Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সংবাদ পরিক্রমা: ২০১৭ সালের আলোচিত ভুয়া খবরগুলো

ভুয়া সংবাদ এবং ভুয়া ছবি বর্তমান সময়ের একটি বড় সমস্যা। ভুয়া সংবাদ বা ছবি ছড়িয়ে পড়ার কারণে সমাজে পারস্পরিক ঘৃণা এবং অবিশ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক সময়ই গণমাধ্যমের কর্মীরাও সঠিকভাবে ভুয়া সংবাদ চিহ্নিত করতে পারে না। ফলে প্রায়ই জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমেও এ ধরনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত ভুয়া ছবিগুলো নিয়ে Roar বাংলায় একটি প্রবন্ধ আছে। এবার চলুন দেখে নিই গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত কয়েকটি ভুয়া সংবাদ, যেগুলো ধোঁকা দিয়েছিল বিপুল সংখ্যক জনগণকে।

সুবোধের কারিগর গ্রেপ্তার

সুবোধের দেয়ালচিত্র; Source: Facebook

দেয়ালচিত্রের কাল্পনিক চরিত্র সুবোধ ছিল গত বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি। ব্যতিক্রমধর্মী এই দেয়ালচিত্র হয়ে উঠেছিল এক ধরনের নীরব প্রতিবাদের ভাষা। সুবোধ চিত্রকর্মের অন্তরালে কোনো নীরব বিল্পব দানা বেঁধে উঠছে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল প্রশাসনও। গত অক্টোবর মাসে এরকম একটি সংবাদও পত্রিকায় এসেছিল যে, সুবোধের রূপকারকে গোয়েন্দারা খুঁজছে।

গত ৩ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় সহযোগী নাজমুল আহসান একটি বিদ্রুপাত্মক প্রবন্ধ লিখেন, যেখানে সুবোধের গ্রেপ্তারের একটি কাল্পনিক দৃশ্যের অবতারণা করা হয়। যদিও লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল পত্রিকাটির ‘স্যাটায়ার’ তথা বিদ্রুপাত্মক বিভাগে, কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষ সেটাকে সত্য ভেবে বিশ্বাস করতে শুরু করে। দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক এবং অনেকগুলো অনলাইন পত্রিকা ব্রেকিং নিউজ হিসেবে সুবোধের গ্রেপ্তারের সংবাদটি প্রচার করে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে সেগুলো হাজার হাজার বার শেয়ারও হয়। পরে ডেইলি স্টার বিভ্রান্তি দূর করার জন্য শিরোনামের সাথেই বন্ধনীর ভেতরে ‘স্যাটায়ার’ শব্দটি উল্লেখ করে দেয়।

ইরানি অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

ইরানি অ্যাঞ্জেলিনা জোলি; Source: elespanol.com

গত বছরের নভেম্বরে এই নিউজটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আল-আরাবিয়া, হলিউড লাইফ সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত গণমাধ্যমেও উঠে আসে সংবাদটি। বাংলাদেশেরও একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং অনলাইন মিডিয়া সংবাদটি প্রকাশ করে। এতে দাবি করা হয়, সাহার তাবার নামে এক ইরানি মডেল হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো সাজতে গিয়ে ৫০ বার প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন এবং কয়েক মাসের মধ্যেই ৪০ কেজি ওজন হারিয়েছেন। সংবাদটি বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করে সাহার তাবারের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে থাকা অনেকগুলো ছবি এবং ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘দ্য সান‘ কর্তৃক প্রচারিত তার একটি ভিডিওর কারণে।

কিন্তু পরবর্তীতে নভেম্বরের ২৮ তারিখে এক পোস্টের মাধ্যমে সাহার তাবার নিজেই পরিষ্কার করেন যে, তিনি ৫০টি প্লাস্টিক সার্জারি করেননি। তিনি গণমাধ্যমের প্রতি তার বিরক্তি প্রকাশ করেন এই বলে যে, গণমাধ্যম এরকম আচরণ করছে, যেন তারা অষ্টাদশ শতকে বাস করছে এবং জীবনে কখনও প্রযুক্তি বা মেকআপের ব্যবহার শোনেনি। পরবর্তীতে, ডিসেম্বরের ৪ তারিখে রাশিয়ান সংবাদ মাধ্যম স্পুটনিকের সাথে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তিনি মাত্র ৩টি প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন এবং অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো সাজার কোনো উদ্দেশ্যও তার ছিল না। তিনি শুধু মজা করার জন্য ছবিগুলো পোস্ট করেছিলেন, যার আংশিক মেকআপের ফলাফল এবং বাকিটুকু ফটোশপের কারসাজি।

টেক্সাসকে মেক্সিকোর অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি

টেক্সাসকে মেক্সিকোর অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি; Source: bdmorning.com

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই ইন্টারনেটে এমন একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে, ফিলিস্তিন নাকি পাল্টা যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যকে মেক্সিকোর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দ্য বিভারটন (The Beaverton) নামের একটি ওয়েবসাইটে সর্বপ্রথম সংবাদটি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যটি যুক্তরাষ্ট্র ১৮৪০ সালে মেক্সিকোর কাছ থেকে বলপূর্বক কেড়ে নিয়েছিল। তাই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ফিলিস্তিন টেক্সাসকে মেক্সিকোর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ফিলিস্তিন শীঘ্রই মেক্সিকোতে অবস্থিত তাদের দূতাবাস টেক্সাসে সরিয়ে নিবে।

বিভারটনের সংবাদটি খুব দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও বিভারটন ওয়েবসাইটটি মূলত একটি বিদ্রুপাত্মক সংবাদের ওয়েবসাইট, যা তাদের ডিসক্লেইমার পাতায় পরিষ্কারভাবেই লেখা আছে, কিন্তু অনেকেই সেটা লক্ষ্য না করে সত্যি ভেবেই নিউজটি শেয়ার করতে থাকে। বাংলাদেশের কয়েকটি অনলাইন পত্রিকাতেও সংবাদটিকে সত্য মনে করে প্রকাশ করা হয়েছিল।

জুয়ায় হেরে সৌদি প্রিন্সের পাঁচ স্ত্রী হারানো

এটি গত বছর ভাইরাল হওয়া সবচেয়ে অবিশ্বাস্য সংবাদ। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা তো বটেই, বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকও এই সংবাদটি প্রকাশ করেছিল, যা তাদের পেজ থেকে শেয়ার করেছিল আরো অন্তত ২৩ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী। সংবাদটিতে বলা হয়, সৌদি আরবের প্রিন্স মাজেদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মিসরের একটি ক্যাসিনোতে জুয়া খেলার সময় হাতে থাকা টাকা শেষ হয়ে আসতে থাকলে একে একে তার স্ত্রীদেরকে বাজি ধরতে থাকেন এবং শেষপর্যন্ত ৩৫৯ মিলিয়ন ডলার এবং পাঁচ স্ত্রীকে হারিয়ে সর্বশান্ত হন।

সৌদি প্রিন্সের পাঁচ স্ত্রী হারানোর ভুয়া সংবাদ; Source: WNDR

সংবাদটি শুনলেই বোঝা যায়, এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটি সংবাদ। সৌদি আরবের প্রিন্সদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও ইসলাম ধর্মে যেখানে এক সাথে চারটির বেশি বিয়ে করার অনুমতি নেই, সেখানে কোনো সৌদি প্রিন্সের যদি সত্যি সত্যিই পাঁচ স্ত্রী থাকত, তাহলে জুয়ায় হেরে তাদেরকে বিক্রি করার অনেক আগেই তা সংবাদ শিরোনামে উঠে আসত। সংবাদটিতে আরো বলা হয়, সৌদি যুবরাজের বিক্রি হওয়া স্ত্রীদের ভাগ্যে কী ঘটবে, সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। সেখানে মন্তব্য করা হয়, শীঘ্রই হয়তো তাদেরকে ইয়েমেন অথবা কাতারে দাসী হিসেবে বিক্রি করা ফেলা হবে।

এরকম অবাস্তব বর্ণনা থেকেও বোঝা যায়, সংবাদটি সত্যি নয়। বাস্তবেও এই সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় ওয়ার্ল্ড ডেইলি নিউজ রিপোর্ট নামের একটি বিদ্রুপাত্মক ওয়েবসাইটে, যারা নিয়মিতই এ ধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এর আগেও তারা সৌদি গ্র্যান্ড মুফতির ক্ষুধা লাগলে স্ত্রীকে কেটে খেয়ে ফেলার ফতোয়া সংক্রান্ত ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করেছিল। ওয়েবসাইটটির ডিসক্লেইমার পেজে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে, এটি একটি বিদ্রুপাত্মক ওয়েবসাইট এবং এখানে প্রকাশিত সকল চরিত্র এবং ঘটনাবলি কাল্পনিক।

লিবিয়াতে আইএসের ইসরায়েলি নেতা

কথিত ইসরায়েলি আইএস নেতা; Source: Twitter

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই সংবাদটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। গ্লোবাল রিসার্চ, মিডল ইস্ট মনিটর সহ বিভিন্ন ওয়েব সাইট মিসরের আল-ইয়াওম ওয়েবসাইটকে উদ্ধৃত করে দাবি করে, লিবিয়াতে আবু হাফস তথা এফ্রাইম বেনইয়ামিন নামে এক আইএস নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে, যে আসলে ইসরায়েলি নাগরিক। কিন্তু লিবিয়ার কোনো বিখ্যাত পত্রিকায় এই সংবাদটি আসেনি। উল্টো এক প্রশ্নের উত্তরে লিবিয়ার জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা লিবিয়া অবজার্ভার জানায়, তারা এই সংবাদটি প্রচার করেনি, কারণ সংবাদটি ভুয়া

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংবাদটি ইংরেজি ওয়েবসাইটগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসে ভাইরাল হলেও তা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মিসরের আল-ইয়াওম নামের একটি পত্রিকায়, জুলাইয়ের ২০ তারিখে। কিন্তু ইসরায়েলি আইএস নেতার ছবি বলে সবাই যে ছবিটি প্রকাশ করেছিল, সেটি মোটেও কোনো ইসরায়েলির ছবি না, বরং এক ইরাকি আইএস নেতার ছবি, যে সিরিয়াতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। ছবিটি উক্ত সংবাদ প্রকাশের আরো আগে, ১৩ই জুলাই তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।

পরবর্তীতে লিবিয়াতে বন্দী সহস্রাধিক আইএস সদস্যকে প্রায় এক বছর ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে লিবিয়ার অ্যাটর্নী জেনারেল এক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করেন। সেখানে লিবিয়াতে আইএস সদস্যদের নাগরিকত্ব, তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে লিবিয়াতে মিসর, তিউনিসিয়া, সুদান সহ মোট ১৭টি দেশের আইএস সদস্যদের কথা উল্লেখ করলেও ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ ছিল না। মিডল ইস্ট মনিটর পত্রিকাও পরবর্তীতে তাদের সংবাদটি মুছে দিয়েছিল।

৯/১১ হামলার ব্যাপারে সিআইএ কর্মকর্তার স্বীকৃতি

৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলা এমনিতেই যথেষ্ট বিতর্কিত বিষয়। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনো প্রমাণ নেই, কিন্তু অনেকেই মনে করেন এই হামলাটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের সাজানো হামলা। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মানুষের মনে আরো গভীরভাবে প্রভাব ফেলে, যখন কিছুদিন পরপরই ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুয়া সংবাদ প্রকাশিত হয়, এবং বিভিন্ন দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলো সেই সংবাদ যাচাই না করেই প্রকাশ করে থাকে।

সিআইএ এজেন্টের স্বীকারোক্তির ভুয়া সংবাদ; Source:

গত বছর জুলাই মাসেও এরকম একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে, ম্যালকম হাওয়ার্ড নামে ৭৯ বছর বয়সী এক সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা তার মৃত্যুশয্যায় স্বীকার করেছেন যে, টুইন টাওয়ারের পার্শ্ববর্তী ডব্লিউটিসি-৭ বিল্ডিং ধ্বংস করেছিল সিআইএর একটি দল। সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় ভুয়া নিউজদাতা হিসেবে বিখ্যাত ওয়েবসাইট ‘ইওর নিউজ ওয়্যারে‘, যারা এর মাত্র এক মাস আগেই প্রায় হুবহু একই ধরনের একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিল। ঐ সংবাদে দাবি করা হয়েছিল, এক সাবেক এমআই৫ কর্মকর্তা মৃত্যুশয্যায় স্বীকার করেছেন যে, তিনি প্রিন্সেস ডায়ানাকে হত্যা করেছিলেন।

সংবাদটি যে ভুয়া, তা অনেকভাবেই বোঝা যায়। ডায়ানার সংবাদের মতোই টুইন টাওয়ারের এই সংবাদটিতেও যথেষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে সাড়া ফেলে দেওয়ার মতো এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদের প্রাথমিক উৎস শুধুমাত্র এই ওয়েবসাইটটি হওয়াও সন্দেহজনক। এছাড়াও, সংবাদের সাথে কোনো অডিও বা ভিডিও ছিল না। যে একমাত্র ছবিটি দেওয়া হয়েছিল, তাও হাসপাতালের বিছানার ছবি। অথচ ভেতরে বলা হয়েছিল, স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে ঘরে ফেরার পরে। ঘটনার পর অনেক দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এ সংক্রান্ত আর কোনো সংবাদ প্রকাশিত না হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায়, সংবাদটি ভুয়া ছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসলাম বিদ্বেষী ভুয়া টুইট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে যাওয়া যেকোনো সংবাদকেই ‘ফেক নিউজ’ তথা ভুয়া সংবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে তিনি নিজেই প্রচার করেন বছরের অন্যতম আলোচিত ভুয়া সংবাদটি। গত ২৯ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চরম ডানপন্থী এবং ইসলাম বিদ্বেষী একটি গ্রুপ, ‘ব্রিটেন ফার্স্ট’ এর করা তিনটি টুইট বার্তা রিটুইট করেন, যেগুলো মুসলমানদের কথিত সহিংসতা তুলে ধরে।

কিন্তু ভিডিও টুইটগুলোর অন্তত একটি ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। টুইট বার্তাটিতে দাবি করা হয়েছিল, এক মুসলমান অভিবাসী এক ডাচ ব্যক্তিকে প্রহার করছে। কিন্তু পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডের দূতাবাস সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা নিশ্চিত করে, ভিডিওতে প্রদর্শিত ব্যক্তিটি মুসলমানও না, অভিবাসীও না। তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা নেদারল্যান্ডেই এবং ঐ অপরাধের কারণে তার বিচারও হয়েছিল।

এই ভুয়া সংবাদগুলো ছাড়াও বছর জুড়েই বিভিন্ন ভুয়া সংবাদ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ধোঁকা দিয়েছে বিশ্ববাসীকে, যার মধ্যে কিছু ছিল ভুলবশত ছড়ানো, আবার কিছু ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচার করা। ভুয়া সংবাদগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল ইসলাম বিদ্বেষী অপপ্রচার। উদাহরণস্বরূপ, ডিসেম্বর মাসে ওয়াশিংটনে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ৩ জন নিহত এবং বেশ কিছু মানুষ হত হলে বিভিন্ন অখ্যাত ওয়েবসাইট থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়েছিল, এক মুসলমান সন্ত্রাসীর হামলার কারণেই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি নিছকই দুর্ঘটনা ছিল।

এছাড়াও নভেম্বরে লন্ডনে একটি সার্কাসে দুই ব্যক্তির মধ্যে মারামারি শুরু হলে পুলিশ সার্কাসটি ভেঙ্গে দেওয়ায় হঠাৎ করেই প্রচন্ড ভীড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাকেই ডেইলি মেইল অনলাইন পুরাতন একটি ছবি ব্যবহার করে একটি লরি আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করে। এর ফলে টিভি উপস্থাপক টমি রবিনসন সহ অনেকেই একে মুসলমান সন্ত্রাসীদের আক্রমণ বলে অনুমান করে টুইট করে, যা সে সময় প্রচন্ড আতঙ্ক এবং মুসলমানদের প্রতি অহেতুক বিরূপ ধারণার সৃষ্টি করে। পরে অবশ্য টমি তার ভুল স্বীকার করে এবং টুইট ডিলিট করে দেয়।

বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে সবার পক্ষেই খুব সহজে সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত বিশ্বস্ত এবং স্বনামধন্য কোনো সংবাদ মাধ্যম ব্যতীত সোশ্যাল মিডিয়া বা বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা থেকে পাওয়া যেকোনো সংবাদ শেয়ার করার আগে কিছুটা যাচাই করে নেওয়া। কারণ আমাদের শেয়ার করা ভুয়া সংবাদের কারণেও কোনো ব্যক্তিবিশেষ অথবা সম্প্রদায়ের সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে অথবা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।

ফিচার ইমেজ- elespanol.com

Related Articles