Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গুজরাট ও হিমাচলে জিতলো বিজেপিই!

অবশেষে গুজরাট দুর্গ অক্ষুণ্ণ রেখে হিমাচল থেকেও কংগ্রেসকে বিদায় করলো বিজেপি। পশ্চিমের রাজ্য গুজরাট ও উত্তরের রাজ্য হিমাচলের সর্বমোট ২৫০টি আসনে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়। সময়ের ব্যবধানে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার বিষয়টি নিশ্চিত হতে থাকে। ইতোমধ্যে সকল আসনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে, যাতে দুই রাজ্যেই বিজেপি জয়ী হয়েছে। তবে কংগ্রেসে দৃশ্যমান নয়া চাঙ্গাভাব এ নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে বিজেপিকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলবার মাধ্যমে।

গুজরাটের একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের চিত্র; source: ste.india.com

গুজরাট নির্বাচন

টানা ষষ্ঠবারের মতো গুজরাটে ক্ষমতা ধরে রাখলো বিজেপি। নির্বাচনের আগে অমিত শাহ’র হুঙ্কার ছিলো কম করে হলেও ১৫০টি আসন জিতবার। সেই হুঙ্কার মিইয়ে গেছে কংগ্রেসের কাছে উল্টো বেশ কিছু আসন খোয়ানোর মাধ্যমে।

গত ৯ ও ১৪ ডিসেম্বর দুই দফায় গুজরাটে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গুজরাটে মোট আসন সংখ্যা ছিলো ১৮২টি। ৯৯টি আসনে জিতেছে বিজেপি, আর ৭৭টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। অন্যান্য দল মিলে পেয়েছে ৩টি আসন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছে আরো ২টি আসন।

গুজরাটের সর্বশেষ ফলাফল; source: eciresults.nic.in

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বিজেপি এবার পেয়েছে ৪৯.১ শতাংশ ভোট; যেখানে ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছিলো ৬০ ভাগ ভোট। তবে বিধানসভার গত নির্বাচন অর্থাৎ ২০১২ এর নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট থেকে এবার এক শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে এবার কংগ্রেস পেয়েছে ৪১.৪ শতাংশ ভোট; ‘১৪ এর লোকসভা নির্বাচন থেকে যা প্রায় ৮ শতাংশ এবং ‘১২ এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট থেকে ২ শতাংশ বেশি।

শুধু ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই হারায়নি কংগ্রেস। বরং হেভিওয়েট কিছু প্রার্থী আসনও খুইয়েছেন; যেমন- পশ্চিম রাজকোট আসনের ইন্দ্রনীল রাজ্যগুরু, মাণ্ডবী আসনের শক্তিসিন গোহিল, পোরবন্দরের অর্জুন মোড়ওয়াড়িয়া, দাভোইয়ের সিদ্ধার্থ প্যাটেল। তবে গত নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির সাথে ব্যবধান কমিয়ে এনেছে কংগ্রেস, গত নির্বাচনের চেয়ে এবার প্রায় ১৬টি আসন কম পেয়েছে বিজেপি।

হার্দিক প্যাটেল; Source: Times Now

হার্দিক প্যাটেলকে ধরা হচ্ছিলো এই নির্বাচনের এক্স-ফ্যাক্টর। গুজরাটের গ্রামীণ এলাকার পাতিদারদের নেতা এই হার্দিক তার জনগোষ্ঠীকে ভালোভাবেই বিজেপির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। এদের কারণেই বিজেপি তাদের আজন্ম ঘাঁটিগুলোতেও অনেক ভোট হারিয়েছে। কিন্তু যেভাবে ‘হার্দিক’ ঝাপটা লাগার কথা ছিলো, সেভাবে না লাগার কারণটা হলো নির্বাচনের আগ দিক দিয়ে হার্দিকের যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ফাঁস। ওদিকে ব্যবসাবান্ধব-মোদীর ‘জাদু’তে বরাবরই বিমোহিত শহুরে প্যাটেল সহ অন্যান্যরা ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। সাথে জিএসটি (পণ্য ও সেবা কর) কমানোর ফাটকা এতটাই বিজেপিকে সুফল দিয়েছে যে, নোট বাতিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রচারণা চালিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি।

হিমাচল নির্বাচন

ভারতের ‘দেবভূমি’ খ্যাত হিমাচল ছিলো বর্তমান ভারতবর্ষের দুর্লভতম রাজ্যের একটি, যেখানে ক্ষমতাসীন দলটির নাম কংগ্রেস। সেই দেবভূমিতেও বীরভদ্র সিংয়ের নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস সরকারকে হটিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হলো বিজেপি। এর ফলে দেশটিতে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের সংখ্যা নেমে দাঁড়ালো চারে- কর্ণাটক, পাঞ্জাব, মিজোরাম ও মেঘালয়।

নরেন্দ্র মোদী; Source: Republic TV

৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটে হিমাচলে সর্বমোট ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছিলো বলে সরকারি হিসেবে জানা যায়। এই রাজ্যে মোট আসন সংখ্যা ৬৮টি। ১৮ ডিসেম্বরের ভোট গণনায় চুড়ান্ত হিসেব অনুযায়ী ৪৪টি আসনে জিতেছে বিজেপি। অন্যদিকে ২১টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। এসবের বাইরে বরং বেশি  চমক সৃষ্টি করেছে একটি আসনে সিপিআইএম এর জয়! হিমাচল প্রদেশে থিয়োগ কেন্দ্র থেকে সিপিআইএম প্রার্থী কমরেড রাকেশ সিং ২,৪০৮ ভোটে পরাজিত করেন বিজেপি প্রার্থীকে। ২৪ বছর পর প্রথম বাম বিধায়ক পাওয়ার সাথে সাথে গোটা রাজ্যে প্রায় ৫০,০০০ (২.১%) ভোট পেয়ে হিমাচলের তৃতীয় বৃহত্তম দল হলো ভারতের মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআইএম)।

হিমাচলের সর্বশেষ ফলাফল; source: eciresults.nic.in

আরকি আসন থেকে বীরভদ্র সিং, শিমলা গ্রামীণ আসন থেকে বিক্রমাদিত্য সিং ছাড়া হিমাচলের কংগ্রেসের সকল হেভিওয়েট প্রার্থীই খুইয়েছেন নিজ নিজ আসন।

নির্বাচনে ইভিএম কারচুপির কালিমা

পাতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল নির্বাচনের আগে থেকেই টুইটারে ইভিএম কারচুপির আগাম অভিযোগ দেগেছিলেন বিজেপির দিকে। ভোট গ্রহণের দিনও তিনি জানান, ইভিএমে কারচুপির জন্য বিজেপি একদল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে ভাড়া করেছে। সেই ভোটগ্রহণের দিন, অর্থাৎ ১৪ তারিখ বিকেলে বিধানসভা কেন্দ্রের ছয়টি বুথে পুনর্নির্বাচন হয়েছে। এ বুথগুলোয় কারচুপির জোর অভিযোগ এসেছিলো। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, ইভিএমে প্রিজাইডিং অফিসারদের ‘মক ড্রিল’ জনিত ত্রুটির কারণেই নাকি এই পুনর্নির্বাচন। ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ এসেছে সুরাটের কামরেজ আসনের প্রার্থী অশোক জরিওয়ালার পক্ষ থেকেও। এর প্রেক্ষিতেই ইভিএম-স্থল সুরাটের গান্ধী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওয়াইফাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

গণমাধ্যমের কাছে ইভিএম কারচুপি নিয়ে বলছেন হার্দিক প্যাটেল; source: financialexpress.com

নির্বাচনকে ঘিরে নতুন মেরুকরণ

অমিত-মোদী মিলে পুরো ভারতকে কংগ্রেস-শূন্য করবার যে অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন, এ নির্বাচনদ্বয়ে প্রাপ্ত জয় তাদের ঈপ্সিত গন্তব্যের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে, যা কংগ্রেসের অস্তিত্বের জন্যই বিরাট চ্যালেঞ্জ। আর ক্ষমতায় এসেই কিনা সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হলো রাহুল গান্ধীকে।

বিজেপির ‘গেরুয়া’তে ছেয়ে গেছে ভারত; Source: ibtimes.co.in

হিমাচলে কংগ্রেসের পতনের পর যে কয়টি রাজ্যে এখনো কংগ্রেস শাসন বিদ্যমান, সেখানে কেবল পাঞ্জাব ছাড়া বাকি সবগুলোতেই আগামী বছর নির্বাচন। সেখানে কংগ্রেস শাসন টিকিয়ে রাখার সাথে সাথে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানেও বিজেপির সাথে তুমুল যুদ্ধে নামতে হবে কংগ্রেসকে। এমন অবস্থায় রাহুল অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একরকম সহানুভূতিই পাচ্ছেন দুটো প্রধান কারণে। একটি কারণ স্থূল, সেটি নির্বাচনকে ঘিরে রাহুলের সংযত-শিষ্ট প্রতিক্রিয়া।

দ্বিতীয় কারণটি বেশ সূক্ষ্ম। এবারের নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলেই কিনা বিজেপি বের করেছিলো তাদের তুরুপের তাসটি। হ্যাঁ, ধর্ম ও পাকিস্তানবিরোধী ভাবাবেগকে এই নির্বাচনে বেশ ভালোভাবেই ব্যবহার করেছে বিজেপি। রামমন্দির সহ ধর্মীয়-গোত্রীয় নানা ইস্যু নিয়ে জল ঘোলা করবার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ধর্মানুভূতিকে ব্যবহার করে উচ্চবর্ণীয় হিন্দু তো বটেই, নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের ভোটও নিজ ট্যাঁকে আনতে পেরেছে বিজেপি। সেই সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেস নেতা মনি শংকর আয়ারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সাথে ‘ভোট ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হবার অভিযোগ আনেন। যে কারণে পাকিস্তানবিরোধী সংবেদনশীল ভোটারদের ভোট হারিয়েছে কংগ্রেস। তাই দলিত, পাতিদার, আদিবাসী ও মুসলিমদের ভোট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কংগ্রেসকে। ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদে বিশ্বাসী বিশ্লেষকদের কাছে বিজেপির এ কূটকৌশল হয়েছে নিন্দিত, স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে নৈতিক সুবিধা রাহুলের পক্ষেই গেছে।

রাহুল গান্ধী; Source: The Quint

নির্বাচনী প্রতিক্রিয়া

দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্ণ ফলাফল প্রকাশের আগে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হবার সাথে সাথেই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-প্রতিক্রিয়ার শোর উঠেছে, যা বজায় আছে পূর্ণ ফলাফল প্রকাশের পরও। নরেন্দ্র মোদী টুইট বার্তায় এক উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন-

“গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে জনগণ আমাদের প্রতি যেভাবে ভালোবাসা ও আস্থা দেখিয়েছেন, সেজন্য তাদের প্রতি জানাচ্ছি আমার অবনত-মস্তক শ্রদ্ধার্ঘ্য। আমি সকলকে আশ্বস্ত করছি, উন্নয়নের যাত্রা অব্যহত রাখতে ও জনগণকে অবিরত সেবাপ্রদানে আমাদের চেষ্টার বিন্দুমাত্র কমতি থাকবে না।”

মোদী ও রাহুলের টুইট বার্তা; source: twitter.com

বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেন,

“এ জয় উন্নয়নের রাজনীতির জয়। পরিবারতন্ত্র, জাতপাত, তোষণের রাজনীতির পরাজয় ঘটেছে এ নির্বাচনে।”

ওদিকে পরাজয় মেনে নিয়ে জনগণের সিদ্ধান্ত ও নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন কংগ্রেসের নয়া সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি এক টুইট বার্তায় জানান-

“কংগ্রেসের ভাই-বোনেরা, সত্যিই আপনাদের নিয়ে খুব গর্ব হচ্ছে। আপনারা সকলকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে আমাদের কংগ্রেসের সব থেকে বড় শক্তিই হলো আমাদের শিষ্টাচার ও সাহস।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়; Source: YouTube

তবে ভিন্ন সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতবারের নির্বাচন অপেক্ষা এবার বিজেপির তুলনামূলক খারাপ ফলাফল করাকে ইঙ্গিত করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন,

“গুজরাটবাসীকে এমন ভারসাম্যপূর্ণ রায় প্রদানের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই ফলাফল অস্থায়ী ও মুখ বাঁচানোর জয়। এই ফলাফলে বিজেপির নৈতিক পরাজয় সুস্পষ্ট হয়েছে। এ রায় সাধারণ গুজরাটবাসীর উপর অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রায়। ২০১৯ সালের আগে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধল গুজরাটবাসী।”

ফিচার ইমেজ: scroll.in

Related Articles