Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জাকারবার্গের জবানবন্দি

সম্প্রতি খবর আসে, ফেসবুকে পরিচালিত একটি অ্যাপের মাধ্যমে নেওয়া প্রায় ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে দিয়ে দেয়া হয়েছে। তোলপাড় শুরু হয় ফেসবুককে ঘিরে। তারকা থেকে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে শুরু হয়ে গুঞ্জন। ইলন মাস্ক তো নিজের এবং তার কোম্পানির ভ্যারিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টই ডিলিট করে দেন। তার উপর মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই এই তথ্য কেলেঙ্কারির রেশ ধরে ফেসবুক হারায় তার বাজার মূল্যের ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

শেষমেশ জাকারবার্গ ঠিক করেন, তিনি স্বেচ্ছায় মার্কিন সিনেটরদের সামনে হাজির হবেন এই তথ্য কেলেঙ্কারি নিয়ে কথা বলতে। এরপর ফেসবুকের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয়ে গত ১০ ও ১১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গের জবানবন্দি নেওয়া হয়। সুদীর্ঘ এই শুনানির সময় জাকারবার্গকে বিভিন্ন মার্কিন অঙ্গরাজ্যের সিনেটররা করেন নানা-রকম প্রশ্ন। এর কিছু ছিল অপ্রাসঙ্গিক ও হাস্যকর, কিছু ছিল দুর্বোধ্য এবং কিছু প্রশ্ন তো রীতিমতো জাকারবার্গের ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল।

বিশেষ করে ১০ এপ্রিলের শুনানিতে জাকারবার্গকে করা সিনেটরদের কিছু প্রশ্ন এতটাই অপ্রাসঙ্গিক ও হাস্যকর ছিল যে, হেসে উঠেছিলেন জাকারবার্গের পেছনে বসা আইনজীবীরাও। কংগ্রেস যদি ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাহলে নীতি-নির্ধারকদের ফেসবুক সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। পাশাপাশি এটি কীভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে কিছু মৌলিক ও প্রাথমিক জ্ঞান থাকাও প্রয়োজন। যেখানে জবানবন্দিটি ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ও তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা সংক্রান্ত হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তারা বেশ কিছু অবান্তর ও উদ্ভট প্রশ্ন করে ফেলেছিলেন।

প্রথমদিন সিনেটরদের নিকট জবানবন্দি দেওয়ার একটি মুহূর্তে জাকারবার্গ; Source: YouTube

তবে প্রথমদিন পালের হাওয়া কিছুটা নিজের অনুকূলে থাকলেও কংগ্রেসের সদস্যরা পরদিন ১১ এপ্রিল জাকারবার্গকে বেশ বিপাকেই ফেলেছিলেন। কেননা তাদের কাছে তিনি গোপনীয়তা, নজরদারি, সেন্সরশিপ ও রাজনীতি সংক্রান্ত কিছু কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হন, যার উত্তর দিতে গিয়ে আসলেই তার ঘাম ছোটার মতো অবস্থা হয়েছিল।

উদ্ভট প্রশ্ন

প্রথমদিন যখন জাকারবার্গ সিনেটরদের কাছে জবানবন্দি দেন, সিনেটররা জানতেন ফেসবুক সংক্রান্ত কিছু ব্যাপার ঠিক করা প্রয়োজন; কিন্তু তারা এটিই বুঝতে পারেননি- আসলে কী ঠিক করতে হবে। ফেসবুকে কীভাবে কী করতে হয় এরকম অনেক প্রশ্ন তারা করেছেন। আমরা যেভাবে পরিবারের দাদা-দাদী বা বাবা-মাকে ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক মুঠোফোন ব্যবহার করা শেখাই, ব্যাপারটি অনেকটা সেরকম ছিল। আর সে কারণেই এগুলো নিয়ে ফেসবুকে ও টুইটারে অনেক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

সেদিন সিনেটর অরিন হ্যাচ শুরুটা ভালোভাবেই করেছিলেন। তিনি জাকারবার্গকে মনে করিয়ে দেন যে, ২০১০ সালে ক্যাপিটাল হিলে তার প্রথম সাক্ষাতের কথা সিনেটর সাহেবের ভালোই মনে আছে। সেখানে নাকি জাকারবার্গ বলেছিলেন, তার ফেসবুক সবসময় মানুষ বিনামুল্যে ব্যবহার করতে পারবে। এতটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। তারপরই সিনেটর হ্যাচ করে বসেন হাস্যকর একটি প্রশ্ন।

১. “আপনি কীভাবে একটি ব্যবসা পরিচালনা করেন যেখানে এর ব্যবহারকারীরা সেবার পরিবর্তে কোনো মূল্য পরিশোধ করে না?”

শুনানিতে সিনেটর হ্যাচ ও জাকারবার্গ; Source: NBC

জবাবে জাকারবার্গ হাসিমুখে উত্তর দিয়েছিলেন, “সিনেটর আমরা বিজ্ঞাপন দেই।”

জাকারবার্গ মাত্র চারটি শব্দের মাধ্যমেই তার উত্তর শেষ করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে ফেসবুকের বেশ উপার্জন হয়। তাছাড়া ফেসবুক এর বেশ কিছু বিক্রয়যোগ্য সেবার মাধ্যমেও উপার্জন থাকে। যেমন- বিভিন্ন পোস্ট বুস্ট করা। পোস্ট বুস্ট করলে তা অধিক সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়, যার পরিবর্তে ফেসবুককে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক এরকম আরও কিছু উদ্ভট ও ‘কঠিন’ প্রশ্ন, যেগুলোর সম্মুখীন হতে হয়েছে জাকারবার্গকে।

২. “আমি যদি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ইমেইল চালাচালি করি, তাহলে কি সে তথ্য আপনার বিজ্ঞাপনদাতারা পায়?”

হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ইমেইল করা যায় না। তবে জাকারবার্গ অবশ্য প্রশ্নকর্তা সিনেটরকে তার এই আসল ভুলটি ধরিয়ে দেননি। তিনি শুধু জানান, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো কোনো বার্তা ব্যবহারকারীদেরকে বিজ্ঞাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট করে না।

উল্লেখ্য, হোয়াটসঅ্যাপের সেবাগুলোর মধ্যে আছে বার্তা পাঠানো, ভয়েস কল ও ভিডিও কল। তাছাড়া এতে যোগাযোগের সময় দুই পক্ষের বার্তা ‘এনক্রিপ্ট’ করা থাকে, যা শুধুমাত্র সংযোগকৃত দুই ফোনে বা কম্পিউটারের পক্ষেই ‘ডিক্রিপ্ট’ করা সম্ভব।

৩. “আপনি যা করেন টুইটারও কি সেটির মতোই?”

ফেসবুক আসলে একচেটিয়া ব্যবসা করছে কিনা তা নিশ্চিত হতে সিনেটর এ প্রশ্নটি করেছিলেন। উত্তরে জাকারবার্গ বলেন, আমরা যা করি তার একাংশের সাথে এর মিল রয়েছে।

টুইটারের সুবিধাগুলোর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সুবিধা ফেসবুক দিয়ে থাকে। ফেসবুক স্ট্যাটাস আর টুইটারে টুইট, অনেকটা একই জিনিস।

৪. আমি যদি চকলেট সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন না পেতে চাই তাহলে কী করণীয়?

সিনেটর বিল নেলসন জানান, তিনি এক ধরনের চকলেট পছন্দ করেন এবং ফেসবুকে তার বন্ধুদের সে চকলেট সম্পর্কে জানান। এরপর থেকে তিনি হোমপেজে চকলেট সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখতে পান। এ ধরনের বিজ্ঞাপন না দেখতে চাইলে তিনি কী করতে পারেন, সেটিই ছিল তার প্রশ্ন। জাকারবার্গ জানান, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করার সুযোগ আছে। মানুষ অপ্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপনেই বিরক্ত হয়। যেকোনো ই-কমার্স ওয়েবসাইটে গিয়ে কিছু খুঁজলে পরবর্তীতে নতুন কোনো প্রাসঙ্গিক পণ্য হয়তো বিজ্ঞাপনে আসতে পারে। কিন্তু বিষয়টি শুধুমাত্র ফেসবুক না, সারা ইন্টারনেট জুড়েই বিজ্ঞাপনের ব্যাপারটি চোখে পড়বে।

৫. ফেসম্যাশ কী ছিল? এটি কি এখনও সচল?

ফেসম্যাশ হলো প্রায় ১৫ বছর আগে জাকারবার্গের তৈরি একটি অ্যাপ, যেখানে দুজন নারীর ছবি তুলনা করা হতো। এর সাথে ফেসবুকের কোনো সম্পর্ক নেই।

জাকারবার্গ বলেন, এটি এখন সচল না। তবে এটি নিয়ে একটি চলচ্চিত্র রয়েছে। ২০১০ সালের ‘দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ নামে একটি চলচ্চিত্র সম্পর্কে তিনি একথা বলেন। এতে দেখানো হয় ফেসবুকের ক্রমবিকাশের সাথে কোনো একভাবে ফেসম্যাশের সম্পর্ক রয়েছে। জাকারবার্গ বলেন এটি সত্য নয়

Mark Zuckerberg Explains the Internet (to Old People)!

It’d be painful to watch if it wasn’t so funny.

Posted by CNET on 11 ಏಪ್ರಿಲ್ 2018

৬. আমার ছেলে ইন্সটাগ্রামের প্রতি নিবেদিত, তাই সে নিশ্চিত  হতে চায় আপনার সাথে এখানে থাকার সময় আমি তার কথা উল্লেখ করেছি।

যদিও এটি কোনো প্রশ্ন ছিল না, তবুও একজন সিনেটরের এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দেয়, শুনানি চলাকালীন সে জায়গাটিতে মার্ক জাকারবার্গই ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাকে উদ্দেশ্য করেই এই মন্তব্য করা হয়।

৭. আপনি কি কিছু ফাইবার আনতে পারবেন? কারণ, আমাদের কোনো সংযোগ নেই।

ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সিনেটর জাকারবার্গের কাছে এই আবদার রাখে, যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত গ্রামাঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেটের সুবিধা পৌঁছে দেয়া হয়। সে অঞ্চলগুলোতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সুবিধা নেই। জাকারবার্গ জানান, এটি করতে পারলে তারা খুশি হবেন।

প্রশ্নগুলো দেখেই বোঝা যায়, আসলে জাকারবার্গের শুনানি প্রথমদিন অনেকটা কমলাকান্তের জবানবন্দির মতোই হাস্যরসাত্মক ছিল। জাকারবার্গের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আর ইন্টারনেট জগতে তার প্রভাবশালী অবস্থানের নমুনাই বারবার উঠে আসছিল সেখানে।

কঠিন প্রশ্ন

উদ্ভট প্রশ্নের কথা তো গেল। এবার আসা যাক কঠিন প্রশ্নগুলোর কথায়, যার অনেকগুলোরই সরাসরি কোনো উত্তর দিতে চাননি ফেসবুকের সিইও। দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘণ্টার জবানবন্দিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের চলাফেরা, কেনাকাটার অভ্যাস ও ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের ইতিহাস সংক্রান্ত অনেক কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হন তিনি।

১. ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনাতে আপনি কি সকল ত্রুটিপূর্ণ সেটিংস এ পরিবর্তন আনবেন?

এ ব্যাপারে জাকারবার্গের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি আসেনি। সাধারণ গ্রাহকদের জন্য ফেসবুকের বর্তমান ব্যবস্থাটি বেশ অস্বচ্ছ, তা বলার পরে তিনি জানান, তারা অ্যাপটির উপরেই এমন একটি নতুন টুল যুক্ত করবেন যা ব্যবহারকারীদেরকে গোপনীয়তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেবে। কিন্তু এটি সবসময় স্পষ্টভাবে ব্যবহারকারীদেরকে তা বাছাই করার কথা বলবে না। যখন তাকে শুধুমাত্র ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ তে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়, তখন তিনি জানান এটি একটি জটিল বিষয় যার উত্তর শুধু একটি শব্দের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব নয়।

২. আপনি কি ব্যবহারকারীদের তথ্য রক্ষা করতে আপনার ব্যবসায়িক কাঠামো পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক?

কংগ্রেস সদস্য ক্যালিফোর্নিয়ার আনা এশুর এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি জানেন না এর অর্থ কী। এমন কি তিনি স্বীকার করেন, তার নিজের তথ্যও তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রয়কৃত তথ্যের অন্তর্ভুক্ত।

৩. ‘দ্য গার্ডিয়ান’ যখন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে তখনই কি আপনি প্রথম এই ব্যাপারে জানতে পারেন?

মাইক ডয়েল তার এই প্রশ্নের সাথে আরও কিছু যোগ করেন। তার মতে, ডেভেলপারের তথ্য মাত্র একটি উদাহরণ। কেন তারা জাকারবার্গের করা প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা রাখবেন?

জাকারবার্গ বলেন, তিনি তাদের সংজ্ঞায়নের সাথে একমত না। কারণ, অ্যাপ পর্যালোচনা করার জন্য তাদের প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রতি বছর তারা অনেক অ্যাপ পর্যালোচনা করেন।

৪. ফেসবুক থেকে লগঅফ করার পরেও আপনি তাদের অনুসরণ করেন। যারা ফেসবুক ব্যবহার করে না আপনি তাদেরও তথ্য সংগ্রহ করেন। হ্যাঁ অথবা না?

জাকারবার্গ সরাসরি হ্যাঁ অথবা না-তে উত্তর দিতে না পারলে বারবার তার কথার মাঝে বাধা দেওয়া হয়। তিনি ঘুরিয়ে উত্তর দেন, এটি কীভাবে কাজ করে তার উপর সবারই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এরপর আবার তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনি বলছেন মানুষ কোথায় ভ্রমণ করছে সে সম্পর্কে আপনারা তথ্য সংগ্রহ করেন না?” এর উত্তরেও জাকারবার্গ ঘুরিয়ে বলেন, “বর্তমানে আমেরিকাতে বাস্তবিকভাবে অনুসৃত না থাকা সম্ভব নয়। আর এটি চুক্তির কোনো অংশ নয়।”

৫.  আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করার বড় একটি তালিকা রয়েছে। এটি আমার কাছে প্রমাণ যে, স্ব-নিয়ন্ত্রণ আসলে কাজ করে না।

ইলিনয়ের কংগ্রেস সদস্য পূর্বের নানা ভুলের কারণে জাকারবার্গের করা বিভিন্ন ক্ষমা প্রার্থনাগুলো জোরে পড়েন এবং একথা বলেন।

তাছাড়া কানেকটিকাটের সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্টাল তো রীতিমতো বোর্ডে করে লিখে নিয়ে আসেন ২০০৬, ২০০৭ ও ১১ সালের জাকারবার্গের ক্ষমা চাওয়ার কৈফিয়তমূলক স্ট্যাটাসগুলো।

এছাড়াও তার কাছে ছিল ফেসবুকের সেই অ্যাপটির লাইসেন্স অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টে লেখা কথাগুলো। যেখানে স্পষ্ট লেখাছিল যে, “আপনি যদি ‘ওকে’ ক্লিক করেন বা অন্য যেকোনোভাবে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার বা কোনো পেমেন্ট গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি জিএসআরকে আপনার চাঁদা বা তথ্য সম্পাদন, অনুলিপি, প্রচার, প্রকাশ, স্থানান্তর, অন্য ডাটাবেস বা লাইসেন্সের সাথে সংযুক্ত বা একত্রিতকরণ, বিক্রয় এমনকি সংরক্ষণ করে রাখার অনুমতি দিচ্ছেন।”

এই লেখাগুলো দেখিয়ে সিনেটর ব্লুমেন্টাল এক পর্যায়ে বলে উঠেন, ব্যাপারটি ‘ইচ্ছাকৃত অন্ধত্ব’। এটি গাফিলতি ছাড়া আর কিছু নয়। এবং এর মাধ্যমে ফেসবুক কি ফেডারেল ট্রেড কমিশনের হুকুম লঙ্ঘন করেনি?

এর জবাবে অবশ্য জাকারবার্গ যথাযথ উত্তর দিলেও, তার উত্তরটি মেনে নিতে পারেননি সিনেটর ব্লুমেন্টাল। তিনি পরবর্তীতে এক মন্তব্যের মাধ্যমে জানান, “আমার সেটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। সে মিথ্যা বলেছে এই কথাটি বলতেই আমি বিব্রতবোধ করছি। কেননা এতে তার উপর একটি সুনির্দিষ্ট চার্জ নিয়ে আসার মতো হয়ে যাবে। তবে ব্যাপারটি ইতিমধ্যে ফেসবুকের গোপনীয়তা রক্ষার উপর বিধ্বংসী মনোভাব তৈরি করে ফেলছে।”

তবে সিনেটরের প্রশ্ন ও মন্তব্যগুলো ছিল যুক্তিযুক্ত। কারণ, আপনার নাকের ডগা দিয়ে আপনারই একজন ডেভেলপার এরকম একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে আর আপনি কিছু জানবেন না? তা কী করে হয়? আর ফেসবুকের মতো একটি কোম্পানি এধরনের শর্তের পর এরকম একটি চুক্তি হয়ই বা কী করে?

Source: SkyNews

এই দুই দিনের শুনানিতে প্রযুক্তির নানা রকমের নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে আসে। জাকারবার্গ এটি স্বীকার করে বলেন,

“বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট মানুষের জীবনে নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এবং আমি মনে করি এটি অনিবার্য যে, এখানে কিছু নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমি মনে করি না যে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকার প্রয়োজন নেই, বরং আমি মনে করি আপনারা যে নিয়ন্ত্রণগুলো আরোপ করবেন সেগুলো সম্পর্কে তৎপর থাকা উচিত।”

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফেসবুকে শুধু হাস্যকর প্রশ্নগুলো নিয়ে করা ট্রলগুলোই বেশি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে গোপনীয়তা লঙ্ঘন সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো জনসম্মুখে কমই আসছে। ফেসবুক আমাদের অনেক সুবিধা প্রদান করে থাকলেও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য যখন তৃতীয়পক্ষের কাছে চলে যায়, তখন তা নিয়ে একদম সাধারণ পর্যায়ের গ্রাহকের মাথাব্যথাটা আরেকটু বাড়ানো দরকার বৈকি।

Featured Image Source: AP/Andrew Harnik

Related Articles