয়েট ক্যাথি, যা পরবর্তীতে বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ করে। তিনি কে জানেন? তিনি আমেরিকার জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট চিক-ফিল-এ’র প্রতিষ্ঠাতা। অতএব পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফাস্ট ফুডের তালিকায় তার উদ্ভাবিত স্যান্ডুইচের নাম থাকাটা অবধারিতই। মজার ব্যাপার হলো, চিক-ফিল-এ’র প্রায় ২৫০০ এর মতো রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেগুলোর সবই যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডায়। অন্যান্য দেশে চিক-ফিল-এ’র কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

কিন্তু, কেবল যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডায় চিক-ফিল-এ তাদের বোনলেস চিকেন স্যান্ডুইচ এত বেশি পরিমাণ বিক্রয় করে যে এটি স্থান করে নিয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফাস্ট ফুডের তালিকায়। তবে দশম স্থানে চিক-ফিল-এ’র স্যান্ডুইচের প্রতিযোগী একই কোম্পানির আরেকটি সুস্বাদু খাবার ওয়াফেল ফ্রাই। দুটি আইটেমের মধ্যে কোনটিকে উপরে রাখা যায়, সে ব্যাপারে কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরাও বিভ্রান্ত!
ফিচার ছবি: bitlanders.com