Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কিটো ডায়েট: দ্রুত ওজন কমানোর এক অভিনব কৌশল

একটু বয়স বাড়লেই শরীরের অতিরিক্ত ওজন আমাদের জন্য উটকো ঝামেলা হয়ে দাঁড়ায়। একজন স্থূলকায় ব্যক্তির ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নানা প্রকার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই তাদের জন্য ডাক্তারদেরও প্রথম পরামর্শ হয় শরীরের ওজন কমানো।

এখন এই ওজন কমানোর জন্য মানুষ নানারকম পন্থা অবলম্বন করে থাকে। খাদ্যাভাসে পরিবর্তন থেকে শুরু করে নানারকম শারীরিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই দেহের বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলার জন্য। আমাদের অনেকেই এজন্য পরিকল্পিত খাদ্যাভাস বা ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করার চেষ্টা করি। এরকম বেশিরভাগ ডায়েট প্ল্যানেই আসলে যা থাকে, তা হলো চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিহার করে বেশি বেশি করে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। এমন খাদ্যাভ্যাস বেশ পরিচিত হলেও সবার ক্ষেত্রে খুব বেশী কার্যকরী হয় না। অনেকেই আছেন, যারা চর্বি জাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিয়েছেন, শরীরচর্চা করছেন, তবুও ওজন বিশেষ কমছে না। এমন অসুবিধায় ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের ডাক্তাররা এক বিশেষ ধরনের ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। এমনই একটি ডায়েটের নাম হলো কিটো ডায়েট

দেহের অতিরিক্ত ওজন নানারকম রোগের দরজা খুলে দেয়; Image Source: thejournal.ie

কিটো ডায়েট আসলে কী ?

আমাদের শরীরে শক্তির মূল উপাদান হলো গ্লুকোজ। শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেহে প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্লুকোজ সরবরাহ করা হয়। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে এই গ্লুকোজ শক্তি সরবরাহ করে। এভাবে যেটুকু গ্লুকোজ দরকার, তা ব্যবহৃত হওয়ার পর অতিরিক্ত অংশটুকু আমাদের শরীরে জমা হতে শুরু করে। আর এভাবেই আমাদের দেহে ওজন বাড়তে থাকে।

খেয়াল করলে দেখা যায় যে, দেহের ওজন বাড়ানোর জন্য চর্বি জাতীয় খাদ্য যতটুকু দায়ী, তার থেকে বেশি দায়ী শর্করা জাতীয় খাদ্য। কিটো ডায়েটে আসলে এই শর্করা জাতীয় খাদ্য সেবনের মাত্রা একেবারে কমিয়ে দেওয়া হয়। আর বেশি জোর দেওয়া হয় চর্বি ও প্রোটিন রয়েছে, এমন খাদ্যের উপর।

আগেই বলা হয়েছে যে, আমাদের দেহে গ্লুকোজ শক্তির প্রধান উৎস। যখন শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া হয়, তখন এই প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্লুকোজ শরীর পায় না। শক্তি সরবরাহ করার জন্য শরীর তখন দেহের চর্বি ব্যবহার করতে শুরু করে। দেহের এই চর্বি বা ফ্যাট ভাঙনের মাধ্যমে তৈরি হয় কিটোন বডিজ। তখন গ্লুকোজের পরিবর্তে কিটোন বডিজ দেহে শক্তি সরবরাহ করে থাকে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় কিটোসিস। আর এ থেকেই নামকরণ হয়েছে কিটো ডায়েট বা কিটোজেনিক ডায়েট।

কিটো ডায়েটে গ্লুকোজের বদলে কিটোন দেহে শক্তি জোগায়; Image Source: 3naturalbionutrition.com

এভাবে শর্করা না পেয়ে দেহ অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে শুরু করে এবং আমাদের ওজনও দ্রুত হ্রাস পায়। এমন ডায়েট সূক্ষ্মভাবে অনুসরণ করলে মাত্র দুই সপ্তাহেই ওজন কমানো সম্ভব। তবে এর জন্য যেমন খাদ্যের ব্যাপারে বেশ কড়া নিয়ম পালন করতে হয়, তেমনি এর বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। তাই যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, তাদের ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত নিজে নিজে এমন ডায়েট অনুসরণ করা উচিত নয়।

যেসব খাদ্য পরিহার করতে হবে

১. এ তালিকায় প্রথমেই আসবে ভাত। বাঙালি হিসেবে আমাদের সবাই তিনবেলায় অন্তত দু’বার ভাত খেয়ে অভ্যস্ত। ঠিক এ কারণেই যতই শাকসবজি খাওয়া হোক না কেন, অনেকের ওজন কমতে চায় না।

২. ভাত বাদ দিলে সবার আগে ভাতের বদলে রুটি খাওয়ার চিন্তা আমাদের মাথায় আসবে। তবে চাল, আটা, ময়দা দিয়ে তৈরী সকল খাবারে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ থাকে। তাই আটা ও ময়দা দিয়ে তৈরী খাদ্য, যেমন– রুটি, পাস্তা, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল ইত্যাদি খাওয়া বাদ দিতে হবে।

৩. সকল প্রকার ফলমূল খাওয়া বাদ দিতে হবে। এটা সত্যি যে, অনেক ডায়েটে ফল খাওয়ার পেছনে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু ফলে প্রচুর পরিমাণে চিনি বা গ্লুকোজ থাকে। তাই ফল খাওয়াও কমিয়ে দিতে হবে। তবে স্বল্প পরিমাণে জাম জাতীয় ফলগুলো খাওয়া যেতে পারে।

৪. ডাল, মটর এবং অন্যান্য দানা জাতীয় শস্য খাওয়া যাবে না।

৫. সবজির মধ্যে সকল প্রকার আলু, গাজর ও অন্যান্য টিউবার জাতীয় সবজি পরিহার করতে হবে।

৬. দুগ্ধজাত খাদ্য হিসেবে মাখন ও পনির খাওয়া গেলেও সরাসরি দুধ খাওয়া যাবে না।

৭. কোমল পানীয় ও অ্যালকোহলে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। তাই এগুলো খাওয়ার কথা চিন্তাই করা যাবে না।

উপরের তালিকায় এমন অনেক খাবার রয়েছে, যা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসলে কম সময় লাগে বলেই এই ডায়েটের নিয়ম বেশ কড়া। আর একদিনেই যে এগুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। একেবারে বাদ না দিয়ে বরং খাবারগুলোর পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলা ভালো। এরপর একটু অভ্যস্ত হলেই এই ডায়েট পুরোপুরি অনুসরণ করা সম্ভব।

শর্করা জাতীয় খাদ্য আহারের মাত্রা ৫-১০ শতাংশে এ কমিয়ে আনতে হবে; Image Source: healthblanc.com

যেসব খাবার খাওয়া যাবে

১. সব ধরনের মাংস পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যাবে।

২. সকল প্রকার মাছ, বিশেষ করে প্রচুর চর্বি বা তেল রয়েছে, এমন মাছ খাওয়া ভালো।

৩. খাদ্য তালিকায় মাখন ও ঘি যোগ করা যায়। রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার না করে ঘি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. কিটো ডায়েটের খাদ্য তালিকার এক প্রধান খাবার হলো ডিম।

৫. মাখন ও ঘি ছাড়াও পনির খাওয়া যাবে।

৬. সকল প্রকার বাদাম ও বাদাম থেকে তৈরি অন্যান্য খাদ্য, যেমন পিনাট বাটার খাওয়া যাবে।

৭. খাদ্যে সয়াবিন তেলের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে দেওয়া উচিত। আর সয়াবিনের পরিবর্তে রান্নার জন্য ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।

৮. সকলপ্রকার সবুজ শাকসবজি, মটরশুঁটি, টমেটো, পেয়াজ ইত্যাদি খাওয়া যাবে।

৯. এ ডায়েটে খাদ্যে মশলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

প্রকৃতপক্ষে ভাত, রুটি এগুলো আমাদের প্রধান খাদ্য। মাছ-মাংস, ডিম মূলত এদের সাথে অনুষঙ্গ হিসেবে আমরা খাই। তাই কিটো ডায়েট অনুসরণ করে ওজন কমাতে হলে ভাত ও রুটির কথা ভুলে যেতে হবে। সবুজ শাকসবজি, ডিম, মাছ-মাংস, পনির এগুলো দিয়ে নানারকম খাদ্যের রেসিপি থাকে। অন্তত দুই সপ্তাহ এরকম কিছু খাবার খেলে ওজন দ্রুত কমানো সম্ভব।

 চর্বি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য বেশি করে খেতে হবে ; Image Source: superfastdiet.com

কিটো ডায়েটের যত উপকারিতা

এ ডায়েট অনুসরণ করলে ওজন তো কমেই, তাছাড়াও এর আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। কিটো ডায়েটে ঠিকঠাক মেনে চললে শরীরে ক্ষুধা সৃষ্টিকারী হরমোন কম তৈরি হয়। যার ফলে ক্ষুধা কমে যায় এবং এতে করে শরীরের ওজনও কমতে শুরু করে।

আমাদের ত্বকের জন্যও কিটো ডায়েট অনেক উপকারী। যাদের ত্বকে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি, এ ডায়েট অনুসরণের ফলে তা একেবারে কমে যেতে পারে।

 কিটো ডায়েটের খাদ্য পিরামিড; Image Source: zandlslant.com

বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় কিটো ডায়েট পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। গবেষণা মোতাবেক, কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপির পাশাপাশি এই ডায়েট ক্যান্সারের চিকিৎসায় কাজে আসে। এ ডায়েট অনুসরণ করে ক্যান্সার কোষ ও টিউমারের বৃদ্ধি কমিয়ে ফেলা যায়। তবে এ সেক্টরে গবেষণার ক্ষেত্র অনেক সীমিত। তাই এ ব্যাপারে আরো বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।

যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, এ ডায়েট তাদের বিশেষ কাজে আসতে পারে। বিভিন্ন প্রকার হৃদরোগের প্রধান কারণ হলো দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। কিটো ডায়েট দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। অপরদিকে দেহের জন্য উপকারী কোলেস্টেরল হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

এই কিটো ডায়েট মূলত বিভিন্ন স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। দেহে যে কিটোন তৈরি হয়, তা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য বিশেষ উপকারী। আলঝেইমার ও মৃগী রোগের চিকিৎসায় রোগীদের এ ডায়েট অনুসরণের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

কেবল ওজন কমানোই কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য নয়; Image Source: perfectketo.com

এ ডায়েট সবার জন্য নয়

কিটোজেনিক ডায়েট স্বল্প সময়ে ওজন কমানোর জন্য বেশ কার্যকরী হলেও এটি দীর্ঘ সময় ধরে অনুসরণ করা উচিত নয়। অনেকদিন ধরে এই খাদ্যাভাস মেনে চললে কিডনিতে পাথর, রক্তে প্রোটিনের আধিক্য, শরীরে খনিজ উপাদান ও ভিটামিনের অভাব এবং যকৃতে চর্বি জমতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী কিটো ডায়েটের কারণে ‘কিটো ফ্লু’ নামক এক বিশেষ রোগ হয়। যদিও এই ফ্লু বেশিদিন থাকে না, তবুও এর জন্য ডায়েটে পরিবর্তন আনা উচিত।

এই ডায়েট দীর্ঘদিন অনুসরণ করলে কিটো ফ্লু নামক এক অসুখ হয় ; Image Source: keto-mojo.com

যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে ও ইনসুলিনের উপর নির্ভর করতে হয়, কিডনির রোগ রয়েছে, ইটিং ডিজঅর্ডার রয়েছে তাদের জন্যও কিটো ডায়েট উপযুক্ত নয়। তাই নিজ উদ্যোগে এ ডায়েট শুরু না করাই ভালো। এটি শুরুর আগে আগে নিজের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অথবা একজন ডায়েটিশিয়ানের সাথে আলাপ করা উচিত।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস আর কিটো ডায়েটের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। চাল-ডাল ও আটা-ময়দা মিলিয়ে আমরা দৈনিক প্রচুর কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করি। কাজেই কিটো ডায়েট শতভাগ অনুসরণ করা অনেক কষ্টকর একটা ব্যাপার। তাই এই খাবারগুলো একেবারে পরিত্যাগ না করে বরং পরিমাণ কমিয়ে আনা উচিত। তাছাড়া আমরা যেভাবে অতিরিক্ত তেল দিয়ে মাছ-মাংস রান্না করি, তাও খুব স্বাস্থ্যকর নয়। কাজেই সবকিছুর মাঝে ভারসাম্য রেখে ডাক্তারের সহায়তায় একটি ডায়েট চার্ট তৈরি করা যেতে পারে।

এই ডায়েট শুরু করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত ; Image Source: wharncliffewalkin.com

আমরা বাংলাদেশীরা কীভাবে এই কিটো ডায়েট অনুসরণ করতে পারি, তা নিয়ে অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইন্টারনেটে আলোচনা করেছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখলে এ ডায়েট সম্পর্কে আরো জানা যাবে।

আরো জানতে পড়ুন- The Complete Ketogenic Diet for Beginners: Your Essential Guide to Living the Keto Lifestyle

This article is about a special diet plan named Keto Diet.

Necessary references have been hyperlinked within the article. 

Featured Image Source: dietdoctor.com

Related Articles