Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ট্রাভেল ফটোগ্রাফি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের বাছাইকৃত সেরা ২১

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন সম্প্রতি ২০১৭ সালের ‘ট্রাভেল ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার’ এর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে। প্রতিযোগিতাটি আমাদের পৃথিবীর ভৌগোলিক বহুমুখিতা আর মানুষের বিচিত্র জীবনের উপর আলোকপাত করে থাকে। বিজয়ী আলোকচিত্রীদের ছবিগুলো বরাবরের মতোই অসাধারণ। প্রতিটি ছবির পেছনে রয়েছে একটি চমকপ্রদ গল্প যা ছবিগুলোর আবেদন বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।

বিচারকমণ্ডলীর চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পাঠানো ১৫,০০০ ছবির মধ্য থেকে বিজয়ী ছবিগুলো মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে বেছে নেওয়া হয়েছে। Nature, People আর Cities- এই তিন শ্রেণীর ছবিগুলো দেখে কেউ বিস্ময়াভিভূত না হয়ে পারবেন না। পাঠকরা জেনে আনন্দিত হবেন, বাংলাদেশের দুজন আলোকচিত্রীর ছবি স্থান করে নিয়েছে এই প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের তালিকায়। মর্যাদাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করেছেন মেক্সিকান আলোকচিত্রী সারজিও তাপিরো ভেলাস্কো। আগ্নেয়গিরির লাভা উদগিরণের সময় বজ্রপাতের বিরল মুহূর্তটি ধারণ করে বিচারকদের মন জয় করেন তিনি। ভেলাস্কোর ছবিটি ‘নেচার’ ক্যাটাগরিতেও প্রথম স্থান অর্জন করেছে। নরবার্ট ফ্রিটজ (হাঙ্গেরি) প্রথম হয়েছেন ‘সিটিস’ ক্যাটাগরিতে, তার ছবিটির নাম ‘লেভেলস অফ রিডিং’। তুরস্কের এফ ডিলেক উয়্যার পাঠক জরিপে ‘ওয়ার্কশিপ’ ছবির জন্য বিজয়ী হন।

চলুন ছবিগুলো দেখে নেয়া যাক।

১. প্রথম পুরস্কার বিজয়ী: দ্য পাওয়ার অফ নেচার, কলিমা, মেক্সিকো

মেক্সিকোর কলিমা আগ্নেগিরিতে লাভা উদগিরণ হচ্ছিল। দিনটি ছিল ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর। ছবি ধারণের সময় আলোকচিত্রী সারজিও তাপিরো ভেলাস্কো বোনাস হিসেবে বজ্রপাতের মুহূর্তটি পেয়ে যান। বিজয়ীর ভাষ্যমতে, এটা ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।

২. অনারেবল মেনশন, নেচার: ফরেস্ট অফ দ্য ফেইরি, তাম্বা, জাপান

জাপানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম তাম্বা। সেখানে এক উপাসনালয়ে যাওয়ার পাথুরে সিঁড়ি আর তার আশেপাশের জঙ্গল দেখা যাচ্ছে ছবিতে। সিঁড়ির শেষ অবধি জোনাকী পোকার মেলা বসেছে যেন। ছবিটি ওয়াই তাকাফুজি’র তোলা।

৩. অনারেবল মেনশন, নেচার: মার্বেল কেভস, চিলি

ক্লেন জেসেল তার বাবাকে নিয়ে পাতাগোনিয়া যাচ্ছিলেন। সমুদ্র সৈকতের চেয়ে এই চমৎকার গুহাই যেন তাদের বেশি আকৃষ্ট করে। অনেক হ্যাপা করে একটা নৌকা নিয়ে গুহার আরো ভেতরে চলে যান দুজনে। ছবি তোলার জন্য পর্যাপ্ত আলোর অপেক্ষায় কেটে যায় অনেকটা সময়, তবে পরিশ্রম বৃথা যায়নি। নীলচে মার্বেল গুহার সৌন্দর্য বন্দী হয় তার লেন্সে।

৪. দর্শক জরিপে বিজয়ী, সিটিস: কালারফুল মার্কেট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

রাতের আলো ঝলমলে ব্যাংককে পসরা সাজিয়ে বসেছে বাজারের বিক্রেতারা। ছবি তুলেছেন কাজান মাদরাসমাইল

৫. তৃতীয় স্থান বিজয়ী, পিপল: আন্ডার দ্য ওয়েভ, তাভারুয়া, ফিজি

পেশাদার সারফার ডনোভান ফ্রাংকেনরাইটার এর ছবিটি তুলেছেন রডনি বুরসিয়েল

৬. পাঠক জরিপে বিজয়ী, নেচার: বাফ টেইলড করোনেট, ইকুয়েডর

ইকুয়েডর এর বনাঞ্চলে ফুলের মধু আহরণ করছে করোনেট পাখি। ছবিটি তুলেছেন হিমাকার ভাল্লুরি

৭. দ্বিতীয় স্থান বিজয়ী, পিপল: ইন্টারেস্টিং মোমেন্ট, অ্যামস্টারডাম, নেদারল্যান্ডস

ছবিতে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রেমব্র্যান্ট এর ছবির সামনে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। আলোকচিত্রী জুলিয়াস ওয়াই এই ভিড়কে ক্যামেরাবন্দী করার জন্য দুটো ছবি তোলার সুযোগ পান, এরপর দর্শনার্থীর জটলা অন্যদিকে সরে যায়। তার একটিই স্থান করে নেয় এই তালিকায়।

৮. তৃতীয় স্থান বিজয়ী, সিটিস: হেনিংসভার ফুটবল ফিল্ড, নরডল্যান্ড, নরওয়ে

নরওয়ের লফোটেন দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত এই হেনিংসভার ফুটবল মাঠকে পৃথিবীর সবচেয়ে চমকপ্রদ খেলার মাঠ বললেও অত্যুক্তি হবে না। মিশা ডি স্ট্রোয়েভ তার ড্রোন দিয়ে ৩৯০ ফুট উঁচু থেকে এই নান্দনিক ছবিটি ধারণ করেন।

৯. প্রথম স্থান বিজয়ী, পিপল: ওয়ার্কশিপ, কনইয়া, তুরস্ক

ছাদের গহবর চিরে আলো বেরিয়ে আসছে, আর নিচে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী সুফি নাচের ভঙ্গিমায় এক নৃত্যশিল্পী। এফ ডিলেক উয়্যার এর তোলা ছবি।

১০. অনারেবল মেনশন, নেচার: মাউন্ট ব্রোমো, জাভা, ইন্দোনেশিয়া

মাউন্ট ব্রোমো ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের ছোট একটি আগ্নেয়গিরি। গত বছরের ১৭ জানুয়ারি মাউন্ট ব্রোমোর আশেপাশে ভূকম্পন অনুভূত হয় এবং লাভা উদগিরণ শুরু হয়। আলোকচিত্রী রেমন্ড দেওয়ান্তারা নিকটবর্তী হোটেলে ছিলেন। সেখান থেকেই ক্যামেরা হাতে মাউন্ট ব্রোমোর এই মনোমুগ্ধকর ছবিটি তোলেন তিনি। পর্যাপ্ত আলো থাকায় ছবিটি নিয়ে খুব সন্তুষ্ট ছিলেন রেমন্ড।

১১. প্রথম স্থান বিজয়ী, সিটিস: লেভেলস অফ রিডিং, স্টুটগার্ড, জার্মানি

স্টুটগার্ড শহরের এই লাইব্রেরির ছবি তুলেছেন নরবার্ট ফ্রিটজ। কৃত্রিম আলো নয়, স্বাভাবিক আলোতেই ঝলমল করছে লাইব্রেরির সাদা ইন্টেরিয়র।

১২. অনারেবল মেনশন, পিপল: দ্য ম্যান’স স্টেয়ার, গাজীপুর, বাংলাদেশ

বৃষ্টিভেজা এক সকালে ঢাকাগামী ট্রেনটি টঙ্গী স্টেশনে কিছুক্ষণের জন্য থেমেছিল। ট্রেনে পাশাপাশি দুটো জানালা। একটায় কালো ছাতা মেলে ধরা, আরেকটায় কৌতুহলী এক জোড়া চোখ ভেজা কাঁচের ওপারে কী যেন দেখছে। বাংলাদেশী আলোকচিত্রী মইন আহমেদ এই স্বপ্নীল মুহূর্তটি ধারণ করেন তার ক্যামেরায়।

১৩. তৃতীয় স্থান বিজয়ী, নেচার: ক্রোকোডাইলস এট রিও টারকোলস, কোস্টা রিকা

টারকোল নদীর তীরে প্রায় ৪০টি কুমির রোদ পোহাচ্ছিল। তরুণ সিনহা তার গাইডের কথা বিশ্বাসই করছিলেন না, এত কুমির! নদীর কাছেই একটা কোমর সমান উঁচু রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে তরুণ পছন্দমত কয়েকটা শট নিয়ে নিলেন।

১৪. দ্বিতীয় স্থান বিজয়ী, নেচার: টু লিভ, অইনুকাকে, মিয়াগি, জাপান

ওসাকি জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। নানা জাতের পাখির অভয়ারণ্য এই জায়গাটি। হিরোমি কানো খুব সন্তর্পণে রাজহাঁসের কাছে এসে ছবি তোলার চেষ্টা করেন। পাখিগুলো উড়ে যাবার মুহূর্তে শাটার চেপে ধরেন তিনি। সত্যিই অসাধারণ একটি ছবি।

১৫. পাঠক জরিপে বিজয়ী, পিপল: স্যান্ড পোর্টার, মুন্সিগঞ্জ, বাংলাদেশ

ধলেশ্বরী নদীর তীরে শ্রমিকরা মাথায় করে বালু বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তানভীর হাসান রোহান ছবিটি তুলেছেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এ বছর সম্মানিত হলেন তিনি।

১৬. অনারেবল মেনশন, সিটিস: আল আইন, আল বুরায়মি, মুহাফাজাত আল বুরায়মি, ওমান

ওমানে মরুভূমির পাশে গড়ে উঠছে নতুন শহর। আন্দ্রেজ বোচেন্সকি ছবিটি তুলেছেন।

১৭. অনারেবল মেনশন, নেচার: ইন ইউর ফেস, কিউবা

কিউবার সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকায় পানির নিচে ছবিটি রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে তোলেন শেন গ্রস। পাথরের নিচে ক্যামেরা রেখে হাঙ্গরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। দুটো ক্যারিবিয়ান হাঙ্গর এসে তার ক্যামেরায় নাড়া দিয়ে যায়, কিন্তু রিমোট দিয়ে তিনি বেশ ভালোই ক্যাপচার করতে পেরেছেন মুহূর্তটি।

১৮. অনারেবল মেনশন, সিটিস: কালারফুল এপার্টমেন্ট, কিতাগাতা, জিফু, জাপান

তেতশুয়া হাশিমোতোর অফিস থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্ব এই বর্ণালী এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের। তেতশুয়া মনের মতো শট নিতে পারছিলেন না। অদ্ভূত স্থাপনাটির সৌন্দর্য যেন কোনোভাবেই লেন্সে আঁটানো যাচ্ছিল না। অবশেষে লাল পোশাক পরা এক নারী করিডোর দিয়ে হেঁটে গেলে আলোকচিত্রী জুতসই আমেজ পেয়ে যান ছবিটির জন্য।

১৯. অনারেবল মেনশন, পিপল: ব্রিজিং জেনারেশন, দিল্লী, ভারত

ঈদ-উল-ফিতরের দিন। নীল আকাশের নিচে মসজিদের ছাদে পিতা-পুত্র সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে বসে আছে। সাধারণ এই ছবিটিকে অসাধারণ মাত্রা দিয়েছে বাবা আর সন্তানের স্নেহময় বন্ধন। জোবিত জর্জ এর তোলা ছবি।

২০. দ্বিতীয় স্থান বিজয়ী, সিটিস: ওয়ালড সিটি, হংকং

পাখির চোখে হংকং শহরের এই সুবিশাল অট্টালিকাগুলো নিশ্চয়ই এমন দেখায়। অ্যান্ডি ইউং এর এরিয়াল মোডে তোলা ছবিতে হংকং এর ইট-কাঠের বাড়িঘরের খানিকটা ধরা পড়েছে।

২১. অনারেবল মেনশন, পিপল: ব্লেসিংস এট বেসাকিহ, বালি

শিব, ব্রহ্মা আর বিষ্ণু- হিন্দু দেবতা ত্রয়ীর পূজা করা হয় বেসাকিহতে অবস্থিত এই হাজার বছরের পুরনো উপাসনালয়ে। বালি দ্বীপের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখানে প্রার্থনার জন্য আসেন। মাইকেল ডিন মরগ্যান ছবিটি তুলেছেন।

প্রতিটি ক্যাটাগরির প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের যথাক্রমে ২,৫০০, ৭৫০ আর ৫০০ ডলার পুরস্কার দেবে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন। আর গ্র্যান্ড প্রাইজ বিজয়ী সারজিও তাপিরো ভেলাস্কো ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপিডিশন টিমের সাথে গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে ১০ দিনের অভিযানে যাবার সুযোগ পাবেন।

ফিচার ইমেজ- JOBIT GEORGE

Related Articles