Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঘুরে আসুন বিশ্বখ্যাত ৬টি বাগানবিলাস থেকে

স্কুল-কলেজে ‘আমার শখ’ নামক রচনায় এক-দুবার হলেও বাগান করা নিয়ে লেখেননি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই তা খাতার রচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এমন নজির পৃথিবীতে রয়েছে, যারা বাগান করেছেন শখের বশে, কিন্তু তা রূপ নিয়েছে সৌন্দর্যের অপরূপ দৃষ্টান্তে। মনের খোরাক মেটাতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন সেসব বাগানবিলাস থেকে।

পৃথিবীর বেশ বিখ্যাত এবং সৌন্দর্যময় ৬টি বাগানবিলাস সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক।

১) কেনরোকুয়্যেন, কানাজোয়া, জাপান

‘কেনরোকুয়্যেন’, যার অর্থ ছয়টি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বাগান, পৃথিবীর অসাধারণ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বাগানগুলোর অন্যতম। প্রায় ১১.৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ বাগানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী মায়েদা পরিবার। ১৬২০সাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১৮৪০ সাল পর্যন্ত এর প্রস্তুতির কাজ চলতে থাকে। মাতসুদাইরা সাদানবু এই বাগানের নামকরণ করেণ। একটি আদর্শ বাগানের ৬টি বৈশিষ্ট্যের সবকয়টি এর মধ্যে রয়েছে। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো প্রশস্ততা, নির্মাণকৌশল, নির্জনতা, প্রাচীনত্ব, জলপথ এবং বিস্তৃত দৃশ্য।

কেনরোকুয়্যেন বাগানে ফ্লাওয়ার ব্রিজ; Source: SnapJapan

এখানে রয়েছে ৮,৭৫০টিরও বেশি গাছ এবং প্রায় ১৮৩ প্রজাতির উদ্ভিদ। বাগানের ভেতরে ১৭৭৪ সালে নির্মিত একটি টি-হাউজ রয়েছে, যেটি এ বাগানের সবচেয়ে পুরনো বাড়ি। রয়েছে একটি রেস্ট হাউস, যেটি সংস্কারের কাজ করা হয়েছে ২০০০ সালে। আরো রয়েছে বিশাল এক কৃত্রিম পুকুর, যা ‘কাসুমিগাইকে’ নামে পরিচিত এবং যেটিকে সাগরের সাথে তুলনা করা হয়।

কেনরোকুয়্যেন বাগানের টি-হাউজ এবং ‘কাসুমিগাইকে’ পুকুর ;Source: LuxuryTravel

এই বাগানে রয়েছে জাপানিজ বাদ্যযন্ত্র ‘কোতো’-এর আকৃতির একটি পাথরের লণ্ঠন, যেটি এখন এই বাগানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রয়েছে অসাধারণ একটি পানির ফোয়ারা, যাতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রাকৃতিক পানির প্রেশার।

কেনরোকুয়্যেন বাগানের পানির ফোয়ারা; Source: TripAdvisor

জাপানী ‘কোতো’ আকৃতির পাথরের সেই লন্ঠন; Source: allabout-japan

যদি যেতে চান এই বাগানবিলাস ভ্রমণে, তাহলে জানতে হবে কিছু বিষয়। যেমন- পাম এবং চেরির প্রস্ফুটিত দৃশ্য দেখতে হলে বসন্তকাল, অন্যদিকে রঙ-বেরঙের পাতাবাহার দেখতে শরৎকাল বেছে নিন। ভিন্নমাত্রায় দেখতে চাইলে বেছে নিন শীতকালকে, কেননা শীতকালে বাগানের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তোলে ‘ইউকিতসুরি’ নামক দড়ির অভিনব ব্যবহার যা গাছপালাকে ভারি তুষারপাত থেকে রক্ষা করে। এই দৃশ্য দেখতে পাবেন প্রতি বছরের পহেলা নভেম্বর থেকে ৩১শে নভেম্বর পর্যন্ত।

কেনরোকুয়্যেন বাগানের শীতকালের দৃশ্য; Source: allaboutJapan.com

২) কেওকেনহফ, লিসে, নেদারল্যান্ড

পৃথিবীর সুবৃহৎ বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম এই কেওকেনহফ। একে ‘কিচেন গার্ডেন’ বা ‘গার্ডেন অফ ইউরোপ’ও বলা হয়ে থাকে। পঞ্চদশ শতকে শিকারী ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত সেই স্থানে বাগানবিলাসটি অবস্থিত। ১৯৪৯ সালে লিসের তখনকার মেয়র এ বাগানটির কাজ শুরু করেন। বাগান সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল নেদারল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুলচাষীরা আসবেন এবং তাদের উৎপাদিত হাইব্রিড প্রদর্শন করবেন তথা ডাচ রপ্তানি শিল্পকে সহায়তা করবেন।

কেওকেনহফ বাগানের দৃশ্য;Source: youtube.com

দক্ষিণ হল্যান্ডের এই বাগানে প্রতি বছর ৩২ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭ মিলিয়ন ফুলগাছ রোপন করা হয়। ২০১৭ সালে এ বাগান পরিভ্রমণে ১.৪ মিলিয়ন পর্যটক এসেছিলেন, যাদের ভেতরে ২০% ছিলেন ডাচ, ৪০% এসেছিলেন পার্শ্ববর্তী জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম থেকে, ১০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং ৮% চীন থেকে।

কেওকেনহফের টিউলিপ বাগান প্রদর্শন করতে পারেন নৌকায়; Source: armsterdam

আপনি যদি এখনই যেতে চান এই বাগানবিলাসটি ভ্রমণে, তাহলে অবশ্যই জানা থাকা দরকার এটি ২০১৮ সালের ২২ মার্চ থেকে খুলবে এবং ২০১৮ সালের ১৩ই মে বন্ধ হবে। আর প্রধান আকর্ষণ টিউলিপ ফুল প্রদর্শনী হবে ২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল, শনিবার। সাধারণত প্রতি বছর মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে মে’র মাঝামাঝি পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকে এটি।

কেওকেনহফে ২০১৫ সালের টিউলিপ প্রদর্শনী; Source: iarmsterdam.com

৩) নং নুছ ট্রপিক্যাল গার্ডেন, পাতায়া, থাইল্যান্ড

একটা দিন পুরোপুরি যদি কাটাতে চান বাগানবিলাসে, তাহলে বেছে নিতে পারেন ৬০০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত নং নুছ গার্ডেন। এই বাগানের সজ্জা অনেকটা থিম পার্কের মতো। এখানে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, থাকার জায়গা এবং প্রতিদিন থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। সেখানে ক্লাসিক্যাল থাই নৃত্য, প্রাচীন ড্রাম পরিবেশনা থাকে। এ বাগানে প্রজাতি অনুযায়ী গাছগুলো সাজানো রয়েছে, যেমন- ক্যাকটাসের বাগান, অর্কিডের বাগান, ট্রপিক্যাল পাম বাগান এবং বনসাই বাগান।

নং নুছ গার্ডেন; Source: pattayasanook

যদি ভ্রমণে যেতে চান এই সুন্দর বাগানটিতে, তাহলে একা একা হেঁটে হেঁটে বাগানবিলাস উপভোগ করার চেষ্টাও করবেন না। ভালো হয়, যদি একটি সাইকেল ভাড়া করে নিজের মতো করে ঘুরে বেড়ান। অবশ্যই অর্কিড বাগানটি না দেখে আসবেন না, কেননা প্রায় ৬৭০ প্রজাতির অর্কিড দেখতে পারবেন একইসাথে!

নং নুছ গার্ডেনের দৃশ্য; Source: bankok.com

বাগানটির উল্লেখযোগ্য একটি আকর্ষণ হলো ‘স্কাই-ওয়াক’। এটি ১.১ কিলোমিটারের একটি ছায়াময় উঁচু হাঁটার পথ, যেটি দিয়ে আপনি বনসাই বাগান, ইউরোপিয়ান বাগান, ট্রপিক্যাল পাম বাগান, বাটারফ্লাই হিল এবং স্টোনহেঞ্জ পাহাড়ের উপর দিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন। এছাড়াও রয়েছে প্যাডেল বোটের ব্যবস্থা।

নং নুছ গার্ডেনের স্কাই-ওয়াক ওয়ে; Source: 18coin-rezqo.net

থাই নৃত্যের একাংশ; source: youtube.com

৪) গার্ডেন অফ ভারসাইলিস, ভার্সাই, ফ্রান্স

বিশ্ববিখ্যাত বাগানবিলাসগুলোর নামের তালিকা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, যদি এই বাগানটির নাম না উল্লেখ করা হয়। ডিজাইনার অ্যান্ড্রে লে নোট্রে ১৬৬১ সালে এই বাগানের ডিজাইন করেন। ২,০০০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই বাগান ফরাসি স্টাইলের অসাধারণ একটি বাগান হিসেবে পরিচিত।

গার্ডেন অফ ভার্সাই; Source: parscityvision

এই বাগানে রয়েছে ৩৭২টি মূর্তি, ৫৫টি পানির ফিচার, ৬০০টি ফোয়ারা এবং ৩৫ কিলোমিটার লম্বা খাল। এগুলো দেখে বিস্মিত না হয়ে পারবেন না। বাগানে আপনি প্রচুর বনসাইও দেখতে পারবেন। বনসাইগুলোর আকৃতি, গঠন সত্যিই অভূতপূর্ব।

ভারসাইলিস গার্ডেনের পানির ফোয়ারা; Source: youtube.com

প্যারিস থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে  অবস্থিত এই বাগানটি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সোমবার প্যালেস বন্ধের দিন, তাই সেদিন ছাড়া অন্য কোনো দিনকে বেছে নিন। আর এ বাগানের আশেপাশেও রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু বাগান।

গার্ডেন অফ ভারসাইলিস; source: EuropeanTravels

৫) কেও রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন, কেও, যুক্তরাজ্য

অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দির মধ্যে অপরিসীম সৌন্দর্যে রূপ নেয় এই ঐতিহাসিক বাগানটি। শুধু বাগানবিলাস হিসেবেই নয়, এটি পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিখ্যাত প্রকৌশলী কেন্ট, ব্রিজম্যান, চেম্বার, ব্রাউন এবং নেসফিল্ড মিলে এই বাগানের ডিজাইন করেছিলেন। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় গাছের দেখাও মিলবে এ বাগানে। এখানে কাঁচঘরের ভেতরেও রয়েছে অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটেও জায়গা করে নিয়েছে এই বাগানটি।

কেও গার্ডেনের কাচঘর; Source: The-Shakespeare-Hospice

এই বাগানে রয়েছে ‘মাল্টি-সেন্সরি হাইভ’ বা মৌচাক যেখানে মৌমাছির বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জীবনযাপনকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি ১৭ মিটার লম্বা এবং বিস্তীর্ণ তৃণভূমির ভেতরে তৈরি করেছেন বৃটিশ ইঞ্জিনিয়ারগণ।

মাল্টি-সেন্সরি হাইভ;Source: dezeen

এ বাগানের আরেকটি আকর্ষণ হলো ‘ট্রি-টপ ওয়াক-ওয়ে’। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ মিটার উঁচুতে এই ওয়াক-ওয়ে ডিজান করেছিলেন প্রকৌশলী মার্ক্স বারফিল্ড। এর উপর দিয়ে হেঁটে আপনি অদ্ভুত রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি পেতে পারেন।

ট্রি-টপ ওয়াক-ওয়ে; Source: thegreatestgarden.com

যদি চান এ বাগান ভ্রমণে যাবেন, তাহলে অবশ্যই জেনে যেতে হবে এর সময়সূচি। প্রতিদিন সকাল ১০টায় সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় বাগানটি। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর এবং শুক্রবার থেকে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের পর আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তবে টিকেট না কেটে ঢোকার চেষ্টা করবেন না। চাইলে অনলাইনেও টিকেট বুক করতে পারবেন।

৬) ব্রুকলিন বোটানিক্যাল গার্ডেন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্বের এত বাগানের কথা চলছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্থান থাকবে না, তা কি হয়! নিউইয়র্কের প্রস্পেক্ট পার্কে ৫২ একর জায়গায় এ বাগানটি তৈরি হয়েছে সেই ১৯১০ সালে। প্রায় ১২,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মিলবে এই বাগানে। এখানে রয়েছে প্রায় ২০০ প্রজাতির চেরি গাছ, যার মধ্যে ৪২টি প্রজাতি এশিয়ান। একটা জাপানিজ বাগান রয়েছে এর মাঝে, যেটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। প্রতি বছর প্রায় ৭ লক্ষ ২৫ হাজার দর্শক আসেন এ বাগান পরিদর্শনে।

ব্রুকলিন গার্ডেন; source: weismanfred.net

যেতে পারেন আপনিও। যদি চান বিনামূল্যে ভ্রমণ করবেন, তাহলে যেতে হবে হয় মঙ্গলবার অথবা শনিবার বিকেল বেলা। তাছাড়া যেকোনো দিনই যেতে পারেন।

ব্রুকলিন গার্ডেনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে বিয়ের অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়; Source: patinaevents

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য ‘বাগানবিলাস’ শব্দটাই যেন মনে আনন্দ জাগায়। আর সেই বাগানবিলাস যদি হয় এরকম অসাধারণ, তাহলে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আর দেরি কেন? এবার বেরিয়ে পড়ুন বাগানবিলাস ভ্রমণে!

ফিচার ইমেজ- ইউটিউব

Related Articles