Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রহস্যময় ওভারটোন সেতু: যেখান থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে কুকুর!

স্কটল্যান্ডের ডাম্বার্টন শহরের নিকট মিল্টন নামক গ্রামে অদ্ভুত একটি সেতু রয়েছে। সেতুটির নাম ওভারটোন। এর নকশা করেছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এইচ. ই. মিলনার। ১৮৯৫ সালের জুন মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।

রহস্যময় ওভারটোন সেতু; Source: mind-blowingfacts.com

নির্মাণকালেও সেতুটি কারো কাছে তেমন আকর্ষণীয় ছিল না। কিন্তু ষাটের দশক থেকে সেতুটি সাধারণ মানুষের মাঝে ও মিডিয়ার আলোচনায় উঠে আসে। সেই সময় কমপক্ষে ৫০টি কুকুর অজানা কোনো কারণে ৫০ ফুট উঁচু সেতুটি থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে!

রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে লাফিয়ে পড়ছে কুকুর! Source: newspaperph.com

১৯৫০ সাল থেকে সেতুটিকে ‘মৃত্যুর সেতু’ বলা হয়ে থাকে। জানা যায়, ৫০ টি কুকুর লাফিয়ে পড়ে মারা গেলেও আজ পর্যন্ত ৬০০ কুকুর সেতুটি থেকে লাফিয়ে পড়ে ও বেঁচে যায়। তবে বেঁচে যাওয়া কুকুরগুলো সুযোগ পেলে দ্বিতীয়বারের জন্যও লাফিয়ে পড়েছিল বা লাফ দেয়ার চেষ্টা করেছিল।

ভ্রমণ বা কোনো কারণে ৩ বছর বয়সের কুকুর ক্যাসিকে নিয়ে, তার মালিক অ্যালিস ট্রিভরো ও তার ছেলে থমাস সেতুটির উপর গিয়েছিলেন। সেতুর উপর গাড়ির দরজা খোলা মাত্রই হঠাৎ ক্যাসি সেখান থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যায়। থমাস নিচ দিক তাকিয়ে শুধু বিন্দু বিন্দু কিছুর উপস্থিতি বুঝতে পারেন। তবে কীভাবে কুকুরটি বেঁচে যায় তা অ্যালিস ও থমাস কেউই জানতে পারেন নি।

বেঁচে যাওয়া কুকুর ক্যাসি; Source: thesun.co.uk

ক্যাসি বেঁচে গেলেও সেতু থেকে লাফিয়ে পড়ে বাঁচেনি ডনা কুপারের কুকুর বেন। বেন এর পা, চোয়াল ও কোমর ভেঙ্গে গিয়েছিল। পরে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শে কুকুরটির ইউথেনেশিয়া বা ব্যথাবিহীন মৃত্যুর ব্যবস্থা করা হয়।

লাফ দেয়ার স্থান; Source: heroviral.com

এই ভয়াবহ লাফানোর কিছু নির্দিষ্ট ধরণ রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুকুরগুলো লাফিয়ে অমসৃণ পাথরের উপর পড়ে যায় ও সলিল সমাধি ঘটে। আবার সব ধরনের কুকুরের মাঝে লাফিয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা যায় না। সাধারণত লম্বা নাকের অধিকারী জাতের কুকুরগুলোই লাফ দেয়। এই কুকুরগুলোর ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রখর। এছাড়াও সবগুলো ঘটনা সেতুটির ডানপাশের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে ঘটে। আর ঘটনার দিনটি হয় রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।

ওভারটোন হাউস; Source: deviantart.net

কেন ও কী কারণে কুকুরগুলো লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে সে বিষয়ে কেউই পুরোপুরি সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তবে কেউ কেউ মনে করেন, ভূতুড়ে কোনো আত্মার দেখা পেয়ে অতিমাত্রায় উত্তেজিত হয়ে কুকুরগুলো এমনভাবে লাফিয়ে পড়ে। অনেক স্থানীয় লোকেরা, সেতুটির পাশে অবস্থিত শত বছরের পুরনো গোথিক প্রাসাদ, যা ওভারটোন হাউস নামে পরিচিত, সেটিকে দায়ী করেন। ওভারটোন হাউজটি প্রায় ১৬০ বছর সিনেমার শুটিং, মাতৃসদন হাসপাতাল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রচলিত বিশ্বাস হলো, এই ওভারটোন হাউসেও প্রেতাত্মার দেখা মেলে। স্থানীয়দের ধারণা, সেই প্রেতাত্মার দেখা পেয়েই কুকুরগুলো লাফিয়ে পড়ে।

তবে কি ওভারটোন হাউসের প্রেতাত্মাই দায়ী? Source: thesun.co.uk

পল ওয়েন্স নামক এক ধর্ম ও দর্শনের শিক্ষক একবার সেতুটির উপর একাকি দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ তিনি দৃঢ় ও কঠিন আঙ্গুলের ন্যায় কিছু একটা অনুভব করেন। অতঃপর তার মনে হতে থাকে, কিছু একটা অথবা কেউ একজন তাকে সেতুটি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করছে! তিনি মনে করেন ‘লেডি ওভারটোন’ এর আত্মা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে, যারা স্বামী-স্ত্রী একসাথে ওভারটোন হাউজে থাকতেন। তবে ১৯০৮ সালে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে সেতু বরাবর হাঁটতে দেখা যায়।

নীরব ও শান্ত সেতু; ‍Source: ©Lairich Rig/historicmysteries.com

ভৌতিক বিষয়ের উপর কাজ করেন এমন একজন নারী হলেন মেরি আর্মোর। তিনি তার ল্যাব্রাডোর কুকুরকে সেতুর উপর নিয়ে যান ঘটনাটির সত্যতা পরীক্ষা করতে। তিনি সেখানে প্রেতাত্মার মতো তেমন কিছুর প্রমাণ পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, জায়গাটিতে খুবই নীরবতা ও প্রশান্তি মেলে। তবে তিনিও জানান অজানা কোনো কারণে কুকুরটি তাকে সেতুর ডানদিকে টানছিল!

সেতুটি ভূতুড়ে বলেই বিশ্বাস করেন অধিকাংশ মানুষ। এই বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পায় ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর এক ঘটনার পর। সে সময় কেভিন ময় নামক ৩২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, তার ২ সপ্তাহ বয়সী শিশুকে সেতু থেকে হঠাৎ ছুড়ে ফেলে দেন! কারণ তিনি ভাবতেন তার সন্তানটি ছিল শয়তান। ময় বলেন, তার সন্তানের মাথায় শয়তানের আঁকা জন্মদাগ ছিল। শিশুটি বেঁচে থাকলে ভাইরাস ছড়িয়ে বিশ্বকে ধ্বংস করবে। ছুঁড়ে ফেলার একদিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয় শিশুটির।

সে সময় পুলিশ ও আদালত ময়কে তেমন শাস্তি দেয়নি। কারণ মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, ঘটনার সময় ময় উন্মত্ততা ও বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। কিন্তু বাচ্চার জন্মের পর, হাসপাতালে স্ত্রী এয়লিন এবং ছেলে শিশু ইওঘানকে যেদিন দেখতে যান সেদিনও কোনো বিষণ্নতার ছাপ দেখা যায় নি ময়ের। আর ঘটনার দিন স্ত্রী, পুত্র নিয়ে দাঁড়ান ওভারটোন সেতুর উপর। হঠাৎ ছেলেকে ছুঁড়ে ফেলে দেন উঁচু সেতু থেকে। অতঃপর নিজেও লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্ত্রী তাকে টেনে ধরে লাফ দেয়া থেকে বিরত রাখেন। এই ঘটনাটিও ঘটেছিল রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে।

ড. ডেভিড স্যান্ডস কুকুরের আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ওভারটোন সেতুতে হেনড্রিক্স নামের একটি কুকুর নিয়ে যান। কুকুরটি পূর্বে সেতু থেকে লাফিয়ে পড়লেও বেঁচে গিয়েছিল। কুকুরটির বয়স ছিল ১৯ বছর। ফলে শরীরের শক্তি অনেক কমই ছিল।

কীসের টানে কুকুরটি এমন করছে (এটি হেনড্রিক্স নয়)? Source: petslady.com

সেতুর উপর কুকুরের আচরণ পর্যবেক্ষণ করার জন্য হেনড্রিক্সকে ছেড়ে দিয়েছিলেন ডেভিড। তিনি লক্ষ্য করেন কুকুরটি খুশিমনে সেতুর উপর দিয়ে হাঁটছে। তবে কুকুরটি যখন সেই লাফিয়ে পড়ার স্থানটিতে পৌঁছায় তখন তা কিছুটা বিচলিত হয়ে ওঠে। কিন্তু কুকুরটি সেতু থেকে লাফিয়ে পড়ার মতো শক্তিশালী ছিল না। তাই লাফ দিতে পারেনি বলে মনে করেন ডেভিড।

ড. ডেভিড কুকুরগুলোর লাফিয়ে পড়ার জন্য তিনটি বিষয়কে দায়ী করেন। বিষয়গুলো হচ্ছে – সেতুর নিচের দৃশ্য, শব্দ ও কুকুরের ঘ্রাণশক্তি। কিন্তু র‌্যালিংয়ের গঠনশৈলীর জন্য কুকুরগুলো নিচে থাকা পাথরগুলো ঠিকমত দেখতে পারে না। তাই দৃষ্টির বিষয়টিকে শুরুতেই বাতিল করা হয়।

ডেভিড ও স্থানীয়দের অনেকেই মনে করেন, সেতুর অদূরে থাকা নিউক্লিয়ার প্লান্ট থেকে নির্গত শব্দ কুকুরের লাফিয়ে পড়ার জন্য দায়ী। তাছাড়াও নিকটেই থাকা টেলিফোনের উঁচু খুঁটি থেকে উদ্ভুত শব্দ, যা কেবলমাত্র কুকুরই বুঝতে পারে সেটির জন্যও এমনটি ঘটে বলে মনে করেন তারা। শব্দকে দায়ী করা হলে শব্দ বিশেষজ্ঞরা সেখানকার শব্দ পরীক্ষা করেন। কিন্তু তারা সেখানে তেমন কোনো শব্দ পাননি যার জন্য কুকুরগুলো মৃত্যুর মুখে লাফিয়ে পড়বে।

বেঁজির মতো দেখতে মিন্ক; Source: wjon.com

ডেভিডের দৃষ্টি ও শব্দের বিষয় দুটি প্রমাণিত না হলেও অনেকেই কুকুরের ঘ্রাণশক্তির বিষয়টি সঠিক বলে মনে করেন। ডেভিড দেখান সেতুর নিচে মিন্ক বা বেঁজির মতো একজাতীয় প্রাণী রয়েছে। প্রাণীগুলো পানিতেও কিছুক্ষণ সময়ের জন্য থাকে। সেগুলোর পায়ুসংক্রান্ত গ্রন্থি থেকে ঘ্রাণ বের হয়, যার দরুন কুকুরগুলো আকৃষ্ট হয়ে লাফিয়ে পড়ে। এই ঘ্রাণ রৌদ্রে আরো বেড়ে যায়।

সতর্ক বার্তা; Source: misteriosenlaweb.blogspot.com

যদি ঘ্রাণের বিষয়টা সত্যও হয় তথাপিও কিছু বিষয় প্রমাণিত হয় না। কারণ স্কটল্যান্ডে ২৬,০০০ মিন্ক রয়েছে। তাহলে অন্যান্য স্থানে কুকুরগুলো মিন্ক এর উপর লাফিয়ে পড়ে না কেন? এছাড়াও কুকুরগুলো কেন শুধুমাত্র সেতুটির একটি নির্দিষ্ট স্থান ও ডানপাশ থেকেই লাফিয়ে পড়ে? কাজেই ওভারটোন সেতু থেকে কুকুরের লাফিয়ে পড়ার কারণ আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আর সে কারণে এখনও সেতুটিতে কুকুরকে সাবধানে রাখার সতর্ক বার্তা শোভা পাচ্ছে।

ফিচার ইমেজ – mind-blowingfacts.com

Related Articles