Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রাশিয়া কেন ইসরায়েলকে ইরান আক্রমণের অনুমতি দিয়েছে?

গত ৯ মে, বুধবার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুই ছিলেন বিশ্বের একমাত্র সরকার প্রধান, যিনি এ বছর দিবসটি উপলক্ষ্যে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মস্কোতে। রাশিয়ার ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ দিবস উপলক্ষ্য আয়োজিত বার্ষিক সামরিক মহড়ার অনুষ্ঠানটি তিনি উপভোগ করেছেন পুতিনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

যাত্রা শুরুর আগে নেতানিয়াহু সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছিলেন, সিরিয়াতে এই মুহূর্তে যা ঘটছে তাতে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সাথে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের যে সামরিক সমঝোতা আছে, তার ধারাবাহিকতা পুনরায় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নেতানিয়াহু নিশ্চিতভাবেই পুতিনের সাথে তার আলোচনায় আশানুরূপ সাড়া পেয়েছিলেন। কারণ রাশিয়া ত্যাগ করার পূর্বে সাংবাদিকদের সাথে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, এটা মনে করার কোনো ভিত্তি নেই যে, সিরিয়াতে ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপে রাশিয়া বাধার সৃষ্টি করবে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য যে নিছকই আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই। সেদিন রাত ১টার সময় ইসরায়েল তার বিমানবাহিনীর ২৮টি এফ-১৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান থেকে সিরিয়ার ভূমিতে অন্তত ৬০টি মিসাইল নিক্ষেপ করে। গোলান মালভূমি থেকে নিক্ষেপ করে আরো ১০টি স্থল থেকে স্থল মিসাইল। সেগুলো আঘাত হানে সিরিয়াতে অবস্থিত ইরানের প্রায় ৫০টি সামরিক স্থাপনার উপর। নিহত হয় অন্তত ২৭ জন, যাদের মধ্যে ছিল এগারো জন ইরানী এবং ছয় জন সিরীয় সেনা।

সিরিয়ার ভূমিতে ইসরায়েলের এই আক্রমণ ছিল ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আক্রমণ। অনেকেই আশা করেছিল, রাশিয়া যেহেতু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদ সরকার সবচেয়ে বড় মিত্র, তাই এই আক্রমণের পর রাশিয়া বেশ কঠোর জবাব দেবে। কিন্তু বাস্তবে রাশিয়া সেরকম কিছুই করেনি। কঠোর নিন্দা জানানোর পরিবর্তে রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি মিখাইল বোগদিনভ মোটামুটি নিরপেক্ষ একটি বিবৃতি দেন, যেখানে নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয় এবং উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমিত করার আহ্বান জানানো হয়।

নেতানিয়াহুর সফর, তার বক্তব্য এবং সবশেষে রাশিয়ার এই ভূমিকায় বিজনেস ইনসাইডার, জেরুজালেম পোস্ট, হারেৎজসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, ইরানী স্থাপনার উপর ইসরায়েলের এবারের আক্রমণের পেছনে রাশিয়ার সবুজ সংকেত ছিল। এছাড়া, সাংবাদিক ও সামরিক ইতিহাসবিদ বাবাক তাগভাই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করেন, নেতানিয়াহুর সফরকালে পুতিন তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, ইসরায়েল যদি ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডের স্থাপনার উপর হামলা করে, তাহলে রাশিয়া তাতে বাধা দেবে না।

কিন্তু রাশিয়া এবং ইরান উভয়েই যেখানে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিশ্বস্ত মিত্র, এবং উভয়েই যেখানে আসাদ সরকারকে সাহায্য করছে, সেখানে কেন রাশিয়া ইরানের উপর ইসরায়েলি আক্রমণকে সমর্থন করবে? বিশ্লেষকরা বিভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন। বাবাক তাগভাই তার সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করেন, রাশিয়া ইসরায়েলের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে এই শর্তে যে, ইরানের উপস্থিতি নেই এমন কোনো সিরীয় স্থাপনায় ইসরায়েল হামলা করবে না এবং ইসরায়েলকে তার শত্রু ইরানের উপর হামলা করার সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর উপর তাদের শক্তিশালী প্রভাব ব্যবহার করে রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ করে দিবে।

এটি বিশ্বাসযোগ্য এই কারণে যে, সিরিয়াতে ইরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি সিরিয়ার ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েল সেখান থেকে নিজেদের মোটামুটি দূরে রেখেছে। তারা বিভিন্ন সময় দাবি করেছে, বাশার আল-আসাদকে তারা শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে না, কিংবা বাশারের পক্ষে সিরিয়াতে রাশিয়ার উপস্থিতি নিয়েও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইরান এবং হেজবুল্লাহ সেখানে শক্তিশালী হতে শুরু করে। সম্প্রতি সিরিয়াতে শুধুমাত্র ইরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতির অজুহাতেই ইসরায়েল একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। এছাড়া সম্ভাবনা আছে, ইরানকে যদি নিষ্ক্রিয় করা না যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও এই সংকটে জড়িয়ে পড়তে পারে। রাশিয়ার পক্ষে তাই সিরিয়াতে ইসরায়েল এবং আমেরিকার অধিকতর হস্তক্ষেপের পথ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের সাথে সমঝোতায় যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

তবে এটিই একমাত্র কারণ না-ও হতে পারে। একথা সত্য যে, রাশিয়া এবং ইরান উভয়েই বাশার আল-আসাদের বিজয়ের জন্য অপরিহার্য ছিল। রাশিয়ার বিমান আক্রমণ এবং ইরানের প্রশিক্ষণ দেওয়া শিয়া মিলিশিয়ারাই মূলত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বাশারকে জয়ী হতে সাহায্য করেছে। কিন্তু বর্তমানে সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকাই বাশার আল-আসাদের নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বিদ্রোহীরা বারবার এত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে যে, তাদের পক্ষে পুনরায় হারানো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া খুবই কঠিন হবে। তাই এ মুহূর্তে সিরিয়াতে অবস্থানকারী দুই বিজয়ী পক্ষ রাশিয়া এবং ইরানের মধ্যে যে সিরিয়ার ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হবে, সেটি অনেকটাই অনুমিত।

বাশারের জয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত, তখন স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া এবং ইরান উভয়েই চাইবে ভবিষ্যতের সিরিয়ার উপর তাদের নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী প্রভাব খাটাতে। কিন্তু সেক্ষেত্রে দেশ দুটি একে অন্যের প্রভাব বিস্তারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ইসরায়েলের এই হামলাটি সে হিসেবে সম্পূর্ণ রাশিয়ার পক্ষেই গেছে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ইসরায়েল শুধুমাত্র ইরানী স্থাপনাগুলোর উপরেই হামলা করেছে, কিন্তু ইরানের অনুগত শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীর উপর কোনো হামলা করেনি। বাশারের জয়যাত্রার জন্য শিয়া মিলিশিয়ারা যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, ইরানের সামরিক স্থাপনা এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। কারণ, সেগুলোর বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক ঘাঁটি এবং রাশিয়ার যুদ্ধবিমান সেখানে সক্রিয় আছে।

এরকম পরিস্থিতিতে রাশিয়া হয়তো ইসরায়েলকে ইরানের ঘাঁটিগুলোর উপর আক্রমণ করতে অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে এক ঢিলে একাধিক পাখি শিকার করেছে। প্রথমত, সিরিয়াতে তাদের অর্জনগুলোর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের যে একটিমাত্র রাষ্ট্র বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেই ইসরায়েলের সাথে তারা সুসম্পর্ক তৈরি করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা ইউরোপ ও আমেরিকার সাথে উত্তেজনা প্রশমিত করার সুযোগ তৈরি করে নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, তারা ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোর উপর আক্রমণ করানোর মধ্য দিয়ে সিরিয়ার ভবিষ্যত রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব নিশ্চিত করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা ইরানের স্থাপনাগুলোর উপর এমনভাবে হামলা করিয়েছে, যাতে ইরানের প্রভাব হ্রাস পাবে, কিন্তু বাশারের টিকে থাকার সম্ভাবনায় কোনো ঝুঁকির সৃষ্টি হবে না।

Featured Image Source: Wikimedia Commons

Related Articles