Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়েছে খুদে ফুটবল দল; চলছে উদ্ধারকার্য

কেমন লাগবে যদি কোনো অন্ধকার গুহায় পথ হারিয়ে ফেলেন? যেখানে দিন-রাতের পার্থক্য করা যায় না, যেখানে পথ খুঁজতে খুঁজতে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় হয়রান হয়ে সময়ের হিসাব ভুলে যান? শুনতে কোনো হলিউড চলচ্চিত্রের কাহিনী মনে হলেও এমনটিই ঘটেছে সম্প্রতি

গত ২৩ জুন থাইল্যান্ডের উত্তরের চিয়াং রাই প্রদেশের একটি গুহায় হারিয়ে যায় জুনিয়র ফুটবল দলের সদস্যরা। তাদের খুঁজে বের করার জন্য পরিচালিত হয় নাটকীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান। অবশেষে ব্রিটিশ ও থাই ডুবুরিরা গত সোমবার হারিয়ে যাওয়ার প্রায় ৯ দিন পরে ছেলেগুলোকে খুঁজে পান। তবে খুঁজে পেলেও এখনও তাদেরকে সেখান থেকে বের করে আনতে সক্ষম হননি তারা। প্রতিকূল পরিবেশ, বৃষ্টি, বন্যা ও গুহার সরু পথের কারণে যাত্রাটি বেশ বিপজ্জক। চলুন জেনে নেওয়া যাক তাদের হারিয়ে যাওয়া ও উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে।

আটকে পড়া খুদে ফুটবল দল; Source: BBC

তারা কীভাবে গুহায় আটকা পড়েছে?

গত ২৩ জুন ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১২ জন ছেলে এবং তাদের ২৫ বছর-বয়সী কোচ হারিয়ে যায়। তারা যখন গুহায় প্রবেশ করে তখন এটি শুকনো ছিল। তারা সেখানে ঢোকার পরে ভারী বর্ষণের কারণে গুহা থেকে বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর টানা নয়দিন তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের আত্মীয়-স্বজনরা প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়।

তাদেরকে কীভাবে খুঁজে পাওয়া গেল?

অনুসন্ধানের কাজে যোগদানকারী দুই ব্রিটিশ ডুবুরি গত সোমবার রাতে নিখোঁজ হওয়ার দশম দিনে ছেলেদের সন্ধান পায়। গুহার মুখ থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার (২.৫ মাইল) দূরে একটি শিলার উপরে পাওয়া যায়। শুকনো অবস্থায় গুহার ভেতরের কিছু অংশে ঘুরে বেড়াতে পারলেও স্রোতের সাথে কাদা ও বালি এসে সংকীর্ণ রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ফলে তারা আর পথ খুঁজে পায়নি।

গুহায় আটকে পড়েছে খুদে ফুটবল দল; Source: AP

উদ্ধারকারীরা গুহার ভেতর সাঁতার কেটে তাদের খুঁজতে থাকে। তবে ডুবুরীদের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্টসাধ্য ছিল পাতায়া বিচ নামে গুহার ভিতরে একটি উঁচু ঢিবির কাছে যাওয়া। ধারণা করা হচ্ছিল, সেখানে ছেলেরা আশ্রয় নিয়েছে। ডুবুরীরা প্রায় অন্ধকারের ভেতর দিয়ে বেশ কিছু ধারালো ও সরু পথ পাড়ি দিয়ে পাতায়া বিচের কাছে গিয়ে দেখে, সেটি পুরোপুরি পানিতে ডুবে আছে। তাই তারা সাঁতার কেটে সামনে এগোতে থাকে এবং প্রায় ৪০০ মিটার সামনে গিয়ে তাদেরকে খুঁজে পায়। তাদের সাথে যোগাযোগের ভিডিওটি ফেসবুকে থাই নৌবাহিনীর বিশেষ বাহিনী পোস্ট করেছিল।

টর্চের আলোতে দেখা যায়, তারা জলধারার উপর একটি শিলায় বসে ছিল। ডুবুরীদের তারা জানায়, ১৩ জনের সকলেই সেখানে উপস্থিত এবং তারা সবাই খুব ক্ষুধার্ত। তারা জানতে চায় কতদিন ধরে তারা গুহার ভেতরে অবস্থান করছে এবং কখন সেখান থেকে বের হতে পারবে। ডুবুরীরা জানায়, এতে সময় লাগবে, তবে তাদের উদ্ধার করার জন্য তারা ফিরে আসবে।

তারা কি সাঁতার কেটে বেরিয়ে আসতে পারবে?

ধারণা করা হচ্ছে, বালক দলটির অধিকাংশই সাঁতার পারে না। ফলে তারা সাঁতার কেটে আসতে গেলে উদ্ধার কাজ জটিল হয়ে যাবে। এর আগে, থাই সেনাবাহিনী বলেছিল বেরিয়ে আসতে ছেলেদের ডুব সাঁতার শিখতে হবে। তা না হলে গুহা থেকে বের হতে বন্যার পানি নামার জন্য চার মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ এই পুরো সময়ের জন্য খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন হবে। পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী অনুপং পাওজিন্ডা আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে বলে দ্রুত উদ্ধারকার্য সম্পন্ন করার ওপর জোর দেন। পাম্পের সাহায্যে গুহার ভেতর থেকে পানি কমানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। এছাড়া সেখানে একটি ফোন লাইনও ইনস্টল করা হচ্ছে, যাতে ছেলেরা তাদের পরিবারের সাথে কথা বলতে পারে।

 পাম্প করে গুহার ভেতরে পানি কমানো হচ্ছে;  Source: REUTERS/Soe Zeya Tun

থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ শিশুদের মুখের জন্য উপযোগী স্কুবা ডাইভিং মাস্কের ব্যবস্থার জন্য অর্থ সাহায্যের আবেদন করেছে। কেননা বন্যার পানিভর্তি সরু রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় তাদের শ্বাসকার্য সঠিকভাবে সচল থাকতে হবে। তবে আপাতত তারা সাঁতার কেটে বেরিয়ে আসতে পারবে না।

তাদেরকে কীভাবে উদ্ধার করে আনা হবে?

গুহায় আটকা পড়ে থাকা ছেলেগুলোকে নিরাপত্তার সাথে বের করে নিয়ে আসাটা অত্যন্ত বিপজ্জনক কাজ। থম লুং গুহাটি বর্ষাকালে বর্ষণের কারণে নিয়মিত প্লাবিত হয়, যা সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এর মাঝে অনভিজ্ঞ ডুবুরীদের সেই কর্দমাক্ত অস্বচ্ছ পানির মাঝ দিয়ে নিয়ে যাওয়া খুব বিপজ্জনক বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী ডুবুরি বেন রেইমেমানস জানান, থাই নৌবাহিনীর দুজন ডাক্তার পানি হ্রাস না পাওয়া পর্যন্ত প্রায় চার মাস স্বেচ্ছায় গুহায় আটকে পড়া ছেলেদের সাথে থাকতে চেয়েছেন। তাদের দল গুহায় প্রবেশের অন্য কোনো পথ খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  

উদ্ধারকর্মী; Sourc: REUTERS/Soe Zeya Tun

যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, গুহা থেকে পানি বের করা যায় এবং ছেলেদের স্কুবা গিয়ার ব্যবহার করতে শেখানো যায়; তবে তারা কয়েক দিনের মধ্যেই বাইরে বের হয়ে আসতে পারবে। দুর্যোগ প্রতিরোধ ও নিরোধক বিভাগের উপ-মহাপরিচালক কোবচাই বুনারানা বলেন, এই যাত্রাটি মোকাবেলা করার জন্য ছেলেরা যথেষ্ট শক্তিশালী কি না তা গুহার উদ্ধারকারী দলটিই নির্ধারণ করবে। থাই সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল চলোংচাই চৌইকুম জানিয়েছেন, একবার গুহায় প্রবেশ করে পুরো পথ পাড়ি দিয়ে বের হয়ে আসতে উদ্ধারকারী দলের ১১ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

অনুসন্ধানের শুরুতে উদ্ধারকারীদের ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে লড়াই করে ও বন্যার স্রোতের সাথে মোকাবেলা করে গুহার ভেতরে চলাফেরা করতে হয়েছে। কিন্তু গত চার দিন ধরে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে শুষ্ক ছিল। তারা ভেতরে খাবার, পানি ও চিকিৎসা কর্মীদের পাঠিয়েছে। উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণের জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা গুহায় অবস্থান নিচ্ছে, যাদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলীয় পুলিশ, ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী এবং প্রায় ১০০০ জনের মতো থাই সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্য। তারা ছেলেদের উদ্ধার করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।

গুহার ভেতর উদ্ধার কাজ চলছে;  Source: Thai Navy Seal/Reuters

ফুটবল টিমের এই তরুণ সদস্যরা প্রায় ২ সপ্তাহ সেই অন্ধকার গুহায় অবস্থান করছে। তাদের খোঁজ পাওয়ার পরে আত্মীয়-স্বজনসহ থাইল্যান্ডের মানুষ অত্যন্ত খুশি। তবে তাদেরকে সেখান থেকে বের করে আনাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আশা করা যায়, উদ্ধারকারীরা অচিরেই তাদের সেখান থেকে বের করে আনতে সক্ষম হবেন।  

Featured Image Source: Infonet

Related Articles