Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

১২ মে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন: হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে বিজেপি-কংগ্রেসের মধ্যে

আসছে ১২ মে নির্বাচন সম্পন্ন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ ভারতের বড় রাজ্য কর্ণাটকে। সামনের বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম; অনেকে বলছেন, ভারতের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে এটিই হতে যাচ্ছে সেমিফাইনাল।

যদিও আরও বেশ কয়েকটি বড় রাজ্যে এই বছরের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু কর্ণাটকের গুরুত্বের কারণ হচ্ছে, এটিই এই মুহূর্তে দেশের একমাত্র বড় রাজ্য যেখানে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। তাই একদিকে যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার বিজেপি মরিয়া ২০১৯ এর আগেই কংগ্রেসকে প্রায় ‘দেশছাড়া’ করতে, তেমনই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস দাঁত কামড়ে লড়ছে কর্ণাটকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। সব মিলিয়ে, লড়াই জমজমাট।

প্রচারণায় রাহুল গান্ধী; Source: BloombergQuint

কর্ণাটকের এই নির্বাচন যে শুধুমাত্র মোদী বনাম রাহুল, তা নয়। মোদীর পাশাপাশি যেমন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বি এস ইয়েদ্দুরাপ্পা এমনকি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও অন্যান্যরা রয়েছেন, তেমনি রাহুলের সঙ্গে কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া।

এমনকি, কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, যিনি কিনা প্রায় দুই বছর সেভাবে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেননি স্বাস্থ্যগত কারণে, তিনিও এবারে নেমে পড়েছেন আসরে। সিদ্দারামাইয়া তো ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সহ শাহ এবং ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে একশো কোটি টাকার মানহানি মামলা ঠুকেছেন তার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ আনার জন্যে। আর এর পাশাপাশি মোদী এবং রাহুলের চিরকালীন পাল্টাপাল্টি তো রয়েছেই। রাহুল গান্ধী তো মোদীর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে এও বলে দিয়েছেন যে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস একক বৃহত্তম দল হিসেবে শেষ করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে রাজি আছেন।

প্রচারণায় নেমেছেন স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী; Source: Times of India

একে তো ভারতের নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা বেশ কঠিন কাজ, এমনকি নামি বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও; তার উপর যখন সেটা এবারের কর্ণাটক নির্বাচনের মতো সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই, তখন তো কাজটা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

কিন্তু কী কারণে কর্ণাটক নির্বাচনকে আর পাঁচটা নির্বাচনের মতো দেখা হচ্ছে না, যেখানে বিজেপি প্রথম থেকেই ফেভারিট থাকে? এমনকি মোদীর মতো হাই-প্রোফাইল নেতা থাকা সত্ত্বেও? রাহুল গান্ধী গত বছরের শেষের দিকে কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পরেও তার দল বেশ কয়েকটি নির্বাচনে হেরেছে- গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় (এই রাজ্যে কংগ্রেস বৃহত্তম দল হলেও সরকার গঠন করতে পারেনি যা পরাজয়েরই সমান) ইত্যাদি।

আর বলার মতো সাফল্য হলো মোদীর রাজ্য গুজরাটে লড়াই করে হার স্বীকার। তবে কেন রাহুল এবং তার দলকে কর্ণাটক নির্বাচনের আগেই হিসেবের খাতায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে না? ইতিহাসও কংগ্রেসের পক্ষে নয়। কারণ, ১৯৮৫ সালের পর থেকে কর্নাটকে কোনো দল পরপর দুবার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেনি। এই তিন দশকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়াকে পরাজিত করতে পারেননি কোনো মুখ্যমন্ত্রীই।

তবে কীসের জোরে কংগ্রেস এই লড়াইতে রয়েছে এবারের কর্ণাটকের নির্বাচনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে?

সিদ্দারামাইয়াকে কি হারাতে পারবে বিজেপি?

সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা এই নেতাকে বিজেপি তাদের চিরাচরিত পরিবারবাদী রাজনীতির অস্ত্রে ধরাশায়ী করতে পারেনি। সিদ্দারামাইয়া নিজেও আগাগোড়া কংগ্রেসি নেতা নন, যার ফলে দিল্লির প্রতি আনুগত্য দেখানোর গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে সেভাবে নেই।

উল্টো সিদ্দারামাইয়া ধুরন্ধর রাজনীতিবিদের মতোই কন্নড় জাতীয়তাবাদীর ধুয়ো তোলা এবং বিজেপির অন্যতম বড় ভরসা লিঙ্গায়েত ভোটব্যাঙ্ককে বিশেষ তকমা দেওয়ার রাজনৈতিক চাল চেলে বিজেপিকেই বেশ বিপাকে ফেলেছেন। এই লিঙ্গায়েত এবং তাদের নেতা ইয়েদুরাপ্পাই ছিল এই নির্বাচনে বিজেপির সবচেয়ে বড় ভরসা। যে কারণে কর্ণাটকের এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কালিমালিপ্ত ভাবমূর্তি থাকা সত্ত্বেও তাকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাতে কার্যোদ্ধার হওয়া বেশ মুশকিল।

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া; Source: Siddaramaiah Twitter handle @siddaramaiah

অতএব মাঠে নেমেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সিদ্দারামাইয়া মোদীসহ বিজেপির অন্যান্য রাঘববোয়ালদের ‘উত্তর ভারতীয় আমদানি’ আখ্যা দিয়ে মোদীর আবেদনকে ম্লান করে দেওয়ার এক মোক্ষম চাল দিয়েছেন। তাছাড়া কর্ণাটকের রাজনীতিতে মোদীর আবেদন তার জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি করা ম্যাজিকের চেয়ে অনেকটাই নিষ্প্রভ। তাই কমবয়সী ভোটার ছাড়া আর কাদের মধ্যে মোদী ম্যাজিক কাজ করবে, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর জল্পনা।

সিদ্দারামাইয়া এই নির্বাচনে প্রথাগত সস্তা জনপ্রিয়তাবাদের সঙ্গে কন্নড় জাতীয়তাবাদ এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক আবেদনের এক কার্যকরী মিশেল বানিয়ে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন। তাছাড়া কংগ্রেস হাই কমান্ড সিদ্দারামাইয়াকে তার মতো করে ঘুঁটি সাজানোর যথেষ্ঠ স্বাধীনতাও দিয়েছেন আর মুখ্যমন্ত্রী তার সম্পূর্ণ সুযোগ নিয়েছেন। ইয়েদুরাপ্পাকে সেদিক থেকে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় দেখিয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী; Source: Author: Balatokyo; Wikimedia Commons

তাছাড়া যে মোদী দুর্নীতি-বিরোধিতার কথা বলেন, তার দলই যখন বেলারির বিতর্কিত রেড্ডি ভাইদের অন্যতম সমশেখর রেড্ডি সহ বেশ কিছু অভিযুক্ত প্রার্থীকে দাঁড় করায় এই নির্বাচনে, তখন জনমানসে তার একটি নেতিবাচক ছাপ পড়ে বৈকি।অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এবারের কর্ণাটক নির্বাচনে অপরাধমূলক কাজকর্মে অভিযুক্ত এমন প্রার্থী সবচেয়ে বেশি দিয়েছে বিজেপিই (২২৪-এর মধ্যে ৮৩ জন)।

বিজেপি-কংগ্রেস যুদ্ধে তৃতীয় শক্তি জেডিএস কোণঠাসা হয়ে পড়েছে

এই লড়াইতে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার জনতা দল (সেকুলার) বা জেডিএসও রয়েছে যারা অতীতে কর্ণাটকের অন্যতম বড় শক্তি হলেও বিজেপি বনাম কংগ্রেস-এর এই দ্বিমুখী লড়াইতে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

কংগ্রেস জেডিএসকে বিজেপির বি-টিম বলে প্রচারে ব্যস্ত। ২০০৬ সালে জেডিএস নেতা দেবগৌড়ার পুত্র এইচ ডি কুমারস্বামী বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন যেটা কংগ্রেসের প্রচারে আরও ইন্ধন যোগাচ্ছে। কর্ণাটকের ২২৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের বেশ কয়েকটিতে লড়াইটা মুখ্যত কংগ্রেস-জেডিএস এর মধ্যে আর তাই কংগ্রেস বিজেপির পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধেও আক্রমণ বানিয়েছে। এখন দেখার জেডিএস ওই কেন্দ্রগুলিতে কতটা গুছিয়ে উঠতে পারে।

জেডিএস-বহুজন সমাজ পার্টি জোটের প্রার্থী এইচ ডি কুমারস্বামী; Source: Deccan Herald

সম্প্রতি জেডিএস এর বেশ কিছু বিধায়ক কংগ্রেসে চলে যাওয়াতেও দলের অন্দরে অস্বস্তি বেড়েছে। অথচ জেডিএস এর জন্য এই বছরের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহুদিন ক্ষমতার স্বাদ না পাওয়া জেডিএস যদি এবারেও মুখ থুবড়ে পড়ে, তবে তা কর্ণাটকের রাজনীতিতে নিজের প্রাসঙ্গিকতা হারাবে আরও অনেকটাই। জেডিএস এবার মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধেছে দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর ভোট পেতে কিন্তু মোদী-সিদ্দারামাইয়ার লড়াইতে তা কতটুকু গুরুত্ব পাবে সেটা জানা যাবে ১৫ মে, ভোটের ফলের দিন।

মোদীর জন্যে কর্ণাটকে জেতাটা জরুরি, কারণ, দক্ষিণ ভারতে বিজেপি এখনও সেভাবে সোজয়া হয়ে দাঁড়াতে পারেনি– তাদের এই স্বর্ণযুগেও। আর সামনের বছরের লোকসভা ভোটের আগে অন্তত একটি দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যে সরকারে আসতে পারলে বিজেপির আত্মবিশ্বাস বাড়বে অনেকটাই। পাশাপাশি, বিরোধী কংগ্রেসকে আরও চুরমার করে দেওয়া যাবে ‘কংগ্রেস-মুক্ত ভারত’ এর লক্ষ্যে।

বিএস ইয়েদুরাপ্পা; Source: MANJUNATH KIRAN/AGENCE FRANCE-PRESSE/GETTY IMAGES

কিন্তু অপরদিকে, বিজেপি যদি জিততে না পারে এত আস্ফালনের পরেও, তবে তা কংগ্রেসকে বল তো যোগাবেই, মোদীর বিরুদ্ধেও প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার শক্তিশালী দাবিটি আরও মজবুত হবে। আগামী ডিসেম্বরে তিনটি বিজেপি-শাসিত রাজ্যের (মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগঢ়) নির্বাচনের আগেও তা মোদী-অমিত শাহের নেতৃত্বকে একটু নড়বড়ে করে দিতে পারে।

বিজেপির শীর্ষ নেতারা এই কথাটি অবশ্যই মাথায় রাখবেন যে, কর্ণাটক সহ ওই বাকি তিনটি রাজ্যে কংগ্রেসের ভোট শতাংশ খুব খারাপ নয়। তাই সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি অন্তিম ফলাফলকে উল্টে দিতে পারে যেকোনো মুহূর্তেই।

এবারের কর্ণাটকের নির্বাচন যেন বিগত দিনের মহাভারতেরই একবিংশ শতাব্দীর সংস্করণ, যাতে সম্মুখ সমরে লড়ছেন রথী-মহারথীরা। কে শেষপর্যন্ত শেষ হাসি হাসেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

Featured Image Source: The Indian Express

Related Articles