Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রেকর্ড মূল্যে চিত্রকর্ম ক্রয়ের আড়ালে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স!

ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে নিলামে বিক্রি হওয়া শিল্পকর্মের গোপন ক্রেতা আর কেউ নন, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান! ৪৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যে বিক্রি হওয়া ‘সালভাতর মুন্দি’ নামের ৫০০ বছরের পুরনো এই চিত্রকর্মের শিল্পী স্বয়ং লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। পৃথিবীতে এই মুহুর্তে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ভিঞ্চির একমাত্র পেইন্টিং এটি।

সালভাতর মুন্দি; Source: EPA-EFE/ANDY RAIN

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এই অবিশ্বাস্য চড়া মূল্যে ছবি কেনার পেছনে সালমানের নাম এসেছে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে। এমন সময়ে এই তথ্যটি প্রকাশ পেলো, যখন এই ৩২ বছর বয়সী সৌদি প্রিন্স তার দেশে আবির্ভূত হতে চাইছেন এক নতুন ‘সমাজ-সংস্কারক’ হিসেবে। তেল সমৃদ্ধ এই বিশাল রাজতন্ত্রকে দুর্নীতিমুক্ত করার কথা বলে ইতোমধ্যে দেশটির ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা এবং ক্ষমতাধর যুবরাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে নিজের ক্ষমতাকে একচ্ছত্র করেছেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতেই মার্কিন গোয়েন্দারা সাম্প্রতিক সময়ে এই যুবরাজের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে। সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা এবং সৌদি রাজনীতির বিশ্লেষক ব্রুস রিডেল মনে করছেন, ক্রাউন প্রিন্স যখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করলেন, তখন একটি ছবির পেছনে এই বিশাল অঙ্কের অর্থব্যয়ের খবরটি তার ভাবমূর্তির উপর বড় আঘাত হানতে পারে।

কে এই সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান

সৌদি আরবের গ্রেম অব থ্রোন্স: নেপথ্যে কে এই সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান, যে কিনা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে সৌদি আরবের রাজনৈতিক প্রাঙ্গন?

Posted by Roar বাংলা on 14 नोव्हेंबर 2017

গত নভেম্বরের ১৫ তারিখে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত একটি নিলামে জিতে ছবিটি কিনে নিয়েছিলেন প্রিন্স বদর বিন আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ, যিনি সৌদি রাজবংশের খুব একটা পরিচিত মুখ নন। নিলাম সংস্থা ক্রিস্টি’স-এর আয়োজিত এই নিলামে সেদিন ‘সালভাতর মুন্দি’ বিক্রি হয় ৪৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যে। সাথে সাথে এটি পরিণত হয় ইতিহাসে কোনো নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামী চিত্রকর্মে।

মোহাম্মদ বিন সালমানের দূরসম্পর্কের আত্মীয় এই প্রিন্স বদর আসলে ক্রাউন প্রিন্সের প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করছেন বলেই ধারণা করেন মধ্যপ্রাচ্যে শিল্পকর্ম ক্রয়-বিক্রয়ের জগতের একজন বিশিষ্টজন। নিলামের মঞ্চে প্রিন্স বদরের উত্থান বেশি আগে নয়, বছরখানেক হলো মাত্র। এর মাঝেই তিনি বেশ কিছু বড় আকারের নিলাম জিতেছেন। অভিজ্ঞরা বলছেন, তারা আগেই সন্দেহ করেছিলেন, প্রিন্স বদর এসমস্ত সংগ্রহ নিজের জন্য করছেন না। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মতামতও একই, প্রিন্স বদর এগুলো কিনলেও সেসবের চূড়ান্ত ক্রেতা আসলে ক্রাউন প্রিন্স সালমান বলেই তারা নিশ্চিত। এর আগেও এই দুজনে ব্যবসা ও দাতব্য কর্মকাণ্ডে একসাথে কাজ করেছেন।

ট্রাম্পের সাথে সালমান; Source: Investig’Action

এই ক্রয়ের মধ্য দিয়ে একটি মাত্র শিল্পকর্মের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করতে প্রস্তুত এমন নব্য শিল্প-সংগ্রাহকদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় উঠে এসেছেন সালমান। সাম্প্রতিক সময়ে চীন, মধ্যপ্রাচ্য সহ এই অঞ্চলের বিলিনিয়ারদের মধ্যে শিল্পকর্ম সংগ্রহের যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, এই ঘটনাটি তারই একটি নমুনা মাত্র। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজপরিবারগুলো তাদের ক্ষমতার দাপটের প্রকাশ হিসেবে নিজেদের সংগ্রহের ভাণ্ডার পরিপুষ্ট করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটিরই নগ্ন প্রকাশ এটি।

গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের শিল্প-সংস্কৃতির জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছিল কাতার। এই বিষয়ে কাতারের প্রধান পৃষ্টপোষক দেশটির সাবেক আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি ২০০৮ সালে ইসলামিক শিল্পকর্মের জন্য দোহায় একটি জাদুঘর তৈরি করেন।

পল গঁগ্যার চিত্রকর্ম ‘হোয়েন উইল ইউ ম্যারি’; Source: Wikimedia Commons

শেখ হামাদের কন্যা শেখ আল মায়েসা বিনতে হামাদ বিন খলিফা আল সানির সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাতার এর আগে মার্ক রথকো এবং পল সেজানের চিত্রকলা সংগ্রহে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। ২০১৫ সালে ফরাসী শিল্পী পল গঁগ্যার ‘হোয়েন উইল ইউ ম্যারি’ নামক পেইন্টিংটি প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলারে ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য কিনে নেন শেখ আল মায়েসা। সেসময় টাকার অঙ্কে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান চিত্রকর্মের মর্যাদা পায় সেটি।

‘সালভাতর মুন্দি’ অর্থ হলো ‘পৃথিবীর রক্ষাকর্তা’, ছবিটিতে যিশু খ্রিস্টকে দেখা যায় রেনেসাঁ যুগের আদলে নীল রঙের পোশাক পরিহিত অবস্থায়, সেখানে তিনি ডান হাতের আঙুল উঁচু করে রেখছেন, তার বাম হাতে আছে একটি স্বচ্ছ ক্রিস্টালের গোলক। ইসলামে যিশু খ্রিস্টকে হযরত ঈসা (আ) হিসেবে মানা হয়।

‘সালভাতর মুন্দি’; Source: Wikimedia Commons

২০০৫ সালে রবার্ট সাইমন এবং আলেকজান্ডার প্যারিশ নামক দুই শিল্প-সংগ্রাহক মাত্র ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে ‘সালভাতর মুন্দি’কে কিনেছিলেন, যদিও তারা তখনো জানতেন না এটি কার আঁকা। ছবিটির অবস্থাও তখন ভালো ছিল না, সাইমনের বন্ধু ডায়ান মোডেস্টিনি পরবর্তী কয়েক বছরের চেষ্টায় ছবিটিকে এর মূল অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। একই সাথে তারা আবিস্কার করেন, এই ছবির শিল্পী স্বয়ং লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। প্রথমদিকে এটি নকল কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, লন্ডনের ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি পরবর্তীতে এটিকে ‘আসল’ বলে মর্যাদা দেয়।

এরপর নানা হাত ঘুরে, ছয় বছর আগে এটি একবার কাতারের রাজপরিবারের নিকট আসে, কিন্তু তারা তখন সেটি কেনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। সেবারে ৮ কোটি ডলারে চিত্রকর্মটি কিনেছিলেন রাশিয়ান ধনকুবের দিমিত্রি রিবোলোভ্লেভ। তিনি সেটা বিক্রির পর ছবিটি আসে ক্রিস্টি’স-এর নিলামঘরে, বাকিটা এখন ইতিহাস।

ফিচার ইমেজ: Reuters photo: Faisal Al Nasser

Related Articles