Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

না ফেরার দেশের নতুন ঠিকানা মঙ্গল গ্রহ

না ফেরার দেশ! কথাটা আমরা সাধারণত বলি এমন এক জায়গা বোঝাতে যেখান থেকে কেউ ফেরে না। আরো খোলাসা করে বললে বলা যায়, মৃত্যুর পর পারলৌকিক জগৎকেই লোকে বলে না ফেরার দেশ। নাটক-সিনেমায় মৃতের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই ছোট-ছোট ছেলেমেয়ের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “তোমার দাদু কিংবা নানু চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

এই না ফেরার দেশ কেমন কেউ কখনো দেখে এসে বলতে পারেনি। কিন্তু এবার বোধহয় নতুন এক না ফেরার দেশ আমরা পেয়েই যাচ্ছি! সৌরজগতের লাল গ্রহ মঙ্গল হতে চলেছে মানুষের নতুন না ফেরার দেশ। একদল মানুষ মহাকাশচারী হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে শুরু করেছেন এক স্বপ্নাচারী প্রকল্প। এ প্রকল্পের লক্ষ্য মঙ্গলে মানববসতি স্থাপন। আর তাই প্রথম সুযোগে যারা সেখানে যেতে চান, তাদের এই শর্তই দেয়া হয়েছে যে, আর কখনো ফিরে আসা যাবে না এই সবুজ গ্রহে। অর্থাৎ সবুজ গ্রহ থেকে লাল গ্রহে ওয়ান ওয়ে টিকেট নিয়েই যাত্রা করতে হবে মঙ্গলের দিকে।

লালগ্রহ মঙ্গলের ভূমিরুপ

মঙ্গলে রিটার্ন টিকেট ছাড়া মানুষের বসতি স্থাপনের এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে মার্স ওয়ান নামের একটি কোম্পানী। নেদারল্যান্ডে নিবন্ধিত এই কোম্পানীটি বাস্তব রুপ দিতে চায় আমেরিকার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ কার্ল সাগানের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের স্বপ্নকে।

মূলত ২০১০ সালে মাহাকাশ বিজ্ঞানের একটি ম্যাগাজিনে একটি কল্পনাবিলাসী নিবন্ধে প্রথম বলা হয় মঙ্গল অভিযান এবং সেটিকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলিটি শো করার কথা। এরপর ২০১১ সালে গঠিত হয় মার্স ওয়ান নামের একটি কোম্পানী। ‘মার্স ওয়ান’ এর প্রতিষ্ঠাতা বাস ল্যান্সড্রপ ২০১২ সালে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেন এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। মঙ্গল অভিযানের এই প্রকল্পে সামিল হয়েছেন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে নাসা’র সাবেক কর্মীরাও। পরিকল্পনা প্রণয়নে দীর্ঘ এক দশক সময় নিয়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত যে প্রযুক্তি মানুষের হাতে রয়েছে তা ব্যবহার করেই যে মঙ্গলে বসতি স্থাপন করা যায় সেটা বোঝানোটাও সহজ কাজ ছিল না। আর্থিক দিকটি ছিল আরেক চ্যালেঞ্জ। তবে এই অভিযানটি রিয়েলিটি শো’র আদলে টেলিভিশনে দেখানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করায় এখন টাকার স্রোত বইছে এতে।

মার্স-ওয়ান সিইও বাস ল্যান্সড্রপ

মার্স ওয়ান কোম্পানীটি শুরু থেকেই নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগোচ্ছে। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল ২০২৩ সালে মঙ্গলে মানববসতি স্থাপন করা হবে। পরে সেটা পিছিয়ে ২০৩২ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সালে প্রাথমিক সার্ভে করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক মিশন মঙ্গলে প্রেরণ করা হবে। ২০২৬ সালে মঙ্গলে মানববসতি স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনের জন্য জায়গা খুঁজতে নামবে একটি রোভার। আর ২০৩০ সালের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় রোভার মঙ্গলে মানুষের বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় আবহাওয়া সৃষ্টিসহ খাদ্য ও পানীয় জলের মজুত নিশ্চিত করবে। আর এসব নিশ্চিত করার পরই ৪ জন মহাকাশচারীকে নিয়ে প্রথম মহাকাশযানটি মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবে ২০৩১ সালে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরের বছর ২০৩২ সালে লালগ্রহের মাটিতে পড়ার কথা মানুষের পদচিহ্ন। আর প্রথম বসতি স্থাপন সফল হলে ২০৪০ সালে কমপক্ষে ২০ জন মানুষ লালগ্রহে স্থায়ী আবাস করবেন।

বর্তমানে এই প্রকল্পে মঙ্গলে যেতে ইচ্ছুক মানব-মানবীদের বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের শেষে বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রার্থী সংখ্যা ৪০ এ নামিয়ে আনার কথা রয়েছে। রিটার্ন টিকেট ছাড়াই মঙ্গলে যেতে আগ্রহীদের কাছে এই কোম্পানীটি ২০১৩ সালে দরখাস্ত আহ্বান করে। আর পৃথিবীতে ফেরা হবে না জেনেও মঙ্গলে যেতে আগ্রহীদের সংখ্যাটা শুনে চমকে উঠবেন যে কেউ। দুই লাখের বেশি আঠারো বছরের বেশি বয়সী মানুষ আবেদন করেন এই মার্স-ওয়ান এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে। প্রথম রাউন্ডের বাছাই শেষে এই সংখ্যাটা নামিয়ে আনা হয় ৭০৫ জন এ। এরপর আবারো শুরু হয় বাছাই এবং ২০১৫ সালে মার্স-ওয়ান কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয় যে তাদের মধ্যে ৫০ জন নারী এবং ৫০ জন পুরুষ নিয়ে মোট ১০০ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে পরবর্তী রাউন্ডের জন্য। কোম্পানীটির পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালেই পৃথিবীতে নির্মাণ করা হবে মঙ্গলে বসতে যাওয়া মানব বসতির রেপ্লিকা। এই অভিযাত্রীরা সেখানে প্রশিক্ষণ নেবেন এবং তাদের মধ্য থেকে চলতি বছরের শেষেই ৪০ জনকে পরের ধাপের জন্য নির্বাচন করা হবে। শেষ পর্যন্ত এই ৪০ জনের মধ্যে ২০ জন মঙ্গলে বসতি স্থাপনের সুযোগ পাবেন।

মঙ্গলে মানব বসতির মডেল

মঙ্গলের এই অভিযাত্রীদের মধ্যে আছেন একজন বাংলাদেশীও। তিনি লুলু ফেরদৌস। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করা এই ৩৮ বছর বয়সী নারী ঢাকায় জন্মগ্রহণ করে। লুলু ফেরদৌসের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে। লুলু ঢাকায় ভিকারুননিসা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর আমেরিকায় গিয়ে গবেষণার পাশাপাশি পড়াশোনাও করছেন। ৬ বছর বয়স থেকেই লুলুর মহাকাশ নিয়ে আগ্রহ। আগে বিমান বাহিনীতে নারী বৈমানিক নেওয়া হত না। তাই তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পারেন নি। তবে মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্নটা তার মনের মধ্যে লালিত ছিল। আর তাই লুলু ফেরদৌস ২০০৭ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি এয়ার ট্রান্সপোর্টেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। পরে যোগ দেন নাসার বিশেষ গবেষক হিসেবে।

২০১৩ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি নাসার গবেষণার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি মার্স ওয়ানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আবেদন করেন এবং নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে ১০০ জনের মধ্যেও রয়েছেন তিনি। মার্স ওয়ান প্রকল্পের রিটার্ন টিকেট ছাড়া মঙ্গলে গেলে আর ফেরা হবে না এই পৃথিবীতে কিংবা নিজের দেশে, এটা জেনেও লুলু ফেরদৌস বিচলিত নন। তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি উপভোগ করছি, আমার পরিবার প্রথমে এটি শুনে অবাক হয় এবং আমাকে না করলেও, আমি জানি তারা এক সময় আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারবে।

বাংলাদেশী মেয়ে লুলু ফেরদৌস

মার্স ওয়ানের এই প্রকল্প নিয়ে যেমন আগ্রহ আছে, তেমনি আছে বিতর্কও। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে চূড়ান্ত একশ জনের মধ্যে থাকা প্রতিযোগীর একজন জোসেফ রোচ অভিযোগ করেন, এই প্রকল্পে প্রতিযোগী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া মারাত্বকভাবে ভুল। প্রতিযোগীরা ঠিক জানেন না কিভাবে বা কিসের ভিত্তিতে তাদের নম্বর দেয়া হচ্ছে। রোচ অভিযোগ করেন, তিনি আবেদন ফরম পূরণ করার পর স্কাইপে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, কয়েকটি দ্রুত অনলাইন কুইজে অংশ নিয়েছেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মার্স-ওয়ানের কারো সঙ্গে সরাসরি তার দেখা হয়নি। আর তাই তিনি অভিযোগ করছেন, যারা বিভিন্ন রিয়েলিটি শো বা মিডিয়া সাক্ষাৎকারে বেশি দর্শক টানছেন, তাদেরই নির্বাচন করছে কোম্পানিটি।

এমন মঙ্গল বসতি’র ছবি প্রচার করছে মার্স-ওয়ান

মিডিয়ায় বিভিন্ন সমালোচনা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন কোম্পানীর প্রধান বাস ল্যান্সড্রপ। তিনি বলেছেন, যোগ্যতার ভিত্তিতেই প্রার্থীদের নির্বাচন করা হচ্ছে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা মঙ্গলে বসতি স্থাপন করতে যাচ্ছি এবং পৃথিবীবাসী সরাসরি টেলিভিশন রিয়েলিটি শো’তে মঙ্গলযাত্রীদের চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ এবং মঙ্গলযাত্রার ছবি সবই দেখতে পারবেন। তার ভাষায়, পৃথিবীবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে নিজ প্রজাতির মঙ্গলযাত্রা দেখার জন্য।

তথ্যসূত্র

১) mars-one.com

২) en.wikipedia.org/wiki/Mars_One

৩) iflscience.com/space/whats-going-mars-one/

৪) theverge.com/2016/12/7/13869856/mars-one-revised-mission-timeline-again-launch-plan-2031

Related Articles