Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আবু ওমর আল–শিশানী (পর্ব–২): জর্জীয় স্পেশাল ফোর্সের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ থেকে আইএসের যুদ্ধমন্ত্রী

২০১৩ সালের মে মাসে আবু ওমর আল–শিশানী দায়েশের ‘খলিফা’ আবু বকর আল–বাগদাদীর প্রতি তার আনুগত্য ঘোষণা করেন। ঠিক কী কারণে আল–শিশানী এরকম সিদ্ধান্ত নেন সেটি জানা যায়নি। ধরে নেয়া যেতে পারে, দায়েশের বিশ্বব‍্যাপী খিলাফত প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা তাকে আকৃষ্ট করেছিল, কিংবা এর গভীরে অন‍্য কোনো কারণও থাকতে পারে। যা-ই হোক, আল–শিশানীকে দায়েশের উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার নিযুক্ত করা হয় এবং উত্তর সিরিয়ায়, বিশেষত আলেপ্পো, রাকা, লাতাকিয়া ও ইদলিবের উত্তরাঞ্চলে দায়েশের যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। অল্পদিনের মধ্যেই আল–শিশানী উত্তর সিরিয়ায় দায়েশের ‘আমির’ নিযুক্ত হন। চেচনিয়াসহ রুশ ফেডারেশনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যত মিলিট‍্যান্ট দায়েশে যোগ দিয়েছিল, তাদের সবাইকে আল–শিশানীর কমান্ডে রাখা হয়।

২০১৩ সালের আগস্টে আল–শিশানীর জইশ আল–মুহাজিরিন ওয়াল আনসার গ্রুপ জাবহাত আল–নুসরার সঙ্গে আলেপ্পোয় অবস্থিত মেনাঘ বিমানঘাঁটির অবরোধে যোগ দেয়। ২০১২ সালের আগস্ট থেকে মিলিট‍্যান্টরা সিরীয় বিমানবাহিনীর এই ঘাঁটিটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল, কিন্তু দখল করতে সক্ষম হয়নি। সিরীয় সরকারি সৈন‍্যরা দক্ষতার সঙ্গে মিলিট‍্যান্টদের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে আসছিল। কিন্তু জইশ আল–মুহাজিরিন ওয়াল আনসার মিলিট‍্যান্টরা যুদ্ধক্ষেত্রে আসার পর তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়।

দায়েশ মিলিট‍্যান্টদের সঙ্গে তাদের সামরিক ‘আমির’ আবু ওমর আল–শিশানী; Source: DNA India

আল–শিশানীর নির্দেশনায় মিলিট‍্যান্টরা একটি সোভিয়েত–নির্মিত বিএমপি আর্মার্ড ভেহিকলের চারপাশে অনেকগুলো তেল–উত্তোলন করার পাইপ সংযুক্ত করে এবং ৪ টন বিস্ফোরক সাঁজোয়া যানটির মধ‍্যে রাখে। একজন চেচেন মিলিট‍্যান্ট সেটিকে চালিয়ে মেনাঘ বিমানঘাঁটির কমান্ড সেন্টারের কাছে নিয়ে যায় এবং সেখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কমান্ড সেন্টারটি ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে সিরীয় সরকারি সৈন‍্যদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং এই সুযোগে মিলিট‍্যান্টরা প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে ঘাঁটিটি দখল করে নেয়। মিলিট‍্যান্টরা ঘাঁটিটির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী সলিম মাহমুদকে হত‍্যা করে এবং ঘাঁটিতে থাকা সিরীয় বিমানবাহিনীর ৫টি সোভিয়েত–নির্মিত মিল এমআই-৮ হেলিকপ্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়।

একই মাসে আল–শিশানীর নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা জাবহাত আল–নুসরা, আহরার আল–শাম এবং আরো কয়েকটি মিলিট‍্যান্ট গ্রুপের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে লাতাকিয়ায় আক্রমণ চালায়। উল্লেখ্য, সিরীয় রাষ্ট্রপতি বাশার আল–আসাদ আলাওয়ি (Alawi/Alawite) সম্প্রদায়ভুক্ত এবং লাতাকিয়া এই সম্প্রদায়ের অন্যতম কেন্দ্রভূমি। এছাড়া সিরিয়ার ভূমধ‍্যসাগরীয় উপকূল অঞ্চলের অর্ধেক লাতাকিয়ায় অবস্থিত এবং লাতাকিয়ার তারতুস বন্দরে রুশ নৌঘাঁটি রয়েছে। ফলে সিরীয় সরকারের জন‍্য লাতাকিয়া অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এই অঞ্চলে সিরীয় সরকারি বাহিনী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং মিলিট‍্যান্টদের আক্রমণ ব‍্যর্থ হয়।

এদিকে আল–শিশানীর দায়েশে যোগদানের ফলে তার জইশ আল–মুহাজিরিন ওয়াল আনসার গ্রুপের মধ‍্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, কারণ গ্রুপটির অনেক সদস‍্যই দায়েশের সঙ্গে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিল না। এর ফলে ২০১৩ সালের নভেম্বরে গ্রুপটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জইশ আল–মুহাজিরিন ওয়াল আনসারের একাংশ আল–শিশানীর সঙ্গে আবু বকর আল–বাগদাদীর প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দায়েশের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে যায়। গ্রুপটির অপর অংশ স্বতন্ত্র একটি বাহিনী হিসেবে জাবহাত আল–নুসরার সঙ্গে সহযোগিতা অব‍্যাহত রাখে এবং ইমারাত কাভকাজের আমির দোকু উমারভের প্রতি তাদের আনুষ্ঠানিক আনুগত‍্য বজায় রাখে। সালাহউদ্দিন আল–শিশানী এই অংশের নতুন নেতা নিযুক্ত হন।

সালাহউদ্দিন আল–শিশানী, যিনি আবু ওমর আল–শিশানীর দায়েশে যোগদানের পর জইশ আল–মুহাজিরিন ওয়াল আনসার-এর একাংশের কমান্ডার নিযুক্ত হন; Source: Democracy & Freedom Watch

২০১৪ সালের প্রথমার্ধের মধ‍্যে আল–শিশানী দায়েশের অনানুষ্ঠানিক মুখপাত্র হয়ে ওঠেন। গণমাধ্যমে আল–শিশানীকে ‘ক‍্যামেরার সামনে পোজ দিতে উৎসুক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অন‍্যান‍্য দায়েশ নেতারা যেখানে ছবি তোলা বা ভিডিও করার সময় মুখ ঢেকে রাখতেন, সেখানে আল–শিশানীর লাল দাঁড়ি এবং ককেশীয় চেহারা ছিল গণমাধ্যমে অতিপরিচিত। সিরিয়ার রাকা শহরকে দায়েশ রাজধানী ঘোষণা করেছিল এবং আল–শিশানী সেখানে অবস্থিত দায়েশের মন্ত্রণা–পরিষদ ‘শুরা’র সদস্য নিযুক্ত হন এবং রাকায় অবস্থিত যে কারাগারটিতে দায়েশ বিদেশি জিম্মিদের বন্দি করে রাখত সেটির দায়িত্বও ছিল তার ওপরে। ক্রমে আল–শিশানী আবু বকর আর–বাগদাদীর বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা হয়ে ওঠেন।

২০১৪ সালের জুনে দায়েশ ইরাকে একটি বিরাট সাফল্য অর্জন করে‌। মাত্র ১,৫০০ (মতান্তরে ৮০০) দায়েশ মিলিট‍্যান্ট ৬০,০০০ সৈন‍্য (৩০,০০০ নিয়মিত সৈন‍্য এবং ৩০,০০০ পুলিশ) দ্বারা সুরক্ষিত ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ মসুল শহর দখল করে নেয়। প্রচুর মার্কিন–নির্মিত ইরাকি অস্ত্রশস্ত্র দায়েশের হস্তগত হয়। আল–শিশানীর নির্দেশে সিরিয়া থেকে দায়েশ মিলিট‍্যান্টরা ইরাকে প্রবেশ করে এবং প্রচুর মার্কিন–নির্মিত সাঁজোয়া যান, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে প্রত‍্যাবর্তন করে। এসব অস্ত্রশস্ত্র দায়েশ ব‍্যবহার করে সিরীয় সরকারি বাহিনী এবং বিভিন্ন সিরীয় মিলিট‍্যান্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে। উল্লেখ‍্য, সিরিয়ার বিভিন্ন মিলিট‍্যান্ট গ্রুপ সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পাশাপাশি নিজেদের মধ‍্যেও অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল।

ইরাকের মসুলে ইরাকি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া মার্কিন–নির্মিত একটি সাঁজোয়া যানের সঙ্গে আবু ওমর আল–শিশানী; Source: Business Insider

২০১৪ সালের আগস্টে আল–শিশানীর নেতৃত্বে দায়েশ মিলিট‍্যান্টরা সিরিয়ার রাকা প্রদেশে অবস্থিত আল–ত্বকবা বিমানঘাঁটি দখল করে নেয়। ঘাঁটিটি দখলের পর দায়েশ মিলিট‍্যান্টরা কয়েক শত সিরীয় যুদ্ধবন্দিকে হত‍্যা করে এবং ঘাঁটিতে থাকা প্রচুর রুশ–নির্মিত সিরীয় অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নেয়।

আল–শিশানী এই পর্যায়ে সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন, কারণ সিরীয় সরকার এসময় খুবই নাজুক অবস্থানে ছিল। কিন্তু দায়েশ নেতা আল–বাগদাদী এর পরিবর্তে উত্তর সিরিয়ায় কুর্দি, শিয়া ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে গণহত‍্যা চালানো শুরু করেন এবং আল–শিশানীকে ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করেন।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আল–শিশানীর সুদক্ষ পরিচালনায় দায়েশ মিলিট‍্যান্টরা ইরাকের আনবার প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয় এবং একপর্যায়ে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ শহরের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে এসে উপস্থিত হয়। ২০১৪ সালের শেষদিকে পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছিল যে, দায়েশ বাগদাদ দখল করে নিয়ে ইরাকি সরকারের পতন ঘটিয়ে ফেলতে পারে এরকম একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছিল। ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ (Department of the Treasury) আল–শিশানীর নাম ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’দের (Specially Designated Global Terrorists) তালিকায় যুক্ত করে। এভাবে ভাগ‍্যের পরিহাসে মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক জর্জীয় কমান্ডোর নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় উঠে আসে।

২০১৪ সালের জুন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক জোট ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে। একই সময়ে ইরানও সরাসরি ইরাককে দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করতে শুরু করে। ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় ইরাকে ১০,০০০-এর বেশি দায়েশ মিলিট‍্যান্ট নিহত হয়। মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোট ও ইরানের সক্রিয় সমর্থনে ইরাকি সরকারি বাহিনী ও ইরাকি শিয়া মিলিশিয়ারা দায়েশের দখলকৃত অঞ্চলগুলো একে একে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে। সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কুর্দি–নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ)-কে দায়েশের বিরুদ্ধে সমর্থন দিতে শুরু করে। সবশেষে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সিরিয়ায় সিরীয় সরকারের পক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে সিরীয় যুদ্ধের চাকা ঘুরে যায়। সব মিলিয়ে দায়েশের পতন শুরু হয়।

দায়েশের যুদ্ধমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় পর আবু ওমর আল–শিশানী; Source: EA WorldView

আল–শিশানী ২০১৫ সালের মধ‍্যে দায়েশের সামরিক ‘আমির’ (গণমাধ্যমের ভাষায়, দায়েশের যুদ্ধমন্ত্রী) পদে অধিষ্ঠিত হন। দায়েশের বিশেষ ব‍্যাটালিয়নগুলো (যেগুলো ছিল দায়েশের স্পেশাল ফোর্স) তার অধীনে ন‍্যস্ত করা হয়। বিশেষত, দায়েশের মূল স্পেশাল স্ট্রাইক ফোর্স, ‘গ্রুপ অফ সেন্ট্রাল ডিরেক্টরেট’, আল–শিশানীর তত্ত্বাবধানে গঠিত ও পরিচালিত হয়। ২০১৫ সালের ৫ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর (Department of State) আল–শিশানীকে ধরিয়ে দেয়া বা তার অবস্থান সম্পর্কে তথ‍্য প্রদানের জন্য ৫০ লক্ষ (বা ৫ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো নয়, রাশিয়াও আল–শিশানীকে বড় একটি হুমকি হিসেবে দেখত, কারণ সম্ভাবনা ছিল যে, সিরিয়ায় দায়েশের পতন হলে আল–শিশানী উত্তর ককেশাসে চলে গিয়ে সেখানকার মিলিট‍্যান্টদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। এর ফলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক একটি হুমকি সৃষ্টি হতে পারত। এজন্য মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোট ও রুশ বাহিনী আল–শিশানীকে শেষ করার জন্য উঠে-পড়ে লাগে, আর ইরাকি ও সিরীয় সরকারি বাহিনী তো তার ‘জানি দুশমন’ ছিলই।

গণমাধ্যমে বহুবার মার্কিন বা রুশ বিমান হামলায় আল–শিশানীর মৃত‍্যুর সংবাদ এলেও প্রতিবারই সেটি মিথ‍্যা প্রমাণিত হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২০১৪ সালে ৫ বার এবং ২০১৫ সালে ৩ বার দাবি করা হয় যে, আল–শিশানী নিহত হয়েছেন। প্রতিবারই এই দাবি ভুল প্রমাণিত হয়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে রুশ গণমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, মার্কিন স্পেশাল ফোর্স ইরাকের কিরকুক শহরের কাছে আল–শিশানীকে বন্দি করেছে, কিন্তু পরবর্তীতে এটিও ভুল প্রমাণিত হয়।

২০১৬ সালের মার্চে সিরিয়ার রাকা শহরে এক মার্কিন ড্রোন হামলায় আল–শিশানী আহত হন। প্রথমে মার্কিন গণমাধ‍্যমে দাবি করা হয়েছিল যে, আল–শিশানী মারা গেছেন, কিন্তু দায়েশের সংবাদ সংস্থা ‘আমাক’ এই খবর অস্বীকার করে।

২০১৬ সালের ১৩ জুলাই দায়েশ ঘোষণা করে যে, ইরাকের আল–শিরকাত শহরে যুদ্ধরত অবস্থায় আল–শিশানী নিহত হয়েছেন। আল–শিশানী কীভাবে নিহত হয়েছেন সে সম্পর্কে দায়েশের বিবৃতিতে কিছু বলা হয় নি। ধারণা করা যায়, ইরাকি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে, কিংবা ইরাকি বা মার্কিন বিমান হামলায় আল–শিশানীর মৃত‍্যু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তীতে দাবি করে, মার্কিন ড্রোন হামলায় আল–শিশানীর মৃত‍্যু হয়েছে। মৃত্যুর সময় আল–শিশানীর বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর।

২০০৮ সালে রুশ–জর্জীয় যুদ্ধের কিছু আগে জর্জীয় কমান্ডো সার্জেন্ট তারখান বাতিরাশভিলি (বামে) এবং এর ৫ বছর পর ২০১৩ সালে সিরিয়ায় আবু ওমর আল–শিশানী (ডানে); Source: FiSyria.com

আল–শিশানী সিরিয়ায় থাকা অবস্থায় সেদা দুদুর্কায়েভা নামের এক চেচেন মেয়েকে বিয়ে করেন। সেদা ছিলেন চেচনিয়ার প্রাক্তন মন্ত্রী আসু দুদুর্কায়েভের মেয়ে। সেদার প্রথম স্বামী হামজাত বোর্চাশভিলি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ‘জিহাদ’-এ যোগ দেয়ার জন‍্য সিরিয়ায় এসেছিলেন। সেদাও চেচনিয়া থেকে পালিয়ে স্বামীর সঙ্গে যোগ দিতে সিরিয়ায় আসেন। এজন্য তার বাবাকে চেচেন রাষ্ট্রপ্রধান রমজান কাদিরভ বরখাস্ত করেন। হামজাত সিরিয়ায় যুদ্ধে নিহত হলে আল–শিশানীর সঙ্গে সেদার বিয়ে হয়। তাদের এক কন‍্যাসন্তান রয়েছে, যার নাম সোফিয়া। ২০১৮ সালের ৪ জুলাই তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আল–শিশানীর স্ত্রীকে দায়েশের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

আবু ওমর আল–শিশানী, ওরফে তারখান বাতিরাশভিলি ছিলেন দায়েশের সবচেয়ে সফল সামরিক কমান্ডার। মার্কিন প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে কাউন্টার–টেররিজম ও কাউন্টার–ইনসার্জেন্সির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জর্জীয় সৈনিক ভাগ‍্যের পরিক্রমায় নিজেই পরিণত হন ‘টেররিস্ট’ এবং ‘ইনসার্জেন্ট’-এ। মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের প্রশিক্ষকদের কাছে একসময় যিনি ছিলেন ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’, পরবর্তীতে তিনিই তাদের কাছ থেকে শেখা রণকৌশল প্রয়োগ করে তাদেরই প্রশিক্ষিত ইরাকি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন। ইরাক, সিরিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়েশ যেসব নৃশংস হত‍্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তার দায় যে অনেকাংশে আল–শিশানীর কাঁধেও বর্তায়, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। দায়েশের মতো একটি সংগঠনের সদস্য হিসেবে আল–শিশানীর কর্মকাণ্ড যেমন তীব্রভাবে নিন্দনীয়, তেমনি জর্জীয় সরকার যেভাবে রুশ–জর্জীয় যুদ্ধে কৃতিত্ব প্রদর্শনকারী একজন যোদ্ধাকে প্রয়োজন শেষে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল যা তাকে ঠেলে দিয়েছিল উগ্রপন্থার দিকে, সেটিও সমর্থনযোগ্য নয়।

এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্ব পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে

আবু ওমর আল–শিশানী (পর্ব – ১): জর্জীয় স্পেশাল ফোর্সের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ থেকে আইএসের যুদ্ধমন্ত্রী

Related Articles