Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ১০টি বস্তু

ইতিহাসের বেশ লম্বা সময় ধরে মানুষ বিশ্বাস করতো বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হলো সোনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো সোনার চেয়েও মূল্যবান অনেক বস্তু রয়েছে পৃথিবীর বুকে। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হিসেবে হীরাকে সবার উপরে রাখবে। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু বস্তু আছে যাদের দামের কাছে হীরার দাম কিছুই না। ব্রাইট সাইড, দ্য রিচেস্ট, এমএসএন, সায়েন্স এলার্ট ও বিবিসি অবলম্বনে এরকম কিছু মূল্যবান বস্তু নিয়ে আজকের আয়োজন।

১০. হেরোইন (প্রতি গ্রাম ১৩০ ডলার)

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় নেশা দ্রব্য। এটি গ্রহণ করলে এর উপাদান সরাসরি মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। সেখানে গিয়ে মরফিনে রূপান্তরিত হয় এবং যে অংশে শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রিত হয় সেগুলোতে প্রভাব বিস্তার করে।

৯. কোকেইন (প্রতি গ্রাম ২৩৬ ডলার)

ছবি: মেডিক্যাল ডেইলি

এটিও প্রচণ্ড আসক্তকারী নেশা দ্রব্য। দক্ষিণ আমেরিকায় কোকা গাছ জন্মে। কোকা গাছের পাতা থেকেই বিশুদ্ধ কোকেইন তৈরি করা হয়।

৮. এলএসডি (প্রতি গ্রাম ৩ হাজার ডলার)

লিসার্জিক এসিড ডাইইথিলামাইড সাধারণত এলএসডি নামে পরিচিত। সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী আলবার্ট হফম্যান ১৯৩৮ সালে এটি উদ্ভাবন করেন। মানসিক রোগের একটি প্রতিষেধক তৈরি করতে গিয়ে এটি উদ্ভাবিত হয়। ১৯৬০ এর দশকে এটি নেশাদ্রব্য হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে যায়। এটি সেবনে শক্তিশালী হ্যালুসিনেশন তৈরি হয়। সেবনকারী ব্যক্তি চোখে উল্টাপাল্টা দেখে। নিয়মিত সেবনকারী ব্যক্তি স্থায়ী মানসিক সমস্যায় উপনীত হয় এবং মানসিক সমস্যা থেকে শারীরিক ত্রুটিও দেখা দেয়। এই বস্তুটি তৈরি করতে অনেক জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। সেজন্যই মূলত এর দাম এত বেশি।

৭. প্লুটোনিয়াম (প্রতি গ্রাম ৪ হাজার ডলার)

ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

রূপালী-সাদা রংয়ের হয়ে থাকে এরা। সাধারণত নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিংবা নিউক্লিয়ার বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। মহাকাশযানের চলার জন্য জ্বালানীর প্রয়োজন হয়, এ জ্বালানী যদি সাধারণ দাহ্য পদার্থের মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো তাহলে মহাকাশযান এত ভারী হয়ে যেতো যে নিজের জ্বালানী নিয়ে নিজেই চলতে পারতো না। এ কারণে মহাকাশযানগুলোতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করা হয়। এর ব্যবহারের ফলে জ্বালানীর ভরও হয় কম এবং শক্তিও পাওয়া যায় বেশি। এ পারমাণবিক শক্তির যোগানের জন্য বিজ্ঞানীরা প্লুটোনিয়াম ব্যবহারের কথা ভাবছেন। নিকট ভবিষ্যতে এটি বাস্তবায়িত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

৬. পাইনাইট (প্রতি গ্রাম ৯ হাজার ডলার)

এটি এতই দুর্লভ যে বিশ্বের খুব কম মানুষই এর অস্তিত্বের কথা জানে। এটি কমলা বা লালচে বাদামী বর্ণের একপ্রকার খনিজ পাথর। সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল প্রায় ৬৫ বছর আগে। বিশ্বে পাইনাইটের মাত্র শ’দুয়েক পাথর আছে মাত্র।

৫. টেফাইট পাথর (প্রতি গ্রাম ২০ হাজার ডলার)

বেগুনী, গোলাপি, লাল কিংবা সাদা রংয়ের এই বস্তুগুলো খুব দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে। হীরকের চেয়েও হাজার গুণ বেশি দুর্লভ। এখন পর্যন্ত মাত্র ১০টিরও কম পরিমাণ লাল টেফাইট পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু বেশ দুর্লভ হওয়া সত্ত্বেও জুয়েলারি বাজারে এটি তেমন জনপ্রিয় নয়। এর মৌলিকত্ব ও অসাধারণত্ব থাকার পরেও হীরকের অনেক নীচেই থেকে যায়। জনপ্রিয়তা বা চাহিদা কম বলেই এটি হীরকের চেয়ে কম মূল্যের।

৪. ট্রিটিয়াম (প্রতি গ্রাম ৩০ হাজার ডলার)

আঁধারে উজ্জ্বল ট্রিটিয়াম। ছবি: পিন্টারেস্ট

একটি হাইড্রোজেন পরমাণুতে সাধারণত একটি প্রোটন আর একটি ইলেকট্রন থাকে। অন্যান্য সকল মৌলে নিউট্রন থাকলেও হাইড্রোজেনে কোনো নিউট্রন থাকে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এতে একটি বা দুটি নিউট্রন যুক্ত হতে পারে। অতিরিক্ত একটি নিউট্রন যুক্ত হলে একে বলে ডিউটেরিয়াম। প্রোটনের পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে অতিরিক্ত নিউট্রন যুক্ত করা হলে এ ধরনের মৌলকে বলে আইসোটোপ। পানির অণু গঠন করতে হলে হাইড্রোজেনের প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত একটি নিউট্রন যুক্ত ডিউটেরিয়াম দিয়েও পানি তৈরি হয়। এ ধরনের পানিকে বলে ভারী পানি। নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারী পানি ব্যবহার করা হয়। অতি বিরল ক্ষেত্রে হাইড্রোজেনে অতিরিক্ত দুটি নিউট্রন যুক্ত হতে পারে। দুটি নিউট্রন যুক্ত এ ধরনের হাইড্রোজেনকে বলে ট্রিটিয়াম।

ট্রিটিয়াম প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়। মহাজাগতিক রশ্মি যখন প্রবল বেগে ডিউটেরিয়াম কিংবা নাইট্রোজেন পরমাণুর উপর আপতিত হয় তখন ট্রিটিয়াম আইসোটোপ তৈরি হয়। ট্রিটিয়াম তেজস্ক্রিয় প্রকৃতির, এটি একপ্রকার রশ্মি বিকিরণ করে যা অন্ধকারে শনাক্ত করা যায়।

৩. হীরক (প্রতি গ্রাম ৫৫ হাজার ডলার)

ছবি: এক্সপার্ট বেকন

এটি সকলের পরিচিত। মূল্যবান বস্তুর কথা বললে সকলে হীরকের কথাই ভাবে সবার আগে। হীরক তৈরি হয় মামুলী এক পদার্থ কার্বন থেকে। কয়লা জাতীয় পদার্থ ধীরে ধীরে ভূ-পৃষ্ঠের নীচের দিকে চলে গেলে ভূমির প্রবল চাপে এবং অভ্যন্তরের প্রবল উত্তাপে তা ধীরে ধীরে হীরকে পরিণত হয়। ভূ-পৃষ্ঠের তলদেশে পৃথিবীর বাকি অংশটা উত্তাপে টগবগ করছে, এতই উত্তাপ যে সে অঞ্চলটা একদম তরলিত অবস্থায় আছে। প্রাকৃতিকভাবে হীরক তৈরিতে এই উত্তাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হীরক অনুসন্ধানকারীরা মাটি খনন করে নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে হীরক আহরণ করেন। অনেক দুর্লভ বস্তু বলে অলংকার হিসেবে এটি নারীদের কাছে খুব আকাঙ্ক্ষিত।

২. ক্যালিফোর্নিয়াম (প্রতি গ্রাম ২৭ মিলিয়ন ডলার)

ছবি: শাটারস্টক

এই বস্তু পৃথিবীতে এতটাই বিরল যে প্রাকৃতিকভাবে এটি তৈরিই হয় না। রসায়ন শাস্ত্রের পর্যায় সারণীর কিছু মৌল আছে যাদেরকে কৃত্রিমভাবে পরীক্ষাগারে তৈরি করতে হয়, স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতিতে এদেরকে পাওয়া যায় না। ক্যালিফোর্নিয়াম তাদের মাঝে একটি। ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে এই নাম। এতই ব্যয়বহুল যে ১৯৫০ সালে তৈরি করা বস্তুটিই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত শেষ। এরপর আর কখনো এটি তৈরি করা হয়নি। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি অত্যন্ত তেজস্ক্রিয়। এক মাইক্রোগ্রাম ক্যালিফোর্নিয়াম থেকে প্রতি মিনিটে ১৭০ মিলিয়ন নিউট্রন কণা নিঃসরিত হয়। যেকোনো জীবন্ত প্রাণীর জন্য এটি হুমকি স্বরূপ।

১. অ্যান্টিম্যাটার (প্রতি গ্রাম ৬২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার)

ছবি: ফোর্বস

কল্পনা কিংবা স্বপ্নকেও হার মানাবে এই বস্তু। সত্যি কথা বলতে কি একে বস্তু বললে ভুল হবে। বলতে হবে প্রতি-বস্তু বা বিপরীত-বস্তু। বাস্তব জগতে আমরা যেসব বস্তু দেখি তার একদমই বিপরীত হলো এরা। মূলত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা এটি তৈরি করে থাকেন। সায়েন্স ফিকশন পাঠকেরা হয়তো ইতোমধ্যেই এর নাম শুনে থাকবে। সাধারণ বস্তুর তথা ম্যাটার-এর সংস্পর্শে আসা মাত্রই অ্যান্টিম্যাটার এবং ম্যাটার মিলে পরস্পর ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে। এই শক্তিকে যদি কোনোভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে এটি হবে বিপুল সম্ভাবনার নাম।

সায়েন্স ফিকশনের বেলায় তো আর কোনো সীমা নেই, তাই লেখকেরাও শক্তির উৎসের জন্য ইচ্ছেমতো অ্যান্টিম্যাটার ব্যবহার করেন। এই প্রতি-বস্তু তৈরি করাও অনেক চ্যালেঞ্জিং। এই প্রতি-বস্তু তৈরি করতে পারলে তা হবে মানবজাতির জন্য অনন্য এক অর্জন। একটি উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে, বর্তমানের প্রযুক্তি অনুসারে মানবজাতির সকলে যদি বিরতিহীনভাবে টানা পরিশ্রম করে যায় তাহলে এক বছরে মাত্র এক গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করতে পারবে। বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিম্যাটারের দেখা পেয়েছিলেন, তবে স্বাভাবিকভাবে নয়। লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে অপ্রত্যাশিতভাবে এটি তৈরি হয়েছিল।

অতিরিক্ত সংযোজন- মায়ানমারের জেড পাথর

ছবি: ওয়ার্ক পয়ন্ট

মায়ানমারের খনির কর্মীরা ১৭০ মিলিয়ন মূল্যমানের দুর্লভ এই জেড পাথর (Jade stone)-টি খুঁজে পেয়েছেন। পাথরটি উচ্চতায় ১৪ ফুট, লম্বায় ১৯ ফুট এবং ভরে প্রায় ২০০ টন। এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বড় জেড পাথর।

আরো কিছু মূল্যবান বস্তু

১১. গণ্ডারের শিং (প্রতি গ্রাম ১১০ ডলার), মূল্যবান ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১২. মেথেমফেটামাইন (প্রতি গ্রাম ১০০ ডলার), নেশা দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১৩. প্লাটিনাম (প্রতি গ্রাম ৬০ ডলার), অলংকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১৪. রোডিয়াম (প্রতি গ্রাম ৫৮ ডলার), দুর্লভ বস্তু

১৫. সোনা (প্রতি গ্রাম ৫৬ ডলার), অলংকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১৬. জাফরান (প্রতি গ্রাম ১১ ডলার), ওষুধ কিংবা মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ফিচার ছবি- সিয়া ম্যাগাজিন

Related Articles