Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বহু-সত্ত্বা রোগ: এক দেহে শত মানুষের বাস

ড. জেকিল ও মি. হাইডের গল্পটা আমাদের অনেকেরই জানা। সেখানে ড. জেকিল এমন একটি ওষুধ আবিষ্কার করেন, যা ব্যবহার করলে তার ভেতরের খারাপ সত্ত্বাগুলো সব প্রকট হয়ে ওঠে এবং তিনি সম্পূর্ণ এক ভিন্ন চরিত্রের মানুষ হয়ে যান। ড. জেকিল তার ঐ চরিত্রটির নাম দেন ‘মি. হাইড’। তিনি আরেকটি ওষুধ আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন। এভাবে তিনি নিজের মধ্যে দুটি ভিন্ন সত্ত্বা নিয়ে বাস করতে থাকেন। যদিও এটি রবার্ট লুইস স্টিভেনসনের একটি কল্পকাহিনী ছিল, কিন্তু এমন এক মানসিক রোগ আছে, যার কারণে একজন মানুষ বাস করতে পারে প্রায় ১০০টির মতো বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা নিয়ে। এই রোগের নাম Dissociative Identity Disorder, মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বা বহুসত্ত্বা রোগ ।

Dissociative Identity Disorder কী?

আমরা প্রত্যেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় হালকা বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেছি। হয়ত কথা বলতে বলতে বা কাজ করতে করতেই হঠাৎ কোথাও হারিয়ে গিয়েছি, যাকে আমরা পোশাকি ভাষায় দিবাস্বপ্ন বলে থাকি। কিন্তু Dissociative Identity Disorder দিবাস্বপ্ন থেকে অনেক বেশি কিছু, যার ফলে মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও অন্যান্য কাজের সাথে তার একটি বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। এই রোগে একজন মানুষের মধ্যে একাধিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ পায়। তা হতে পারে কোনো কাল্পনিক মানুষের, কোনো কল্পনার চরিত্রের, এমনকি কারো কারো মাঝে পশুপাখির স্বভাবও দেখা যায়! মানুষটি অনেকগুলো সত্ত্বার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, নিজেকে আর আলাদা করতে পারে না।

ঐ বিচ্ছিন্ন সত্ত্বাগুলো রোগীকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এবং যখন সে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, নিজের অন্য সত্ত্বাগুলো সম্পর্কে তার কিছু মনেও থাকে না, তার মনে হয় সে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল। একে সাইকোলজির ভাষায় ‘ব্ল্যাক আউট’ বলা হয়। একজনের মাঝে দু’য়ের অধিক ব্যক্তিত্বও দেখা যায়। এর সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১ থেকে ১০০ । তাই একে ‘মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার’ও বলা হয় । Dissociative Identity Disorder নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক, মতবাদ এবং কুসংস্কার। বর্তমানে মিডিয়াতে বেশ রংচঙে রূপ নিয়ে দেখা দিয়ে থাকে রোগটি। অনেক সিনেমা এবং রিয়েলিটি শো-ও দেখা যায় এই রোগটি নিয়ে। ‘United States of Tara’ নামে একটি রিয়েলিটি শোতে একে বেশ নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে অভিনেত্রী ৫টি ভিন্ন ব্যক্তিত্বে অভিনয় করে থাকে! কিন্তু রোগটির বাস্তবতা এর চাইতেও অনেক জটিল।

কেন হয় এ রোগ?

নিজের ভয়ঙ্কর স্মৃতিগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রোগী অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিত্ব তৈরি করে নেয়। Source: The Switch

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শৈশবে কোনো ভয়ঙ্কর ঘটনা; যেমন যৌন হয়রানি, কোনোকিছুতে প্রচন্ড ভয় পাওয়া, পরিবারে লাঞ্ছনা বা অতিরিক্ত মারধরের শিকার হওয়া, অতিরিক্ত র‍্যাগিংয়ের শিকার- এমন কিছু যাদের সাথে হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে পরবর্তীতে এই রোগের বিকাশ ঘটে থাকে। বিশেষ করে যারা যৌন হয়রানির শিকার যারা হয়, তাদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এর মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, ঐ প্রচন্ড ভয় থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ভিক্টিম নিজের মাঝে নতুন ব্যক্তিত্ব তৈরি করে নেয়, যার সাথে তার অতীত ভয়ঙ্কর স্মৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক সময় ঐ সত্ত্বাগুলোকে সে তার রক্ষাকর্তা হিসেবেও কল্পনা করে থাকে। শত চেষ্টার পরও যখন সে তার ভয়ঙ্কর স্মৃতি থেকে রক্ষা পায় না, তখনই সে এই পন্থা অবলম্বন করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা তার মধ্যে এমন একটি ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে, যার বয়স তার ওই ভয়ঙ্কর স্মৃতির আগমুহূর্ত পর্যন্ত আটকে রয়েছে, এরপর আর বাড়ছে না, যার সাথে ঐ ভয়ঙ্কর স্মৃতির কখনও মিলন ঘটবে না। গ্লানিময় শৈশব ছাড়াও যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ও অবসাদে ভুগে থাকে তাদের মধ্যে এর প্রকোপ দেখা যায়। যারা নিজেদের জীবন নিয়ে অনেক বেশি হতাশ, নিজেদের জীবন যাদের পছন্দ না, তারা তাদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে মুক্তি লাভের জন্য নিজেদের মধ্যে অন্যান্য ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটিয়ে থাকে।

প্রাত্যহিক জীবনে বিচ্ছিন্ন সত্ত্বার ভূমিকা

বিচ্ছিন্ন সত্ত্বাগুলো রোগীকে প্রাত্যহিক জীবনে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে; Source: joya.life

বিচ্ছিন্ন সত্ত্বাগুলো রোগীকে প্রাত্যহিক জীবনে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। জীবনের জটিলতাগুলোকে মানুষটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য একেক সময় একেক সত্ত্বাকে ধারণ করে থাকে। এ যেন এক মুখোশ মুখোশ খেলা! নিজের কাছে নিজেকে লুকিয়ে রেখে ভালো থাকার এক করুণ চেষ্টাই এই রোগ। প্রাথমিক দিকে যখন কোনো রোগীকে শনাক্ত করা হয় তখন তার মাঝে সাধারণত দুই থেকে চারটি সত্ত্বা শনাক্ত করা যায়। পরবর্তীতে এর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, ১৩ থেকে ১৫; এমনকি অনেক সময় এ সংখ্যা ১০০তে গিয়েও দাঁড়ায়। প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন উদ্দীপনা রোগীকে এক সত্ত্বা থেকে অন্য সত্ত্বায় নিয়ে যায়। আইনি ক্ষেত্রে মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের রোগীদের নিয়ে বেশ জটিলতা দেখা যায়। কারণ দেখা যায়, তার এমন একটি সত্ত্বা দোষটি করেছে যার সাথে তার আসল সত্ত্বার কোনো মিলই নেই, এমনকি হয়তোবা সে জানেই না। তাই বিচারের ক্ষেত্রে এ রোগীদের আলাদাভাবে দেখা হয়। কিছু জুডিশিয়াল কোর্ট মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারেরর রোগীকে সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাদের ধারণা এই রোগীরা বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে একজন মানুষকে বিচার করতে পারে!

রোগের লক্ষ

Dissociative Identity Disorder-এর রোগীদের মাঝে বেশ কিছু অন্যান্য মানসিক সমস্যাও দেখা যায়। এই রোগের লক্ষণগুলোর মাঝে রয়েছে-

১। রোগীর মাঝে একের অধিক ব্যক্তিত্বের দেখা পাওয়া যাবে। প্রতিটি ব্যক্তিত্বের আলাদা আলাদা বয়স, লিঙ্গ ও গোত্র থাকবে। এমনকি তাদের স্বতন্ত্র ভঙ্গিমা, অঙ্গভঙ্গি ও কথা বলার ধরন থাকবে। অনেক সময় কাল্পনিক ব্যক্তিত্বটি কোনো প্রাণীরও হতে পারে!
২। ব্যক্তিত্বগুলোর রোগীর উপর আধিপত্য দেখা যায়, যাকে অনেকে ভূতে ধরা বলে থাকে।
৩। রোগীর একটি ব্যক্তিত্ব অন্য ব্যক্তিত্বগুলোকে মনে রাখতে পারে না।
৪। রোগী অনেক সময় অনুভব করে সে তার শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে ।
৫। সে তার ব্যক্তিগত জিনিসগুলো ভুলে যেতে থাকে, যা সাধারণ ভুলে যাওয়ার আওতায় পড়ে না ।
৬। তার মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা ও প্রচুর পরিমাণে হতাশা থাকে।
৭। মুড সুইং হয়।
৮। ঘুমের সমস্যা দেখা যায়, যেমন- ঘুম হয় না, ঘুমের মাঝে ভয় পাওয়া, ঘুমের মাঝে হাঁটা ইত্যাদি ।
৯। অস্থিরতা, প্যানিক অ্যাটাক ও বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়া দেখা যায়; যেমন- পুরনো স্মৃতি মনে পড়া এবং সেগুলোর প্রতি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখানো।
১০। বিভিন্ন ড্রাগের প্রতি আসক্তি দেখা যায়।
১১। অনেক সময় হ্যালুসিনেশন হতে দেখা যায়।
১২। খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম থাকে।

শিল্পীর চোখে Dissociative Identity Disorder; Source: উইকিমিডিয়া কমন্স

 

রোগটি কি আসল নাকি বুজরুকি?

অনেকেই মনে করে থাকে Dissociative Identity Disorder আসল নয়। এটি মানসিক চিকিৎসকদের ভাঁওতাবাজি রোগী ধরে রাখার জন্য! এমন ধারণার মূল কারণ, Dissociative Identity Disorder সনাক্ত করা যথেষ্ট কঠিন কাজ। অনেকে মনে করে থাকে মানসিক চিকিৎসকেরা রোগীর মাঝে হ্যালুসিনেশনের সৃষ্টির মাধ্যমে এই রোগ তৈরি করে থাকে। বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার সহ অন্য বেশ কিছু রোগের সাথে এর মিল থাকার কারণে অনেকে একে সেসব রোগের লক্ষণ ভেবে থাকে। অনেক মানসিক চিকিৎসকও একে ভুয়া বলে থাকেন। মানসিক রোগীদের অন্যান্য রোগকে অনুকরণ করার প্রচণ্ড প্রবণতা থাকে বলেই এই বিভ্রান্তিগুলো সৃষ্টি হয় ।

Dissociative Identity Disorder এবং সিজোফ্রেনিয়া

Dissociative Identity Disorder এবং সিজোফ্রেনিয়াকে অনেকেই এক করে ফেলে। কিন্তু এগুলো আসলে আলাদা। সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা বিভিন্ন অবাস্তব জিনিস দেখতে বা শুনতে পায়, যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই; যেমন- কাল্পনিক কিছু মানুষ বা প্রাণী বা কোনো শব্দ অথবা গন্ধ। কিন্তু তাদের মাল্টিপল পার্সোনালিটি থাকে না। তেমনিভাবে Dissociative Identity Disorder-এর রোগীদের ক্ষেত্রেও অবাস্তব কোনো বস্তু দেখতে খুব কমই দেখা যায়। তারা নিজেদের বিভিন্ন সত্ত্বার মাঝে হারিয়ে ফেলে।

কীভাবে সন্ধান পাওয়া গেলো এ রোগের?

( হিস্ট্র-এপিলেপ্সি রোগের ২ উদ্ভাবনকর্তা। Source:http://Box 2 . Summing up the hysteria-neurology complex. )

প্যারিসের Salpetriere Hospital এর প্রধান চিকিৎসক ড. জিন মারটিন চারকট  প্রথম এই রোগটি আবিষ্কার করেন। তিনি এর নাম তখন দেন ‘হিস্ট্র-এপিলেপ্সি’। নাম শুনেই বোঝা যায় রোগটির সাথে তখন প্রচলিত দুটি মানসিক রোগ হিস্টিরিয়া এবং এপিলেপ্সির মিল ছিল। কিন্তু তবুও রোগটি যেহেতু তখন নতুন আবিষ্কৃত হয়েছিল, সেহেতু মানুষের নতুন রোগটি নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। রোগটি যখন আবিষ্কৃত হয়, তখন এর প্রাথমিক উপসর্গগুলো ছিল খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বিষণ্ণতা ইত্যাদি। চারকটকেই তখন একমাত্র মানসিক চিকিৎসক মানা হতো, যিনি এর উপশম করতে পারতেন। রোগটি আবিষ্কারের পর থেকে চারকটকে নানারকম প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হয়। অন্যান্য বিভিন্ন মানসিক রোগের উপসর্গগুলোর সাথে এর উপসর্গগুলোর মিল থাকার কারণে অনেকেই প্রশ্ন তোলে, রোগটি কি আসলেই বিদ্যমান?

চারকট যখন রোগটি প্রথম আবিষ্কার করেন, প্রথমেই তাকে সকলে বিশ্বাস করেনি। তার অন্যতম একজন অবিশ্বাসী ছিল তারই একজন প্রিয় শিক্ষার্থী জোসেফ ব্যাবিন্সকি, যে পরবর্তীতে চারকটের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করে। ব্যাবিন্সকি প্রথমে অভিযোগ করেন, চারকট রোগটিকে আসলে রোগীদের মাঝে তৈরি করছে তাদের বিশ্বাস করিয়ে যে, তাদের রোগটি আছে! বস্তুতপক্ষে, যেখানে ঐসব রোগীরা মানসিকভাবে অন্যান্য রোগীদের তুলনায় আপেক্ষিকভাবে সুস্থ। ব্যাবিন্সকি তার যুক্তিটিকে প্রমাণও করেন! ­­তিনি দেখান কিছু রোগী বিশ্বাস করতে পারে যে, তাদের রোগটি আছে, কিন্তু আসলে তারা সে রোগে আক্রান্ত নয়। এটি বিশেষত মহিলা এবং মানসিকভাবে ভঙ্গুর ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যেত। ব্যাবিন্সকির এই প্রমাণই পরবর্তীতে ব্যাবিন্সকি এবং চারকটকে একসাথে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে ।

একটি ব্যক্তিত্বের সাথে অন্যটির মিল পাওয়া যায় না; Source: amore.ng

চারকট এবং ব্যাবিন্সকি পরবর্তীতে তাদের রোগীদের জন্য নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যেখানে হিস্ট্র-এপিলেপ্সি রোগীদের সাধারণ ওয়ার্ডে রেখেও তাদের পরস্পর থেকে আলাদা রাখা হয়, যেন তারা এমন কাউকে দেখতে না পায় যাদের মাঝে হিস্ট্র-এপিলেপ্সির কোনো লক্ষণ আছে। এটি রোগীদের জন্য অনেক ফলপ্রসূ হয়। পৃথক করে রাখার পর তারা রোগীদের আরো কিছু ট্রিটমেন্টের মধ্য দিয়ে নেন, যেমন- কাউন্টার সাজেশন এবং ইলেক্ট্রিক শক থেরাপি। এর মাধ্যমে রোগীদের হিস্ট্র-এপিলেপ্সির উপসর্গগুলোকে অগ্রাহ্য করতে বাধ্য করানো হতো। চারকট এবং ব্যাবিন্সকি দ্রুত এর ফল লাভ করেন। তারা লক্ষ্য করেন, অনেক রোগীই এই চিকিৎসার পর হিস্ট্র-এপিলেপ্সির উপসর্গগুলোকে অগ্রাহ্য করতে শুরু করেছে এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেছে রোগটি আসল নয়। এর মাধ্যমে চারকট এবং ব্যাবিন্সকি তখন প্রকৃতপক্ষে বুঝতে পারেন, কাদের আসলে রোগটি আছে। এতে তাদের পক্ষে চিকিৎসা করা সহজ হয়।

শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া

Dissociative Identity Disorder  শনাক্ত করার জন্য বেশ সময়ের প্রয়োজন হয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রোগ শনাক্ত করার পূর্বে রোগী প্রায় ৭ বছর মানসিক চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে, কিন্তু রোগটি শনাক্ত করা যায়নি। এটি খুবই স্বাভাবিক, কারণ এতে এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা অন্যান্য অনেক মানসিক রোগের সাথে বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়াও দেখা যায়, অনেক রোগী যাদের, এ রোগটি রয়েছে, তাদের একইসাথে বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, ডিপ্রেশন এবং অস্থিরতাও রয়েছে।

মানসিক চিকিৎসকরা তাই ৫টি লক্ষণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন রোগটি শনাক্ত করার জন্য।

রোগী তার প্রাত্যহিক জীবনে খুবই ক্ষুব্ধ এবং পীড়িত থাকবে; Source: 24/7 Mental Health Helpline

১। দুই অথবা অধিক সত্ত্বা রোগীর ভেতর বিরাজ করবে। প্রত্যেকের আলাদা ধরন থাকবে। প্রত্যেকের জীবন এবং পরিবেশ নিয়ে আলাদা দর্শন থাকবে ।

২। ভুলে যাওয়ার লক্ষণ অবশ্যই থাকবে। সে তার প্রাত্যহিক জীবনের বিষয়গুলো ভুলে যেতে থাকবে; যেমন- ব্যক্তিগত তথ্য এবং সেগুলোর সাথে জড়িত বিষয়। বিশেষ করে ভয়ংকর ঘটনাগুলো সে সহজেই ভুলে যাবে।

৩। ব্যক্তি তার প্রাত্যহিক জীবনে খুবই ক্ষুব্ধ এবং পীড়িত থাকবে ।

৪। তার সমস্যাগুলো স্বাভাবিক জীবনের সাথে মেলানো যাবে না ।

৫। তার উপসর্গগুলো কোনো শারীরবৃত্তীয় প্রভাব হবে না; যেমন- মাতাল অবস্থায় চিৎকার বা ভাঙচুর করা। কোনো রোগের বা চিকিৎসা পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না ।

রোগের প্রকোপ

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মাত্র ০.০১% থেকে ১% এ রোগে আক্রান্ত। মহিলাদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। বিচ্ছিন্নতাকে গাঢ় করে দেখলে, প্রায় ১ তৃতীয়াংশ মানুষ বলে থাকে, তারা অনুভব করে, তারা তাদের নিজেদের সিনেমায় দেখছে! এবং প্রায় ৭% মানুষ কোনো সনাক্তকরণ ছাড়াই মনে করে যে তাদের রোগটি রয়েছে!

চিকিৎসা

মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিচ্ছিন্ন সত্ত্বাগুলোকে একটি সত্ত্বায় একীভূত করা। কিন্তু Dissociative Identity Disorder কখনই সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য নয়। তাই আজীবন মানসিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকাই এর একমাত্র চিকিৎসা। এর কার্যকরী চিকিৎসাগুলো হচ্ছে talk therapy অথবা psychotherapy, hypnotherapy, adjunctive therapies অথবা art or movement therapy। মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডাররের নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই এবং কোনো ওষুধের মাধ্যমে এর নিরাময় সম্ভব নয়। এর উপসর্গ হিসেবে যে রোগগুলো দেখা দেয়; যেমন- ডিপ্রেশন, অস্থিরতা, ট্রমা- এগুলোর চিকিৎসার মাধ্যমে এবং নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এর কিছুটা নিরাময় পাওয়া যায়।

ফিচার ইমেজ- oldpressil.ru

Related Articles