Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কাতারের বিরুদ্ধে গোপন অপারেশনের অভিযোগ: ২০২২ বিশ্বকাপ কি হুমকির মুখে?

২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে ক্ষুদ্র উপসাগরীয় রাষ্ট্র কাতারে। কিন্তু আদৌ কি হবে, সে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে নতুন করে। ২০১০ সালে কাতার যখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের টিকেট অর্জন করে, তখন থেকেই কাতারের বিরুদ্ধে উঠতে শুরু করে একের পর এক অভিযোগ। যদিও শেষপর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার অর্জনের জন্য কাতারের বিরুদ্ধে ফিফার বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ প্রদান করার অভিযোগে উঠেছিল বেশ জোরেশোরেই।

ঘুষ প্রদানের অভিযোগ উঠেছিল কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বিন হাম্মামের বিরুদ্ধেও। শুধু বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য না, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ফিফার সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় ফিফার কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ প্রদানেরও। সরাসরি সবগুলো অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের দায়িত্বে থাকাকালে “ফিফার স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক” কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিন হাম্মামকে ফিফা থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারও করা হয়েছিল। সে সময় ফিফার প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার এমন মন্তব্যও করেছিলেন যে, কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল।  

সম্প্রতি বিশ্বকাপ আয়োজন সংক্রান্ত দুর্নীতিতে কাতারের নাম উঠে এসেছে আবারও। কাতারের বিশ্বকাপ নিলাম কমিটির এক হুইসেলব্লোয়ার কর্তৃক ফাঁসকৃত গোপন নথিপত্র ও ইমেইল বার্তার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদপত্র সানডে টাইমস দাবি করেছে, নিলামে জেতার জন্য কাতার অবৈধ এবং গোপন অপারেশন পরিচালনা করেছিল। টাইমসের দাবি অনুযায়ী, কাতার তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফিফার নীতিমালা ভঙ্গ করে প্রচারণা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি পিআর ফার্ম তথা পাবলিক রিলেশান্স প্রতিষ্ঠান এবং কিছু সাবেক সিআইএ কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছিল।

এমনিতে নিজেদের পক্ষে বা অন্যদের সমালোচনা করে প্রচারণা চালানোর জন্য পিআর ফার্ম নিয়োগ করা আইন বহির্ভূত কিছু না। কিন্তু ফিফার একটি নিয়ম আছে, যেখানে নিলামে অংশগ্রহণকারী কোনো রাষ্ট্রই লিখিত, মৌখিক, বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর নিলাম প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রচারণা চালাতে পারবে না। কিন্তু টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, কাতার ফিফার ঐ নীতিমালা ভঙ্গ করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল।

ফিফার আরেকটি নিয়ম আছে, যেখানে কোনো দেশের জনগণের যদি বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতি সমর্থন না থাকে, তাহলে তারা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। টাইমসের দাবি অনুযায়ী, কাতার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্রাউন লয়েড জেমস নামক পিআর ফার্মকে নিয়োগ করেছিল, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য প্রতিযোগীর বিরুদ্ধে এমনভাবে প্রচারণা চালায়, যাতে মনে হয়, সেসব দেশের জনগণ তাদের অার্থ-সামাজিক বাস্তবতার কারণে বিশ্বকাপ আয়োজনের পক্ষপাতী না।

সানডে টাইমস কর্তৃক প্রকাশিত একটি ইমেইল বার্তায় দেখা যায়, BLJ এর নিউইয়র্ক শাখার সভাপতি, মাইকেল হল্টজম্যান ২০১০ সালের মে মাসে কাতারের বিশ্বকাপ নিলাম কমিটির সিনিয়র উপদেষ্টা আহমেদ নিমেহ্‌’র কাছে তাদের শেষ চার মাসের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর অগ্রগতি বর্ণনা করছেন। ইমেইলের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানীটি ৯,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এক স্বনামধন্য অধ্যাপককে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর বিশ্বকাপ আয়োজনের নেতিবাচক প্রভাব বিষয়ক প্রতিবেদন লিখিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করিয়েছিল। এছাড়াও কোম্পানীটি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিভিন্ন সাংবাদিক, ব্লগার ও অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে ভাড়া করেছিল নিজ নিজ দেশে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য।

ইমেইল থেকে আরো জানা যায়, কোম্পানীটি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শিক্ষককেও ভাড়া করেছিল, যেন তারা বিশ্বকাপ আয়োজনের বিরোধিতা করে সেই অর্থ শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তাদের এলাকার কংগ্রেসম্যানের উপর চাপ প্রয়োগ করে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ আয়োজনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা এবং তিনটি দেশেরই নিলাম কমিটিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রস্তুত করার অগ্রগতি সম্পর্কেও ইমেইলে আলোচনা করা হয়।

কাতার অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছে। কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসী জানিয়েছে, তারা ফিফার নিয়মাবলি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলেছে এবং তারা সানডে টাইমস কর্তৃক উত্থাপিত প্রতিটি অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে। অন্যদিকে BLJ World সানডে টাইমসের অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি। তবে কোম্পানীটির লণ্ডন শাখা দাবি করেছে, ঘটনার সময় তারা নিউ ইয়র্ক শাখা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এবং কাতারের সাথে এ ধরনের কোনো প্রকল্পের ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে কাতারের বিরুদ্ধে প্রচুর ভিত্তিহীন অভিযোগ ওঠার উদাহরণও আছে। কাতারের প্রতিদ্বন্দ্বী উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার বাতিল করানোর ব্যাপারে বেশ সক্রিয়। সানডে টাইমস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্ক অবগত এবং সে কারণে তারা তাদের কাছে আসা ইমেইল এবং অন্যান্য নথিপত্র যাচাই করে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে যে, সেগুলো কাতারের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ না।

কাতারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ নতুন অভিযোগ আগামী বিশ্বকাপের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ আয়োজনের নিলাম কমিটির সাবেক সভাপতি লর্ড ট্রিসম্যান কাতারের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করার জন্য ফিফার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এবং আরো কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিটিশ কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার বাতিল করা উচিত।

তবে বাস্তবে কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ফিফা হয়তো কাতারের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করতে পারে। তবে সেই তদন্তে কিছু প্রমাণিত হবে কি না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। কারণ ইতোপূর্বে ফিফা কাতারের বিরুদ্ধে প্রায় একই ধরনের তদন্ত পরিচালনা করেও কিছু পায়নি। এবার যদি কাতারের বিরুদ্ধে ফিফার নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবুও তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হতে যে সময় লাগবে, ততদিনে নতুন কোনো দেশের উপর বিশ্বকাপ আয়োজনের ভার ন্যস্ত করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ফিফার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে কাতারই হয়তো বিশ্বকাপের আয়োজন করবে, কিন্তু তাদেরকে কঠোর অর্থনৈতিক জরিমানা, ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হওয়া, অথবা এ ধরনের অন্য কোনো ধরনের শাস্তি মেনে নিতে হতে পারে।

ফিচার ইমেজ- stadiumguide.com

Related Articles