Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা কয়েকটি বিপজ্জনক সেতু

সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ নিজ প্রয়োজনেই নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু আবিষ্কারের নেশায় মগ্ন। যেখানেই বাঁধা পেয়েছে, সেখানেই খুঁজে বের করে নিয়েছে তার ভিন্ন পথ ও বাঁধা পেরুনোর উপায়। আর এমন করেই মানব জাতি পেয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। আজকের আধুনিক সভ্যতা কিন্তু একদিনে আসেনি। অনেক মেধা, শ্রম, আবিষ্কার ও তার প্রয়োগের মধ্যমেই বলিষ্ঠ রূপে গড়ে উঠেছে আজকের এই আধুনিক সভ্যতা।

সভ্যতার তেমনই একটি আবিষ্কার হলো সেতু বা ব্রিজ। আদিমকাল থেকেই মানুষ যখন ছোট ছোট নদী বা ছোট ছোট পাহাড় ডিঙানোর রাস্তা বের করার উপায় খুঁজতে শুরু করে, ঠিক তখন থেকেই সহজতর উপায় হিসেবে খুঁজে নিয়েছিল কাঠের ব্যবহার। ছোট জলস্রোত বা দুই টিলা পাহাড়ের মাঝে বিশাল কাঠ ফেলে তারা যাতায়াত শুরু করে। এমন করেই মূলত সেতুর ব্যবহার শুরু হয়। ধীরে ধীরে কাঠের সাথে জুড়ে দেওয়া হতে থাকে দড়ি। আর এভাবেই উৎপত্তি ঘটে দড়ি এবং কাঠের তৈরি সেতুর।

মানব সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে এই কাঠ আর দড়ি উপাদান ও বদলে যেতে থাকে। সেখনে এসে স্থান করে নেয় পাথরের তৈরি সেতু। তার আরও পরে আসে ইট, বালি, সিমেন্ট, রড, লোহা, কনক্রিট ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি আধুনিক ব্রিজ।

গ্রাম বংলায় ব্যবহৃত কাঠের বা বাঁশের তৈরি সাঁকো

শুনেছেন কি কখনও মাংকি নামেও ব্রিজ হয়? খেয়াল করলে দেখে থাকবেন নিশ্চয় আমাদের গ্রামাঞ্চলে বাঁশ দিয়ে তৈরি সাঁকো দেখা যায়। প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে পুকুরের উপরে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে টয়লেটে যাওয়ার রাস্তা বানানো হয়ে থাকে। ঐ সাঁকোগুলোকেই বলা হয় মাংকি ব্রিজ। বর্তমান উন্নত বিশ্বে বড় বড় সাগর-নদীকে লোকালয় বা বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর সাথে সংযুক্ত করতে যেসব ব্রিজ তৈরি হয়, সেসব প্রধানত স্টীল ও লোহার তৈরি। ১৭৭৯ সালে ইংল্যান্ডের টেলফোর্ডে সর্বপ্রথম লোহার তৈরি সবচেয়ে বড় ব্রিজটি নির্মাণ হয়। ব্রিজটি নির্মাণ করেছিলেন আব্রাহাম ডার্বি।

টেলফোর্ডে আয়রন ব্রিজ। ছবিসূত্র: beeoutdoors.co.uk

এ তো গেলো সেতুর উৎপত্তি নিয়ে অতীত। এখন আসি বর্তমানে। বেড়াতে যেতে আমরা কম বেশি সকলেই খুব পছন্দ করি। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মাঝেই কারো পছন্দ পাহাড়, কারো কারো আবার পছন্দ সমুদ্রের গর্জন। কেউবা আবার গহীন বনের মাঝেই হারিয়ে যেতে পছন্দ করে থাকেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নানা রকমফের যেমন আমাদের মন কাড়ে ঠিক, তেমনিভাবে মনুষ্যসৃষ্ট সৌন্দর্যও আমাদের কাছে টেনে নিয়ে যায়৷ মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত সৃষ্ট সৌন্দর্যের মধ্যে একটি হলো সেতু। আমরা সেইসব মানুষদের কাছে কৃতজ্ঞ যারা এই সেতু তৈরি করেছেন। তবে কিছু বিপজ্জনক সেতুও রয়েছে বৈকি। ঘুরতে যাওয়ার আগেই জেনে আসি কোথায় কোথায় আছে এমন সব বিপদজনক সেতু। বলা তো যায় না, হয়তোবা ঘুরতে গিয়ে না জেনেই আপনি উঠে গেলেন তেমন সব সেতুতে।

মুসোও সুরিবাসি ব্রিজ, জাপান

মুসোও সুরিবাসি ব্রিজ, জাপান। ছবিসূত্র: hellotravel.com

১৯৫০ সালে এই ব্রিজটি তৈরি। ব্রিজটির বর্তমানে এমন অবস্থা যে, কেউ যদি মাঝপথে পা ফসকে নদীতে পড়েও যায় তবে কারো সাধ্য নেই তাকে সাহায্য করে উদ্ধার করার। ব্রিজটি খুব নিম্নমানের দড়ি আর পাতলা কাঠের সমন্বয়ে তৈরি। যেকোনো সময় একটু অসতর্কতায় তলিয়ে যেতে পারেন যে কেউ।

মাংকি ব্রিজ, মেকং ডেলটা, ভিয়েতনাম

মাংকি ব্রিজ, মেকং ডেলটা, ভিয়েতনাম। ছবিসূত্র: english.vietnamnet.vn

এই ব্রিজটির নাম মাংকি ব্রিজ হওয়ার কারণ হলো ব্রিজটি পার হতে গেলে আপনাকে অনেকটা বানরের অবয়বের মতোই ঝুলে ঝুলে পার হতে হবে। ব্রিজটি দেখে প্রথমেই মনে হতে পারে যে, একমাত্র বানরই পারবে ব্রিজটি পার হতে। দুটি মাত্র বাঁশ আড়াআড়িভাবে দিয়ে চলার পথ আর সাথে দুটো হাতল নিয়ে ব্রিজটি তৈরি। ২০১২ সালের জুলাই মাসে টপ টেন সাইট ভিয়েতনামের এই ব্রিজটিকে বিশ্বের সেরা ১০টি বিপদজনক ব্রিজের আওতাভুক্তকরণে ভোট দেয়।

হুসাইনী ঝুলন্ত সেতু, উত্তর পাকিস্তান

হুসাইনী ঝুলন্ত সেতু, উত্তর পাকিস্তান। ছবিসূত্র: hellotravel.com

এই সেতুটি পাকিস্তানের উত্তর অংশের খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। সেতুটি খুব নিম্নমানের দড়ি ও কাঠের উপাদানে তৈরি। প্রতিকূল আবহাওয়াতে সেতুর নিচের নদীর পানির স্রোতে সেতুটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশংকা কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তামান নেগারা ন্যাশনাল পার্ক ব্রিজ, মালয়েশিয়া

তামান নেগারা ন্যাশনাল পার্ক ব্রিজ, মালয়েশিয়া; ছবিসূত্র: worldchallenge.co.nz

মালয়েশিয়ার তামান নেগারা ন্যশানাল পার্কে ৫৫০ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ৪০ মিটার উঁচুতে এই সেতুটি অবস্থিত। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০ জনেরও বেশি স্থানীয় মানুষ ও পর্যটক যাতায়াত করেন। কারণ এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাতায়াত করার জন্য এই সেতুই একমাত্র অবলম্বন।

বর্ষার সময় সেতুটির অবস্থা খুবই শোচনীয় পর্যায়ে থাকে। তবুও থেমে থাকে না লোক চলাচল। পুরো ভেজা থাকে সেতুটি, তাই ঐ সময় লোক চলাচল মারাত্মক বিপদজনক। তাছাড়া যত দিন যাচ্ছে, সেতুটির অবস্থা আরো শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।

ট্রিফট ঝুলন্ত ব্রিজ, সুইজারল্যান্ড

ট্রিফট ঝুলন্ত ব্রিজ, সুইজারল্যান্ড; ছবিসূত্র: mpora.com

১৮০ মিটার লম্বা এবং ১১০ মিটার উচ্চতায় এই সেতুটি অবস্থিত সুইজারল্যান্ডের অাল্পস অফ গার্ডেনে৷ ২০০৪ সালে এটি মূলত তৈরি করা হয় ২০০৪ সুইচ অ্যালপাইন ক্লাবের ট্রিফট হাটে যাওয়ার জন্যে। কিন্তু ব্রিজটির অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, ব্রিজটিকে আবার ২০০৯ সালে পুনসংস্কার করতে হয়েছে। সংস্কারের পর ব্রিজটি কিছুদিন ভালো ছিল, তারপর আবার সেই একই অবস্থা। ব্রিজটির নিরাপত্তা খুবই খারাপ। ব্রিজের দু’ধারে নিরাপত্তার কোনো বন্দোবস্তই নেই বললেই চলে। ব্রিজটি তৈরির পূর্বে ট্যুরিস্টরা ট্রিফট গ্লেসিয়ারে করেই ট্রিফট হাটে যেতো।

ভাইন ব্রিজ, আইয়্যা ভ্যালী, জাপান

ভাইন ব্রিজ, আইয়্যা ভ্যালী, জাপান; ছবিসূত্র: atlasobscura.com

এই ব্রিজটি অবস্থিত জাপানের আইয়্যা উপত্যকায়। শিকোকু হলো জাপানের চারটি প্রধান দ্বীপ যেখানে এই ব্রিজটি রয়েছে। কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না যে, ব্রিজটি আসলে কে বা কারা তৈরি করেছিল। এলাকাবাসীর ধারণা এই ব্রিজটি ঐশ্বরিকভাবে সৃষ্ট একটি ব্রিজ যা আইয়্যা নদীর উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। ব্রিজটি যদিও বিপদজনক, তবুও সুবিধা হলো তিন বছরে একবার ব্রিজটি মেরামত করা হয়।

অ্যাইগুইলি দু মিদি ব্রিজ, ফ্রান্স

অ্যাইগুইলি দু মিদি ব্রিজ, ফ্রান্স; ছবিসূত্র: hellotravel.com

ব্রিজটিকে ধারণ করে আছে ফ্রান্স আল্পসের দুই পর্বত। যারা দুর্বল চিত্তের অধিকারী অর্থাৎ ব্রিজে উঠতে যদি কেউ ভয় পান, তবে যেতে পারেন ব্রিজের অবজারভেশান ডেক সাইটে। সেখান থেকেই দেখে নিতে পারবেন একসাথে তিনটি দেশ- ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ইতালি। সত্যি এক মনোমুগ্ধকর কিন্তু ভয়ংকর অনুভূতি এনে দেবে এই ব্রিজটি। এটি সমুদ্র জলসীমা থেকে প্রায় ১২,৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।

ঘাসা ঝুলন্ত ব্রিজ, নেপাল

ঘাসা ঝুলন্ত ব্রিজ, নেপাল। ছবিসূত্র: hellotravel.com

ব্রিজটি নেপালের ঘাসা এলাকায় অবস্থিত একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ব্রিজের মাঝে অন্যতম৷ এটি খুবই সরু এবং ব্রিজটি তৈরির উপকরণও তেমন ভালো না বলা চলে। বিপজ্জনক জানার পরেও প্রতিদিন প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে ব্রিজটি দিয়ে৷ শুধুমাত্র মানুষই নয় পশুরাও যাতায়াত করে ব্রিজটি দিয়ে। ব্রিজটি হিমালয়ের এতটাই কাছে যে ব্রিজে উঠলে হিমালয় চোখে পড়বেই।

কিসওয়েকাকা ব্রিজ, পেরু

কিসওয়েকাকা ব্রিজ, পেরু; ছবিসূত্র: mpora.com

১১৮ ফুট লম্বা এই ঝুলন্ত ব্রিজটি অপুরিমাক নদী থেকে ২২০ ফুট উচ্চতায় ঝুলে রয়েছে। প্রতি বছর জুন মাসে এলাকাবাসীরাই এই ব্রিজটি মেরামত করে। ব্রিজটি মূলত এক রকম ঘাস বা খড় থেকে ম্যাট করা দড়ি দিয়ে প্রস্তুত যা এলাকাবাসীরাই বুননের মাধ্যমেই তৈরি করে থাকেন। ব্রিজটি যদিও দেখতেই ভয়ংকর, কিন্তু এলাকাবাসীরা মনে করেন যে এর বুনন কৌশল এতটাই মজবুত যে এটি ৫০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে।

তথ্যসূত্র

১) hellotravel.com/stories/10-most-dangerous-bridges-in-the-world

২) atlasobscura.com/places/vine-bridges-japan

৩) atlasobscura.com/places/vine-bridges-japan

৪) mpora.com/outsiders/10-of-the-worlds-scariest-bridges/10

Related Articles