Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গুগল অ্যাডসেন্স: গুগল থেকে অর্থ উপার্জনের আকর্ষণীয় উপায়

আর ভাল লাগছে না এই ১০-৫ টার মামলা। চাকরি তো নয়, যেন গোলামী। অনেক হয়েছে অন্যের অধীনে কাজ করা, আর না। এবার নিজের মতো করে স্বাধীন কিছু করবো। এটা আমার মনোভাব নয়। চাকরির একঘেয়েমিতে বিরক্ত অনেক তরুণ-তরুণীর মনের কথা এটি। আধুনিক প্রজন্মের মাঝে চাকরি না করে চাকরি দেয়ার প্রবণতা প্রবল কিংবা আরো ভালো করে বলতে, স্বাধীন ব্যবসা করার ইচ্ছেটা প্রবল, আমরা যাকে উদ্যোক্তা বলি। আর তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রথম পছন্দ হলো অনলাইন ভিত্তিক ইনকাম সোর্স। চলুন আজ আমরা দেখে নেই ঘরে বসে কীভাবে টাকা পয়সা উপার্জন করা যায়।

অনালাইনে টাকা পয়সা কামানোর অন্যতম উপায় হলো গুগল অ্যাডসেন্স। বুঝতেই পারছেন, গুগলের মতো প্রযুক্তি দানবের সাথে আপনি কাজ করতে যাচ্ছেন।

গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense) কী

যারা নিয়মিত গুগলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেন তারা খেয়াল করলে দেখবেন, সেখানে কন্টেন্টের উপরে, ডানে–বামে বিভিন্ন অ্যাডভারটাইজমেন্ট দেয়া হয়। যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তারাও খেয়াল করলে দেখবেন নিউজফিডের ডানে চ্যাটলিস্টের সাথেই কিছু অ্যাডভারটাইজমেন্ট দেয়া হয়। সেই অ্যাড (পাঠক, বারবার অ্যাডভারটাইজমেন্ট পড়তে বিরক্ত লাগবে। তাই ছোট করে অ্যাড লিখলাম) দেখে ভালো লাগলে ক্লিক করেন কিংবা প্রয়োজনীয় কিছু হলে ক্লিক করেন। এই ক্লিকের জন্য গুগল হোস্ট সাইটকে (যে সাইটে অ্যাডটি দেয়া হয়েছে) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার দেয়। একে কস্ট পার ক্লিক (Cost Per Click) বলে। কখনো কখনো Cost Per Impression-এর উপর ভিত্তি করেও ডলার দেয়। এটা নিয়ে পরে বিস্তারিত লিখছি। গুগলের বার্ষিক উপার্জনের মোটা একটা অংশ আসে অ্যাডসেন্স থেকে।

এক নজরে অ্যাডসেন্স

  • প্রথমত অ্যাডসেন্সের অ্যাড শুধু মাত্র অ্যাডসেন্স প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত ওয়েবসাইটগুলোই ব্যবহার করতে পারবে।
  • যারা গুগলে অ্যাড দিতে চান তারা গুগল অ্যাডওয়ার্ডস (Google Adwords)  এ অ্যাড দেন। যেকোনো ধরণের অ্যাড যেমন –  ভিডিও, গেমস, প্রোডাক্টস কিংবা সার্ভিস ইত্যাদির জন্য অ্যাডের মালিক গুগলকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেন।
  • মনে করুন, আপনার ওয়েবসাইটে এসে একজন ভিজিটর বাটার (Bata) অ্যাডে ক্লিক করলো। অ্যাডভারটাইজার (অর্থাৎ বাটা) প্রতি ক্লিক ১ ডলার করে ধার্য করলো। তাহলে আপনি অর্থাৎ পাবলিশার  পাবেন সেই ১ ডলারের ৬৮% (০.৬৮ ডলার) এবং গুগল পাবে ৩২% (০.৩২ ডলার)।
  • ব্লগে বা ওয়েবসাইটে ইচ্ছা মতো অ্যাড ব্যবহার করতে পারবেন না। কী ধরণের ওয়েবসাইটে কী ধরণের অ্যাড দেয়া হবে সেটা শুধুমাত্র গুগল নির্ধারণ করতে পারবে।

আশা করি গুগল অ্যাডসেন্স সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা দিতে পেরেছি। এখন দেখা যাক অ্যাডসেন্সের অ্যাড পেতে হলে প্রথমে কী করতে হবে।

গুগল অ্যাড দিবে আপনার ওয়েবসাইটে। অর্থাৎ আপনাকে একটি ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগ খুলতে হবে। কোন টপিকের উপর ব্লগ খুলবেন?

  • প্রথমত যে বিষয়ে আপনি অভিজ্ঞ কিংবা যে বিষয় সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা রয়েছে এবং যে বিষয়ে আপনি ভালো কন্টেন্ট কিংবা আর্টিকেল লিখতে পারবেন সেসব বিষয় সিলেক্ট করা ভালো।

Image Credit: blog.phplabs.net

  • বিষয় নির্বাচনের সময় সিপিসি (Cost per Click)-এর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বেশি সিপিসি হবে এমন বিষয় নির্বাচন করবেন। নিতান্তই না পেলে সমস্যা নেই। অনেকে বেশি সিপিসির জন্য এমন কিছু বিষয় নির্বাচন করে যে বিষয়ে তিনি বিন্দুমাত্রও অভিজ্ঞ নন।
  • বিভিন্ন টপিকের/বিষয়ের (কীওয়ার্ড) সিপিসি দেখার জন্য গুগল অ্যাডওয়ার্ড কীওয়ার্ড প্ল্যানার টুল ব্যবহার করতে পারেন।
  • টপিক নির্বাচনের পর এখন একজন ড্যাডির কাছে যেতে হবে। হালকা রসিকতা করলাম। Godaddy এবং Namecheap যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে আপনার পছন্দমতো যেকোনো ডোমেইন কিনতে পারেন। ডোমেইন নির্বাচনের সময় কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন।
    ১) আপনার ইউজার সহজেই মনে রাখতে পারে এমন নাম নির্বাচন করুন। যেমন – best-tech-gadgets-in-the-world.com এরকম বিশাল নাম দেয়ার কথা চিন্তাও করবেন না।
    ২) ডোমাইনের নামের শেষে ‘.com’, ‘.net’ এবং ‘.org’ ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ মানুষের কাছে ‘.com’ ই বেশি পরিচিত। তবে ‘.rocks’ ‘.biz’ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এ ধরণের নাম মানুষ সহজে মনে রাখতে পারে না।

Image Credit: partnernoc.cpanel.net

  • ডোমেইন কেনা হলে এবার ওয়েব হোস্টিং কিনতে হবে। ওয়েব হোস্টিং হলো অনেকটা কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভের মতো, যেখানে কম্পিউটারের সবধরণের তথ্য জমা  থাকে। ওয়েবসাইট বা ব্লগের কনটেন্ট (আর্টিকেল), ছবি এবং ভিডিওসহ অন্যান্য তথ্য এখানে জমা রাখতে পারেন। ওয়েবহোস্টিং কিনতে পারেন A2Hosting এবং Hostgator থেকে।

Image Credit: wpleaders.com

  • এবার একটি প্রিমিয়াম থিম এবং প্লাগিন কিনতে হবে। প্রিমিয়াম থিম এবং প্লাগিন কিনতে My Theme Shop, Elegant Themes, Theme Forest এ ঢুঁ মারতে পারেন।
  • ব্লগের ডিজাইন এবং নেভিগেশন যাতে User Friendly হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।

ওয়েবসাইট তো তৈরি হয়ে গেল। এখন তাহলে দেখে নেই ওয়েবসাইটে কী ধরণের কন্টেন্ট থাকতে হবে, ভিজিটর কেমন হতে হবে বা কী কী শর্ত পূরণ করলে অ্যাডসেন্সের সদস্য হতে পারবেন।

গুগল অ্যাডসেন্সের অনুমোদন পেতে হলে

  • অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট দেখে অ্যাড দেয়। আপনার কন্টেন্ট বা আর্টিকেলগুলো যেন একটু ভিন্নধর্মী এবং অন্যদের চেয়ে আলাদা হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
  • অবশ্যই অন্য ওয়েবসাইট থেকে কপি করা, কাউকে আঘাত করে কোনো কিছু লেখা (Hateful Content) যাবে না। অ্যাডাল্ট, পাইরেটেড মুভি এবং আন এথিকাল বিষয়ে অবশ্যই বর্জনীয়।
  • বানানের দিকে লক্ষ্য রাখবেন।

Image Credit: aboriginalpress.ca

  • শুধুমাত্র ছবি, ভিডিও কিংবা ছোটোখাট কন্টেন্টযুক্ত ওয়েবসাইট কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হবে না। অনুমোদন পেতে সাইটে কমপক্ষে ২০-৩০ (৫–১০টি কন্টেন্ট কমপক্ষে ১৫০০ শব্দের) টি দীর্ঘ পোস্ট থাকতে হবে। ছোটোখাট পোস্ট সর্বনিম্ন ৭০০ শব্দের হলেও চলবে। বুঝতেই পারছেন, বিষয়টাকে হালকা করে দেখার কোনো উপায় নেই।
  • সদ্য জন্ম নেয়া সাইটে আপনি আপনার সর্বোচ্চ মেধা আর শ্রম ঢেলে দিচ্ছেন। সে অনুসারে বিশাল সংখ্যক ভিজিটর কিংবা ফলোয়ারও আপনার প্রাপ্য। তাই ভিজিটর বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; যেমন – ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপ খুলতে পারেন। মনে রাখবেন, পেজে ভিজিটর কম হলে অ্যাডে ক্লিক কম হবে। ক্লিক কম মানে ইনকামও কম।
  • অবশেষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ওয়েবসাইটের জন্য About Us, Contact, Privacy Policy/ Disclaimer পেজ তৈরি করুন। অনেক নতুন ওয়েবসাইট অ্যাডসেন্স সদস্য হতে পারেন না শুধুমাত্র এই ছোটো ভুলের জন্য।

এভাবে About Us পেজটি তৈরি করতে পারেন; Image credit: onextrapixel.com

  • ওয়েবসাইটের বয়স কমপক্ষে ৩ মাস হলে অ্যাডসেন্সে আবেদন করতে পারবেন। তবে দক্ষিণ এশীয় দেশ (ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ) এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য ৬ মাস সময় নেয়া ভালো।
  • অ্যাডসেন্সে আবেদন করতে হলে বয়স অবশ্যই ১৮ হতে হবে।

সব ধরনের প্রস্তুতি তো নেয়া হলো। চলুন দেখে নেই অ্যাডসেন্সে কীভাবে আবেদন করবেন।

অ্যাডসেন্সে আবেদন করার উপায়

  • প্রথমে https://www.google.com/adsense এ গিয়ে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। জিমেইল অ্যাকাউন্ট থাকলে সরাসরি খুলতে পারবেন। আর না থাকলে Create a new account এ ক্লিক করে নতুন জিমেইল (Gmail) অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

Image Credit: shoutmeloud.com

  • তারপর ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিতে হবে এবং ভাষা নির্বাচন করতে হবে।

Image Credit: wikihow.com

  • অবশেষে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা দিতে হবে। দেশ, টাইমজোন, যে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পেতে চান সেটা বিজনেস নাকি পার্সোনাল, ফোন নাম্বার ইত্যাদি ঠিকঠাক পূরণ করতে হবে। আশা করি দেখলেই বুঝতে পারবেন কী কী করতে হবে।

Image Credit: wikihow.com

  • সব কিছু পূরণ করা হলে গুগল আপনাকে একটি অ্যাডসেন্স কোড দিবে যেটা ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত করতে হবে। গুগল ক্রলার টিম (Google Crawler) আপনার ওয়েবসাইটের সবকিছু ঠিক ঠাক আছে কিনা চেক করে দেখবে অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইট অ্যাডসেন্সের সব শর্ত মেনেছে কিনা এবং সাইটটি অ্যাড পাবার যোগ্য কিনা।
  • আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল (Approval) পাবার আগ পর্যন্ত কোনো অ্যাড পাবেন না।

অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল তো পেলেন, অ্যাডও পেলেন। এখন ওয়েবসাইটে কীভাবে অ্যাড বসাবেন বা কোথায় বসালে ভিজিটরের জন্য সুবিধা হয় সেটা দেখতে হবে।

কোথায় অ্যাড বসাবেন

Image Credit: code.tutsplus.com

  • ওয়েবপেজে সর্বোচ্চ ৩টি অ্যাড দিতে পারবেন।
  • অ্যাডের সাইজ, টাইপ এবং স্টাইল নিজের পছন্দ মতো করে দিতে পারবেন।
  • কন্টেন্টের শুরুতে, সাইডে এবং শেষে অ্যাড বসাতে পারেন।
  • কী ধরণের অ্যাড আপনার সাইটে দেখানো হবে সেটা গুগল সিদ্ধান্ত নিবে। যেমন– আপনার একটি রান্না-বান্নার সাইট আছে সেখানে রাঁধুনি গুড়া মসলা, সুপার শপের অফার কিংবা স্বাস্থ্য এবং পুষ্টিবিষয়ক সাইটের অ্যাড দেখাবে। তবে অ্যাডসেন্স পাবলিশার (আপনি) চাইলে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে গিয়ে ‘Allow and Block Adds’ করতে পারেন।

অনেকেই মনে করেন, অ্যাডসেন্সের অ্যাড দিলেই টাকা পাওয়া যায়। আসলে বিষয়টা তা না, অ্যাডে যতক্ষণ না পর্যন্ত ক্লিক হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো টাকা পাবেন না। গুগল আপনাকে অযথা বসিয়ে বসিয়ে টাকা দিবে না।

যে কারণে আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট বাতিল হতে পারে

  • অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ইনভ্যালিড ক্লিক (Invalid Click)। পাবলিশার নিজে অ্যাডে ক্লিক করলে কিংবা অটোমেটিক অ্যাড ক্লিকিং টুল, রোবট ব্যবহার করে ক্লিক করলে সেই ক্লিক ইনভ্যালিড হয়।

Image Credit: isaumya.com

  • সাইটের ক্লিক পর্যবেক্ষণ করতে Statcounter ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে ইনভ্যালিড ক্লিক সনাক্ত করতে পারবেন এবং সেই ইউজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গুগল ফর্মটি পূরণ করতে পারেন।
  • কেউ কেউ আবার টাকার বিনিময়ে ক্লিক কিনেন। মনে রাখবেন, গুগল এতটা বোকা না যে বুঝবে না আপনার চালাকি।
  • একটি পেজে কখনোই ৩টির বেশি অ্যাডস্লট ব্যবহার করবেন না।
  • অ্যাডসেন্স গাইডলাইন না মেনে চলা।
  • ছোট কন্টেন্ট পাবলিশ করা।
  • কন্টেন্ট পাইরেসি এবং কপিরাইট আইন ভঙ্গ করা।

অ্যাডসেন্স থেকে আয় বাড়াতে হলে যা করবেন

  • প্রথমত, অ্যাডে ক্লিক বাড়ানোর জন্য সাইটে ভিজিটর বাড়াতে হবে। ভিজিটর বাড়াতে মানসম্পন্ন এবং ইউজারের প্রয়োজনীয় কিংবা উপকারী পোস্ট দিতে পারেন।
  • ভিজিটরের চোখে পড়ে এমন জায়গায় অ্যাড বসান। যেমন– কন্টেন্টের শুরুতে এক পাশে অ্যাড বসান যাতে স্ক্রল ডাউন না করেও অ্যাড দেখা যায়। কন্টেন্টের পাশে অ্যাড না দেয়াই ভালো। চাইলে কন্টেন্টের শেষেও অ্যাড বসাতে পারেন।
  • ওয়েবসাইট লোড হতে বেশি সময় না নিলেই ভালো।

সবশেষে, ব্লগটাকে এমনভাবে সাজান যাতে দেখে যেন মনে না হয়, ব্লগটা শুধু অ্যাড দেয়ার জন্যই তৈরি হয়েছে। যারা নিয়মিত গুগলে ব্রাউজ করেন তারাও জানেন, অতিরিক্ত অ্যাড দেয় এমন সাইটগুলো কতটা বিরক্তকর।

ফিচার ইমেজঃ rayvatseo.com

Related Articles