Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলস সম্পর্ক: কেন এতো আলোচনা-সমালোচনা?

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। নারীঘটিত অনেক কেলেঙ্কারি থাকলেও সম্প্রতি স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে একজন পর্ণ অভিনেত্রীর সাথে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগেও নারীদের সাথে অসদাচরণ করার জন্য ট্রাম্প সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু স্টর্মি ড্যানিয়েলস এর ব্যাপারটি আসলেই ভিন্ন। কেননা এর সাথে ২০১৬ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বিষয়টি জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক আসলে এই স্টর্মি ড্যানিয়েলস কে, তার সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক কী এবং কিভাবে তা ২০১৬ সালের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সাথে সম্পৃক্ত ।

স্টর্মি ড্যানিয়েলস আসলে কে?

স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফেনি ক্লিফোর্ড। তার জন্ম ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায়। ২০০৪ সালে তিনি পর্ণ ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে যোগদান করেন। তার স্টেজ নাম স্টর্মি ড্যানিয়েলস।

স্টর্মি ড্যানিয়েলস; Source: IndieWire

ট্রাম্পের সাথে ড্যানিয়েলসের সম্পর্ক কী?

স্টর্মি ড্যানিয়েলসের বক্তব্য অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে তার প্রথম দেখা হয় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে লেক তাহোতে অনুষ্ঠিত একটি গলফ প্রতিযোগিতায়। ২০১১ সালে টাচ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সেখানে ট্রাম্প তাকে নৈশভোজের জন্য নিমন্ত্রণ করেন। সাক্ষাৎকারটি এ বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলস; Source: IndieWire

স্টর্মি বলেন, সে রাতে তিনি নৈশভোজের জন্য ট্রাম্পের হোটেল কক্ষে যান। তিনি ভেবেছিলেন ট্রাম্প তাঁকে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যাবেন। কিন্তু ট্রাম্প তার সাথে হোটেল কক্ষেই নৈশভোজ সারেন। এরপর তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়।

টাচ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টর্মি জানান, সে রাতে ট্রাম্পের কাছে তাঁর স্ত্রীর প্রসঙ্গ আনলে তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে চিন্তা করতে বারণ করেন এবং দ্রুত সে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলেন।

তবে তার বক্তব্য সত্য হলে এ ঘটনাটি ঘটেছে ট্রাম্পের সবচেয়ে ছোট সন্তান ব্যারনের জন্মের মাত্র চার মাস পরে।

স্টর্মি ড্যানিয়েলস আর কী বলেছেন?

গত রবিবার সন্ধ্যায় প্রচারিত হওয়া বহু প্রতিক্ষীত ‘সিক্সটি মিনিটস’ সাক্ষাৎকারে স্টর্মি ড্যানিয়েলস জানান, টাচ ম্যাগাজিনে ট্রাম্পের সাথে তার সম্পর্কের কথা প্রকাশ করতে সম্মত হলে সাত বছর আগে তাকে হুমকি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ২০১১ সালে তার মেয়েকে নিয়ে ফিটনেস ক্লাসে যাওয়ার সময় কার পার্কে একজন ব্যক্তি তার কাছে আসেন।  তিনি বলেন, “ট্রাম্পকে একা ছেড়ে দিন। ঘটনাটি ভুলে যান।” এরপর তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন,”তার মায়ের কিছু হয়ে গেলে সেটি খুব লজ্জাজনক হবে।”

এ ঘটনায় স্টর্মি এতই ভয় পেয়েছিলেন যে তার হাত কাঁপছিলো এবং তার মেয়েকে তিনি প্রায় হাত থেকে ফেলেই দিয়েছিলেন। তিনি খুব আতঙ্কিত হওয়ার কারণে কখনই পুলিশ কে এ ব্যাপারে কিছু জানাননি।

১৫ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে টাচ ম্যাগাজিনকে তার ও ট্রাম্পের সম্পর্কের ব্যাপারে বলতে রাজি হয়েছিলেন স্টর্মি। কিন্তু চুক্তিটি ব্যর্থ হয়, কেননা ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন সেই প্রকাশনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার হুমকি দেন।

স্টর্মির মতে, শেষবার তার ট্রাম্পের সাথে কথা হয়েছিলো ২০১০ সালে।

সাক্ষাৎকার নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য কী?

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাক্ষাৎকারটি নিয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও সোমবারে তিনি ‘ভুয়া খবর’ সংক্রান্ত একটি টুইট করেন।

সম্প্রতি এই ঘটনা নিয়ে এত আলোচনা কেন?

ট্রাম্পের সাথে তার এই সম্পর্কের গুজব ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকেই শোনা যাচ্ছিলো।

কিন্তু এ বছর জানুয়ারি মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, নির্বাচনের এক মাস আগে, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করেছেন।

মাইকেল কোহেন; Source: Mark Wilson/Getty Images

সেখানে বলা হয়, প্রকাশ করা যাবে না শর্তে স্টর্মিকে এই মূল্য পরিশোধ করা হয়। ট্রাম্পের সাথে তার সম্পর্কের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করার ব্যাপারটিকে ঘিরেই এই চুক্তি।

জানুয়ারি মাসে টাচ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত স্টর্মির সাক্ষাৎকার ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে কোহেন কর্তৃক স্টর্মিকে ব্যাপক অর্থদানের ব্যাপারটি প্রকাশিত হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। গত রবিবার সম্প্রচারিত সিবিএসকে দেওয়া ‘সিক্সটি মিনিটস’ এর সাক্ষাৎকারে তাদের সম্পর্ক ও হুমকির ব্যাপারে কথা বলেন স্টর্মি।

এর ফলে ঘটনাটি নিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

আসলেই কি স্টর্মিকে চুক্তির মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে?

’সিক্সটি মিনিটস’ এর সাক্ষাৎকারে স্টর্মি জানান, তিনি চুপ থাকার চুক্তিতে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেনের থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার গ্রহণ করেছেন, কেননা তিনি তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

এদিকে কোহেন অর্থ প্রদানের ব্যাপারটি প্রথমে অস্বীকার করেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগকে ‘উদ্ভট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি স্বীকার করেন, আসলেই তিনি চুপ থাকার চুক্তিতে স্টর্মিকে সেই অর্থ প্রদান করেছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক বক্তব্যে কোহেন জানান, ট্রাম্পের প্রচারণা বা ট্রাম্পের সংগঠন, কোনোটিই এই অর্থ প্রদান সম্পর্কে অবহিত ছিলো না। তিনি সম্পূর্ণ নিজ পকেট থেকে এই অর্থ পরিশোধ করেছেন।

তিনি বলেন,“ড্যানিয়েলসকে পরিশোধ করা অর্থ আইনসম্মত ছিলো। এটি কারও পক্ষ থেকে প্রচারণার জন্য চাঁদাপ্রদান বা প্রচারণার অর্থ ছিলো না।“  তবে তিনি জানাননি কেন এই অর্থ প্রদান করা হয়েছিল।

স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আইনজীবী মাইকেল এভেনাতি তার নিজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ সাক্ষাৎকারে জানান, স্টর্মির স্বাক্ষরিত চুক্তিটি কোহেনের ট্রাম্প টাওয়ারের অফিসে ডেলিভারি দেওয়া হয়। তার মতে, কোহেন ও ট্রাম্পের সংগঠন অথবা কোহেন ও ট্রাম্পের মাঝে বিভেদ রয়েছে এই ধারণাটি অর্থহীন।

বিষয়টি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

নির্বাচনের এক মাস পূর্বে কোহেন কর্তৃক স্টর্মিকে এই বিপুল পরিমাণে অর্থ প্রদান বেআইনী হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। ট্রাম্পের সমালোচকরা বলছেন, এই অর্থ অবৈধ প্রচারণার অংশ হতে পারে।

ক্যাম্পেইন লিগাল সেন্টার এর প্রেসিডেন্ট ট্রেভর পটার বলেছেন, যদি কোহেন ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এই অর্থ প্রদান করে থাকেন তাহলে তা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার করার জন্য অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউ ইয়র্কের প্রতিনিধি, ডেমোক্র্যাট টেড লিউ ও ক্যাথলিন রাইস এফবিআইকে এই অর্থ প্রদানের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে বলেছেন।

এদিকে ট্রাম্পের সাথে স্টর্মির সম্পর্কটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কিনা তা জিজ্ঞেস করলে স্টর্মির আইনজীবী জানান, এটি আসলে তাদের সম্পর্কের জন্য মুখ্য না, এটি বরং ট্রাম্প ও তার আইনজীবী কোহেন দ্বারা তার মক্কেলকে ভয় দেখানো, তার মুখ বন্ধ রাখা, তাকে হুমকি প্রদর্শন করা এবং তাকে নিজের আয়ত্তে রাখার ব্যাপার।

স্টর্মিকে ভয় দেখানোর বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হলে ব্যাপারটি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। কিন্তু হুমকির ব্যাপারে মাইকেল কোহেনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, হুমকির এই অভিযোগটি তার মানহানি ঘটিয়েছে। এ ধরনের কোনো ঘটনা বা ব্যক্তি সম্পর্কে কোহেন কিছুই জানেন না বলে জানানো হয়।

ভবিষ্যতে বিষয়টি ট্রাম্পকে কিভাবে প্রভাবিত করবে তা দেখার ব্যাপার। কেননা এ বিতর্কটি মধ্যবর্তী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। বিষয়টি যদি আদালত পর্যন্ত গড়ায় তাহলে আরও অজানা অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

ফিচার ইমেজ: In Touch Weekly

Related Articles