Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র: আগ্নেয়াস্ত্রের অগ্নি উদ্গিরণ

প্রাচীনকালের যুদ্ধ থেকে বর্তমান যুগের যুদ্ধের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখন আর একিলেস রাজা প্রিয়ামের উপর তলোয়ার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে না, ব্রিটিশ লংবোম্যানরা কুড়াল নিয়ে তেড়ে আসা ভাইকিংদের বুক তীর দিয়ে ফুটো করে দেয় না কিংবা বিশাল আকারের কাঠের ট্রেবাকেটের গোলা পাথরের দুর্গের উপরেও আছড়ে পড়ে না।

কালের বিবর্তনে যুদ্ধের সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। তলোয়ারের ঝনঝনানি রুপ নিয়েছে রাইফেলের র‍্যাট-ট্যাট শব্দে, পাথরের গোলার বদলে ব্যবহার হয় মিসাইল-টর্পেডো-গ্রেনেড। এখন কার পক্ষে কতো শক্তিশালী কিংবা দক্ষ যোদ্ধা রয়েছে তার উপর যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ভর করে না, নির্ভর করে কার কাছে কতটা উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র রয়েছে এবং সেটি কোন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞও কল্পনাতীত ভাবে বেড়ে গেছে, বর্তমানে পারমাণবিক বোমার আঘাতে একটি মহাদেশও গায়েব করে দেওয়া সম্ভব! সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন অস্ত্রগুলো দিয়েই সাজানো হলো আজকের আর্টিকেল

এএ১২ অ্যাটকিসন অ্যাসল্ট শটগান (২০০৫)

ম্যাক্সওয়েল অ্যাটকিসনের উদ্ভাবন করা এই শটগান আবিষ্কার হয়েছিল আরও অনেক আগেই, ১৯৮৭ সালে। এর শেষ পরিবর্তন হয় ২০০৫ সালে যা বর্তমানে ইউএস মেরিন কর্পসরা ব্যবহার করে। ১৮ বছর ধরে চলা নিয়মিতভাবে আপগ্রেড করা এই অস্ত্রে যোগ হয়েছে অনেক কিছুই।

এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, মাত্র এক সেকেন্ডেই এই অস্ত্র দিয়ে ৫টি শটগান শেল খতম করে ফেলা যায়। এর এক ড্রাম শেল শেষ করতে বেশি কিছু করতে হবে না, মাত্র ৪ সেকেন্ড ট্রিগার চেপে ধরে রাখলেই ড্রামের সম্পূর্ণ ২০টি শেলই বের হয়ে যাবে। এর আরও বড় সুবিধা হলো এর সাথে উন্নতমানের বিস্ফোরক ফ্রাগ-১২ ছোঁড়া যায় ১৭৫ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত। এএ১২ মূলত ব্যবহার হয় দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধক্ষেত্রে, কোনো ধরণের জ্যামিং ছাড়াই একটানা ৯০০০ রাউন্ডেরও বেশি শেল ছোঁড়া সম্ভব এই অস্ত্রের সাহায্যে! শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারেই এই অত্যাধুনিক শটগানটি রয়েছে।

ফেজার রাইফেল (২০০৭)

এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রাইফেলের আকার-আকৃতি দেখে মনে হতে পারে টাইম মেশিনে ভ্রমণ করে রাইফেলটি ভবিষ্যৎ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে, কিন্তু অবাক হলেও সত্যি আজ থেকে ১০ বছর আগেই আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স এই অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জন্য তৈরি করে রেখেছে।

PHASR রাইফেলের পূর্ণরূপ হলো The Personnel Halting and Stimulation Rifle, মূলত এটি শত্রুর দিকে লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করে তাকে অন্ধ করে ফেলে। জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী অন্ধ করে ফেলা লেজার গান ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ফেজার রাইফেল সাময়িকভাবে অন্ধ করে ফেলার প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার কারণে এটি নিষেধাজ্ঞা থেকে বেঁচে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এই অস্ত্র ইরাকেও ব্যবহার করেছে, যেখানে চেকপয়েন্টের দিকে ধেয়ে আসা আত্মঘাতী ইরাকিদেরকে থামানোর জন্য এটি ব্যবহার হতো। ফেজার রাইফেলের পুরোটাকেই বলা যায় ভবিষ্যতের অস্ত্র, এর সবুজ রশ্মি আগে থেকেই এর টার্গেটের দূরত্ব এবং এর প্রয়োগ ক্ষমতা সাথে সাথেই হিসাব করে ফেলে যাতে কেউ সম্পূর্ণরুপে অন্ধ না হয়ে যায়।

এক্সএম২০১০ স্নাইপার (২০১০-১১)

এক্সএম২০১০ স্নাইপার রাইফেল মূলত ২২ বছরের পুরনো এম২৪ স্নাইপার রাইফেলের আধুনিক সংস্করণ, বিশেষ করে এই মডেলটি বানানোই হয়েছে আফগানিস্তানের উঁচু এলাকায় ব্যবহারের জন্য।

রেমিংটন কোম্পানির দায়িত্বে থাকা এই অস্ত্র দিয়ে ১২০০ মিটার পর্যন্ত নিখুঁতভাবে টার্গেট করা যায়। এছাড়াও এতে রয়েছে সাউন্ড সাপ্রেসর (শব্দ শোনা যাবে না), ফ্ল্যাশ সাপ্রেসর (আলোর ঝলকানি দেখা যাবে না), এমনকি থার্মাল স্লিভও যাতে নাইট ভিশন-ইনফ্রারেড কিংবা থার্মাল ইমেজিং-এ স্নাইপার রাইফেলটির গরম ব্যারেল ধরা না পড়ে।

এক্সএম২৫ ইন্ডিভিজ্যুয়েল এয়ারবাস্ট ওয়েপন সিস্টেম [IAWS] (২০১৪)

শুধুমাত্র আমেরিকার সেনাবাহিনীর দখলে থাকা আরেকটি চমকপ্রদ প্রযুক্তি হলো এই IAWS, যাকে “দ্য পানিশার” বলে অভিহিত করা হয়। এই অস্ত্রের সাহায্যে আধা কিলোমিটার দূর থেকে নিখুঁতভাবে গ্রেনেড ছোঁড়া সম্ভব এবং এর সবই ঘটে এর ভিতরে থাকা কম্পিউটার প্রোগামের সাহায্যে!

এর রেঞ্জ যতটা না চিত্তাকর্ষক, তার চেয়েও বেশি চিত্তাকর্ষক এর কম্পিউটার প্রোগ্রাম। কারণ গ্রেনেডটি কতবার ঘুরবে তা নির্দিষ্ট করে দিলেই গ্রেনেডটি কত দূরে গিয়ে পড়বে তা প্রোগ্রাম ঠিক করে দেয়, অর্থাৎ এটি কতদূর যাবে তা নির্ভর করে গ্রেনেডটি কতবার ঘুরবে তার উপর। গ্রেনেডটির বিস্ফোরণও ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, ১০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত বাংকার বা ব্যারিয়ারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শত্রুর কাছে পাঠিয়ে দিয়ে সময়মতো বিস্ফোরণ ঘটালেই অভিযানের সমাপ্তি ঘটবে।

কর্নারশট ৪০মিমি. গ্রেনেড লঞ্চার (২০০৩)

দেয়ালের আড়ালেই লুকিয়ে থাকা শত্রুকে শুইয়ে দিতে যদি আন্দাজে গুলি চালাতে হয় তাহলে তো ভালোই সমস্যা, আবার গুলির যোগান রক্ষার্থে যদি মাথা বের করে দেখতে গিয়ে নিজের মাথাটাও উড়ে গেলে আরও বেশি সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে উদ্ভাবন হয়েছে কর্নারশট অস্ত্রের, যার সাহায্যে বন্দুকের নল যেকোনো দিকেই ঘোরানো সম্ভব। এই পিস্তলগুলো অনেকগুলো টুকরো একসাথে করে বানানো। এতে রয়েছে গ্রেনেড লঞ্চার যা দিয়ে ১৫০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত গ্রেনেড-টিয়ার গ্যাস এবং ৬০ মিমি বুলেট ছোঁড়া যায়, রয়েছে উচ্চ রেজোল্যুশন সম্পন্ন ক্যামেরা এবং আড়াই ইঞ্চির এলসিডি মনিটর। ইসরাইলে উদ্ভাবন হওয়া এই অস্ত্র বর্তমানে ভারতসহ ৮টি দেশে ব্যবহার করা হয়।

এম৩২ গ্রেনেড লঞ্চার (১৯৮০)

এই সেমি-অটোমেটিক গ্রেনেড লঞ্চার দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৩ রাউন্ড গুলি করা সম্ভব হলেও মিনিটে তা কমে গিয়ে দাঁড়াবে ১৮-২১ রাউন্ডে। ১৯৮০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ডিজাইন করা এই অস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরাও ব্যবহার করে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান আপগ্রেডেড গ্রেনেড লঞ্চার থেকে কিছুটা কম উন্নত। প্রায় সাড়ে ৫ কেজি ওজনের এই লঞ্চার দিয়ে ৪০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত গ্রেনেড ছোঁড়া যায়।

এইচকেএম৩২০ গ্রেনেড লঞ্চার

গ্রেনেড লঞ্চার এইচকেএম৩২০-নিজেই একটি ভয়াবহ অস্ত্র, আর এর সাথে যদি অন্য কোনো অ্যাসল্ট রাইফেল যুক্ত করা হয় তাহলে তো কথাই নেই। এই লঞ্চার দিয়ে সব ধরনের ন্যাটো গ্রেনেড ছোঁড়া সম্ভব, হোক সেটা উচ্চ বিস্ফোরক, স্মোক গ্রেনেড কিংবা অন্য কিছু। এর লেজার ফাইন্ডার দিয়ে একেবারে নিখুঁতভাবে গ্রেনেড ছোঁড়া যায়, তাছাড়া এর নাইট ভিশন ফিচারও একে রাতের অন্ধকারেও ভীষণভাবে কার্যকরী করে তুলেছে।

ম্যাটাডোর রকেট লঞ্চার

নামটি শুনলে এর সাথে ষাঁড়ের লড়াইয়ের সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা হতে পারে, কিন্তু এর সাথে আদপেই ষাঁড় লড়াইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ষাঁড় যোদ্ধার ইংরেজি নাম ম্যাটাডোরের সাথে মিলিয়ে রাখা হলেও নামটি মূলত এসেছে (Man-portable Anti-Tank, Anti-DOoR) থেকে। ৯ কেজি ওজনের বিশাল এই রকেট লঞ্চার দিয়ে আধা কিলোমিটার দূর থেকে ট্যাংক কিংবা বাড়ি-ঘর উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। মূলত শহরাঞ্চলে যুদ্ধের ব্যাপকতা বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রেখেই এটি ডিজাইন করা হয়েছিল। জার্মানি, ইসরাইল এবং সিঙ্গাপুরের বিশেষ সেনাদল এই রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে।

এ তো গেল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া যুদ্ধক্ষেত্রে হাতে ধরা অস্ত্রগুলোর গল্প। পরবর্তী পর্বে থাকবে এমন সব যন্ত্র উদ্ভাবনের গল্প যা অন্যান্য সামরিক বাহিনীর কাছে এক আতঙ্কের নাম।

Related Articles