Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ৫টি বইয়ের দোকান

একজন বইপ্রেমীর কাছে বইয়ের দোকান অনেক প্রিয় একটি জায়গা। নিত্যনতুন বইয়ের খোঁজে প্রায়ই আমাদের যেতে হয় বইয়ের দোকানে। বইয়ের দোকান মানেই তাক ভর্তি সারি সারি রং-বেরঙের বই। নানা লেখকের নানা ধরনের বই। আমাদের দেশের বেশিরভাগ বইয়ের দোকান মোটামুটি একই রকমের। বেশিরভাগ দোকানেই নেই বই পড়ার সুযোগ। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন অনেক বইয়ের দোকান আছে যেখানে গেলে আপনার মন ভরে যাবে। বৈচিত্র্যময় এসব দোকানে বই কেনার পাশাপাশি আপনি বই পড়তেও পারবেন অবসর সময়ে। এসব দোকানের সৌন্দর্য আপনাকে করবে মুগ্ধ। চলুন জেনে নেই বিশ্বের নানা দেশে অবস্থিত এমনই সুন্দর ৫টি বইয়ের দোকান সম্পর্কে।

১. লিভারেরিয়া লেল্লো, পর্তুগাল

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বইয়ের দোকানগুলোর কথা বলতে গেলে সবার আগে আসে পর্তুগালের পোর্তো শহরে অবস্থিত ‘লিভারেরিয়া লেল্লো’র কথা। অনন্য সুন্দর এই বইয়ের দোকানটিতে প্রবেশ করলে আপনার মনে হবে কোনো এক জাদুর মায়া রাজ্যে প্রবেশ করেছেন আপনি। সুন্দর নকশাকৃত কাঁচের রঙিন জানালা এবং কাঠের তৈরি প্যাঁচানো সিঁড়ির জন্য বিখ্যাত এই বইয়ের দোকানটি।

অনন্য সুন্দর প্যাঁচানো সিড়ি রয়েছে এই বইয়ের দোকানে; Source: dinheirovivo.pt

বিখ্যাত লেখিকা জে. কে. রাওলিং তার বিশ্ব বিখ্যাত হ্যারি পটার সিরিজের বইগুলো লেখার সময় অবস্থান করেছিলেন পর্তুগালের এই শহরে। ফলে ধারণা করা হয় হ্যারি পটার সিরিজের লেখায় জাদুর স্কুল ‘হগওয়ার্টে’র চিত্রায়ণ লেখিকা এই বইয়ের দোকান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই করেছিলেন। পরবর্তীতে হ্যারি পটার সিরিজের মুভিগুলো তৈরি করার সময় মুভির অনেক দৃশ্য ধারণ করা হয় এই বইয়ের দোকানে। জাভিয়ার স্টিভেস ১৯০৬ সালে নিও-গথিক ধাঁচের এই ভবনটি তৈরি করেন। পর্তুগালের সবচেয়ে পুরানো বইয়ের দোকান এটি।

লিভারেরিয়া লেল্লোর ভিতরের ছবি; Source: dinheirovivo.pt

কাঠের নকশা খোদাইকৃত এই বইয়ের দোকানটিতে রয়েছে এক লাখেরও বেশি বই। বইয়ের দোকানের পাশাপাশি এখানে রয়েছে একটি ছোট্ট কফিশপ। প্রিয় বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে এক চুমুক কফি আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক রাজ্যে!

২. আটলান্টিস বুকস, গ্রীস

মাথার উপরে নীল আকাশ আর দূরে নীল সমুদ্র। এর মাঝে দুধের মতো ধবধবে সাদা এক বাড়ির ছাদে প্রিয় বই হাতে আপনি। ভাবুন তো একবার! হ্যাঁ, গ্রীসের সান্তোরিনি দ্বীপে অবস্থিত আটলান্টিস বুকস নামের এই বইয়ের দোকানটি যেন এক টুকরো স্বর্গ!

দূরে সমুদ্র, উপরে নীল আকাশ! Source: vanityfair.com

২০০২ সালে দুই বন্ধু বেড়াতে আসেন গ্রীসের সান্তোরিনি দ্বীপের ছোট্ট একটি গ্রাম ‘ওহিয়া’তে। দ্বীপের অনিন্দ্য সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন তারা, ভাবেন এমন সুন্দর জায়গায় আরাম করে প্রিয় বইটি পড়তে পারলে চমৎকার হতো! কিন্তু দুঃখের বিষয়, তখন এই ছোট্ট গ্রামটিতে ছিলো না কোনো বইয়ের দোকান। ফলে দুই বন্ধু মিলে ঠিক করেন তারা নিজেরাই এখানে একটি বইয়ের দোকান খুলবেন। শুধু পরিকল্পনা করেই বসে থাকেননি তারা। ঠিক দুই বছর পর ২০০৪ সালে কয়েকজন বন্ধুর সাথে তারা আবার আসেন এই গ্রামে। প্রতিষ্ঠা করেন অনন্য সুন্দর এই বইয়ের দোকানটি।

আটলান্টিস বুকসের ভিতরের ছবি; Source: goodreads.com

ঐতিহ্যবাহী সাদা রঙের একটি বাড়ির বেসমেন্টে এই বইয়ের দোকানটির অবস্থান। উপরে ছাদে রয়েছে বই পড়ার ব্যবস্থা। বাড়ির পেছনে রয়েছে এই বাড়ির বাসিন্দার থাকার জায়গা। একটি কুকুর আর বিড়ালও বাস করে এখানে।

আটলান্টিস বুকসের প্রবেশ পথ; Source: greece-is.com

নামীদামী বহু বই রয়েছে এই বইয়ের দোকানটিতে। দোকানের সাদা দেয়ালে দেয়ালে লেখা আছে নানা অর্থপূর্ণ কথা। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই দোকানটি হয়ে উঠেছে এলাকার জন সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশ। প্রতিনিয়ত নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এখানে।

৩. বার্ট’স বুকস্টোর, ক্যালিফোর্নিয়া

নিজের বিশাল বইয়ের সংগ্রহ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৬৪ সালে রিচার্ড বার্টিন্সডেল নামের এক ভদ্রলোক ক্যালিফোর্নিয়ার এক রাস্তার ধারে খুলে বসেন বইয়ের দোকান। সেই বইয়ের দোকানটিই আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় আউটডোর বইয়ের দোকানে পরিণত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘ওজাই‘ এ অবস্থিত এই বইয়ের দোকানটি।

বার্ট’স বুকশপ খোলা থাকে সপ্তাহের ৭ দিনই; Source: thefrenchfury.com

এই বইয়ের দোকানটিতে রয়েছে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত পরিবেশে বই পড়ার সুযোগ। রাস্তার পাশেই অবস্থিত এই বইয়ের দোকানটি থেকে আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের বই। পড়তে পারেন পাশের সবুজ প্রাঙ্গণের কোনো আপেল গাছের নিচে বসে। হ্যাঁ, এমনই খোলামেলা আর প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে এই বইয়ের দোকানটি।

খোলামেলা পরিবেশে বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে; Source: bondstreet.com

দিন-রাত প্রায় ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে এই দোকানটি। সন্ধ্যার পর দোকানে দোকানী না থাকলেও পাঠকরা নির্দিষ্ট স্থানে রাখা বাক্সে বইয়ের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী টাকা ফেলে কিনতে পারেন বই। নানা লেখকের নানা ধরনের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে এখানে। দেশ-বিদেশের নানা পর্যটক এখানে আসেন এই সুন্দর বইয়ের দোকানটি দেখতে।

৪. শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোং, প্যারিস

বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের দোকান শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানি অবস্থিত প্যারিসে। নটরডেম গির্জা থেকে এক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে স্যান নদীর তীরে এর অবস্থান। শিল্প সাহিত্য আর সংস্কৃতির লীলাভূমি প্যারিসে অবস্থিত এই বইয়ের দোকানটির সাথে জড়িয়ে আছে অনেক বিখ্যাত মানুষের নাম। জেমস জয়েস, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে সহ ইংরেজি সাহিত্যের অনেক বিখ্যাত সব লেখকরা এখানে একসময় আসতেন আড্ডা দিতে। জর্জ হুইটম্যান নামক এক আমেরিকান ভদ্রলোক প্রতিষ্ঠা করেন এই বইয়ের দোকানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খুব দ্রুত বইয়ের দোকান থেকে বিনামূল্যে বই ধার দেবার ও কফি পানের জনপ্রিয় আসর হয়ে উঠে এটি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখানে আসতে থাকেন নানা তরুণ লেখকেরা। এদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে সাহিত্যে পান নোবেল পুরষ্কার।

বহু বিখ্যাত লেখকের সমাগম ঘটতো এখানে; Source: europeantrips.org

সারি সারি আলমারি ঠাসা বইয়ের সমাহার এই দোকানে প্রবেশ করলেই আপনি চলে যাবেন পুরনো বইয়ের দোকানটিতে, যেখানে নামি দামি সব লেখকেরা একসময় আসর জমাতেন। নিত্যনতুন সকল বই থেকে শুরু করে বহু পুরানো বইও পাওয়া যায় এখানে।

বইয়ে ঠাসা এই বইয়ের দোকানে রয়েছে পুরনো এক আমেজ; Source: theweekendedition.com.au

মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বইয়ে ঠাসা এই বইয়ের দোকানটিতে প্রতিদিন ভিড় করে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা। নতুন-পুরাতন বই বিক্রি সহ পাঠকদের জন্য বই পড়ারও সুব্যবস্থা রয়েছে এখানে। জর্জ হুইটম্যানের মৃত্যুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত তার মেয়েরা এই বইয়ের দোকানের রক্ষণাবেক্ষণ করেন।

৫. দ্য বুক ওয়ার্ম, বেইজিং

আজকের সর্বশেষ বইয়ের দোকানটির অবস্থান চীনের বেইজিংয়ে। দ্য বুক ওয়ার্ম নামের দৃষ্টিনন্দন ও অনন্য সুন্দর এই বইয়ের দোকানটিতে রয়েছে ষোল হাজারেও বেশি বই। চমৎকার আভ্যন্তরীণ কারুকার্যময় এই বইয়ের দোকানটির সাথেই রয়েছে একটি ছোট্ট রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে।

দৃষ্টিনন্দন এই বইয়ের দোকানটি হয়ে উঠেছে স্থানীয় শিল্প সংস্কৃতির একটি অংশ; Source: mensjournal.com

নতুন-পুরাতন বই কেনাবেচার পাশাপাশি নানারকম অনুষ্ঠানও হয় এখানে। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, কোনো নতুন সিনেমার প্রথম শো, বিভিন্ন সাহিত্যানুষ্ঠান প্রভৃতি লেগে থাকে এখানে।জনপ্রিয় এই বইয়ের দোকানটিতে তাই স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি ভিড় জমান দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্থানীয় সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই বইয়ের দোকানটি। চীনের অন্যান্য বইয়ের দোকানের মাঝে ইংরেজি সাহিত্য ও আন্তর্জাতিক সকল বইয়ের প্রাচুর্যের জন্য এটি হয়ে উঠেছে চীনের অন্যতম বিখ্যাত একটি বইয়ের দোকান।

ফিচার ইমেজ- dinheirovivo.pt

Related Articles