Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গ্রেটেস্ট টেস্ট পারফরমেন্স: বোথামের পুনর্জন্ম এবং লক্ষণের ‘ভেরি ভেরি স্পেশাল’ ইনিংস

আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট প্রথম মাঠে গড়ায় ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২৪৫ রান সংগ্রহ করে, যার মধ্যে একাই ১৬৫* রান করেন চার্লস ব্যানারম্যান। শেষ পর্যন্ত কোনো ইংলিশ বোলার তার উইকেটটি শিকার করতে পারেননি, তবে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। তার এই অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় পায়। টেস্ট ক্রিকেটের সেরা পারফরমেন্সের তালিকা করতে গেলে এটিও থাকবে।

এই লেখার মূল বিষয় হলো, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ব্যক্তিগত সেরা পারফরমেন্স। অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বললে ভুল হবে, গত শতকের ষাটের দশকের পরে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ব্যক্তিগত সেরা পারফরমেন্সগুলোই হলো এই লেখার মূল বিষয়বস্তু। ব্যক্তিগত সেরা পারফরমেন্সের তালিকা করতে বললে অধিকাংশ ক্রিকেটভক্ত সবার আগে ভিভিএস লক্ষণের কলকাতা টেস্টে খেলা ২৮১ রানের ইনিংসটিকে প্রাধান্য দেবেন। তাই লক্ষণের সেই ইনিংসটি দিয়েই শুরু করা যাক।

. ভিভিএস লক্ষণ৫৯ এবং ২৮১ রান

স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচ বাঁচানোটাই বিপক্ষ দলের প্রথম লক্ষ্য থাকতো। গিলেস্পি, ওয়ার্ন ও ম্যাকগ্রাদের নিয়ে অজিদের বোলিং লাইনআপ ছিল ভয়ঙ্কর। সেই সাথে হেইডেন, ল্যাঙ্গার, ওয়াহ ব্রাদার্স এবং পন্টিং, গিলক্রিস্টরা প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষের বোলারদের নাকানিচুবানি খাওয়াতেন। ২০০১ সালের ১১ মার্চ ইডেন গার্ডেনে টানা ১৭তম টেস্ট জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে একাধারে ১৬টি টেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিল তারা। ইডেন গার্ডেনেও শুরুটা করেছিল তারা দাপটের সাথে, হেইডেন এবং ল্যাঙ্গারের অর্ধশতকের উপর ভর করে একপর্যায়ে রান সংখ্যা ছিল তিন উইকেটে ২১৪। তারপর হরভজন সিংয়ের স্পিনে অজিদের মিডল অর্ডার দাঁড়াতে না পারলেও, অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ একাই লড়াই চালিয়ে যান। আট উইকেটে ২৬৯ রান থেকে দলকে নিয়ে যান ৪৪৫ রানে! স্টিভ ওয়াহ করেন ১১০ রান।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে স্কোরবোর্ডে একশো রান তোলার আগেই সাত উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। সেখান থেকে লক্ষণের ৫৯ রানের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ১৭১ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। লক্ষণের ইনিংসের সুবাদে সম্মানজনক রান সংগ্রহ করলেও ফলো-অনে পড়ে ভারত। ম্যাচের আয়ু দু’দিন না হতেই চালকের আসনে চলে যায় অজিরা। ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ভারতের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ৫২ রানে। এরপর ব্যাট হাতে ক্রিজে আসেন ভিভিএস লক্ষণ। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় মিডল অর্ডারে ব্যাট করা লক্ষণ হঠাৎ করেই সেদিন উঠে এলেন টপ অর্ডারে। স্বাভাবিকভাবে নিয়মিত তিনে ব্যাট করা রাহুল দ্রাবিড়কে তাই খেলতে হলো লক্ষণের ছয় নম্বর ব্যাটিং পজিশনে। আর এই একটি রদবদলই পুরো ম্যাচের চিত্র বদলে দিল।

‘ভেরি ভেরি স্পেশাল’ খ্যাত লক্ষণ দ্বিতীয় ইনিংসে খেললেন টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সেরা একটি ইনিংস। তাকে যোগ্য সমর্থন যুগিয়েছেন ‘দ্য ওয়াল’ রাহুল দ্রাবিড়। কলকাতা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় চার উইকেটে ২৫৪ রান। লক্ষণ ব্যাট করছিলেন ১০৯* রান নিয়ে। ম্যাচের চতুর্থ দিনে অজি বোলাররা সারাদিনেও দ্রাবিড় এবং লক্ষণের জুটি ভাঙতে পারেনি। ম্যাচের প্রথম দু’দিন শেষে যেখানে ভারতের পরাজয় ছিল সময়ের ব্যাপার, সেখানে চতুর্থ দিন শেষে ভারত হয়ে গেল জয়ের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী।

ইডেন গার্ডেনে অসাধারণ এক ইনিংস খেলে অপরাজেয় অজিদের বিপক্ষে ভারতকে জয় এনে দেন লক্ষণ; Source: Getty Images

ম্যাচের শেষদিনের প্রথম সেশনে লক্ষণ যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন তার নামের পাশে ২৮১ রান এবং দলীয় সংগ্রহ ৬০৮ রান! পঞ্চম উইকেট জুটিতে দ্রাবিড় এবং লক্ষণ ৩৭৬ রান যোগ করেছিলেন। এই ইনিংসটিতে লক্ষণের প্রতিটি শটেই ছিল আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। অজি বোলারদের প্রায় কোনো সুযোগই দেননি তিনি। ফলো-অনে পড়েও অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের জন্য ৩৮৪ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ভারত। শেষপর্যন্ত হরভজন সিংয়ের ঘূর্ণি বোলিংয়ে ২১২ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। লক্ষণের অতিমানবীয় ইনিংসের কারণে হরভজন সিংয়ের ম্যাচে ১৩ উইকেটের কীর্তি কিছুটা পর্দার আড়ালে ঢেকে যায়। এই জয়ের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার টানা ১৬ টেস্ট জয়ের রেকর্ডটি আরও দীর্ঘায়িত হতে দেয়নি ভারত। সেই সাথে সিরিজের শেষ টেস্ট জিতে স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও সিরিজ জয় করে নেয় তারা।

. ইয়ান বোথাম৫০ এবং ১৪৯* রান; /৯৫ এবং ১/১৪

১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই হেডিংলিতে অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা ইয়ান বোথাম তৃতীয় টেস্টে নিজের অধিনায়কত্ব হারান। সেই সাথে তার ব্যক্তিগত পারফরমেন্সও ছিল হতাশাজনক। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই শূন্য রান করে সাজঘরে ফেরেন বোথাম। বল হাতেও সুবিধে করতে পারছিলেন না। সবদিক মিলে ইয়ান বোথামের সময়টা বেশ খারাপ যাচ্ছিলো। নতুন অধিনায়ক মাইক বেয়ারলি আস্থা না হারিয়ে তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। হেডিংলিতে প্রথম ইনিংসে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ইংলিশরা। অজিদের ৪০১ রানের জবাবে মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে ফলো-অনে পড়ে তারা। তবে অজিদের ছয় ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি প্রথম ইনিংসে ৫৪ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পান ইয়ান বোথাম। ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড। মাত্র ১৩৫ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ইনিংস পরাজয়ের দোরগোড়ায় তখন তারা। ইয়ান বোথামের নেতৃত্বে আগের ১২ টেস্টে জয়শূন্য ছিল ইংলিশরা। এমতাবস্থায় ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে নাটকীয় জয় এনে দেওয়ার নায়ক ইয়ান বোথাম সবার মধ্যমণি; Source: Adrian Murrell/Getty Images

ইংল্যান্ড যখন ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে গিয়েছিল, তখনই পাল্টা আক্রমণ চালান ইয়ান বোথাম। নিজের ভেতরের সবটুকু ক্ষোভ উগরে দেন তিনি অজি বোলারদের উপর। চাপের মুখে ১৪৮ বলে ২৭টি চার একটি ছয়ের সাহায্যে ১৪৯* রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন বোথাম। তার অসাধারণ ইনিংসের সুবাদে অস্ট্রেলিয়াকে ১৩০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ইংল্যান্ড। অজিদের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম উইকেট শিকার করেন বোথাম। বাকি গল্পের রচয়িতা বব উইলিস। তিনি ৪৩ রানে আট উইকেট শিকার করলে অস্ট্রেলিয়া ১১১ রানে অল আউট হয়ে হেডিংলি টেস্টে ১৮ রানে পরাজিত হয়।

. মাইকেল হোল্ডিং৩২ রান; ৮/৯২ এবং ৬/৫৭

১৯৭৬ সালের ১২ আগস্ট। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে কেনিংটন ওভালে মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ ২-০ তে জিতে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে সময়ে ক্রিকেট বিশ্বে একক আধিপত্য ছিল তাদের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কেনিংটন ওভালে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে, প্রথম ইনিংসে আট উইকেটে ৬৮৭ রানের পাহাড় গড়ে ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভিভ রিচার্ডস মাত্র ৩৮৬ বলে ৩৮টি চারের মারে ২৯১ রানের দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস খেলেন। এই ম্যাচে বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মাইকেল হোল্ডিং শেষদিকে মাত্র ১৫ বলে পাঁচটি চার এবং একটি ছয়ের সাহায্যে ৩২ রান করেন।

কেনিংটন ওভালে নয়জন ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করেছেন মাইকেল হোল্ডিং; Source: Patrick Eagar/Getty Images

এরপরেই শুরু হয় মাইকেল হোল্ডিং শো। আবহাওয়া ছিল প্রচণ্ড গরম। সেই সাথে হোল্ডিংয়ের আগুন জড়ানো বোলিং। ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের মাঠে টিকে থাকাটা তখন বেশ কষ্টসাধ্য। পিচ ছিল ব্যাটিং সহায়ক, তা ভিভ রিচার্ডসের ইনিংস এবং ইংলিশ ওপেনার ডেনিস অ্যামিসের ২০৩ রানের ইনিংস বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায়। সেই সাথে এই ম্যাচে খেলা অন্যান্য পেসাররাও ছিলেন নিষ্প্রভ। মাইকেল হোল্ডিং স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বল করে গিয়েছেন পুরো ম্যাচে। সেগুলো মোকাবেলা করতেই হিমশিম খেয়ে গিয়েছিল ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ইনিংসে হোল্ডিং ৯২ রানের বিনিময়ে আট উইকেট শিকার করেন, যার মধ্যে ছয়জন বোল্ড আউট এবং দুজন লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে। ডেনিস অ্যামিস ২০৩ রানের ইনিংস খেলা সত্ত্বেও ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৪৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি, যার পুরো কৃতিত্ব মাইকেল হোল্ডিংয়ের। উইকেট যে কতটা ব্যাটিং সহায়ক ছিল, সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসের স্কোর দেখলে পরিস্কার হয়ে যাবে। মাত্র ৩২ ওভারে বিনা উইকেটে ১৮২ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যার ফলে ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য ৪৩৫ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। সে অবস্থায় ম্যাচ বাঁচাতে হলে ইংল্যান্ডকে টিকে থাকতে হতো ম্যাচের শেষ দিন পর্যন্ত।

কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও মাইকেল হোল্ডিংয়ের তোপের মুখে পড়ে ২০৩ রানে গুটিয়ে গিয়ে ২৩১ রানে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড। কেনিংটন ওভালে হোল্ডিং ১৪৯ রানের বিনিময়ে শিকার করেছেন ১৪ উইকেট। যার মধ্যে নয়জন সরাসরি বোল্ড আউট হয়েছে। এই ম্যাচে খেলা দুই দলের অন্যান্য পেসারদের মধ্যে অ্যান্ডি রবার্টস, বব উইলিস, ভ্যানবার্ন হোল্ডার, ওয়েন ড্যানিয়েল এই ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ৩৯৪ রান খরচ করে!

. ব্রায়ান লারা১৫৩*

২৬ মার্চ ১৯৯৯ সাল। কিংস্টনে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট মুখোমুখি হয় ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া। সে সময় অস্ট্রেলিয়া ছিল অপ্রতিরোধ্য। ১৯৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০০১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে তাদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারেনি। তাদের সাথে ম্যাচ ড্র-ও করতে পারেনি কোনো দল। অপর দিকে ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাকে সাপোর্ট দেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানের অভাব ছিল তখন। কিংস্টনে প্রথমে ব্যাট করে স্টিভ ওয়াহর ১৯৯ এবং রিকি পন্টিংয়ের ১০৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ৪৯০ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ম্যাকগ্রা, ওয়ার্ন, গিলেস্পিদের নিয়ে গড়া অজি বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে ৩২৯ রান করতে সক্ষম হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে ওয়ালশ, অ্যামব্রোসরা খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেদের চেনা রূপে ফিরে আসেন। কোর্টনি ওয়ালশ পাঁচ উইকেট শিকার করে অজিদের ১৪৬ রানের মধ্যেই আটকে দেন। প্রথম ইনিংসে পাওয়া লিড সহ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩০৮ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। বাকি গল্পটা ক্রিকেটের বরপুত্র, রাজপুত্র, যা-ই বলি না কেন, সেই ব্রায়ান লারাকে ঘিরেই।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ১৫৩* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এক উইকেটের জয় এনে দেন ব্রায়ান লারা; Source: Getty Images

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৭২ রান যোগ করে। এরপর দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে রান তাড়ার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে তারা। ব্রায়ান লারা যখন ক্রিজে আসেন, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ তিন উইকেটে ৭৮ রান। জয়ের জন্য দরকার আরও ২৩০ রান। ম্যাকগ্রা, গিলেস্পিদের তোপের মুখে পড়ে মাত্র ১০৫ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখনও উইকেটে টিকে ছিলেন লারা। দুই অজি পেসারের সামনে কিছুটা ব্যাকফুটে ছিলেন তিনি। তবে নিজের উইকেট খুইয়ে বসেননি।

দুই লেগি ওয়ার্ন এবং ম্যাকগেইল আক্রমণে আসলে তাদেরকে পাল্টা আক্রমণ করেন তিনি। ষষ্ট উইকেট জুটিতে অ্যাডামসের সাথে ১৩৩ রান যোগ করে জয়ের দিকেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। ৩৮ রান করা অ্যাডামস ম্যাকগ্রার শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। এরপর দ্রুত আরও দুই উইকেট শিকার করেন ম্যাকগ্রা। তার আগ্রাসী বোলিংয়ের সামনে বেশ কয়েকবার নাজেহাল হয়েছিলেন ব্রায়ান লারা, দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছিল। ২৪৮ রানে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে, তখনো জয়ের জন্য আরও ৬০ রান প্রয়োজন ছিল। ব্রায়ান লারা একাই লড়াই চালিয়ে যান। নবম উইকেট জুটিতে অ্যামব্রোসের সাথে ৫৪ রান যোগ করে সেই পথেই হাঁটছিলেন তিনি। জয় থেকে মাত্র ছয় রান দূরে থাকতে গিলেস্পির বলে ১২ রান করা অ্যামব্রোস ফিরে গিলে ম্যাচ নতুন মোড়ে ঘুরে যায়। কিন্তু নাটকের শেষ অঙ্কে জয় হয় লারার, ২৫৬ বলে ১৯টি চার এবং একটি ছয়ের সাহায্যে ১৫৩* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে এক উইকেটের জয় এনে দেন তিনি।

. বব ম্যাসি/৮৪ এবং ৮/৫৩

১৯৭২ সালের ২২ জুন। লর্ডসে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড। এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে চারদিকে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সমালোচনা করা হচ্ছিল। তাদেরকে একপ্রকার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিল সংবাদমাধ্যমগুলো। কারণটা স্বাভাবিক, নিজেদের শেষ ১১টি টেস্টের মধ্যে সাতটিতেই পরাজিত হয়েছিল অজিরা। বাকি চারটি ড্র করে মান বাঁচিয়েছে। ঐ ম্যাচের আগে ১৯৬৮ সালে শেষবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখেছিল তারা।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম দিনেই লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজের নাম লেখান বব ম্যাসি; Source: PA Photos

লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলে নতুন এক পেসারের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। নাম বব ম্যাসি, ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের সামনে সম্পূর্ণ অপরিচিত মুখ। দিন শেষে অবশ্য তার নাম আর অচেনা থাকেনি। প্রথম দিনেই লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজের নাম লেখান ম্যাসি। উইকেটের দুই দিকেই তিনি বল সুইং করতে পারতেন। অপরপ্রান্তে ডেনিস লিলি ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ব্যাকফুটে খেলতে বাধ্য করেন। এতে ম্যাসির কাজ সহজ হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ৮৪ রানের বিনিময়ে আট উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানের বিনিময়ে আরও আট উইকেট শিকার করেন তিনি। অখ্যাত বব ম্যাসির বোলিং তোপের মুখে পড়ে লর্ডস টেস্টে আট উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড। মাত্র ছয়টি আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলা ম্যাসি নিজের অভিষেক টেস্টে ১৩৭ রানের বিনিময়ে ১৬ উইকেট শিকার করে এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন। এখন পর্যন্ত কোনো অজি বোলারের এক ম্যাচে সেরা বোলিং স্কোর সেটিই!

গত শতকের ষাটের দশক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত অনেক অসাধারণ পারফরমেন্স রয়েছে। দুর্দান্ত নৈপুণ্যের মধ্য দিয়ে তারা প্রত্যেকে নিজ দলকে অনেকটা একাই জয়ের স্বাদ দিয়েছেন। আজকের লেখায় এমন পাঁচটি পারফরমেন্স নিয়ে জানলাম আমরা। পরবর্তী লেখায় থাকছে এমন অসাধারণ ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের আরো কিছু ইতিহাস।

ফিচার ইমেজ- Adrian Murrell/Getty Images

Related Articles