Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জি-লক: পাইলটরা যে কারণে প্লেনে জ্ঞান হারায়

United States Navy’s Fighter Weapons School-কে মেধাবী এবং সাহসীদের আড্ডাখানা বললে ভুল হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত এই স্কুলে সবচেয়ে মেধাবী পাইলটদের ফাইটার প্লেন চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যেখানে খুবই কঠিন কিছু ধাপের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়। এয়ার কমব্যাটে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী প্রশিক্ষক এবং মেধাবী পাইলটদের এক মিলনমেলা এই স্কুল। এই স্কুলের নাম সবার কাছে অপরিচিত লাগতে পারে, কারণ এর একটি ছোট এবং জনপ্রিয় নাম আছে- Top Gun। যারা এখানে প্রশিক্ষণ নেয় তাদেরকে টপ গান পাইলট বলে। এয়ার শোতে কিংবা এরিয়েল কমব্যাটগুলোতে পাইলটরা যখন প্লেনগুলোকে কাত করে এবং খুব তীব্রভাবে ঘুরতে থাকে, তখন অনেক পাইলট তাদের চেতনা হারিয়ে ফেলে এবং প্লেনের ভিতরেই শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করে। বিজ্ঞানের ভাষায় পাইলটদের এমন হওয়াকে বলা হয় g-LOC, উচ্চারণ হলো জি-লক। এই জি লকের g বলতে মহাকর্ষের প্রভাবকে বোঝায়। অনেক সময় একে g-Force বলে। যেমন: 3gs, 4gs ইত্যাদি। LOC বলতে loss of consciousness-কে বোঝায়। অর্থাৎ g-LOC এর পুরোটুকু একত্রে বলা হয় g-induced loss of consciousness

Image Source: Sky Combat Ace

টপ গান পাইলটদের জন্য এরকম হওয়া একটা বড় সমস্যার ব্যাপার। কারণ g force বেড়ে যাওয়ার কারণে পাইলটদের দৃষ্টির পরিধি ছোট হয়ে আসে। তাদের চোখে শুধু সামনের দৃশ্য প্রতীয়মান হয়। চারপাশে তাদের দৃষ্টিসীমা ছোট হয়ে আসে। এরকমটা যদি অনেকক্ষণ ধরে স্থায়ী হয়, তাহলে পাইলটরা তাদের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। টপ গান পাইলট, যারা দ্রুত গতির প্লেন চালায়, তাদের ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়। কমার্শিয়াল প্লেনের পাইলটদের এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না। নেভির সেই স্কুলে পাইলটদেরকে এই g-force সহ্য করার প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমনটি হয়? কেন পাইলটরা প্লেন চালানোর মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যায়?

Image Source: popular mechanics.com

ফাইটার প্লেন চালানোর সময় প্লেন যখন আকাশে বাঁক খায় অর্থাৎ বেঁকে ঘুরতে থাকে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবে পাইলটদের মাথাও বেঁকে যায়। আমরা যদি প্লেনের বেঁকে যাওয়ার পথকে একটি বৃত্তচাপের সাথে তুলনা করি, তাহলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে। এই বৃত্তচাপের কেন্দ্র বরাবর এই প্লেনের সাথে পাইলটের মাথাও সাধারণত বেঁকে যায়। এ কারণে মাথার রক্তচাপ নিচে নেমে যায়। রক্তচাপ নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পাইলটের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে চেতনা লোপ পায়। এই বেঁকে যাওয়ার সময় কেন্দ্রাভিমুখী ত্বরণ অনেক সময় 2gs বা 3gs হয়। ফলে পাইলটদের কাছে নিজেদেরকে ভারী বলে মনে হয়। যখনই এই ত্বরণ 4gs হয়ে পড়ে, তখন আস্তে আস্তে পাইলটদের দৃষ্টি পরিধি টানেল ভিশনে নেমে আসে। অর্থাৎ শুধু সামনের দৃশ্যই তাদের নজরে আসে। মানুষ প্রজাতির দৃষ্টি সাধারণত পেরিফেরাল অর্থাৎ খালি চোখে মোটামুটি ১৮০ ডিগ্রী পর্যন্ত আমরা দেখতে পারি। টানেল ভিশনে সেটা সম্ভব হয় না। এমন অবস্থায় পাইলটরা শুধু সাদা-কালো দৃশ্যই দেখতে পায়।[১]

Image Source: Navy Medicine

আগেকার দিনে জেট প্লেনগুলোতে এরকম বাঁক নেয়ার সময় g-LOC এর জন্য পাইলটদের অনেকগুলো সতর্কতা সংকেত দেয়া হতো যাতে পাইলটরা এরকম পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু আধুনিক জেট বিমানগুলো খুব সহজেই এবং বেশ দ্রুত বেঁকে যেতে পারে আবার সোজা হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে প্লেন যখন Dog Fight এ অংশগ্রহণ করে। সেজন্য অনেক সময় পাইলটরা প্লেনের সংকেত পাওয়ার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান যদি কিছুক্ষণের মাঝেই না ফিরে তাহলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। এই সমস্যা Aviation Physiology এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। সেজন্য প্রশিক্ষণ পর্যায়ে পাইলটদেরকে প্রায় 9gs থেকে বেশী পর্যন্ত সহ্য করতে হয় যাতে মূল বিমান চালানোর সময় হঠাৎ করে যেন আবার রক্তচাপ নিচে না নেমে যায়, পাইলট যেন তার উপর প্রযুক্ত বল সহ্য করতে পারে।[২]

পাইলটদের উপর g-force এর প্রভাব কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জেট বিমানগুলোর নকশায় পরিবর্তন আনার বিভিন্ন চেষ্টা করেছে। পাইলটরা যেন 9gs force পর্যন্ত অবলীলায় সহ্য করতে পারে সেজন্য বিভিন্ন ধরনের Anti g Device এবং Effective Anti g Straining Maneuver (AGSM) তৈরি করেছে। F-15, F-16, F-15E এ ধরনের জেট বিমানে যেখানে একজন পাইলট নিয়ে চালানোর ব্যবস্থা থাকে সেগুলোতে পাইলটদের সুবিধার্থে এই ধরনের যন্ত্রপাতি এখন ব্যবহার করা হয়। এত ব্যবস্থা করার পরও এখনও মাঝে মাঝে g-LOC এর কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।

Image Source: monch.com

আরেকটি সমস্যা হচ্ছে – পাইলটরা LOC এর কারণে অ্যামনেসিয়ার স্বীকার হয়। অর্থাৎ তাদের মধ্যে কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার রোগ দেখা দেয়। এজন্য অনেক সময় তারা LOC-তে আক্রান্ত হয়েছিলো কিনা সেই বিষয়ে সঠিক তথ্যটুকু দিতে পারে না। ১৯৯২ সালের একটি রিপোর্টে উঠে আসে যে, ১৯৮২-৮৪ সালের মধ্যে প্রতি মিলিয়নে ৪ জন LOC-তে আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৯৮৫-৯০ সালে এই সংখ্যা ১.৩ এ নেমে আসে। এর কারণ ছিল বিমান এবং নৌ বাহিনীর দেয়া প্রশিক্ষণ ও তাদের তৈরি যন্ত্রপাতি এবং জেট বিমানগুলোর নকশার পরিবর্তন [৩]।

g-force মানুষের উপর পরীক্ষা করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে। সেই পরীক্ষার পর তারা উপসংহারে আসে যে, 6gs উপরে উঠলে পাইলটদের জন্য রক্ষাকারী ডিভাইসের দরকার পড়বে। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এটা নিয়ে কাজ করা হয়। সেই থেকে বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ পায় যে, শুধু দৃষ্টিসীমা বা পরিধি কমে যাওয়া নয়, আরও কিছু কিছু বিষয় এখানে কাজ করে। যেমন: উচ্চতা, বয়স, ওজন ইত্যাদি।

Image Source: US Wings

মহাকর্ষ এবং ত্বরণের সাথে আরেকটি যে বিষয় পাইলটদের শারীরিক স্বাভাবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কাজ করে সেটা হচ্ছে জড়তা, যা প্লেনের ত্বরণের বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে। এই ত্বরণ হয় দুই ধরনের; দীর্ঘমেয়াদি (Sustained) এবং স্বল্পমেয়াদী (Transitory) ত্বরণ। যদি জেট বিমানের ত্বরণ ২ সেকেন্ডের বেশী হয়, তাহলে তাকে দীর্ঘমেয়াদি ত্বরণ বলা হয়ে থাকে। জেট প্লেনের ক্ষেত্রে এমন ত্বরণ হতে পারে। প্লেনের গতি কিংবা দিক পরিবর্তনের সময় ত্বরণের মেয়াদকাল বেড়ে যেতে পারে। আবার বিমানের ত্বরণ ১ সেকেন্ডের কম হলে সেটা স্বল্পমেয়াদী ত্বরণ হবে। বিমানের দুর্ঘটনা রোধে কিংবা পাইলটদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বল্পমেয়াদী ত্বরণকেই বেশী গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। দীর্ঘমেয়াদী ত্বরণ পাইলটের শরীরের রক্তের প্রবাহকে এবং শরীরের অন্যান্য তরলের সমন্বয়কে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। এ কারণে রক্তচাপের পরিবর্তন দেখা দেয় এবং চেতনা লোপ পায়। এছাড়াও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এবং শ্বসনতন্ত্রে সমস্যা, ঘাড়ে ব্যথা ইত্যাদি সাধারণ কিছু সমস্যা দেখা দেয় g-force এর কারণে। [৪]

Image Source: Daily Mail

আমাদের শরীর 1 gs এ অভ্যস্ত। কিন্তু বর্তমানে যুদ্ধ ক্ষেত্রে হোক কিংবা আরও আধুনিক বিমান নির্মাণের ক্ষেত্রে হোক, সবকিছুই আধুনিক হয়ে পড়ছে। আধুনিকতার সাথে সাথে সবকিছু দ্রুতগতির হয়ে পড়ছে। উচ্চ কর্মক্ষমতা সম্পন্ন বিমানগুলোর মধ্যে অধিক g-force তৈরি করার একটি সম্ভাবনা থাকে, কারণ এখনকার বিমানগুলো নানা কৌশল অবলম্বন করতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বিশেষ করে দ্রুতগামী যাত্রী বিমানগুলোকে নিয়ে গবেষণা করা জরুরী।

তথ্যসূত্র

[১] Walker, J. (2007). The Flying Circus of Physics, John Wiley & Sons, Inc.

[২] Stoll, A. M. (1956) Human tolerance to positive G as determined by the physiological end points. Aviation Medicine, 27, 356-367.

[৩] Sevilla,N.L., and Gardner, J.W. (2005). G-induced loss of consciousness: case-control study of  G-LOCs in the F-15, F-16, and A-10. Aviat Space Environ Med 2005; 76:370–4.

[৪] Lyons, T. J., Harding, R., Freeman, J and Oakley, C. (1992). G-induced loss of consciousness accidents: USAF experience 1982-1990. Aviation, Space, and Environmental Medicine, 63, No. 1, 60-66.

ফিচার ইমেজ:  en.zockme.com

Related Articles