Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঘুরে আসুন ভৌতিক দ্বীপগুলো থেকে

দ্বীপ  শব্দটি শুনলেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে শহরের যান্ত্রিকতার বাইরে সমুদ্রের মাঝে এক টুকরো স্থলভাগে বেশ কিছু নারকেল গাছ, বালুচর আর বুকভরা প্রশান্তি। কিন্তু সবক্ষেত্রেই কি তেমনটি সম্ভব? এমন কিছু দ্বীপ রয়েছে যেগুলোতে শুধু সৌন্দর্য উপভোগ করেই পার পাবেন না, আপনার জন্য রয়েছে ভীতিকর কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাও।

চলুন জেনে নেয়া যাক তেমনই তিনটি দ্বীপ সম্পর্কে।

আলক্যাট্রাজ দ্বীপ

সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় প্রত্যেক দেশেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার হবে, সেটিই স্বাভাবিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিস্কো শহরের নিকটে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে ছিল সেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত কয়েদখানাগুলো। বলা হয়, সেগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে কুখ্যাত কয়েদখানা। এই কয়েদখানার নাম ছিল ‘দ্য রক’।

আলক্যাট্রাজ দ্বীপ; source: alcatrazcruises.com

১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বিংশ শতাব্দীর যেসব কুখ্যাত অপরাধীদের ধরা হয়েছিল, তাদেরকেই রাখা হতো এই কয়েদখানাগুলোতে। মেশিন গান কেলি, আল কাপোনে এবং ডক বেকারের মতো কুখ্যাত ব্যক্তিরাও এই বর্বরোচিত কয়েদখানায় বন্দি ছিল। শাস্তির মাত্রা এবং অন্যান্য ব্যবস্থা এতটাই অমানবিক ছিল যে জেল পলায়নের চেষ্টা করেছে অনেকে। পরবর্তীতে সেখানে খরচ বেড়ে যাওয়ায় কয়েদখানার স্থান পরিবর্তন করা হয়।

১৯৭২ সাল থেকে এই দ্বীপটিকে সরকারিভাবে সাধারণ জনগণের আমোদ-প্রমোদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যার শুরু সে সময় থেকেই। ওখানকার সিকিউরিটি গার্ড, অন্যান্য কর্মচারী এবং পরিদর্শনে আসা দর্শকগণও নানা অস্বাভাবিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। কয়েদখানার ভেতর থেকে গোঙানির আওয়াজ বা ঝনঝন শব্দ শুনতে পান অনেকেই, কিন্তু শব্দের উৎস খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার অনেকেই বলেন তারা আল-কাপোনের প্রেতাত্মাকে দেখেছেন। আল-কাপোনের মৃত্যু হয়েছিল এই কয়েদখানাতেই। কয়েদিদের জন্য বিনোদনের যে সময়টুকু দেয়া হতো সেই সময়ে কাপোনে নাকি গোসলখানায় বসে তার বাঞ্জো বাজাতো।

গোধুলি লগ্নে আলক্যাট্রাজ দ্বীপের সেই কয়েদখানা; source: wikimedia commons

এই ভূত দেখার কথা আরও আগে থেকে শোনা যায়, সেই কয়েদখানা থাকার সময় থেকেই। প্রচলিত একটি গল্প অনেকটা এমন। একজন বন্দী একবার সবুজচোখা দানব তাকে মারতে চাইছে দেখে ভয়ে আর্তনাদ করেছিল সারারাত। পরদিন সকালে তার মৃতদেহ পড়েছিল। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিল কেউ। এরপর থেকে কয়েদি গোনার সময় একজন অতিরিক্ত কয়েদি পাওয়া যেত, কিন্তু গণনা শেষ হবার সাথে সাথেই নাকি একজন হাওয়ায় মিলিয়ে যেত!

আলক্যাট্রাজ দ্বীপের সেই কুখ্যাত কয়েদখানার প্রবেশ ফটকের ফলক; source: wikimedia commons

এমনই ভীতিকর এই দ্বীপে চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। শুনে আসতে পারেন সেই কয়েদিদের অসহায় আর্তনাদ।

হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ

ছুটির দিনগুলোতে কিছুটা আরামদায়ক পরিবেশের খোঁজে অনেকেই যান সাগরপাড়ে, কোনো রেস্টুরেন্টে, নাহলে কোনো আমোদ-প্রমোদের স্থানে। কিন্তু ভূত দেখতে যাবার কথা নিশ্চয়ই স্বাভাবিকভাবে কারও মাথাতেই আসবে না। সেই ভাবনা না থাকলেও অনেকেই ছুটি কাটাতে, সৌন্দর্যে অভিভূত হতে চলে যান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে, যেটি পৃথিবীর অন্যতম একটি ভৌতিক দ্বীপ।

প্রাচীন হাওয়াইয়ানদের কাছে ধর্ম অবমাননা ছিল মারাত্মক অপরাধ। এর শাস্তিও ছিল ভয়াবহ। মাঝে মাঝে ধর্ম অবমাননাকারীদেরকে পশুর মতো অত্যাচার করা হতো। তবে তাদের মুক্তির পথ ছিল একটিই- অত্যাচার করতে করতে মেরে ফেলবার আগে যদি দৌড়াতে দৌড়াতে মন্দিরে পৌঁছে চিৎকার করে তাদের পাপকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। বেশিরভাগ ব্যক্তিই পৌঁছাতে পারতো না এবং মারা যেতো। সেই সময়ের বড় একটি মন্দির এখনো রয়েছে হোনাউনাউ ন্যাশনাল পার্কে। অনেকে বলে থাকেন, সে সময় মৃত্যুবরণকারী অনেক ব্যক্তির প্রেতাত্মাকে এখনো দেখা যায় মন্দিরের দিকে ছুটে যেতে, শোনা যায় তাদের গগনবিদারী আর্তনাদ।

হোনাউনাউ ন্যাশনাল পার্কেই সেই মন্দির; soure: tripsavy.com

হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ওয়াইনে নামক জায়গায় ‘কায়েনা পয়েন্ট’ নামক একটি স্পট রয়েছে। এই স্পটটিকে বলা হয় ‘স্বর্গ এবং নরকের মেলবন্ধন’, অর্থাৎ স্বর্গ এবং নরক এই স্থানে একত্রিত হয়। প্রাচীন হাওয়াইয়ান ধর্মে উল্লেখ রয়েছে, এই স্থানে নাকি ঈশ্বরের বাড়ি, সকল দেব-দেবীর আবাসস্থল। অনেকেই এই স্থানে অশরীরীর কন্ঠে অদ্ভুত সব ভাষায় গুণগুনানি শুনতে পেয়েছেন।

কায়েনা পয়েন্ট, প্রাচীন হাওয়াইয়ানদের বিশ্বাস ছিল- এখানে ঈশ্বরের আবাস; source: explorationhawaii.com

সেগুইন দ্বীপ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাইনে প্রদেশে কেন্নেবেক নদীর মুখেই অবস্থিত এই সেগুইন দ্বীপ। এই দ্বীপে রয়েছে ১৮৫৭ সালে তৈরি একটি বিশাল বাতিঘর, যেটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বাতিঘর। বর্তমান গঠনটি ১৮৫৭ সালে করা হলে এই বাতিঘর প্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল ১৭৯৫ সালে। এই বাতিঘরটি জাহাজের নাবিকদের দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা মাইনে উপকূলের শিলাময় পানি জাহাজের জন্য বিপজ্জনক। এই বাতিঘরের দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের সাথে বিভিন্ন সময় ঘটে গিয়েছে নানা অস্বাভাবিক ঘটনা।

সেগুইন দ্বীপ; source: sceneusa.com

বাতিঘর তৈরির পর শুরুর দিকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা একজন এই নিঝুম দ্বীপে তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন অনেক বছর ধরেই। একাকিত্বের কারণে একসময় লোকটির স্ত্রী গভীর বিষণ্ণতার রোগী হয়ে পড়েন। স্ত্রীর মানসিক প্রশান্তি প্রদানের উদ্দেশ্যেই লোকটি প্রধান শহর থেকে জাহাজে করে একটি পিয়ানো এনে দেন। ভেবেছিলেন, সবকিছু বুঝি আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু আশানুরূপ কিছুই হয়নি।

তার স্ত্রী প্রতিদিন পিয়ানো বাজানো শুরু করেন এবং একটি সুর তুলতে সক্ষম হন। এরপর থেকে তিনি সর্বক্ষণ সেই বাজনা বাজাতে থাকেন। তার স্বামী তাকে বলেন, পিয়ানোর নতুন সুরের খাতা এনে দেবেন তার জন্য। কিন্তু মহিলা কিছুতে রাজি হন না। এভাবে চলতে থাকে তার একই সুরের পিয়ানো বাজানো। একই বাজনা শুনতে শুনতে একসময় সেই লোকটি উন্মাদ হয়ে পড়েন। একদিন লোকটি একটি কুঠার দিয়ে কুপিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করে ফেলে। শুধু তা-ই নয়, এরপর সে কুঠার দিয়ে কুপিয়ে নিজেকেও শেষ করে ফেলে। এরপর থেকে যারা গিয়েছেন এই সেগুইন দ্বীপে, তারাই শুনেছে পিয়ানোর হালকা সুর। কিন্তু কোথাও সেই পিয়ানো কিন্তু আর নেই। অনেকে আবার এক লোককে কুঠার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখেছে!

বাতিঘরে ভ্রমণরত দর্শনার্থীদের একাংশ; source: tripadvisor.com

সেগুইন দ্বীপের ভয়ের কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। রয়েছে আরও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ঐ দ্বীপে শুধুমাত্র ঐ খুন হওয়া মহিলার প্রেতাত্মার কর্মকাণ্ড দেখা যায় তা নয়, সেখানে ঘুরতে আসা এক তরুণীও বাতিঘরে থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেছিল এবং বাতিঘরের আশেপাশের তাকে দাফন করা হয়। সেই তরুণী মেয়েটিকে এখনো বাতিঘরের আশেপাশে চলাফেরা করতে দেখা যায় বলে জনশ্রুতি আছে।

সবচেয়ে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল ১৮৮৫ সালে, যখন বাতিঘরটির অনুমোদন বাতিল করা হয়। তখন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাতিঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র নিয়ে যাবার জন্য দ্বীপটিতে আসেন। তিনি ভেবেছিলেন, রাতটা সেই দ্বীপে কাটিয়ে সকালে রওয়ানা দেবেন। কিন্তু সেই রাতেই তিনি দেখতে পান একটি তৈলাক্ত পোশাক পরিহিত লোক হিংস্রভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে তাকে বলছে, “আসবাবগুলো রেখে যাও। আমাকে একা থাকতে দাও।” অফিসার ভাবলেন, তিনি স্বপ্ন দেখছেন এবং পুরোপুরি উড়িয়ে দিলেন ব্যাপারটি। পরদিন সকালে বিশাল এক নৌকায় করে রওনা দিলেন আসবাবপত্র নিয়ে। নদীর মাঝামাঝিতে গিয়ে নৌকাটি হঠাৎ করেই ডুবে যায়।

তাহলে, বিদেশ ভ্রমণের পরবর্তী অধ্যায়ে ভৌতিক রহস্যের খোঁজে নিশ্চয়ই বের হচ্ছেন কি? হয়তো আপনিও জানতে পারবেন অনেক অজানা তথ্য!

ফিচার ইমেজ- hauntedisland.com

Related Articles