Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বিশ্বের কিছু মসজিদ

মিনার, গম্বুজ ও নানান নকশার ভিত্তিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে নান্দনিক সব মসজিদের। এসব মসজিদের কয়েকটি আবার দাঁড়িয়ে আছে বহু পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদগুলো নিয়েই তবে কথা হয়ে যাক আজকে।

১। গ্রেট মস্ক অব সামারা, ইরাক

ইরাকের উত্তর দিকের একটি নগরের নাম সামারা। বাগদাদ থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে তাইগ্রিস নদীর পাড়ে সামারার অবস্থান। আর এই সামারাতেই রয়েছে এক সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম মসজিদ ‘গ্রেট মস্ক অব সামারা’। এই মসজিদটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো ৮৪৮ সালে এবং পরে ৮৫১ সালে গিয়ে শেষ হয়েছিলো এর নির্মাণ কাজ। এর বিশেষত্ব হলো শামুকের মতো দেখতে মিনার, যার নাম ‘মালাউইয়া’। সর্পিল পথের ৫২ মিটার উঁচু এই মিনারটি প্রস্থে ৩৩ মিটার। নবম শতকে আব্বাসীয় খলিফা আল-মুতাওয়াককিল (৮৪৭-৮৬১)  নির্মাণ করে এই ‘গ্রেট মস্ক অব সামারা’। ২০০২ সাল থেকে মার্কিন সেনারা ইরাকে আগ্রাসন চালানো শুরু করলে এক সময় সামারাও চলে আসে তাদের দখলে এবং আশেপাশের অঞ্চল পর্যবেক্ষণের জন্য তারা এই মসজিদের মিনারেই অবস্থান করত। পরে বোমার আঘাতে, ২০০৫ সালের ১ এপ্রিল মালাউইয়া মিনার ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

শামুকের মতো দেখতে মিনার, ‘মালাউইয়া’, Image source: Reddit

২। দিয়ানেট সেন্টার মস্ক, ম্যারিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র

২০১৬ সালে উদ্বোধন হওয়া এই মসজিদটি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে অবস্থিত। ৬৪ হাজার ৬০ বর্গফুটের এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী অটোম্যান স্থাপত্যশিল্পের ভিত্তিতে। মূলত এই মসজিদটি একটি কমপ্লেক্সে যার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করছে তুরস্কের ধর্মবিষয়ক কর্তৃপক্ষ। এখানকার সবকিছুই বানানো হয়েছে তুর্কি স্টাইল অনুসরণে। দুটি মিনার দিয়ে বানানো হয়েছে এই মসজিদের কমপ্লেক্সটি। ৯,৪৬১টি বর্গফুটের এই মসজিদে একই সঙ্গে নামাজ পড়তে পারবে কয়েক হাজার মানুষ।

অটোম্যান স্থাপত্যশিল্পের ছাপ রয়েছে এই মসজিদে, Image source: The New Turkey

৩। শেখ জায়েদ মসজিদ, আবু ধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবু ধাবিতে অবস্থিত এই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে আরব আমিরাত এর প্রয়াত রাষ্ট্র প্রধান শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাইয়ানের নামানুসারে। মসজিদের ভেতর আছে পৃথিবীর বৃহত্তম ঝাড়বাতি, গালিচা ও মার্বেল মোজাইক। মসজিদের চার কোণে ফুলের নকশা করা চারটি মিনারে রয়েছে এবং এগুলোর উচ্চতা ৩৫১ ফুট। এছাড়াও ছোট-বড় সব মিলিয়ে রয়েছে সাত আকারের ৮২টি গম্বুজ। মসজিদটির আঙিনায় মার্বেল মোজাইকটি ১৭ হাজার বর্গমিটার। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়তনের মার্বেল মোজাইক। এখানে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ নামাজ পড়তে পারে। জুম্মাবার ও ঈদের সময় সর্বমোট দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ নামাজ এখানে আদায় করেন।

শেখ জায়েদ মসজিদ; Source: thenational.ae

৪। উমাইয়া মসজিদ, দামেস্ক, সিরিয়া

সিরিয়ার প্রথম ও পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদগুলোর মধ্যে একটি হলো এই উমাইয়া মসজিদ। ৬৩৪ সালে জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট খ্রিষ্টানদের ক্যাথেড্রাল এই গির্জাটি উৎসর্গ করে দেয়। পরে ৭১৫ খ্রিষ্টাব্দে এখানে উমাইয়া মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ইসলামিক ইতিহাসে এটি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রথম স্মৃতিস্মারক। শুধু তা-ই নয়, ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর খাতায়ও নাম লিখিয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদটি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সিরিয়ায় অনবরত চলতে থাকা গৃহযুদ্ধের শিকার হয়ে এর বেশ খানিকটা সৌন্দর্যই হারিয়ে গিয়েছে। এই মসজিদে মোট তিনটি মিনার রয়েছে। আর এর সবচেয়ে বড় গম্বুজটির নাম হলো ‘ডোম অব ঈগল’। ২০০১ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল উমাইয়া মসজিদ দর্শনে আসেন জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট এর সাথে জড়িত ধ্বংসাবশেষ দেখতে। ইতিহাসে তিনিই একজন পোপ হিসেবে প্রথম কোনো মসজিদ দর্শনের জন্য যান।

এই মসজিদেই প্রথম কোনো পোপ দর্শনে আসেন, Image source: EBDA

৫। সুলতান আহমেদ মস্ক, ইস্তানবুল, তুরস্ক

ওসমানী সুলতান প্রথম আহমদের নির্মাণ করা এই মসজিদটি ‘ব্লু মস্ক’ নামেও পরিচিত। মসজিদের ভেতরের পুরো দেয়াল নীল টাইলস দিয়ে ঘেরা বলেই ইউরোপীয়দের কাছে এই মসজিদ ‘ব্লু মস্ক’ নামে পরিচিত। ১৬০৯-১৬১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি করা এই মসজিদটি অটোম্যান সাম্রাজ্যের স্থাপত্যশিল্পের একটি অনন্য প্রতীক। আটটি গম্বুজ ও ছয়টি মিনারের এই মসজিদটি একটি কমপ্লেক্স, যেখানে সুলতান আহমেদের মাজার, মাদ্রাসা ও একটি সরাইখানা রয়েছে। স্থপতি সেফেদকার মেহমেদ আগার তৈরি করা এই মসজিদটিতে খ্রিষ্টান স্থাপত্যশিল্পেরও কিছুটা নমুনা দেখা যায়। এই মসজিদের একটি বিশেষত্ব হলো যে, ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে পোশাক নিয়ে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। তাই মসজিদে ঢুকতে হলে আপনাকে পুরোদস্তুর ইসলামিক পোশাক পরে নিতে হবে।

ইউরোপীয়দের কাছে এই মসজিদ ‘ব্লু মস্ক’ নামে পরিচিত, Image source: Wallpaperstock.net

৬। মসজিদ-ই জামেহ, ইসফাহান, ইরান

৭৭১ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি করা এই মসজিদটি গম্বুজ দিয়ে বানানো ইরানের প্রথম মসজিদ। জুম্মাবারের নামাজ আদায় করার জন্য বানানো হয়েছিলো এটি। ৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে খলিফা আল মোতাযাম-ই আব্বাসী মসজিদটি ভেঙে পুনরায় একই জায়গায় কেবলামুখী করে মসজিদটি আবার নির্মাণ করেন। নানান সময়ে ও নানান ঢঙে এই মসজিদটির পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সাথে জড়িয়ে আছে ইরানের বিভিন্ন শাসক ও স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাস। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ইটের তৈরি দুটি মিনারের জন্য মসজিদটি বেশ জনপ্রিয়। উত্তরের গম্বুজটি ‘তাজ আল-মূলক’ ও দক্ষিণের গম্বুজটি ‘নিজাম আল-মূলক’ নামে পরিচিত। দুটি গম্বুজ তৈরি করেছেন ভিন্ন দুজন মানুষ, যাদের নামেই নামকরণ করা হয়েছে গম্বুজ দুটি।

ইরানের বিভিন্ন শাসক ও স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাস এই মসজিদ, Image source: Scoop Empire

৭। লা মেজকিতা, কর্ডোভা, স্পেন

ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত এই মসজিদটি এতটাই সুন্দর ও এর ইসলামিক ঐতিহ্য এতটাই সমৃদ্ধ যে, মহাকবি ইকবাল মুগ্ধ হয়ে মসজিদটি নিয়ে সাতটি কবিতা লিখেছেন। ৭৮৪-৭৮৬ সালে নির্মিত এই মসজিদটি তৈরির প্রায় পাঁচশত বছর পর এখানে মুসলিমরা নামাজ আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলো। মসজিদটি দ্য মস্ক ‘ক্যাথিড্রাল অব কর্ডোভা’ নামেও পরিচিত। কারণ রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার আমলে মুসলমানদের পরাজয় করে স্পেন দখল করার পর মসজিদটিকে গির্জায় রূপান্তরিত করা হয়। যদিও সবাই এই স্থাপত্যশিল্পটিকে এখনও মসজিদ হিসেবেই গণনা করে।

মসজিদটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মহাকবি ইকবাল সাতটি কবিতা লিখেছেন, Image source: Free Tour Cordoba

৮। আকসানকুর মসজিদ, কায়রো, মিশর

পুরাতন কায়রো শহর হলো বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক মাজার দিয়ে ঘেরা মধ্যযুগের তৈরি সব মসজিদের এক জাদুশহর। আর এই মসজিদগুলোর মধ্যে সবচাইতে সুন্দর মসজিদটি হলো আকসানকুর মসজিদ। ১৩৪৭ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিলো মামলুক সুলতান আল মোজাফফর হাজীর আমলে শামস আদ্‌-দ্বীন আকসানকুরের নেতৃত্বে। এই মসজিদটিকে ‘ব্লু মস্ক অব কায়রো’ এবং ‘দ্য মস্ক অব ইব্রাহিম আগা’ও বলা হয়ে থাকে। মসজিদটি সমাধিস্থল হিসেবেও কাজ করে। মসজিদে ঢোকার প্রবেশপথ তিনটি এবং এর ছাদ কাঠের তৈরি। বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত মসজিদের মিনারটি চারতলা পর্যন্ত ছিলো। পরে যখন মসজিদটি পুনরায় ঠিকঠাক করা হয়, তখন একটি তলা ভেঙে চারতলার মিনার করে ফেলা হয়।

মসজিদটিকে ‘ব্লু মস্ক অব কায়রো’ও বলা হয়, Image source: Aga Khan Development Network

৯।  জামে হাসানাল বলখিয়া মসজিদ, ব্রুনাই  

১৯৯৪ সালে তৈরি করা এই মসজিদটির নামকরণ করা হয় সুলতান হাসানাল বলখিয়া মু’জাদিন ওয়াদ্দুলাহ এর নামে। মসজিদটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সুলতানের জন্মদিনের ঠিক আগের রাতে। সে বছর সুলতানের সিংহাসন আরোহণের ২৫ বছর সম্পন্ন হয়েছিলো। এই উপলক্ষেই সুলতান ব্রুনাই এর বাসিন্দাদের এই মসজিদটি উপহার দেন। বিশাল আয়তনের এই মসজিদে একসাথে ত্রিশ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।

ব্রুনাই এর বাসিন্দাদের উপহার হিসেবে এই মসজিদটি দেন সুলতান, Image source: Vagabondwithfamily-WordPress.com

মসজিদগুলো যে শুধু দেখতেই সুন্দর তা-ই নয়, বরং বহু পুরানো সব ইতিহাস ও স্থাপত্যশিল্পের সাক্ষী হিসেবেও সমৃদ্ধ। এখানে এরকম কয়েকটি মাত্র মসজিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সারা বিশ্বে এরকম আরও অনেক মসজিদই রয়েছে।

Related Articles