Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফ্যাবিও কাপেলো: ইতালিয়ান এক কিংবদন্তী কোচের উপাখ্যান

ইতালি হলো ট্যাকটিক্স আর ট্যাক্টিক্যাল কোচদের স্বর্গভূমি। যদি বিশ্বের ট্যাক্টিক্যাল সেরা ২০ জন কোচের তালিকা করা হয়, তাতে ইতালিয়ানদেরই প্রাধান্য থাকবে। তবে এই সেরাদের মধ্যেও সেরা থাকে। তেমনই একজনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়ে আজকের এ লেখা। ইনি কাপেলো, দ্য ফ্যাবিও কাপেলো।

খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ারটাকে খুব অল্পেই শেষ করতে হবে, কারণ তাঁর অসম্ভব বর্ণিল কোচিং ক্যারিয়ার। ১৯৬৭ সালে তরুণ প্রতিভা হিসেবে উঠে আসার পর প্রথম বড় দল হিসেবে যোগ দেন এ এস রোমায়। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছিলেন, ফুটবলীয় পরিভাষায় টাফ ট্যাকলার, স্ট্রং প্রেসিং মিডফিল্ডার। ইতালিতে এমন ধরনের প্লেয়ার অহরহ আছে, আলাদা ছিল তাঁর পাসিং ক্ষমতা। দ্রুতই সুনাম পেয়ে গেলেন, সাথে জাতীয় দলে সুযোগও। তবে সমস্যা ছিল লিগামেন্ট ইনজুরি, যে কারণে তাঁর স্পিড ছিল কম। রোমায় তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করেন একটা কোপা ইতালিয়া, আর একটা ইতালিয়ান লীগ জিতে। এরপর যান জুভেন্তাসে।

খেলোয়াড় হিসেবে বিভিন্ন ক্লাবের জার্সিতে কাপেলো Source: mCalcio.com

পুরো ক্যারিয়ারকে দু’ভাগে ভাগ করা হলে দেখা যাবে তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের আসল হাইলাইটস জুভেন্টাসের সময়টা। জুভেন্টাসে তিনি তিনটি লীগ জেতেন ছয় বছরে। বেঞ্চে বসে থেকে না, দলের একজন অপরিহার্য সদস্য হিসেবেই। ১৯৭২-৭৩ এ জুভেন্টাস লীগ জেতার পাশাপাশি কোপা ইতালিয়ার ফাইনালে ওঠে, সেখানে হারে মিলানের কাছে (মিলান মানে এসি মিলান, সাধারণত এসি মিলানকেই মিলান বলা হয়। আর ইন্টারন্যাজিওনাল মিলানোকে ইন্টার বলে সংক্ষেপে ডাকা হয়)। সেই বছর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালেও ঊঠে জুভেন্টাস। তবে কোচ রাইনাস মিশেল আর তারকা ইয়োহান ক্রুয়েফের সেই অসাধারণ আয়াক্সের সাথে পারেননি তিনি আর তাঁর দল। সেদিন হারলেও ক্রুয়েফকে আরেক সময় সমুচিত জবাবটা দেবেন তিনি, যেটা পরে বলা হবে। ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরিটা ক্রমাগত ঝামেলা করতে থাকলে জুভেন্টাস তাকে মিলানের কাছে বিক্রি করে দেয়। শেষ ক’বছর মিলানেই কাটে তাঁর। একটি কোপা ইতালিয়া আর একটি লীগ ট্রফি জয় করেন মিলানে থাকাকালীন সময়ে। তবে এবার আর অপরিহার্য কেউ নন, অনিয়মিত হিসেবেই। মন্থর, ইনজুরি ভারাক্রান্ত এক প্লেয়ারকে মিলানে বিক্রি করে পক্ষান্তরে মিলানের উপকারই করেছিলো জুভেন্টাস!

ইনজুরি সমস্যার জন্য মিলানে থাকতেই খেলা ছেড়ে দেন কাপেলো, তবে রয়ে যান মিলান শহরেই। দলের সঙ্গে ছিলেন স্টাফ হিসেবে, কখনো বা যুব দলের সাথে। এভাবেই চলে যাচ্ছিলো দিনগুলো। পাঁচটি ম্যাচের জন্য একবার মিলানের মূল দলের কোচ হয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে। পাঁচ ম্যাচ ভালই খেলালেন দলকে। এরপর বোর্ড তাকে বানালো মিলান যুব দলের কোচ। মূল দলের কোচ তখন আরিগো সাচ্চি। ওদিকে ইয়ুথ টিম নিয়ে কাপেলো ভালোই করছেন। ‘৯২-এ কাপেলোর ওপর এসে পড়ল ইতালিয়ান ফুটবলের ইতিহাস নতুন করে রচয়িতা কোচ সাচ্চির পড়ন্ত এক মিলানের ভার।

মিলানে কাপেলো; Source: AC Milan Forum

মিলান বলতেই তখন সবাই বোঝে সুন্দর ফুটবল। ঠিক সেই জায়গায় কাপেলোর প্রেস ব্রিফিং ঠিক ধোপে টিকেনি মিডিয়ায়। খুল্লাম খুল্লা বলে দিলেন ডিসিপ্লিন্‌ড খেলা হবে, ট্যাকটিকাল গেম প্লে ভিত্তিক যাকে বলে। সাচ্চির শেষদিকের ফর্মহীন মিলানের তারকা প্লেয়ারদের সরাতে মিডিয়ায় তখন চলছে প্রচন্ড শোরগোল। তিনি বিরোধীতা করলেন। বাস্তেন, গুলিতরা থেকে গেলেন। কিন্তু কিছু মূল জায়গায় বড় পরিবর্তন এলো। সাচ্চির মিলানের খেলার ধরণ বদলে গেলো। কাপেলোর মিলান অতোটা ফ্লুইড ছিল না; ক্রস হতো বেশি, লং বল বেশি, সবচেয়ে বেশি হতো শুটিং। সাচ্চির মিলানের একটা খুঁত ছিল, লীগে ধারাবাহিকতা ছিলো না। সাচ্চির চার বছরে লীগ জয় ছিল একটি। কাপেলোর অনন্যতা এখানেই। পাঁচ বছরে লীগ তিনি লীগ জেতান চারটি!

১৯৯২ সালে প্রথম ইতালিয়ান লীগ জিতেন কাপেলো। সেবার টানা ৫৪ ম্যাচ অপরাজিত ছিল মিলান। ভাবা যায়? নারীর মনের চেয়েও বেশি পরিবর্তনশীল সিরি আতে এত ম্যাচ টানা অপরাজিত থাকাটাই বোঝায় কতটা ডিসিপ্লিন্‌ড ছিল মিলান। ইতালিয়ান লীগে যেকোনো দল যে কাউকে হারাতে পারে, টানা ১০ ম্যাচ অপরাজিত থাকাই খুব কঠিন; সেখানে ৫৪ ম্যাচ! পরের বছরও আবার লীগ জিতেন কাপেলো। বলে রাখা ভাল, তখন নাপোলি, ইন্টার, জুভেন্টাস প্রতিটিই অসম্ভব শক্তিশালী দল ছিল। ঘরোয়াভাবে মিলান তখন অদম্য। আবারো সেই মিডিয়া সমস্যা! খানিকটা ডিফেন্সিভ খেলার ধরন আর চাছা ছোলা কথার কারণে তিনি মিডিয়ায় ভিলেন। একবার এক প্রশ্নের জবাবে বলে দিলেন, “ফুটবল ম্যাচ পায়ের চেয়েও মাথা দিয়ে ভালো জেতা যায়!” কোনো এক বড় তারকার সাইনিং এ না করে দেন কাপেলো। প্রেস ব্রিফিং এ বলেন, “তারকা প্লেয়ার আর চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার এক না। আমার তারকা দরকার নেই, আমার টিমের সবাই চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার!” মিডিয়া কেন জানি চাছা ছোলা কোচদের দিকে অধিক খড়গহস্ত। তবে খড়গ থেমে গেল। সেবার লীগ তো জিতলেনই, সাথে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালেও তুললেন মিলানকে। ফাইনালে খেলা মার্সেইয়ের সাথে। এই ফাইনালটি আর ‘৯৫ এর ফাইনালটা মিলান শুধু কেন, হয়ত ফুটবলের সফলতম কোচদের ইতিহাসে তাকে সর্বোচ্চ আসনে বসাতে পারত। হলো না কেন? সেবার মিলান হেরে গেলো মার্সেইয়ের কাছে। অথচ পুরো ফাইনালে মিলানই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছিলো।

চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ট্রফি হাতে কাপেলো Source: Pinterest

‘৯৪ এর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালের কথা। প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা, ক্রুয়েফের ‘ড্রিম-টিম’, ইতিহাসের অংশ এক দল। ফাইনালের আগে সবাই নিশ্চিত যে, বার্সা জিততে যাচ্ছে। কাপেলো ড্রেসিংরুমে পত্রিকায় যেসব তাচ্ছিল্যকর খবর ছাপিয়েছিলো তা সব একসাথে করে পড়ালেন। তেঁতে থাকা একটা মিলান দল ইতিহাসের একপেশেতম এক ফাইনাল উপহার দিল। বার্সার সেই ‘ড্রিমটিম’কে ৪-০ তে হারালো মিলান। যে ক্রুয়েফের কাছে কাপেলো তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের একমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালটি হেরেছিলেন, সেই ক্রুয়েফের ড্রিমটিমের পতন বস্তুত ওখান থেকেই। ‘৯৪ সালে লীগ সহ মিলানকে সর্বমোট চারটি ট্রফি জেতান কাপেলো। ততদিনে টানা তিনটে লীগ জেতা হয়ে গেছে। ভাবা যায়? বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া প্লেয়ারদের নিয়ে টানা তিন বছর ইতালিয়ান লীগের মতো সেই আমলের সবচেয়ে কঠিন লীগে টানা তিন বছর মিলানকে করে রেখেছেন অদম্য, অপরাজিত। সেই সময়ে তারা খেলে ফেলেছে দুটো চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল, জয় একটিতে; যেন স্বর্ণসময় চলছে সমর্থকদের।

‘৯৫ এ বলা চলে লীগ ট্রফিই হাফ ছেড়ে বাঁচল মিলানের হাতে উঠার অভ্যাস থেকে বেঁচে! ভাবছেন ব্যর্থ সিজন? সেবার মিলান আবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠে! একটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল আসলেই বিশাল ব্যাপার। সারা ইউরোপের জায়ান্টদের ছাপিয়ে উঠতে হয়। সেবার প্রতিপক্ষ ভ্যানগালের আয়াক্স। এবারো কপাল খারাপ। ০-০ থাকা অবস্থায় শেষ দিকে ক্লুইভার্টের এক গোলে ১-০ ব্যবধানে হেরে যায় মিলান। তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল খেলে একটিতে জয়, আর বাকি দুটোয় অল্পের জন্য হার। সাথে তিনটি লীগ জয় এবং চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সমান ধারাবাহিকতা ছিলো। কিন্তু ভাগ্য কাউকে অবিমিশ্র সাফল্য দেয় না। এই তিন ফাইনাল জিতে গেলে সব মিলিয়ে সর্বকালের সেরা প্রশ্নে কাপেলোর নাম আগে আগে আসতো।

ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন দলকে Source:Getty Images

‘৯৬ এ ভগ্নমনোরথ মিলানকে আবার লীগ জেতান কাপেলো। একটি লীগ মানে ৩৮টি ম্যাচ, ৯ মাস ব্যাপী ধারাবাহিকতা আর ধৈর্যের দারুণ এক পরীক্ষা। পাঁচ বছরে মিলানকে চারটি লীগ জেতানো হয়ে গেল। ধারাবাহিকতার তুঙ্গে কাপেলোর মিলান। এই পাঁচ বছরে সব মিলিয়ে দশটি ট্রফি, তেরটি ফাইনাল, টানা তিনটি লীগ, তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল। কে জানে? হয়ত সাফল্যে তক্ত্য হয়েই ইস্তফা দিলেন মিলান থেকে।

কেমন ছিল তার ডেডিকেশন? ‘৯৪ এ বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে হারানোর পর ড্রেসিংরুমে ঢুকে বললেন, “ওয়েল প্লেইড বয়েজ, উৎসব করতে থাকো। আমি অফিসেই ফিরে যাচ্ছি কালকে। ইতালিতে কিছু দল এবার দারুণ উন্নতি করে ফেলেছে, তাদের নিয়ে স্টাডি করতে হবে!” আক্ষেপ ছিল ’৯৩ আর ’৯৫ এর ফাইনালের ১৮০ মিনিট, এছাড়া সব স্বর্ণফলা। সাচ্চির সেই লেগেসি চালিয়ে নেয়া, সেটাকে নতুন মাত্রা দেয়া, মিডিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্রমাগত সাফল্য এবং এত ধারাবাহিকতা- সব মিলিয়ে অনেকের চোখে তিনিই মিলানের সর্বকালের সফলতম কোচ ।

এরপর কাপেলো যোগ দেন রিয়ালে। রিয়ালের অভিজ্ঞতাটা তার ভাষায় ছিল নিজেকে সম্পূর্ণ করার সবচেয়ে বড় ধাপ। তখন চার বছরে কোনো লীগ জিতেনি রিয়াল। ৩১ বছর হয়ে গেল, কোনো চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নেই। তবুও গ্রাউন্ডসম্যান থেকে শুরু করে সবাই নিজেদের অন্তঃস্থল থেকেই নিজেদের বেস্ট ভাবত, তাঁর মতে বেস্ট হতে হলে মেন্টালিটিটা আগে উচু করতে হবে।

ডাগ আউটে কাপেলো Source:90Min

খরাগ্রস্ত রিয়ালকে নিয়ে কাপেলো লীগ জেতান ঐ সিজনেই। ‘৯৭ থেকে ‘০৩ সময়টা সাম্প্রতিক রিয়ালের সবচেয়ে ধারাবাহিক সময়। এর প্রথম শুরুটা কাপেলোর ছিলো। রাউল, রেদোনদো, সুকারদের নিয়ে গড়া দলটা ছিল অন্যতম সেরা ডিসিপ্লিন্‌ড দল। স্বাভাবিকের চেয়ে কম গোল নিয়েও সেবার লীগ জেতে রিয়াল। পেটে খাবার না থাকলেও মুখে চোট ঠিকই আছে মাদ্রিদ মিডিয়ার। এবার খেলার ধরন খারাপ নিয়ে রব উঠল; কাপেলো বেশ একগুঁয়ে, ডিফেন্স নিয়ে কোনো ছাড় দেবেন না। বলে রাখা ভালো, সমালোচনার একটা বড় কারণ ছিল রাউলকে লেফট উইং-এ দেয়ায় গোল কমে যাচ্ছে এ জন্য! এটাই মাদ্রিদ মিডিয়া। চার বছর পরে লীগ জিতেও মিডিয়া, বোর্ডের চাপে অশান্তিতে থাকা কোচকে পরোক্ষভাবে বরখাস্তই করল রিয়াল। আসলে মিলান বোর্ড কর্তা বার্লুসকোনির একটা ফোন কল পেয়ে নিজ থেকেই রিয়াল ছেড়ে দেন কাপেলো (এমনিতেও রিয়াল থেকে বরখাস্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন)। যা-ই হোক, কাপেলো রিয়ালে কার্লোস সহ এমন কিছু প্লেয়ারকে এনেছিলেন বা রেদোনদো, হিয়েরোদের এমনভাবে দলে সেট করলেন যেটা পরবর্তী সিজনে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের ভিত্তি ছিল।

কাপেলোর মতে এটা ছিলো তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত। মিলানে এই দফাটা ব্যর্থ ছিল। ধুকছিল তাঁর দল সব প্রতিযোগিতায়ই। এক বছর পর তাই ক্লাব ছেড়ে সাময়িক বিরতিতে যান। এরপর ১৯৯৮ এ আসেন তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের প্রথম বড় ক্লাব রোমায়। তখন তাদের ১৮ বছর ধরে কোনো লীগ ট্রফি ছিল না, বুড়োয় ভরা একটা স্কোয়াড। সম্পূর্ণ পুনর্গঠন দরকার ছিল রোমায়। সেই কাজে কাপেলো এক বছর সময় নিলেন। দলে কিনে নিয়ে আসেন আর্জেন্টাইন তারকা বাতিস্তুতাকে। ১৯৯৯ এ রোমাকে জেতান সেই কাঙ্ক্ষিত ইতালিয়ান লীগ। এটা একটা প্রমাণ ছিল যে, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ দলের কোচ নন যে কেবল প্রতিষ্ঠিত দল নিয়েই জিতবেন, শূন্য থেকেও গড়তে পারেন । তারপরে রোমাকে জেতান ইতালিয়ান কাপ।  কিন্তু যে ব্যক্তি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের সেলিব্রেশন না করে পরদিন অফিসে যান, তার কাছে রাজধানীর ক্লাবে ফ্যানদের টানা উৎসব ভালো ঠেকেনি। ছয় মাস চলেছে উৎসব। ১৮ বছর পর লীগ এনে দেয়ায় তাকে স্টেডিয়ামে প্রতিদিনই সমর্থকরা বিশেষ সম্মান দিতেন যেটা উনার ভালো লাগত না। প্লেয়ারদের লাগাম টানতে বললেন, উল্টো তারা হলো লাগাম ছাড়া। শেষমেষ এক সিজন ব্যর্থতার পর রেগে ক্লাবই ছাড়লেন কাপেলো।

এবার যোগ দিলেন জুভেন্টাসে! যে ক্লাবে এসেছিলো তার আসল খেলোয়াড়ি সাফল্য। দেল পিয়েরো, ত্রেজেগে, নেদভেদদের ভিত্তি করে আবারো টানা দুটো ইতালিয়ান লীগ জিতলেন। এটা ছিলো পুরোদস্তুর ট্যাকটিকাল দল। গুলিত, বাস্তেন বা বাতিস্তুতা, রাউল, সুকার ছিল না সেই দলে। যারা ছিল তাদের নিয়েই অসাধারণ একটা স্কোয়াড গড়ে তোলেন, তাঁর প্রতিপক্ষ তখন কার্লোর মিলান। কিন্তু ক্যালসিওপলি স্ক্যান্ডালে বাতিল হয় দুটো লীগই। নিজে অপরাধী না হয়েও বঞ্চিত হন দুটো লীগ ট্রফি থেকে।

সিরি আ ট্রফি হাতে কাপেলো Source: Getty Images

আবারো ফিরে যান রিয়ালে। তখন ‘৯৭ থেকে ‘০৩-এর সেই রিয়ালকে দু’মাসে তছনছ করে দেয়া পেরেজের তারকাবহুল রিয়াল তিন বছর ধরে শিরোপাহীন। দলে প্রচন্ড ইগো সমস্যা। কাপেলো আপাদমস্তক ডিসিপ্লিনারিয়ান। দলকে শক্ত হাতে ধরলেন। সেবার এসেই আবার লীগ জেতান রিয়ালকে। এটা খুব শক্ত একটা কাজ ছিল। ওভারওয়েট রোনালদো বা খানিক অনিয়মিত বেকহামকে বেঞ্চ করেন, মিডিয়া আবারো খড়গহস্ত। রিয়াল তখন নয় পয়েন্ট পিছিয়ে বার্সা থেকে। নয় ম্যাচ বাকি লীগে, কাপেলো বরখাস্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। রিয়ালের টানা জয়ে শেষ দিন পর্যন্ত গড়ায় লীগ প্রতিযোগিতা। শেষ দিন রিয়ালকে জিততেই হবে। জারাগোজার সাথে ফার্স্ট হাফে একটা গোল হজম করে ফেলে রিয়াল। বেকহামকে তুলে ওখানে নামান রেয়েসকে, সেই রেয়েসেরই জোড়া গোলে ম্যাচটা জিতে লীগ জিতে নেয় রিয়াল।

রিয়ালের হয়ে লীগ জেতার পর Source:Eurosport Asia

আবারো মিডিয়া দোষ ধরল তাঁর নেগেটিভ ঘরানার ফুটবলের, যথারীতি কিছুদিন পর বরখাস্ত হন আবার!

এবার পেলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের চাকরি। জন টেরি ইস্যুতে মিডিয়া আবারো তার পিছনে লেগে পড়েছে। তবে ইংল্যান্ডকে বেশ ভালো গুছিয়েছিলেন স্বল্প সময়ে। জার্মানির কাছে হেরে যান বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে, হয়তো ল্যাম্পার্ডের সেই বাতিল হওয়া গোলটা বাতিল না হলে আরো খানিকটা বা বড় কিছু হতেও পারতো! এরপর রাশিয়া জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করে চাইনিজ এক ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এক ব্যক্তি যিনি রোমা, মিলান, জুভেন্টাস তিন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবেই সফল এবং ফ্যানদের কাছে সমাদৃত, তাকে তো ফেনোমেনন রোনালদোর সাথে তুলনা করা যায়ই, কেননা ফেনোমেনন রোনালদোই রিয়াল, বার্সা, ইন্টার, মিলান সব প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে খেলেও সবার কাছেই সমাদৃত। মিডিয়া চাপ তার সঙ্গী ছিল সবসময়ই, সব চাপ নিজের উপর নিয়ে প্লেয়ারদের স্বাধীনভাবে খেলতে দিতেন, খুব দারুণ ডিসিপ্লিন্‌ড দল গড়তে পারতেন। সর্বমোট নয়টি লীগ ট্রফি তাঁর রয়েছে ঝোলায়। ট্যাকটিকালি তিনি অতুলনীয়। সাফল্য তার এমনই সঙ্গী ছিল যে ইতালিতে যখন ১৯৯৫ এ মিলান শিরোপাহীন থাকে, তখন এক পত্রিকা লিখেছিল, “May be its good for Fabio, his hands are tired of lifting trophies“।

এই ছিল এক ইতালিয়ান কিংবদন্তীর গল্প!

Related Articles