Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইহুদী জাতির ইতিহাস (পর্ব এগারো): মরিস বুকাইলি আর ফিরাউনের সেই মমি

ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতাপশালী ফারাও হিসেবে ইতিহাসবিদগণ যাকে চিহ্নিত করে থাকেন, তিনি রামেসিস দ্য সেকেন্ড বা দ্বিতীয় রামেসিস। এমনকি সবচেয়ে বিখ্যাত মমির আবিষ্কারের তালিকাও যদি করতে হয়, তবে শীর্ষ পাঁচে রাখতে হয় দ্বিতীয় রামেসিসের মমি আবিষ্কারের ঘটনা, বলা যায় কিশোর ফারাও তুতেনখামুনের মমির আবিষ্কারের পরেই এটি সবচেয়ে খ্যাত। হয়তো এ প্রতাপের কারণেই অনেকের ধারণা ও বিশ্বাস, কুরআন ও বাইবেলে বর্ণিত মুসা (আ)-কে তাড়া করা ফারাও ছিলেন দ্বিতীয় রামেসিস। যদিও এটা প্রমাণিত কোনো ধারণা না। সেটাই আমরা খুঁজে বের করতে চেষ্টা করবো, আর সাথে সাথে তার মমির আবিষ্কার নিয়ে এ লেখায় আমরা অনুসন্ধান করবো। 

প্রথমেই আসা যাক, যাকে নিয়ে এত জল্পনা আর কল্পনা, সেই দ্বিতীয় রামেসিসের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা ফলক কিংবা প্যাপিরাসের পাতায় লিখিত ইতিহাস কী বলে? 

প্যাপিরাসের পাতা; Image Source: Wikimedia Commons

‘রামেসিস’ (Ramesses) লেখা হলেও উচ্চারণটি আসলে ‘র‍্যামেসিজ’। প্রাচীন মিসরীয় এ নামের অর্থ ছিল ‘(দেবতা) রা তার জন্মদাতা’ (Ra is the one who bore him)। আর দেবতা ‘রা’ (Ra, বা প্রাচীন ক্যুনিফর্ম ভাষায়- রিয়া𒊑𒀀) ছিলেন প্রাচীন মিসরের সূর্যের দেবতা, প্রধানত ঈগল পাখি কিংবা দুপুরের সূর্যের প্রতীক দিয়ে তাকে প্রকাশ করা হতো। খ্রিস্টের জন্মের ২৪০০-২৫০০ বছর আগে যখন মিসরে ফিফথ ডাইনেস্টি বা পঞ্চম সাম্রাজ্য চলছিল, তখনই তিনি প্রাচীন মিসরের ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতাদের একজন হয়ে যান। একইসাথে আকাশ, পাতাল আর মর্ত্যের অধিপতি হিসেবে তার পূজা করা হতো। এর প্রায় এক হাজার বছর পরে মিসরে নিউ কিংডম বা নব্য সাম্রাজ্য যুগ শুরু হয়, আর তখন নতুন করে দেবতা আমুনের প্রতাপ বেড়ে যায়। তখন এই ‘রা’ আর ‘আমুন’ মিলে যুগ্ম দেবতা আমুন-রা’র পূজা শুরু হয়। ‘রা’ এর কথা এত করে বলার কারণ তার প্রতাপ বোঝানো। তাই এতে অবাক হবার কিছু নেই, মিসরের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতাপশালী রাজার নাম ছিল ‘রা’-কে নিয়েই। 

দেবতা রা; Image Source: Wikimedia Commons

এই নিউ কিংডমের সময়েই জন্ম দ্বিতীয় রামেসিসের। মিসরের নাইন্টিন্থ ডাইনেস্টি বা উনিশতম সাম্রাজ্যের তৃতীয় ফারাও রামেসিস খ্রিস্টের জন্মের ১৩০৩ বছর আগে জন্ম নেন। তার জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি তার সাম্রাজ্য প্রসারে ব্যয় করেছিলেন, তবে জীবনের প্রথমভাগে তিনি নতুন নতুন শহর, মন্দির আর স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন। নীল নদ ঘেঁষে তিনিই পাই-রামেসিস (Pi-Ramesses) শহরের পত্তন করেন, যার কথা বাইবেলে উল্লেখ আছে। আসলে এ কারণেই সেই ফারাওকে রামেসিস বলে আন্দাজ করা হয়। এ ব্যাপারে অবশ্য কুরআনে কিছুর উল্লেখ নেই। পাই-রামেসিস শহর থেকেই তিনি সিরিয়াতে নানা অভিযান চালিয়েছিলেন। তার বাবা সেটাই দ্য ফার্স্ট (Seti I) তাকে চৌদ্দ বছর বয়সেই প্রিন্স রিজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন। এখানে বলা দরকার, বাইবেলে এক্সোডাসের কাহিনী বর্ণনার সময় দুজন ভিন্ন ফারাওয়ের কথা বলেছে, একজন যিনি মুসা (আ)-কে নদীর পানি থেকে তুলে আনার সময় ফারাও ছিলেন, আর অপরজন তার ছেলে যিনি কি না মুসা (আ) মিসরে ফিরে আসার পরের সময়কালে ফারাও ছিলেন। কিন্তু কুরআনে ফারাও উপাধি ব্যবহার করা হলেও এ দুজন ভিন্ন কি না সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি।

দ্বিতীয় রামেসিস; Image Source: tonsoffacts.com

কম বয়সেই খ্রিস্টের জন্মের ১২৭৯ বছর আগে মে মাসের ৩১ তারিখ দ্বিতীয় রামেসিস ক্ষমতালাভ করেন। তিনি একটানা ৬৬ বছর ২ মাস রাজত্ব করে মারা যান খ্রিস্টপূর্ব ১২১৩ সালে। এবং এরপর ফারাও হন আরেক বিখ্যাত ফারাও মারনেপতাহ (Merneptah)। যেহেতু রামেসিস ছিলেন খুবই বিখ্যাত, তাই তার সিংহাসন আরোহণের পর ঘটনাগুলো ইতিহাসে খুব বিস্তারিতভাবেই লিপিবদ্ধ ছিল, যা এখন আমরা দেখতে পাই। মুসা (আ) এর সময়ের এক্সোডাস বা মিসরত্যাগের ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় না, কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিকরা একে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে গণ্য করেন না। তারপরও, ধর্মীয় ইতিহাসবিদরা চেষ্টা করেন এক্সোডাসের কাহিনী মিসরের ইতিহাসের সাথে মেলাবার। এবং এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এক্সোডাসের সময়ের ফারাওয়ের মৃত্যু, কারণ তিনি তো সমুদ্রে ডুবে মারা গিয়েছিলেন ধর্মগ্রন্থগুলো মতে! তাহলে রামেসিস কীভাবে মারা যান? তিনিই কি সেই ফারাও? নাকি অন্য কোনো ফারাও, যিনি কি না সমুদ্রে ডুবে মারা যান?

ফারাও সেটাই (Seti I), ফারাও রামেসিস (Ramesses) কিংবা ফারাও মারনেপতাহ (Merneptah) সবাই ছিলেন বিখ্যাত, আর তাদের ইতিহাস ভালো করেই নথিভুক্ত।

ফারাও সেটাই; Image Source: Daniel Sarbani

দ্বিতীয় রামেসিস মারা গিয়েছিলেন ৯০ বছর বয়সে। তিনি প্রচণ্ড রকমের দাঁতের সমস্যায় ভুগছিলেন, আর বাত তো ছিলই। ইতিহাসে এ রোগকেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার দেহকে মমি করা হয় এবং প্রথমে ভ্যালি অফ দ্য কিংসের KV7 সমাধিতে রাখা হয়। কিন্তু কবর লুটেরা আর ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য সেই দেহ পরে সরিয়ে নেন যাজকেরা আরেকটু নিরাপদ স্থানে, যা ছিল রানী আহমোসি ইনহাপির সমাধি। ৭২ ঘণ্টা পরেই আবার সরিয়ে ফেলা হয় মমি, এবারের স্থান হাই প্রিস্ট দ্বিতীয় পিনেযেমের সমাধি। এতে করে লুটেরাদের থাবা থেকে বেঁচে যান মৃত রামেসিস। এই নতুন স্থানেই প্রত্নতাত্ত্বিকগণ খুঁজে পান রামেসিসের লাশ, সেটা ১৮৮১ সালের ঘটনা। যেখানে পাওয়া যায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার এ মমি, মিসরের সে জায়গার নাম ‘দীর আল বাহরি’ (الدير البحري‎), যার অর্থ ‘সমুদ্র আশ্রম’ বা ‘সমুদ্র মঠ’, যা বানানো হয় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। নীল নদের পশ্চিম তীরে মিসরের লুক্সর শহরের বিপরীতে এর অবস্থান। থিবান নেক্রোপলিস (মৃত্যুপুরী) এর অংশ এটি। ৫০ জনেরও বেশি স্থানীয় শাসক ও সম্ভ্রান্ত মানুষের উপস্থিতিতে মমিটি আবিষ্কার করা হয় রাজকীয় প্রকোষ্ঠে। গাস্তন মাস্পেরো মমিটির কাপড় খুলেছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, মমিটির চুল ছিল বেশ মোটা মোটা, মৃত্যুকালে ছিল সাদা, তাতে মেহেদি দেয়া ছিল। তবে দাঁড়ি আর গোঁফ বেশ পাতলা। 

দ্বিতীয় রামেসিসের মমি; Image Source: কায়রো মিউজিয়াম

হায়ারোগ্লিফ থেকে জানতে পারা যায়, এটি দ্বিতীয় রামেসিসের মমি। সেখানেই লেখা ছিল বিস্তারিতভাবে কেন মমি সরিয়ে এখানে আনা হয়। কিন্তু কোথাও এটা লেখা ছিল না যে এই ফারাও মারা গিয়েছেন লোহিত সাগরে ডুবে। 

মমিটির আবিষ্কারের প্রায় ১০০ বছর পর ১৯৭৪ সালে দেখা যায় যে মমিটিতে পচন ধরা শুরু হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, মিসর থেকে সেটি প্যারিসে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পরিচর্যা করা হবে। মজার ব্যাপার, এজন্য তার জন্য পাসপোর্টও ইস্যু করা হয়, যাতে তার পেশা লেখা ছিল ‘রাজা (মৃত)’, তাছাড়া রাজকীয় সম্মানেই তাকে বরণ করা হয় প্যারিসের বিমানবন্দরে। প্যারিসে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার দেহে যুদ্ধের আঘাত এবং বাতের চিহ্ন আছে, শেষ বয়সে তিনি কুঁজো হয়ে হাঁটতেন।

এখন অবশ্য মমিটি মিসরের কায়রো জাদুঘরেই আছে। দ্বিতীয় রামেসিস এতই বিখ্যাত ছিলেন যে তার সম্মানে পরে নয়জন ফারাও রামেসিস উপাধি ধারণ করেন। একশ’রও বেশি সন্তানাদি রেখে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় রামেসিস। 

রামেসিস নিয়ে এত কথা বলার কারণ, ইতিহাসে কোথাও বলা নেই যে এই সেই ফারাও যার মৃত্যু হয়েছিল সাগরে ডুবে। তার আগের আর পরের ফারাওয়ের মৃত্যুকথনও বলা যাক। আগের জন সেটাই দ্য ফার্স্ট এর মৃত্যু হয় ৫৫ বছর শাসন করবার পর, তার মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক, কোনো অপঘাত নয়। আর রামেসিস এত দীর্ঘ সময় শাসন করেছিলেন যে তিনি যখন মারা যান, তখন তার ছেলে মারনেপতাহের বয়স সত্তরের কাছে। তিনি ভুগেছিলেন আর্থ্রাইটিস (বাত) ও অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে (atherosclerosis)। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণের ব্যাপারে ইতিহাস আমাদের কিছু জানায় না। তবে তার মারা যাবার পর ২৫ বছরের অস্থিতিশীলতা চলেছিল। রামেসিস তত্ত্বের আগে মারনেপতাহকেই ধারণা করা হত এক্সোডাসের ফারাও। কিন্তু কোন তত্ত্ব আসলে বেশি যৌক্তিক? নাকি কোনোটিই নয়?

কিন্তু এই এক্সোডাসের ফারাও যে রামেসিস হতে পারেন, সে সম্ভাবনার কথা চাঙ্গা হয়ে ওঠার সাথে যার নাম জড়িত তিনি ড. মরিস বুকাইলি (Maurice Bucaille), একজন ফরাসি ভদ্রলোক, যার জন্ম ১৯২০ সালে আর মৃত্যু ১৯৯৮ সালে। তিনি ছিলেন একজন মেডিকাল ডক্টর এবং একজন লেখক। সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের পারিবারিক ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি, এমনকি তিনি মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের চিকিৎসাও করেছিলেন। তিনি ছিলেন মরিস ও মেরি বুকাইলি সন্তান। একজন মিসরবিদও ছিলেন তিনি। ১৯৪৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি মেডিসিন প্র্যাকটিস করেন, তিনি ছিলেন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির (gastroenterology) একজন স্পেশালিস্ট। 

বুকাইলি যে কয়টি বই লিখেছিলেন তার মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে যে বইটি সেটি ‘The Bible, The Qur’an and Science‘। এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়, বাংলায় যার নাম ‘বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান’। এ বইতে তিনি মূলত তার লেখনি দিয়ে দেখাবার চেষ্টা করেন যে, কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের কোনো অসঙ্গতি নেই। এ মতবাদটি পরবর্তীতে বুকাইলিজম নামে পরিচিতি পায়। 

মরিস বুকাইলি পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি না, সেটা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। তার দীর্ঘ বক্তব্যের ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায়। তার একটি সাক্ষাৎকারও ইন্টারনেটে দেখতে পাওয়া যায়, যার নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা যায়নি। এ সাক্ষাৎকারে তিনি ইসলাম গ্রহণের কথা বলেন। সেখানে “আপনি কি ইসলাম গ্রহণ করেছেন?” এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি শুরু থেকেই পরিষ্কার করে বোঝাতে চেয়েছি, বিসমিল্লাহর প্রথম অক্ষর শিখবার আগেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আল্লাহ্‌ এক ও সর্বশক্তিমান। তিনিই আমাকে কুরআন অধ্যয়নের দিকে এনেছেন।” তবে মুদ্রার উল্টো পিঠও কিন্তু আছে। পাক বুক থেকে বের হওয়া The Bible, The Qur’an and Science বইয়ের ১৯৯৮ সালের সংস্করণে লেখা ছিল, “ধর্মগ্রন্থে বৈজ্ঞানিক তথ্যের ব্যাপারে পড়াশোনা করায় ড. বুকাইলির কুরআনের প্রতি অপরিসীম সম্মান চলে আসে… তবুও তিনি একজন খ্রিস্টান রয়ে যান, তবে ইসলামের প্রতি তার ছিল গভীর সম্মান।” আসল ঘটনা যে কী ছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায় না।

তবে তিনি মুসলিম ছিলেন কি না সেটা আসলে আমাদের মমি নিয়ে আলোচনায় মুখ্য নয়। কিন্তু যেটা না বললেই নয়, সেটি হলো, কথিত আছে তিনি প্যারিসে আনা রামেসিসের মমির পরীক্ষা নিরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনি আবিষ্কার করেন যে মমিটি আসলে একদা পানিতেই ছিল। তখন একজন তাকে জানালো, কুরআনে বলা আছে, এই ফারাওকে আল্লাহ্‌ পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হিসেবে রাখবেন। তখন তিনি আশ্চর্য হয়ে যান।

হ্যাঁ, এটা সত্য যে, কুরআনে এরকম আয়াত আছে- “অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার (ফেরাউনের) দেহকে যাতে তোমার পরবর্তীদের জন্য তা নিদর্শন হতে পারে।” (সুরা ইউনুস, ১০:৯২

কিন্তু, মরিস বুকাইলি কি এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, রামেসিসই সেই ফারাও যার সলিল সমাধি হয়?

একদমই না। এবং তার প্রমাণ তিনি তার বইতেই দিয়ে গিয়েছেন। আমরা যদি বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান বইটি খুলি তবে দেখতে পাই, তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করে গেছেন, আসলে দ্বিতীয় রামেসিস নয়, বরং তার পুত্র মারনেপতাহই হলো লোহিত সাগরে ডুবে যাওয়া সেই ফারাও! 

ইংরেজি মূল বইতে যেমনটি লেখা-

Caption

আর বাংলা অনুবাদেও মারনেপতাহকে নিয়ে লেখা সেই অধ্যায়-

Caption

রামেসিস তত্ত্বের চেয়ে মারনেপতাহ তত্ত্বই বেশি যৌক্তিক, যদি তাদের দুজনের একজনকে আদৌ সলিল সমাধির শিকার আন্দাজ করতে হয়। মারনেপতাহ বুড়ো বয়সে মারা যান বলেই জানা যায়, মৃত্যুর কারণ আসলেই বাত নাকি অন্য কিছু তা নিশ্চিত নয়। ভ্যালি অফ দ্য কিংসের KV8 সমাধিতে তার মমি রাখা হয় প্রথমে। কিন্তু পরে তার মমি সেখানে পাওয়া যায় না। ১৮৯৮ সালে আরও ১৮টি মমির সাথে তার মমিও আবিষ্কৃত হয় দ্বিতীয় আমেনহোতেপের সমাধিতে। এরপর সেই মমি কায়রোতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি। চেহারার দিক থেকে তার দাদার সাথে যেমন মিল আছে, তেমনই তার বাবা দ্বিতীয় রামেসিসের সাথেও আছে মিল।

তবে একটু আগে উল্লেখ করা আয়াতের তাৎপর্য খুঁজতে গিয়ে আমরা তাফসির ইবনে কাসিরে দেখতে পাই নিচের ব্যাখ্যা-

Caption

তবে ফারাও যে-ই হয়ে থাকুক না কেন, তার শেষ মুহূর্তের ঘটনা কুরআনে ঠিক এভাবে বর্ণিত আছে-

আমি বনী ইসরাইলকে সাগর পার করে দিলাম, আর ফারাও এবং তার সেনাবাহিনী তাদের পিছু নিল, দুরাচার আর শত্রুতা বশত। কিন্তু যখন পানি ফিরে এসে তাদের ডুবিয়ে দিতে লাগলো, তখন ফারাও বলল, “আমি বিশ্বাস করি যে, বনী ইসরাইলের মাবুদ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, আমি এখন ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত।” এখন বলছো এ কথা? অথচ তুমি না আগে নাফরমানি করেছিলে? ছিলে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত? অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে তা। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না। (সুরা ইউনুস ১০:৯০-৯২)

এর পরের পর্বে আবার ফিরে যাওয়া হবে সাগর পাড়ি দেয়া বনী ইসরাইলের ঘটনায়!

 

দ্বাদশ পর্ব: তূর পর্বতে ঐশ্বরিক সঙ্গ এবং তাওরাত লাভ

এ সিরিজের পর্বগুলো হলো:

প্রথম পর্ব: ইহুদী জাতির ইতিহাস: সূচনা পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব: মিশরে যাবার আগে কেমন ছিল বনি ইসরাইল?

তৃতীয় পর্ব: হযরত ইউসুফ (আ): দাসবালক থেকে মিসরের উজির- ইহুদী জাতির ইতিহাস

চতুর্থ পর্ব: ইউসুফ-জুলেখার কাহিনীর জানা অজানা অধ্যায়

পঞ্চম পর্ব: মসজিদুল আকসা আর বাইতুল মুকাদ্দাসের ইতিবৃত্ত

ষষ্ঠ পর্ব: দাসবন্দী বনী ইসরাইল এবং হযরত মুসা (আ:) এর জন্ম

সপ্তম পর্ব: মিসরের রাজপ্রাসাদ থেকে সিনাই পর্বত

অষ্টম পর্ব: সিনাই পর্বত থেকে ফারাওয়ের রাজদরবার

নবম পর্ব: মিসরের অভিশাপ

দশম পর্ব: দ্বিখণ্ডিত লোহিত সাগর, এক্সোডাসের সূচনা

একাদশ পর্ব: মরিস বুকাইলি আর ফিরাউনের সেই মমি

দ্বাদশ পর্ব: তূর পর্বতে ঐশ্বরিক সঙ্গ এবং তাওরাত লাভ

ত্রয়োদশ পর্ব: ইসরাইলের বাছুর পূজা এবং একজন সামেরির ইতিবৃত্ত

চতুর্দশ পর্ব: জীবন সায়াহ্নে দুই নবী

পঞ্চদশ পর্ব: রাহাব ও দুই গুপ্তচরের কাহিনী

ষোড়শ পর্ব: জেরিকোর পতন এবং স্যামসনের অলৌকিকতা

সপ্তদশ পর্ব: এক নতুন যুগের সূচনা

 

বোনাস প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল:

দ্য ফার্স্ট মুসলিম: একজন ইহুদীর চোখে মহানুভব হযরত মুহাম্মাদ (সা)

ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত: কী, কেন এবং কীভাবে এর শুরু?

This article is in Bangla language, and about the incidents following the Exodus of the Israelites from the Biblical times. For references, please visit the hyperlinked sites.

Featured Image: www.history.com

This article is copyrighted under Roar Bangladesh Ltd. No textual part of this article may be reproduced or utilized in any form or by any means, electronic or mechanical, including photocopying, recording, or by any information storage and retrieval system, without express permission in writing from the publisher. Any person or entity found reproducing any portion of this article will be held in violation of copyright, and necessary steps will be taken.

Related Articles