Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সৌদি আরবে এবার চালু হচ্ছে সিনেমা হল!

সৌদি আরব সিনেমা হলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর এই প্রথম এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলো। বাণিজ্যিক সিনেমা হলগুলোকে সরকারি লাইসেন্স দেওয়ার আইন পাশ করানোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হলো।

আজ সোমবার, সৌদি আরবের সংস্কৃতি মন্ত্রী আওয়াদ বিন সালেহ আল-আওয়াদ সিনেমা হল চালু করার সংবাদ দেন। তিনি এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার মুহূর্তকে সৌদি রাজতন্ত্রের সাংস্কৃতিক অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি সন্ধিক্ষণ বলে উল্লেখ করে বলেন,

সিনেমা হল চালু করার পদক্ষেপটি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। বৃহত্তর সাংস্কৃতিক অঙ্গন চালু করার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা চালু করতে পারব। একইসাথে আমরা সৌদি রাজতন্ত্রের বিনোদন জগতকে সমৃদ্ধ করতে পারব।

অক্টোবরে অনুষ্ঠিত একটি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সৌদি নারীরা @ Fayez Nureldine/AFP

চলুন জেনে নিই সৌদি আরবের সিনেমা হল নিষিদ্ধ থাকা এবং পুনরায় সে নিষেধ প্রত্যাহার সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য:

  • সত্তরের দশকে সৌদি আরবে সিনেমা হল চালু ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আশির দশকে সিনেমাকে ধর্ম এবং সাংস্কৃতির প্রতি হুমকি স্বরূপ আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করা হয়।
  • সিনেমা হল চালুর বর্তমান এই পদক্ষেপকে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ এর অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য পূর্বের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হয়ে যাওয়ায় তেল নির্ভর উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো যে চরম অর্থনৈতিক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সৌদি যুবরাজ অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্খী এই প্রকল্প ঘোষণা করেন।
  • ভিশন ২০৩০ এর আওতায় সৌদি অর্থনীতি শুধুমাত্র তেলের উপর নির্ভরশীল থাকবে না, বরং তা হয়ে উঠবে পর্যটন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিনোদন প্রভৃতির উপর নির্ভরশীল বহুমুখী অর্থনীতি। তার অংশ হিসেবেই সিনেমার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
  • পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম সিনেমা হলটি উন্মুক্ত করা হবে আগামী বছরের মার্চ মাস নাগাদ। এরপর ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে পুরো সৌদি আরব জুড়ে ৩০০টি সিনেমা হল চালু করা হবে, যেগুলোতে মোট ২,০০০টি পর্দা থাকবে।
  • এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনেকগুলো নতুন বিতর্ক উঠে আসছে। এসব সিনেমা হলে প্রদর্শিত সিনেমার ক্ষেত্রে কতটুকু সেন্সরশিপ আরোপ করা হবে, নির্মাতাদের শিল্পের মাধ্যমে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরার কতটুকু স্বাধীনতা থাকবে, হলের ভেতরে নারী-পুরুষদের বসার স্থান পৃথক থাকবে কিনা এরকম বিভিন্ন বিষয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
  • সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবত ওয়াহাবিজম অনুসরণ করে আসছিল, যেখানে ইসলামের প্রাথমিক যুগের মতো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান সে ধারা থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন।

সৌদি আরবের প্রথম নারী কনসার্টে লেবানীজ শিল্পী হিবা তাওয়াজি; Source: AFP

  • গত অক্টোবর মাসে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সৌদি আরবকে ‘মডারেট ইসলামে’ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। গত সেপ্টেম্বরে তিনি নারীদের ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেটাও প্রত্যাহার করেছিলেন। আগামী জুন মাস থেকে সৌদি আরবের নারীদের গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনী বাধা থাকবে না।
  • সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ গত জানুয়ারি মাসেও সিনেমার বিরোধিতা করেছিলেন এই বলে যে, এর মাধ্যমে নৈতিকতা বিনষ্ট হয়। কিন্তু শাসকশ্রেণীর সিনেমার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার পরেও তিনি আগের বক্তব্যে অটল থাকবেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার না।
  • সৌদি আরবে এতদিন সিনেমা হল না থাকলেও টেলিভিশন, স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে তেমন কোনো বাধা ছিল না। মধ্যপ্রাচ্যের অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনোদনমূলক চ্যানেল এআরটি এবং এমবিসিও সৌদি আরবের মালিকানাধীন। ২০১৩ সালে সৌদি আরব ‘ওয়াজদা’ নামক একটি চলচ্চিত্রকে অস্কারের জন্যও পাঠায়, যদিও তা অস্কারের শর্টলিস্ট পর্যন্ত উঠতে ব্যর্থ হয়।
  • সিনেমা হল নিষিদ্ধ থাকলেও ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যাণে সৌদি আরবের জনগণ সিনেমা উপভোগ করা থেকে মোটেও বঞ্চিত ছিল না। তাই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিনোদন উপভোগ করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। কিন্তু সৌদি আরবের বাস্তবতায় সামাজিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি পরিবর্তিত এক যুগের সূচনা করবে।

ফিচার ইমেজ- Arabian Business

Related Articles