Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যাটল অফ স্যাভো আইল্যান্ড (পর্ব-১): ভয়াবহ এক মার্কিন গোয়েন্দা ব্যর্থতা

দুই পক্ষের যুদ্ধজাহাজ শত্রুর দিকে তাদের ভারী ভারী কামানগুলো দাগাচ্ছে- এমনই ছিল নৌযুদ্ধের ইতিহাসের প্রাচীন ও স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নামক জাহাজগুলো এসে যাওয়ায় এই নিয়মের ব্যতিক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্যাসিফিক থিয়েটারে যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের মধ্যকার প্রথম বড় ধরনের নৌ-যুদ্ধ ‘কোরাল সি‘ ও ‘মিডওয়ে‘-তে তেমনই দেখা গিয়েছে। উক্ত দুই যুদ্ধে জাপানের শক্তিশালী ৬টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ধ্বংস/ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের শক্তিশালী সারফেস ফ্লিটের ব্যাটলশিপ, ক্রুজারগুলো ছিল তখনো প্রায় অক্ষত।

মিডওয়ে যুদ্ধের পরাজয়ের ফলে এশিয়া অঞ্চলে জাপানের সাম্রাজ্যবাদ নীতি মুখ থুবড়ে পড়ে। এই সুযোগে গুয়াডালক্যানেল ও সলোমন আইল্যান্ডের জাপানি দখলকৃত দ্বীপগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য মেরিন সেনা পাঠানো শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের এই কাজে বাধা দিতে নির্দেশ দেয়া হয় এডমিরাল গুনিচি মিকাওয়ার টাস্কফোর্সকে। তিনি তার শক্তিশালী কামান সমৃদ্ধ ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার বহর নিয়ে রাতের অন্ধকারে হামলা করে মিত্রবাহিনীর এত বড় ক্ষয়ক্ষতি করেন যা তারা কল্পনাও করেনি। এ জন্য স্যাভো আইল্যান্ড যুদ্ধকে বলা হয় Worst defeat in the history of the United States Navy’

মার্কিন ব্যাটলশিপ উইসকনসিনের নেভাল গান ফায়ারিং; Image source : businessinsider.com

যুদ্ধের নামকরণ ও স্থান

১৯৪২ সালের ৮-৯ আগস্ট দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের স্যাভো দ্বীপের নিকটে সংগঠিত এই যুদ্ধকে জাপানিরা First Battle of the Solomon Sea (第一次ソロモン海戦, Dai-ichi-ji Soromon Kaisen) নামে অভিহিত করে। অন্যদিকে পশ্চিমা ইতিহাসবিদরা একে First Battle of Savo Island বলেন। কেননা এই দ্বীপের অঞ্চলে আরো তিনটি বড় ধরনের নৌযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এটি ছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর পরিচালিত অপারেশন গুয়াডালক্যানাল ক্যাম্পেইনের প্রথম নৌযুদ্ধ।

প্রায় কাছাকাছি সময়ে সলোমন আইল্যান্ডে মিত্রবাহিনী সেনা নামানো শুরু করেছিল। ফলে জাপানি নামকরণ অনুসরণ করলে সলোমন আইল্যান্ডস ক্যাম্পেইনের নৌযুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত তারিখ, স্থান, দ্বীপের নামের সাথে পাঠকের ভাষাগত জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই যুদ্ধের জাপানি বর্ণনায় থাকা শুধুমাত্র নামকরণ বিষয়ক অংশটুকু বর্জন করা হলো। এছাড়া দুটো ক্যাম্পেইনেই ভূমি ও আকাশ যুদ্ধ রয়েছে।

স্যাভো আইল্যান্ডের চার যুদ্ধে এত বেশি জাহাজ ডুবেছে যে জায়গাটিকে এখন আয়রন বটম সাউন্ড বলা হয়; Image source : pacificwrecks.com

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও দুই পক্ষের শক্তিমত্তা

জাপানি টাস্কফোর্সে সাতটি ক্রুজার ও একটি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ ছিল। এগুলো নিউ ব্রিটেন, নিউ আয়ারল্যান্ড, নিউ জর্জিয়া দ্বীপে থাকা জাপানি নেভাল বেজ থেকে মিত্রবাহিনীর রসদ সাপ্লাই ও তার প্রটেকশন গ্রূপকে আক্রমণের জন্য রওনা দেয়। এসব দ্বীপ থেকে বের হয়ে সাউথ প্যাসিফিকে ঢুকার চ্যানেলকে বলা হতো ‘The Slot‘। মিকাওয়ার ফ্ল্যাগশিপ ছিল হেভি ক্রুজার ‘চকাই’। তার বহরে ছিল লাইট ক্রুজার টেনরায়ু ও ইয়ুবারি এবং ডেস্ট্রয়ার ইউনাগি। তার সাথে যোগ দেয় রিয়ার এডমিরাল আরিটোমো গোটো এর ৪ হেভি ক্রুজার আওবা, ফুরুতাকা, কাকো ও কিনুগাসা।

অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল ভিক্টর ক্রুচলে এর নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনীর নৌবহরে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার আটটি ক্রুজার ও পনেরটি ডেস্ট্রয়ার ও পাঁচটি নেভাল মাইন সুইপার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ। এরা ছিল এডমিরাল টার্নারের গুয়াডালক্যানাল ইনভেশন ফোর্সের নিরাপত্তা দেয়ার কাজ করছিল। এছাড়া মিত্রবাহিনীর ল্যান্ডিংয়ের সময় এরা ফায়ার সাপোর্ট দিয়ে জাপানিদের পশ্চাদপসরণ ত্বরান্বিত করে। তবে স্যাভো আইল্যান্ড যুদ্ধে এদের সবাই জাপানি হামলার শিকার হয়নি।

এডমিরাল ভিক্টরের নিজের জাহাজ ও বহরের ফ্ল্যাগশিপ ছিল হেভি ক্রুজার এইচএমএএস অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া এইচএমএএস ক্যানবেরা, ইউএসএস এস্টোরিয়া, কুইন্সি, ভিন্সেনেস, ব্লু, শিকাগো জর্জ ইলিয়ট, জারভিস, প্যাটারসন, ব্যাগলিসহ মোট পাঁচটি ক্রুজার ও সাতটি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর জাহাজ এই যুদ্ধে জাপানিদের হাতে আক্রান্ত হয়। দুই পক্ষের যুদ্ধজাহাজগুলোর নামের দিকে বাড়তি মনোযোগ দেয়ার অনুরোধ করছি। কেননা এই নামগুলো পুরো আর্টিকেল জুড়ে বারবার ব্যবহৃত হবে।

এডমিরাল ভিক্টরের এইচএমএএস অস্ট্রেলিয়া ও এর ৮ ইঞ্চি ব্যাসের কামান; Image source : commons.wikimedia.org

অপারেশন ওয়াচ টাওয়ার

৭ আগস্ট, ১৯৪২ সালে ইউএস মেরিনের ১৬ হাজার সেনা ইস্টার্ন সলোমন দ্বীপপুঞ্জের গুয়াডালক্যানাল, তুলাগি ও ফ্লোরিডা আইল্যান্ডে সফলভাবে অবতরণ করে। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই অপারেশনের নামকরণ করা হয় ‘অপারেশন ওয়াচ টাওয়ার’

জাপানিরা আকস্মিক হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ে। প্রচন্ড যুদ্ধের পর তারা পিছু হটে। মার্কিনিরা এত সহজে সফলতা লাভ করবে বলে আশা করেনি। তুলাগিতে কোরাল সি যুদ্ধের সময় জাপানি সি-প্লেন বেজ নির্মাণ করা হয়েছিল যা ব্যবহার করে মিত্রবাহিনীর উপর নিয়মিত নজরদারি করা হতো। এছাড়া গুয়াডালক্যানালে জাপানিরা একটি গুরুত্বপূর্ণ এয়ারফিল্ড তৈরির কাজ করছিল যার নির্মাণ সম্পন্ন হলে সেটি ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের রসদ সাপ্লাই দেয়ার শিপিং লাইন বন্ধ করে দেয়া সম্ভব হতো। মিত্রবাহিনী তাই জরুরি ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে উক্ত সি-প্লেন বেজ দখল করে এবং অসমাপ্ত এয়ারফিল্ডটি দখল করে নাম দেয় হেন্ডারসন ফিল্ড। ফলে এটি ব্যবহার করে জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের আসন্ন নিউ গুয়েনা ক্যাম্পেইনের জন্য প্রয়োজনীয় এয়ার সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে।

মিত্রবাহিনীর এই ল্যান্ডিংয়ে বাধা দেয়ার সময় নিউ গুয়েনার রাবাউল ঘাঁটি থেকে আসা জাপানি বিমান হামলায় জর্জ এলিয়ট নামের একটি ডেস্ট্রয়ার ডুবে যায় ও ইউএসএস জার্ভিস নামে আরেকটি ডেস্ট্রয়ার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধজাহাজটি সেই রাতেই মেরামতের জন্য অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাওয়ার পথ ধরে। এ সময় ছোটখাট আকাশযুদ্ধে মার্কিনিদের ১৯টি বিমান হারানোর বিনিময়ে জাপানিদের ৩৬টি বিমান ভূপাতিত হয়। কিন্তু জাপানি বিমান হামলা তেমন কার্যকর হয়নি। মার্কিন রসদ সাপ্লাই গ্রূপের জাহাজগুলো প্রায় অক্ষত ছিল। ফলে এডমিরাল মিকাওয়ার নৌবহর রাতেই রওনা দেয় যেন মিত্রবাহিনীর সেনাদের জন্য আনা রসদগুলো আনলোডিং করার কাজ শেষ করার আগেই হামলা করা সম্ভব হয়।

এডমিরাল মিকাওয়া ও তার ক্রুজার চকাই Image source : commons.wikimedia.org
একনজরে দেখে নিন পুরো গুয়াডালক্যানেল ক্যাম্পেইনের যুদ্ধের গতিপথ; Image source : armyupress.army.mil

এদিকে ফুয়েল শেষ হয়ে যাওয়ায় ও পরদিন পুনরায় জাপানি বিমান হামলার আশঙ্কায় এডমিরাল ফ্লেচার তার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন। স্যাভো আইল্যান্ড যুদ্ধে মার্কিনিদের ভয়াবহ পরাজয় বরণের কারণে কয়েকজন ইতিহাসবিদ ফ্লেচারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন যে তিনি তার ভুল সিদ্ধান্তকে ঢাকতে ফুয়েল কমে যাওয়ার ইস্যুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অপরদিকে ফ্লেচারের জীবনী লেখকসহ কয়েকজন ইতিহাসবিদ বলেছেন যে যেহেতু জাপানি ঘাঁটি দখল ও সেনা নামানোর কাজ শেষ, তাই ফ্লেচারের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রূপের সেখানে আর কোনো কাজ ছিল না। এদিকে রসদ আনলোড করার কাজ পূর্ব অনুমানের চেয়ে খুবই ধীরে ধীরে হচ্ছিল। তাই এডমিরাল টার্নার রাতের মধ্যেই কাজ শেষ করে এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই জাপানিরা তাদের রাত্রিকালীন যুদ্ধকৌশল উন্নত করেছিল। জাহাজের কামানের সাইটের সাথে সংযোজন করেছিল আধুনিক নাইট ভিশন টার্গেটিং ইকুইপমেন্ট। এই তথ্য মিত্রবাহিনীর গোয়েন্দাদের জানা ছিল না। এছাড়া এডমিরাল ফ্লেচারের বিমানগুলো রাতে হামলা করার মতো উপযোগী ছিল না। ফলে মার্কিনিরা শুরুতেই পিছিয়ে ছিল। কিন্তু গোয়েন্দাগিরির কাজে বরাবরের মতোই এগিয়ে ছিল মার্কিনিরা। 

তবে সেদিন তারা অবিশ্বাস্য রকমের দুর্ভাগ্য ও বোকামির শিকার হয়। ৭ আগস্ট রাতে এডমিরাল মিকাওয়া প্রথমে উত্তর বুকা আইল্যান্ডে, পরে ৮ আগস্ট ভোরে পূর্ব বুগেনভাইল দ্বীপের উপকূলীয় অঞ্চলে এসে ৬ ঘন্টার জন্য নোঙর করেন। এ সময় অন্যান্য ঘাঁটি থেকে আসা জাহাজগুলো তার সাথে মিলিত হয়। এডমিরাল মিকাওয়া জানতেন রাতে হামলা করতে হলে দিনের বেলা পথ চলা ঠিক হবে না। কারণ মিত্রবাহিনীর গোয়েন্দা বিমানগুলো নিয়মিত টহল দিচ্ছিল। কিন্তু দুপুরের দিকে আকাশ বেশ মেঘলা হয়ে আসলে তিনি সেই ‘স্লট’ চ্যানেল ধরে রওনা দেন। কিন্তু ‘পড়বি তো পর মালির ঘাড়ে’ প্রবাদের ন্যায় সেখানে আগে থেকেই পানির নিচে থাকা সাবমেরিন ইউএসএস এস-৩৮ সাথে তার সংঘর্ষ হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়।

সাবমেরিন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মুনসনের দায়িত্ব ছিল গোপন এই চ্যানেল ধরে কোনো জাপানি যুদ্ধজাহাজ যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে অ্যাম্বুশ করা। কিন্তু শত্রু যুদ্ধজাহাজগুলো ইউএসএস এস-৩৮ এর খুবই কাছে এসে পড়ায় সেটি টর্পেডো হামলা করতে পারছিলেন না। ফলে তিনি পিছু হটেন এবং রেডিওতে সতর্কবার্তা প্রেরণ করেন যে “দুটি ডেস্ট্রয়ার ও তিনটি বড় আকারের জাহাজ” পেরিস্কোপে শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এই তথ্য পেয়ে মিত্রবাহিনীর এডমিরালরা ভাবলেন যে এটি হয়তো জাপানি মেরিন সেনাদের জাহাজ মার্কিন অধিকৃত দ্বীপগুলো পুনরুদ্ধার করতে আসছে। এর আগেও একবার ৫১৯ জন সেনা নিয়ে জাপানিরা আক্রমণ করতে এসে মার্কিন সেনাদলের আকার ধারণার চেয়ে শক্তিশালী ছিল বিধায় আক্রমণ না করেই ফিরে গিয়েছিল। মিত্রবাহিনীর অফিসাররা ভাবলেন যে তাদেরকে ধাওয়া করতে গিয়ে গুয়াডালক্যানালে নৌ শক্তি না কমিয়ে বরং রেঞ্জে আসার পর আক্রমণ করা হবে। দুটো জাপানি ডেস্ট্রয়ারের মোকাবেলায় শক্তিশালী জাহাজ এডমিরাল ভিক্টরের নৌবহরে আছে।

স্লট চ্যানেল ধরে এডমিরাল মিকাওয়ার নৌবহরের অ্যাপ্রোচ রুট; Image source : slideserve.com

এদিকে মিকাওয়া স্লট চ্যানেল পাড়ি দেয়ার পর তার জাহাজগুলো ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দেন এবং মিত্রবাহিনীকে খুঁজতে চারটি সি-প্লেন পাঠান। তবে তার আগেই সকাল ১০:২০ মিনিটে ও ১১:১০ মিনিটে নিউ গুয়েনা দ্বীপ থেকে আসা রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ানে এয়ারফোর্সের দুটো A-29 হাডসন রিকনসিস বিমান জাপানি নৌবহর শনাক্ত করে। প্রথম বিমানটি রিপোর্ট করে যে, “three cruisers, three destroyers, and two seaplane carrier” জাহাজ দেখা গেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেদিন নিউ গুয়েনার ফলরিভার রেডিও স্টেশন থেকে মেসেজ রিসিভ করা হয়েছে এই মর্মে বার্তা আসেনি। তাই প্রথম হাডসন বিমানটি তার পেট্রোলিং শেষ না করেই মেসেজ পৌঁছে দিতে বেলা পৌনে একটায় ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় হাডসন পেট্রোলিং শেষ করে বিকাল চারটায় ফিরে এসে রিপোর্ট করে। অপর আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায় প্রথম হাডসনের ক্রুরা সঠিকভাবে জাপানিদের সাতটি ক্রুজার, একটি ডেস্ট্রয়ার শনাক্ত করেছিল, কিন্তু ঘাঁটির নেভাল ইন্টিলিজেন্স অফিসার দ্বিতীয় হাডসনের “two heavy cruisers, two light cruisers, and one unknown type” রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করেন। এই কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার আগে মিত্রবাহিনীর কাছে জাপানিদের উপস্থিতির খবরটি পৌঁছায়নি। ফলে গোয়েন্দাগিরিতে এগিয়ে থাকলেও মার্কিনিরা সতর্ক হওয়ার সুযোগ পায়নি।

ইউএস নেভির অফিশিয়াল ইতিহাসবিদ হিসেবে খ্যাত স্যামুয়েল মরিসন ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত তার বইয়ে লিখেছেন যে প্রথম হাডসনের ক্রুরা ল্যান্ড করার পর চা-নাস্তা খেতে এত ব্যস্ত ছিলেন যে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজটি পাঠানোর সময় পাননি! তাকে উদ্ধৃতি করে আরো কয়েকজন ইতিহাসবিদ একই অভিযোগ করেছেন যা যুদ্ধের পর একাধিক আন্তর্জাতিক পত্রিকা ফলাও করে প্রচার করে। ২০১৪ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর ‘হিস্টোরি এন্ড হেরিটেজ কমান্ড’ উক্ত হাডসন বিমানের ক্রুদের দীর্ঘ লবিংয়ের পর পুনরায় তদন্ত করে স্যামুয়েল মরিসনের দাবিকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের লকহিডের তৈরি A-29 হাডসন রিকনসিস বিমান; Image source : commons.wikimedia.org

এদিকে এডমিরাল মিকাওয়ার সি-প্লেনগুলো বেলা বারোটার সময় রিকনসিস সম্পন্ন করে ফিরে আসে। তিনি জানতে পারেন যে মার্কিন নৌবহর দুই ভাগে ভাগ হয়ে গুয়াডালক্যানাল ও তুলাগিতে সেনা নামানোর কাজে সহায়তা করছে। বেলা একটার মধ্যে তিনি জাহাজগুলোকে আবার একত্রিত করে সেদিকে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় মার্কিনিদের উপর হামলা করে রাবাউলে ফিরে যাওয়া জাপানি বিমানগুলো তাদের উপর দিয়ে উড়ে যায় যা এডমিরাল মিকাওয়ার নাবিকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।

সন্ধ্যা ছয়টায় তিনি গুয়াডালক্যানাল চ্যানেলে প্রবেশ করেন। তার পরিকল্পনা ছিল যে স্যাভো আইল্যান্ডের দক্ষিণ দিয়ে গিয়ে নোঙররত মার্কিন নৌবহরের উপর আচমকা টর্পেডো হামলা করবেন। ততক্ষণে তুলাগিতে থাকা অপর মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলো সতর্ক হয়ে যাবে। তাই তাদের দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় নাইট ভিশন ইকুইপমেন্ট সমৃদ্ধ শক্তিশালী কামান দিয়ে দূর থেকে হামলা করা হবে। এরপর স্যাভো আইল্যান্ডের দক্ষিণ দিক দিয়ে জাপানিরা এলাকা ত্যাগ করবে যেন মার্কিন এয়ারক্রাফট হামলা করার সুযোগ না পায়।

এদিকে ফ্লেচার তার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নিয়ে চলে যাওয়ায় এডমিরাল টার্নার সাউথ প্যাসিফিকে মিত্রবাহিনীর বিমানবাহিনীর প্রধান এডমিরাল জন ম্যাককেইন সিনিয়র (রিপাবলিকান সিনেটর ম্যাককেইনের দাদা)-কে ৮ আগস্ট বিকালবেলা ‘স্লট’ অঞ্চলে বাড়তি নজরদারির জন্য রিকনসিস বিমান ওড়ানোর অনুরোধ করেন। ম্যাককেইনের কাছে পর্যাপ্ত বিমান ছিল না সেটি সত্য। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি বিমান তো পাঠাননি, এমনকি তিনি যে বিমান পাঠাচ্ছেন না সেটি এডমিরাল টার্নারকেও জানাননি। ফলে এডমিরাল ভিক্টরের হেভি ক্রুজারগুলোতে থাকা ফুয়েলভর্তি ১৫টি সি-প্লেনগুলো সারাটা বিকেল অলস বসে ছিল যা রাতের বেলা শুরু হওয়া ভয়াবহ জাপানি হামলায় মার্কিন জাহাজগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে জ্বালানির যোগান দেয়।

(চলবে)

Related Articles