তুরস্ক থেকে লিবিয়াগামী বিস্ফোরকবাহী জাহাজ আটক!

তুরস্ক থেকে বিস্ফোরক বোঝাই করে লিবিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি জাহাজ আটক করেছে গ্রীক কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার এন্ড্রোমিডা নামক একটি জাহাজ গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রীক কোস্টগার্ডরা সন্দেহবশত একে আটক করে। পরে গত বুধবার তারা জাহাজটিতে তল্লাশী চালায়। তল্লাশীতে জাহাজটিতে ২৯টি কন্টেইনার বোঝাই বিভিন্ন বিস্ফোরক নির্মাণ সামগ্রী এবং ১১টি খালি এলপিজি গ্যাস ট্যাংক পাওয়া যায়।

গ্রীক কর্তৃপক্ষ একে ‘চলন্ত বোমা‘ হিসেবে অভিহিত করে। রিয়ার অ্যাডমিরাল ইয়ানিস আর্গিরিউ সাংবাদিকদেরকে জানান যে, গ্রীক কোস্টগার্ড একটি চলন্ত বোমাকে নিষ্ক্রিয় করেছে, যা মানুষের প্রাণ এবং সমুদ্রের পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারতো।

জাহাজটি তাঞ্জানিয়ার পতাকা বহন করছিল। কিন্তু এতে থাকা কাগজপত্র থেকে দেখা যায়, এতে কন্টেইনারগুলো বোঝাই করা হয়েছিল তুরস্কের মার্সিন বন্দর থেকে, আর এলপিজি ট্যাংকগুলো বোঝাই করা হয়েছিল তুরস্কের ইস্কেনদেরুম বন্দর থেকে। কাগজপত্র অনুযায়ী কন্টেইনারগুলো খালাস করার কথা ছিল জিবুতীতে, আর এলপিজি ট্যাংকগুলো খালাস করার কথা ছিল ওমানে। কিন্তু কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, জিবুতী বা ওমানের কোনো সামুদ্রিক মানচিত্র জাহাজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহাজটির ক্যাপ্টেন স্বীকার করেছে যে, তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মালগুলো লিবিয়ার মিসরাতা বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

জাহাজ থেকে জব্দকৃত বিস্ফোরক নির্মাণ সামগ্রী; Source: Libya Times

জাহাজটিতে মতো আটজন ক্রু ছিল, যাদের দুজন ইউক্রেনিয়ান, পাঁচজন ভারতীয় এবং একজন আলবেনিয়ান। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাহাজটি এবং এর সকল মালামাল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য গ্রীক কোস্টগার্ড ছাড়াও অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অ্যান্ড টেরোরিজম ফান্ড অথরিটিকে অবহিত করা হয়েছে। জাহাজের ক্রুদেরকে শীঘ্রই বিচারের সম্মুখীন করা হবে বলে গ্রীক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়

উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকেই জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে লিবিয়াতে অস্ত্র সরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় লিবিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের দুই বিপরীত পক্ষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে অস্ত্র সাহায্য পেয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে মিসর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। অন্যদিকে ইসলামপন্থী মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে তুরস্ক এবং কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। জেনারেল হাফতারের পক্ষ থেকে কাতার এবং তুরস্কের বিরুদ্ধে লিবিয়ার সন্ত্রাসবাদে সহায়তা করারও অভিযোগ করা হয়

গ্রিসে তুরস্ক থেকে লিবিয়ার উদ্দেশ্যে জাহাজ আটকের ঘটনা এবারই প্রথম না। এর আগেও  ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তুরস্ক থেকে ৫,০০০ শটগান এবং পাঁচ লাখ বুলেট নিয়ে লিবিয়ার যাওয়ার সময় গ্রীক কর্তৃপক্ষের হাতে একটি জাহাজ আটক হয়েছিল

ফিচার ইমেজ- Xinhua.com

Related Articles

Exit mobile version