Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানবযন্ত্রের বিস্ময়কর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

মানুষের শরীর এক জটিল জৈব-রসায়নাগার। প্রতি মুহূর্তেই নানাবিধ রাসায়নিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে দেহে। অসংখ্য জৈবিক কার্যাবলি চলছে শরীরের ভেতরে, যা পুরোপুরি এখনও বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। কিছু কিছু শারীরিক ব্যবস্থার কথা শুনলেই থ’ হয়ে যেতে হয়।

মানবদেহে মস্তিষ্কের কার্যাবলী অতি গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের কোনো একটি প্রক্রিয়াকে পৃথকভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলাটা আসলে পুরোপুরি ঠিক নয়। কেননা, অল্প থেকে অধিক, সকল কাজই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এদের কোনো একটিকে ছাড়া বাকিগুলো অচল। মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন ১২ জোড়া স্নায়ু রয়েছে। স্নায়ুগুলো অনেক শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পুরো শরীরের সাথে মস্তিষ্কের যোগাযোগ সম্পন্ন করে থাকে। ভাবলে অবাক লাগে যে, এই ১২ জোড়া স্নায়ুর মাঝে ৪ জোড়া স্নায়ুই কাজ করে কেবলই চোখের উপর। Optic স্নায়ুজোড়া কাজ করে দর্শনানুভূতিতে আর বাকি Oculomotor, Trochlear, Abducens স্নায়ুগুলো কাজ করে অক্ষিগোলকটির সঞ্চালনে।

দর্শনানুভূতি যোগানোর দায়িত্বে রয়েছে এই অপটিক নার্ভ; Source: scientificanimations.com

বাকি তিনজোড়া নার্ভ রয়েছে চোখের সাথে সংযুক্ত পেশিগুলোকে নড়াচড়া করানোর দায়িত্বে; Source: pinterest.co.uk

শরীরের সকল কাজই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বড়জোড় আশ্চর্য হতে পারি কাজগুলোর কথা ভেবে। শরীরের তেমনই এক আশ্চর্যজনক ব্যবস্থা হলো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই যে, আমরা এত এত ওষুধ সেবন করছি আর ভাবছি, ওষুধই আমাদের সারিয়ে তুলবে, ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। আমাদের শরীর যদি সাহায্য না করে, কোনোদিনই আমাদের পক্ষে একদম পারফেক্ট ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হবে না। প্রতিনিয়ত আমরা জীবাণু শরীরে প্রবেশ করাচ্ছি। প্রতিবার খাবারের সাথে কোটি কোটি জীবাণু প্রবেশ করছে, শ্বাসের সাথে নাক দিয়ে প্রবেশ করছে। কান দিয়ে প্রবেশ করছে। কত দিক দিয়ে শরীর সামলাবে!

এগুলো নিয়ে যদি ভাবতে হতো, তাহলে কারো পক্ষে দৈনিক জীবনে আর কিছু করা সম্ভব ছিলো না। প্রতিদিন যদি আমাদের হিসেব করে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হতো, অবস্থা কী দাঁড়াতো তখন? অত সেকেন্ড প্রশ্বাস নিলাম, ওহ আচ্ছা, এবার একটু শ্বাস নিই, এভাবেই হয়ত হতো ব্যাপারটা। কিন্তু না, শরীর চলছে নিজের মতো করেই, আমাদের হিসেব করে চালাতে হচ্ছে না একে। একটুও ভাবতে হয় না আমাদের এই Sympathetic-Parasympathetic ব্যাপারগুলো নিয়ে, এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে Autonomic Nervous System। এই নার্ভাস সিস্টেমটিই Sympathetic আর Parasympathetic নার্ভের মাধ্যমে অনৈচ্ছিক ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

মস্তিষ্কের ১২ জোড়া নার্ভের একজোড়া হলো ভ্যাগাস নার্ভ, প্যারাসিমপ্যাথেটিক অংশটুকুতে দেখা যাচ্ছে প্যারাসিমপ্যাথেটিকের প্রায় পুরোটাই আসছে ভ্যাগাস নার্ভ থেকে। আর সিমপ্যাথেটিক নার্ভের পুরোটা আসছে সুষুম্না কান্ডের বিভিন্ন অংশ থেকে। এভাবেই অটোনোমিক স্নায়ুতন্ত্র শরীরের অনৈচ্ছিক অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে; Source: medicalook.com

শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রয়েছে তিনটি স্তর। প্রত্যেক স্তরের রয়েছে আবার ৬-৭ ধরনের সেনাবাহিনী। কোনো জীবাণু যদি শরীরে প্রবেশ করতে চায় (যেকোনো প্রবেশ পথ দিয়ে; হোক তা মুখ, নাক, কান কিংবা চোখ দিয়ে), প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর বাধা প্রদান করবে, জীবাণুকে প্রতিহত করবে ত্বক। জীবাণু যদি যথেষ্ট ক্ষুদ্র হয়, তবেই কেবল এই স্তরকে ফাঁকি দিতে পারবে। তবে ত্বককে কিন্তু ফাঁকি দিতে পারবে না, তা সে যত ক্ষুদ্রই হোক, একে প্রবেশ করতে হবে শরীরের কোনো একটি প্রবেশ পথ দিয়ে। আর ত্বকের কোনো অংশ যদি কেটে যায়, তখন প্রবেশ করতে পারে। তাই জীবাণু প্রবেশ সম্ভব এমন কোনো কিছু দিয়ে যদি ত্বক কেটে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ইটিএস ইনজেকশন নেওয়া উচিত।

এবার দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা স্তর আসবে তার সমুদয় বাহিনী নিয়ে। জীবাণু যদি যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয়, তবেই কেবল এই স্তরকে ফাঁকি দিতে পারবে। ধরা যাক, ফাঁকি দিয়েই দিল। এবার তৃতীয় স্তর কোনো কথা ছাড়াই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করবে। এমনকি কোনো ভালো বস্তুও যদি সনাক্ত করতে না পারে, সেটার উপরেও চালাবে ধ্বংসযজ্ঞ। কেবলমাত্র এই স্তরকে হারিয়ে দিয়েই একটি জীবাণুর পক্ষে আমাদেরকে সংক্রমিত করা সম্ভব।

শরীরের তিনটি প্রতিরক্ষা স্তর; Source: sphweb.bumc.bu.edu

শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রত্যেকটা তরলের জানা রয়েছে জীবাণু হত্যার কৌশল। কানের মধ্যে সিরুমিনাস গ্রন্থি; যা সিরুমেন ক্ষরণ করে, অনুপ্রবেশকৃত সব অবান্তর বস্তুকে খৈল হিসেবে জমিয়ে দেয়। অশ্রু আর লালাতে রয়েছে জীবাণুনাশক লাইসোজোম। ঘামের মাঝেও আছে জীবাণুনাশকের ক্ষমতা। কোথাও কেটে গেল, রক্ত পড়ছে, সেটি হয়ে যাবে জীবাণু প্রবেশের উৎকৃষ্ট স্থান। অণুচক্রিকা সাথে সাথে রক্তের হেপারিনকে (যা রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না) অকেজো করে দিয়ে কেটে যাওয়া ত্বক জমাট বাঁধিয়ে ফেলে। পুরুষ প্রজননতন্ত্রের বীর্যরসে পর্যন্ত থাকে সিমিন, যা উত্তম জীবাণুনাশক।

রাইনো ভাইরাসের আক্রমণে অতি সহজেই সর্দি লেগে যায় আমাদের। আমরা চাইলেই প্লেগের মতো সর্দিকেও পৃথিবী থেকে বিদায় জানাতে পারি। কিন্তু এই সর্দিও আমাদের অনেক উপকার করছে। সর্দি শরীরকে বারবার মনে করিয়ে দেয় তার দায়িত্ব। সর্দিকে প্রতিহত করতে গিয়ে শরীর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে হয়ে উঠে শক্তিশালী।

Source: kittycavalier.com

আমাদের শরীরে জ্বর হয় না? এই জ্বর পর্যন্ত শরীরের একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। জীবাণু সনাক্তকারী অঙ্গাণু যখন শরীরে জীবাণুর উপস্থিতি টের পায়, মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসকে দিয়ে সমগ্র শরীরে পাইরোজেন নামক পদার্থের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে; যা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। একেই আমরা জ্বর বলি। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অধিক তাপমাত্রায় জীবাণুগুলো আর বেঁচে থাকতে পারে না। বাইরে থেকে আমরা যেসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি, সবই প্রথম স্তরের প্রতিরক্ষক। তরল জাতীয় কিছু ব্যবস্থার কথা বললাম (লালা, অশ্রু, সিমিন, সিরোমেন, ঘাম, পাকস্থলীর এসিড), এ সব হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রতিরক্ষক।

আর তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নামগুলো আমরা অনেকেই চিনতে পারবো না হয়তো। এরা হলো বিধ্বংসী বাহিনী, জীবাণুর সাথে কোনো ধরনের আপোষে নেই এরা। জীবাণু শনাক্ত করা মাত্রই প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, শনাক্ত করতে না পারলেও নিস্তার নেই এই বাহিনীর হাত থেকে। বিস্তারিত বলছি না এখানে। ফ্যাগোসাইটিক কোষ (মনোসাইট, নিউট্রোফিল), কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম, Killer কোষ, ইন্টারফেরন, জ্বর এগুলো হলো তৃতীয় স্তরের প্রতিরক্ষক বাহিনী।

শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি প্রচন্ড প্রশংসাযোগ্য। এটি প্রতিটি মুহূর্ত আমাদেরকে রক্ষা করে চলেছে শক্তিশালী সব জীবাণুর হাত থেকে। এমন কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা এবার বলব, যেগুলোকে আমরা কখনোই শরীরের প্রতিরক্ষক ভাবিনি।

হাই তোলা

slate.com

হাই তোলা হলো ঘুমের নিদর্শন, হাই উঠছে মানে ঘুম পেয়েছে। মানব শরীর একনাগাড়ে কাজ করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ক্লান্তিতেই হাই চলে আসে। ঘুমই আবারো কর্মক্ষম করে তুলতে পারে শরীরকে। কিন্তু হাই তোলার প্রধান কারণটা হলো, শরীরের কিছু ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তন। পূর্বে মনে করা হতো যে, ফুসফুসের অক্সিজেন লেভেল যখন কমে যায়, তখন হাই তোলার মধ্য দিয়ে অধিক অক্সিজেন গ্রহণ করে সমতা আনে শরীর। কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হতে বেশি সময় লাগেনি। আমরা এখন জানি যে, ফুসফুস অক্সিজেন পরিমাপ করে না, হাই তোলার পেছনে নিশ্চয় অন্য কোনো কারণ রয়েছে। একটি ফিটাস (মাতৃগর্ভে সন্তানকে ফিটাস বলা হয়) এর ফুসফুস অপরিণত অবস্থায়ও হাই তুলতে দেখা যায়। তাছাড়া মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ পৃথক দুটি অঞ্চল হাই তোলা এবং শ্বসন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সম্প্রতি হাই তোলার পেছনে আরো একটি ধারণা ব্যক্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটাই যুক্তিযুক্ত তথ্য বলে মানা হচ্ছে। হাই তোলা প্রক্রিয়াটি মস্তিষ্কের তাপমাত্রাকে হ্রাস করতে সক্ষম। মস্তিষ্কের তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায় অথবা ওভারলোডেড হয়ে পড়ে, তখনই হাই তোলার মাধ্যমে বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে।

হাঁচি

Source: newsbijoy.com

হাঁচি খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। কিন্তু এটি যে আমাদের কত উপকার করে, তা সচরাচর অজানাই রয়ে গেলো। আমাদের নাসা গহ্বর যখন ধুলো কিংবা জীবাণু দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়, তখনই আমরা হাঁচি দিয়ে থাকি। নাসা গহ্বরে জীবাণু আটকে যায়, যদি না আকার অতি ক্ষুদ্র পর্যায়ের হয়। এছাড়া অ্যালার্জি আছে এমন সব পদার্থেও হাঁচি আসে। হাঁচি হলো এসব অবান্তর জিনিসগুলো থেকে মুক্তির একটি পথ। অতিক্ষুদ্র জীবাণুগুলোকে আটকানোর জন্যও নাসা গহ্বরের পর রয়েছে আরো উন্নত ব্যবস্থা।

শ্বাসনালীর অন্তঃতলে রয়েছে অসংখ্য ফ্ল্যাজেলা, যাতে জীবাণু ময়লা সবই আটকাচ্ছে, হাঁচির সাথে সবকিছু বেরিয়ে আসছে বাইরে। কেউ হাঁচি দিলে কত কোটি জীবাণু যে বাইরে বেরিয়ে আসে, তা কল্পনা করাও কঠিন। আমরা অনেকেই হাত দিয়ে ঢেকে হাঁচি দিই। আবার এই হাত ব্যবহার করেই খাদ্য গ্রহণ করি, এটা-ওটা ধরি, হ্যান্ডশেক করি। জীবাণু ছড়িয়ে দিই অন্যদের মাঝে, নিজেরই অজান্তে। আমেরিকাতে একবার একটি জরিপ করে দেখা গেলো, দু’জন মানুষ পরস্পরের ঠোঁটে চুমু খেলে যত জীবাণু আদান-প্রদান হয়, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি জীবাণু আদান-প্রদান হয় হ্যান্ডশেকের সময়। এটা নিয়ে তারা একটি টিভি অ্যাডও বানিয়েছিল, যেখানে বলা হয়, হ্যান্ডশেক না করে ঠোঁটে চুমু খান, এই টিভি অ্যাডটি অবশ্য পরবর্তীতে নিষিদ্ধ করা হয়।

আড়মোড়া ভাঙা

ঘুম থেকে উঠেই, দু’হাত উপরে তুলে দিয়ে শরীরকে টান টান করে তোলে না, এমন মানুষ হয়তো একদমই পাওয়া যাবে না। বাংলা ভাষায় একে নামকরণ করা হয়েছে ‘আড়মোড়া ভাঙা’। হাই তোলার সাথে এটার প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে। আমাদের রিফ্লেক্স আমাদেরকে বাধ্য করে শরীরকে এভাবে টেনে ধরতে। অন্য প্রাণীদেরও এমনটা করতে দেখা যায়। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ ঘটনা এটি। দৈনন্দিন কাজগুলোর ভার বহন করতেই শরীরকে প্রস্তুত করে তোলে এই ব্যবস্থাটি। এছাড়াও টেনডনকে (পেশী ও কঙ্কালের জোড়াস্থল) কার্যপযোগী করে তোলে, রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসে। কেউ কেউ মনে করেন, আমাদের অনুভূতিকেও স্বাভাবিক করে তোলে এটি।

হেঁচকি

Source: consumer-voice.org

হেঁচকি হলো ডায়াফ্রামের একটি অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়া। আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ডায়াফ্রাম। বেশ কয়েকটি ডায়াফ্রাম রয়েছে শরীরে, যেমন- পেলভিক ডায়াফ্রাম। তবে যখন ডায়াফ্রাম বলা হচ্ছে এখানে, এর মানে হলো শরীরের সবথেকে বড় ডায়াফ্রাম; যা শ্বসনের প্রধান পেশী হিসেবে কাজ করে আর বক্ষ গহ্বরকে পেট থেকে পৃথক করে রাখে। পর্দার মতো একটি ব্যবধায়ক এই ডায়াফ্রাম, খাদ্য গ্রহণ, হজম, শ্বসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কাজে ডায়াফ্রাম দায়িত্বরত। আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি, এটি ফুসফুসের আয়তন বড় করে বাতাস প্রবেশ করায়। আবার নিঃশ্বাসের সময় বাতাস বেরোতে সাহায্য করে। আমরা যখনই খুব দ্রুত খাবার খেতে শুরু করি কিংবা অধিক খাদ্যাংশ একসাথে গিলে ফেলি, তখন আমাদের নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ু বিক্ষিপ্ত হয়। এই স্নায়ুটি আমাদের পাকস্থলী আর ডায়াফ্রামের সাথে সরাসরি সংযুক্ত। ফলাফল হলো হেঁচকি ওঠা।

কিন্তু কখনো কখনো ডায়াফ্রাম বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে তার কাজ থেকে। তখন হেঁচকা টানে ডায়াফ্রাম উপর-নিচ হয় একবার। ফলে হুট করে কিছু বাতাস মুখে ঢুকে যায়। দ্রুত গতিতে বাতাস প্রবেশের সময় ভোকাল কর্ডে আঘাত করে। তখনই আমরা শুনতে পাই অতি পরিচিত এক আওয়াজ, ‘হিঁক’।

ঘুমের মাঝে ঝাঁকুনি

Source: fotolia.com

অনেক সময় এমন হয় যে, ঘুমানোর জন্য শুয়েছি, আধো আধো চোখ লেগে এসেছে অথবা ঘুমিয়ে পড়েছি, হঠাৎ করে আমাদের পুরো শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে, যেন কারেন্টের শক খেলাম। যদি ঘুমন্ত থাকি, তাহলে এর দ্বারা ঘুম ভেঙে যাবেই। এ সময় আমাদের শরীরে যত মাংসপেশী আছে, সবগুলো একসাথে ঝেঁকে ওঠে, ঘুম ভেঙে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

ঘুম যখন গাঢ় হতে শুরু করে, তখন শ্বসন হার ধীরে ধীরে কমতে থাকে, পাল্‌স হ্রাস পায় সামান্য। মাংসপেশী রিল্যাক্স হতে শুরু করে, যেহেতু আরাম করেই শুয়েছি বিছানায়। তখন আমাদের মস্তিষ্ক ধরে নেয়, আমরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছি। তাই মস্তিষ্ক পুরো শরীরে একটি ঝাঁকুনি সৃষ্টি করার মাধ্যমে আমাদের আবার জাগিয়ে তোলে। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ঘটনা, তা-ও কতটা স্বাভাবিক মনে হয় আমাদের।

কুঁচকানো ত্বক

Source: ruangpendar.wordpress.com

পানির সংস্পর্শে অনেক সময় ধরে অবস্থানকালে হাতের ত্বক এমনভাবে কুঁচকে উঠে। পায়েও এমনটা দেখা যায়, তবে হাতের ত্বকে অনেক স্পষ্ট হয়। এভাবে কুঁচকে যাওয়াটা ত্বকের সুরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া।

এভাবে কুঁচকে গিয়ে হাতের ত্বক কোনো ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে। সান্দ্রতা ধর্মের কারণে তরল পদার্থ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। আমাদের মস্তিষ্ক যখনই বুঝতে পারে তরলের উপস্থিতি অর্থাৎ অধিক পিচ্ছিলতা, ত্বককে কুঁচকে ফেলে। কুঁচকে যাওয়া হাত দিয়ে আমরা তখন বেশ ভালোভাবে কোনো কিছু ধরতে পারি। যদি কুঁচকে না যেতো, হয়তো আমরা পা পিছলে পড়ে যাচ্ছি, কোনো কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাওয়াটা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তির একটি, কিন্তু হাত পিচ্ছিল হয়ে থাকার কারণে আকঁড়ে ধরেও রাখতে পারব না। সবশেষে বিশাল এক দুর্ঘটনা ঘটবে। এর থেকে বাঁচতেই আমাদের হাতের ত্বক কুঁচকে যায়।

স্মৃতিভ্রম

Source: brighamandwomens.org

আনন্দ-দুঃখ, পছন্দ-অপছন্দ সবকিছু মিলিয়েই আমাদের ছোট্ট এক জীবন। মানুষ হিসেবে আমরা আনন্দ আর পছন্দের জিনিসগুলোকে হাসিমুখে গ্রহণ করতে জানি। কিন্তু দুঃখ কিংবা অপছন্দের কোনোকিছু কখনোই মেনে নিতে পারি না। এগুলোও যে ছোট্ট জীবনের অংশ, তা মানতে রাজি নই আমরা। মানব মস্তিষ্ক জন্মগতভাবে অনেক স্মার্ট হওয়াতে আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার অনেক মূল্য দেয়। আমাদের স্মৃতিতে যদি কখনো এমন কিছু ঢুকে পড়ে, যা আমাদের প্রতিনিয়ত কষ্ট দিচ্ছে, মনে করিয়ে দিয়ে বারবার বিক্ষিপ্ত করে তুলছে দৈনন্দিন জীবন। তখনই মস্তিষ্ক এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। কিছু স্মৃতি আপন দায়িত্বে নির্ভুলভাবে মুছে ফেলে। মানসিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, অপ্রিয় স্মৃতি মুছে দিয়ে মস্তিষ্ক আমাদের একরকম রক্ষা করে চলেছে।

ত্বকের পশম দাঁড়িয়ে যাওয়া

Source: flickr.com

মানুষের ত্বকে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্রপথ থাকে। প্রতিটি ছিদ্রপথ হতে একটি করে পশম বেরিয়ে আসে, আকারে অতিকায় ক্ষুদ্র। পরিপার্শ্বের তুলনায় দেহের তাপমাত্রা যদি বেশি হয়, তাহলে ত্বকীয় এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রপথগুলো প্রসারিত হয়ে, অতি অল্প অল্প করে তাপের উদগিরণ করতে শুরু করে। এ অবস্থাকেই আমরা বলে থাকি, ‘গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠা’ কিংবা ‘পশম দাঁড়িয়ে যাওয়া’। একসময় পরিপার্শ্বের সাথে দেহ যখন তাপীয় সমতায় চলে আসে, তখন ত্বক স্বাভাবিক হয়ে আসে।

অশ্রু

Source: dnpmag.com

যাবতীয় জীবাণু, ধুলো-ময়লা থেকে অক্ষিগোলককে রক্ষা করতে চোখের সব থেকে বাইরে একটি পর্দা থাকে, যাকে বলা হয় কনজাংটিভা। এর নিচে লেন্সের পেছনেই সামান্য পরিসরে অবস্থান করে আছে আমাদের চিরচেনা অশ্রু। যদিও দুঃখে-কষ্টে (অনেক সময় অধিক আনন্দে) কান্না আসে, এই অশ্রু আমাদের চোখে জীবাণু প্রবেশের সময় এক দুর্গম প্রতিরক্ষকের ভূমিকায় অবস্থান করে। অশ্রুতে থাকে লাইসোজোম (লালাতেও থাকে), যা সকল জীবাণুর বিরুদ্ধে হন্তারকরূপে ভূমিকা পালন করে থাকে।

তথ্যসূত্র: Gazi S. M. Ajmol, Dr. Gazi S. M. Asmot (2015). Biology-Second Paper(XI-XII). Issue 2. p. 177, 225-229

ফিচার ইমেজ- youtube.com

Related Articles