Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপের দৃষ্টিনন্দন ফুটবল স্টেডিয়ামগুলো

২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে কাতারে। আর সেই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাতার তৈরি করছে একাধিক দৃষ্টিনন্দন নতুন স্টেডিয়াম। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্টেডিয়ামগুলো একইসাথে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিরও সর্বোত্তম ব্যবহার করবে। সেগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, শূন্যভাগ কার্বন নিঃসরণকারী এবং পরিবেশ বান্ধব। অধিকাংশ স্টেডিয়ামের অংশবিশেষ তৈরি হবে স্থানান্তরযোগ্যভাবে, যেন বিশ্বকাপ শেষে সেগুলো বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে স্থানান্তর করে আরো ২২টি স্টেডিয়াম তৈরি করা সম্ভব হয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে নির্মিতব্য কাতারের দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামগুলো।

লুসাইল স্টেডিয়াম

লুসাইল স্টেডিয়াম হবে কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। এর অবস্থান হবে রাজধানী দোহা থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে নবনির্মিত লুসাইল সিটিতে, ধারণ ক্ষমতা হবে প্রায় ৮৬,০০০। এই স্টেডিয়ামেই ২০২২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী এবং সমাপনী খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

বৃত্তাকার স্টেডিয়ামটির চারপাশে কৃত্রিম জলাধার থাকবে। জলাধারের বাইরে অবস্থিত ছয়টি পার্কিং এরিয়ার সাথে স্টেডিয়ামটি সেতু দ্বারা সংযুক্ত থাকবে। এর গোলাকার ছাদের অংশবিশেষ সম্পূর্ণ ঢেকে এটিকে ইনডোর স্টেডিয়ামে পরিণত করা, অথবা সম্পূর্ণ খুলে উন্মুক্ত আকাশের দৃশ্য উপভোগ করা সম্ভব হবে। স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজ মাত্র শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে এর উদ্বোধন করা হতে পারে।

লুসাইল স্টেডিয়াম; Source: stadiumdb.com

লুসাইল স্টেডিয়াম; Source: stadiumdb.com

আল-বাইত স্টেডিয়াম

আরবি বাইত শব্দটির অর্থ বাড়ি। কাতারের আল-খোর শহরে নির্মাণাধীন আল-বাইত নামক এই স্টেডিয়ামটি দেখতে হবে বিশাল এক তাঁবুর মতো, যে ধরনের তাঁবু কাতার এবং অন্যান্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রে বেদুইন আরবদের বাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ৬০,০০০ এবং এতে সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত একাধিক খেলার আয়োজন করা হবে। স্টেডিয়ামটি বর্তমানে নির্মাণাধীন আছে এবং ২০১৯ সালে এটি উদ্বোধন করার পরিকল্পনা আছে।

আল-বাইত স্টেডিয়াম; Source: sc.qa

বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর সত্যিকার তাঁবুর মতোই এর অংশবিশেষ স্থানান্তর করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হবে। এর উপরের সারির আসনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে, যেগুলোকে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। বিশ্বকাপ শেষে অন্য আরও কয়েকটি স্টেডিয়ামের মতো আল-বাইত স্টেডিয়ামের অংশবিশেষও উপরের সারির আসনগুলো স্থানান্তর করে উন্নয়নশীল আরব দেশগুলোতে নিয়ে সেখানকার স্টেডিয়ামে স্থাপন করা হবে। তখন এটি ৬০,০০০ আসনের পরিবর্তে ৩২,০০০ আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামে রূপান্তরিত হবে।

আল-বাইত স্টেডিয়াম; Source: keoic.com

আল-রায়ান স্টেডিয়াম

কাতারের আল-রায়ানে অবস্থিত আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামটি মূলত স্থানীয় অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব আল-রায়ান স্পোর্টস ক্লাবের স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামটিকেই পুনঃসংস্কার করে আল-রায়ান স্টেডিয়াম নামে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করা হবে। এর ধারণ ক্ষমতা হবে প্রায় ৪৪,৭৪০। এই স্টেডিয়ামটিও বর্তমানে নির্মাণাধীন আছে এবং ২০২১ সালে এটি উদ্বোধন করার পরিকল্পনা আছে।

স্টেডিয়ামটির বাইরের আবরণটি একটি সুবিশাল ত্রিমাত্রিক গোলাকার পর্দা হিসেবে কাজ করবে, যা বিজ্ঞাপন সহ বিভিন্ন দৃশ্য প্রক্ষেপণ করবে। এর নকশা এবং প্রক্ষেপিত দৃশ্যাবলির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠবে পরিবারের গুরুত্ব, মরুভূমির সৌন্দর্য, স্থানীয় উদ্ভিদ এবং প্রাণীকুলের বৈচিত্র্য, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ইত্যাদি।

আল-রায়ান স্টেডিয়াম; Source: theguardian

আল-থুমামা স্টেডিয়াম

আল-থুমামা স্টেডিয়ামটির ডিজাইন কাতারের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় পরিচয়ের একটি নিদর্শন। এটি দেখতে বিশাল একটি টুপির মতো, যাকে স্থানীয় ভাষায় গাফিয়া বলা হয়। হাতে বোনা এ ধরনের টুপি শুধু কাতার না, প্রায় সবগুলো উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রের পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাফিয়া নামক এ টুপিগুলো মাথায় পরিধান করা তিনটি বস্ত্রাংশের মূল ভিত্তি। এই টুপির উপরে পরা হয় এক টুকরো কাপড়, যাকে বলা হয় গুত্রা। তার উপরে থাকে কালো রংয়ের দড়ি সদৃশ আগাল, যা গাফিয়ার উপরে গুত্রাকে বেঁধে রাখে।

আল-থুমামা স্টেডিয়াম; Source: dezeen.com

থুমামা স্টেডিয়ামটির অবস্থান হবে রাজধানী দোহার সমুদ্রতীরের প্রমোদোদ্যান থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে। এর ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ৪০,০০০ এবং এতে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত একাধিক ম্যাচের আয়োজন করা হবে। অতি সম্প্রতি এর পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়েছে এবং শীঘ্রই এর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা আছে।

আল-থুমামা স্টেডিয়াম; Source: fifa.com

খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম

১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টেডিয়ামটি কাতারের সবচেয়ে পুরানো স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে একটি। শুরু থেকেই এটি কাতারের ক্রীড়াজগতের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে। এই স্টেডিয়ামে বিভিন্ন সময় এশিয়ান গেমস, গাল‌ফ কাপ, এএফসি এশিয়ান কাপ সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলোর আয়োজন করা হয়েছে। এটি মূলত দোহা স্পোর্স্টস সিটির একটি অংশ। এর নামকরণ করা হয়েছিল কাতারের সাবেক আমির খালিফা বিন হামাদ আল থানির নামানুসারে।

খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম; Source: sc.qa

সম্প্রতি বিশ্বকাপ ২০২২কে সামনে রেখে স্টেডিয়ামটিকে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। আগে থেকেই এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয় নকশার দ্বৈত খিলান। সংস্কারের পরও খিলান দুটি আগের মতোই আছে, তবে তাদের নিচে বাড়তি যুক্ত হয়েছে দীর্ঘ পথ জুড়ে প্রশস্ত শামিয়ানা। নতুন করে সংস্করণ সম্পন্ন করার পর গত মে মাসে আমির কাপের চূড়ান্ত ম্যাচ আয়োজনের মধ্য দিয়ে কাতারের আল-রায়ানে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করা হয়।  বর্তমানে এর ধারণক্ষমতা প্রায় ৬৮,০০০।

আল-ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম

অত্যন্ত সৃজনশীল, উচ্চাকাঙ্খী এবং নান্দনিক ডিজাইনের এই স্টেডিয়ামটি ইরাকি-আমেরিকান স্থপতি জাহা হাদিদের অসাধারণ একটি সৃষ্টি। বক্রতার রাণী হিসেবে খ্যাত জাহা হাদিদ তার এই নকশাতেও তার ঢেউ খেলানো বক্রতলের অনন্য স্থাপত্যশৈলীর স্বাক্ষর রেখেছেন। আরব উপসাগরের বুকে ঢেউয়ের স্রোতে ভেসে চলার সময় স্থানীয় ‘দাউ’ নৌকার ফুলে ওঠা পালের আকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই জাহা হাদিদ এই স্টেডিয়ামটির নকশা করেছেন।

এই স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা প্রায় ৪০,০০০। এখানেও কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ম্যাচের আয়োজন করা হবে। বর্তমানে নির্মাণাধীন এই স্টেডিয়ামটি ২০১৯ সালে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা আছে।

আল-ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম; Source: stadiumguide.com

আল-ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম; Source: stadiumguide.com

কাতার ফাউন্ডেশন স্টেডিয়াম

কাতার ফাউন্ডেশন স্টেডিয়মটি এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। কারণ এটি নির্মাণ করা হচ্ছে কাতারের এডুকেশন সিটিতে, যেখানে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাকেন্দ্র অবস্থিত। স্টেডিয়ামটির জটিল জ্যামিতিক নকশা একই সাথে ঐতিহাসিক ইসলামিক স্থাপত্য এবং আধুনিত প্রযুক্তির অপূর্ব সমন্বয়। এর বহির্ভাগে থাকবে ত্রিভুজ এবং হীরকাকৃতির জটিল জ্যামিতিক নকশা, যার রং সূর্যের স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হবে।

কাতার ফাউন্ডেশন স্টেডিয়াম; Source: stadiumguide.com

বিশ্বকাপ আয়োজন শেষ হওয়ার পর এই স্টেডিয়ামটির ধারণ ক্ষমতাও ৪০,০০০ থেকে কমিয়ে ২৫,০০০-এ নিয়ে আসা হবে। অতিরিক্ত ১৫,০০০ আসন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দান করা হবে, যেন সেসব দেশেও উপযুক্ত স্টেডিয়াম তৈরির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ক্রীড়ানুরাগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। বর্তমানে নির্মাণাধীন এই স্টেডিয়ামটি ২০১৯ সালে উদ্বোধন করা হতে পারে।

আল-গাফারা স্টেডিয়াম

কাতারের আল-রায়ানে অবস্থিত থানি বিন জাসেম স্টেডিয়ামটি স্থানীয়ভাবে আল-গাফারা ফুটবল টিমের ব্যবহৃত একটি স্টেডিয়াম। ২০০৩ সালে এএফসি এশিয়ান কাপের আয়োজনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ উপলক্ষে একে পুনঃসংস্কার করে আল-গাফারা স্টেডিয়াম হিসেবে উন্মোচন করার পরিকল্পনা আছে।

আল-গাফারা স্টেডিয়াম; Source: dohalife.com

পরিকল্পনানুযায়ী এর বহির্ভাগের নকশার রং হবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য নির্বাচিত দেশগুলোর পতাকার রং সমূহের সমষ্টি। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ফুটবল প্রিয় দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করা হবে, তেমনি দেশগুলোর মধ্যকার বন্ধুত্ব এবং পারস্পরিক সম্মানও স্বীকৃতি পাবে। বর্তমানে এর ধারণ ক্ষমতা ২৫,০০০ হলেও বিশ্বকাপ উপলক্ষে এটিকে ৪৫,০০০ আসনে উন্নীত করা হবে। নতুন সংযোজিত আসনগুলো হবে স্থানান্তরযোগ্য, যেগুলো পরবর্তীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দান করা হবে।

উম্ম সালাল স্টেডিয়াম

কাতারের উম্ম সালাল শহরে একই নামের এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হবে। শহরটির অবস্থান কাতারের দক্ষিণ-পূর্বে, রাজধানী দোহা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে। এর আসন সংখ্যা হবে আনুমানিক ৪৫,০০০, নকশা করা হয়েছে নিকটবর্তী একটি ঐতিহাসিক দুর্গ অবলম্বনে। বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটি উম্ম সালাল এফসি স্পোর্টিং ক্লাবের নিজস্ব স্টেডিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

উম্ম-সালাল স্টেডিয়াম; Source: theguardian

উম্ম-সালাল স্টেডিয়াম; Source: theguardian

দোহা পোর্ট স্টেডিয়াম

কাতারের রাজধানী দোহায় নির্মিতব্য এই স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা হবে ৪৫,০০০। এর অবস্থান হবে সমুদ্রের বুকে একটি কৃত্রিম দ্বীপের উপর। এটি নির্মাণ করা হবে সম্পূর্ণ মডুলার পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ফ্যাক্টরিতে পূর্ব থেকে প্রস্তুতকৃত অংশগুলো স্থানান্তর করে সেগুলোকে জুড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হবে। বিশ্বকাপের পর সম্পূর্ণ স্টেডিয়ামটিকে আবার খুলে ফেলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হবে।

দোহা পোর্ট স্টেডিয়াম; Source: theguardian

আল-শামাল স্টেডিয়াম

কাতারের আল-শামাল শহরে এই স্টেডিয়ামটি নির্মিত হওয়ার কথা আছে। এর ধারণ ক্ষমতা হবে প্রায় ৪৫,০০০। স্টেডিয়ামটির নকশা করা হয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের বিখ্যাত মাছ ধরার নৌকা ‘দাউ’র গঠন অবলম্বনে। স্টেডিয়ামটিকে পাশ থেকে দেখলেই মনে হবে এটি বুঝি তীরে দাঁড়িয়ে আছে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। এই স্টেডিয়ামটিরও উপরের সারির আসনগুলো স্থানান্তরযোগ্য হবে এবং বিশ্বকাপের পর সেগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দান করে দেওয়া হবে।

আল-শামাল স্টেডিয়াম; Source: theguardian

আল-শামাল স্টেডিয়াম; Source: theguardian

ফিচার ইমেজ-  freeios7.com

Related Articles