Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপের দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামগুলো

২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য কাতার বিশ্বকাপের নান্দনিক স্টেডিয়ামগুলো নিয়ে এর আগে Roar বাংলায় একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সাল আসতে এখনও অনেক দেরি। তার আগে, এবছরই রাশিয়াতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। চলুন দেখে নিই রাশিয়ার যে স্টেডিয়ামগুলোতে খেলা হবে, সেগুলো দেখতে কেমন।

লুজনিকি স্টেডিয়াম

লুজনিকি স্টেডিয়াম; Source: stadiumguide.com

১৯৫২ সালের অলিম্পিকে সাফল্যের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন আরও ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের প্রতি মনোযোগ দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৬ সালে এই স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়। প্রথমে এর নাম ছিল সেন্ট্রাল লেনিন স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির অবস্থান রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে, মস্কোভা নদীর তীরে।

নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত স্টেডিয়ামটি ছাদবিহীন ছিল। সে সময় এর ধারণ ক্ষমতা ছিল ১ লাখ। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে স্টেডিয়ামটির ব্যাপক সংস্কার করা হয়, এতে ছাদ সংযোজন করা হয় এবং এর আসন পুনর্বিন্যাস করে ১ লাখ থেকে হ্রাস করে ৮১,০০০ এ নামিয়ে আনা হয়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে এর আকার সবচেয়ে বড়।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্টেডিয়ামটি আবারও সংস্কার করা হয়। এ বছরের জুন মাসে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। স্টেডিয়ামটিতে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী এবং ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

লুজনিকি স্টেডিয়াম; Source: greensportsblog

সেইন্ট পিটসবার্গ স্টেডিয়াম

১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ব্যয়ে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম। প্রাক্তন কিরোভ স্টেডিয়ামের স্থানে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে এবং শেষ হয় এ বছরের এপ্রিল মাসে। এটি মূলত স্থানীয় এফসি জেনিত স্পোর্টস ক্লাবের স্টেডিয়াম।

স্টেডিয়ামটির ডিজাইন করেছে জাপানি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান কিশো কুরোকাওয়া। এটি দেখতে গোলাকার মহাকাশযানের মতো। আকৃতিগত দিক থেকে এর সাথে জাপানের টয়োটা স্টেডিয়ামের কিছুটা সাদৃশ্য আছে, যার নকশাও তৈরি করেছিল কিশো কুরোকাওয়া।

সেইন্ট পিটসবার্গ স্টেডিয়াম; source: The Calvert Journal

সেইন্ট পিটসবার্গ স্টেডিয়ামটির বর্তমান ধারণক্ষমতা ৫৬,০০০। কিন্তু বিশ্বকাপের পূর্বে এটিকে ৬৮,০০০ ধারণ ক্ষমতায় উন্নীত করা হবে। এই স্টেডিয়ামে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

ফিশ্‌ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম

ফিশ্‌ট অলিম্পিক স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছিল ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য। সে সময় উদ্বোধনী এবং সমাপনী- উভয় অনুষ্ঠানই এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অলিম্পিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর স্টেডিয়ামটির তেমন কোনো ব্যবহার ছিল না। ফলে এটিকে ২০১৮ বিশ্বকাপের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়। এর বন্ধ ছাদ খোলার ব্যবস্থা করা হয় এবং এর আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪৭,০০০ এ উন্নীত করা হয়।

ফিশ্‌ট স্টেডিয়াম; Source: Getty Images

স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ২০১৬ সালে। স্টেডিয়ামটির অবস্থান জর্জিয়ান উপকূলের নিকটবর্তী শোচি অঞ্চলের অ্যাডলার শহরে। বিশ্বকাপে এতে প্রথম রাউন্ডের ৪টি খেলা, দ্বিতীয় রাউন্ডের ১টি খেলা এবং কোয়ার্টার ফাইনালের ১টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।

সামারা স্টেডিয়াম

রাশিয়ার সামারা শহরের স্থানীয় ক্রাইলিয়া সোভেতভ ফুটবল ক্লাবের জন্য একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা চলছিল ২০১০ সাল থেকেই। ২০১২ সালে শহরটিকে ২০১৮ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে বাছাই করার পর সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা আছে।

সামারা স্টেডিয়াম; Source: stadiumguide.com

সামারা স্টেডিয়ামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর ৬৫.৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট গম্বুজাকৃতির ছাদ, যা ৩২টি প্যানেলের সমন্বয়ে গঠিত। স্টেডিয়ামটির আসন সংখ্যা হবে ৪৫,০০০। প্রাথমিকভাবে স্টেডিয়ামটি সামারা এবং ভোলগা নদীর মিলনস্থলে একটি উপদ্বীপের উপর নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে পরবর্তীতে স্থান পরিবর্তন করা হয়। স্টেডিয়ামটি সামারা ছাড়াও সামারা অ্যারিনা এবং কসমস অ্যারিনা নামেও পরিচিত।

ভোলগোগ্রাদ অ্যারিনা

বর্তমানে নির্মাণাধীন ভোলগোগ্রাদ অ্যারিনা স্টেডিয়ামটির অবস্থান রাশিয়ার দক্ষিণের ভোলগোগ্রাদ শহরে, ঠিক ভোলগা নদীর পাড়ে। এটি নির্মাণ করা হচ্ছে প্রাক্তন সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামের স্থানে, যা ছিল শহরটির প্রধান স্টেডিয়াম। ২০১৪ সালে পুরাতন স্টেডিয়ামটি ভূমিসাৎ করার পর ২০১৫ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এর নির্মাণ সর্বশেষ পর্যায়ে আছে। এ বছরের শেষের দিকে এটি উদ্বোধন করা হতে পারে।

ভোলগোগ্রাদ স্টেডিয়াম; Source: goal.com

ভোলগোগ্রাদ স্টেডিয়ামটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এর তারের সাহায্যে ঝুলন্ত ছাদ এবং জালিকাবিশিষ্ট বাইরের আবরণ। স্টেডিয়ামটির আসন সংখ্যা হবে ৪৫,০০০। তবে বিশ্বকাপের পর উপরের সারির আসনগুলো সরিয়ে একে ৩৫,০০০ আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামে পরিণত করা হবে। বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটি স্থানীয় রোটর ভোলগোগ্রাদ ক্লাবের নিজস্ব স্টেডিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

মোর্দোভিয়া অ্যারিনা

সারানস্ক স্টেডিয়াম; Source: getsoccernow.com

মোর্দোভিয়া অ্যারিনা স্টেডিয়ামটি সারানস্ক স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। ২০১০ সালে সর্বপ্রথম এটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। ২০১১ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হলেও, অর্থায়নের অভাবে কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে অগ্রসর হয়। ২০১২ সালের পর কাজ প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে পুনরায় কাজ শুরু হয়। এ বছরের শেষ নাগাদ কাজ সম্পন্ন হতে পারে।

মোর্দোভা অ্যারিনার আসন সংখ্যা হবে ৪৫,০০০। তবে বিশ্বকাপের পর ছোট শহর সারানস্কার জন্য এত বেশি আসন সংখ্যার প্রয়োজন হবে না। ফলে উপরের সারির ১৭,০০০ আসন সরিয়ে একে ২৮,০০০ ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট স্টেডিয়ামে পরিণত করা হবে। সরিয়ে ফেলা আসনগুলোর স্থানটি উন্মুক্ত রাখা হবে, যেখানে দর্শকরা হাঁটাচলার করতে পারবে।

কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম

কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম; Source: stadiumguide.com

কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়ামটির অবস্থান রাশিয়ার প্রেগোলিয়া নদীর উপর অবস্থিত ওক্টিয়াব্রিস্কি দ্বীপের কালিনিনগ্রাদ শহরে। স্টেডিয়ামটি অ্যারিনা বাল্টিকা নামেও পরিচিত। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় সবচেয়ে দেরিতে, ২০১৫ সালে।

প্রাথমিকভাবে স্টেডিয়ামটির ধারণ ক্ষমতা হওয়ার কথা ছিল ৪৫,০০০। কিন্তু বিলম্বে কাজ শুরু হওয়ায় এবং অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ায় এর নকশা কিছুটা পরিবর্তন করে সরলীকরণ করা হয় এবং একে ৩৫,০০০ আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে এটি নির্মাণাধীন আছে এবং এ বছরের শেষের দিকে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পরিকল্পনা আছে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর স্টেডিয়ামটি স্থানীয় এফসি বাল্টিকার নিজস্ব স্টেডিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

স্পার্টাক স্টেডিয়াম

স্পার্টাক স্টেডিয়াম; Source: otkritiearena.ru

স্পার্টাক স্টেডিয়াম; Source: otkritiearena.ru

এটি ওকতিরিত স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। এটি মস্কোর স্পার্টাক মস্কো ফুটবল ক্লাবের নিজস্ব স্টেডিয়াম। স্পার্টাক ক্লাবের কখনো নিজস্ব স্টেডিয়াম ছিল না। তারা পর্যায়ক্রমে মস্কোর বিভিন্ন স্টেডিয়ামে, বিশেষ করে লুজনিকি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করত। নব্বইয়ের দশক থেকেই তারা নিজেদের জন্য একটি পৃথক স্টেডিয়াম দাবি করে আসছিল, কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে ২০১০ সালে সর্বপ্রথম তাদের জন্য এই স্টেডিয়ামটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

প্রাথমিকভাবে এটি ৩৫,০০০ আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়াম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে পরবর্তীতে এর নকশা কিঞ্চিৎ পরিবর্তান করে এর ধারণ ক্ষমতা ৪২,০০০ আসনে উন্নীত করা হয়। এটি মস্কোর দ্বিতীয় স্টেডিয়াম, যা বিশ্বকাপের খেলা আয়োজন করবে। ২০১৪ সালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।

একাতেরিনবার্গ স্টেডিয়াম

একাতেরিনবার্গ স্টেডিয়াম; Source: stadiumguide.com

১৯৫৭ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটি ছিল অ্যাথলেটিক্স, আইস স্কেটিং সহ বহুমুখী খেলার জন্য ব্যবহৃত স্টেডিয়াম। এর নাম ছিল সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম এবং ধারণ ক্ষমতা ছিল ২৭,০০০। পরবর্তীতে ২০১১ সালে এর আধুনিকায়ন করা হয়। কিন্তু এই আধুনিকায়নও ফিফার মানদণ্ড অনুযায়ী না হওয়ায়, পরবর্তীতে আবারো সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়। এ বছরের শেষের দিকে এটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়ার কথা আছে। এর ধারণ ক্ষমতা হবে ৪৫,০০০।

রুস্তভ অ্যারিনা

রুস্তভ অ্যারিনা স্টেডিয়াম; Source: stadiumguide.com

রুস্তভ অ্যারিনা স্টেডিয়ামটি রাশির রুস্তভ-অন-ডন শহরে নির্মাণাধীন একটি স্টেডিয়াম। দীর্ঘদিন ধরেই এই শহরে এফসি রুস্তভ ফুটবল ক্লাবের জন্য একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ উপলক্ষে পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করা হয়।

২০১২ সালে এর ডিজাইন চূড়ান্ত হয় এবং ২০১৩ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ বছরের শেষের দিকে এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা আছে। স্টেডিয়ামটির ধারণ ক্ষমতা হবে ৪৫,০০০।

ফিচার ইমেজ-  Skyscraper City

Related Articles